29/07/2025
এই ছবি টা দেখলেই আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। এইরকম মৃত্যু যেনো কারো ভাগ্যে না জোটে......
ভাবুন তো, একটা জায়গায় ঘুরতে গেলেন, আর সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারলেন না? এমনকি আপনার শরীরটাও আর কেউ বের করে আনতে পারল না? ভাবতেই কেমন গা কাঁটা দিয়ে ওঠে, তাই না? আজ আমি আপনাদের ঠিক তেমনই একটা গা ছমছমে সত্যি ঘটনা বলব। এই ঘটনা ঘটেছে আমেরিকার নাটি পুটি গুহায়। আর এর কেন্দ্রে রয়েছেন এক তরুণ অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ, যার নাম জন এডওয়ার্ড জোন্স।
সালটা ছিল ২০০৯, নভেম্বরের শেষ দিক। আমেরিকায় তখন থ্যাঙ্কসগিভিং-এর ছুটি চলছিল। জন জোন্স, তাঁর ভাই জশ আর আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলেন, তাঁরা নাটি পুটি গুহায় ঘুরতে যাবেন। জন ছোটবেলা থেকেই গুহা ভালোবাসতেন। নতুন কিছু আবিষ্কার করা আর অ্যাডভেঞ্চার করার নেশা তাঁর রক্তে মিশে ছিল।
নাটি পুটি গুহাটা কিন্তু একদম সাধারণ কোনো গুহা ছিল না। এর ভেতরের পথগুলো ছিল খুব সরু আর প্যাঁচানো। বিশেষ করে, 'বার্থ ক্যানাল' নামের একটা অংশ এতটাই সরু যে, তার ভেতর দিয়ে যেতে হলে শরীরকে প্রায় চেপটে ফেলতে হয়। জন আর তাঁর ভাই সেই সরু পথটা খুঁজছিলেন। কিন্তু, ভাগ্য সেদিন তাঁদের সঙ্গে ছিল না।
জন ভুল করে একটা অন্য সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়লেন। এই সুড়ঙ্গটা এতই অপ্রশস্ত ছিল যে, গুহার ম্যাপেও এর কোনো উল্লেখ ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন, সামান্য একটু গেলেই হয়তো পথটা চওড়া হবে আর তিনি ঘুরতে পারবেন। কিন্তু না! পথটা আরও সরু হতে থাকল, আর জন পুরোপুরি আটকে গেলেন!
ভাবুন তো একবার, আপনার মাথা নিচের দিকে, পা উপরের দিকে, ৭০ ডিগ্রি কোণে আপনি উল্টো হয়ে একটা পাথরের খাঁজে আটকে আছেন! সেই খাঁজটা ছিল মাত্র ১০ ইঞ্চি চওড়া আর ১৮ ইঞ্চি লম্বা (২৫ বাই ৪৬ সেমি)। জন নড়াচড়াও করতে পারছিলেন না। পাথরের ঠান্ডা শরীরটাকে যেন গ্রাস করে নিচ্ছিল!
জনের ভাই জশই প্রথম বুঝতে পারলেন বিপদটা কতটা গুরুতর। সঙ্গে সঙ্গে খবর গেল উদ্ধারকারী দলের কাছে। উটা-র সবচেয়ে অভিজ্ঞ উদ্ধারকারী দল ছুটে এলো। শুরু হলো এক বিশাল উদ্ধার অভিযান।
গুহার পথ এতটাই সরু আর বিপজ্জনক ছিল যে, উদ্ধারকর্মীদের ভেতরে পৌঁছানোই ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তাঁরা দড়ি, পুলি, ক্রেন – যা যা দরকার, সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জন-কে বাঁচানোর জন্য। প্রতিটা সেকেন্ড যেন ঘণ্টার মতো মনে হচ্ছিল। পাথরের ঘষায় উদ্ধারকর্মীদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল, আর গুহার ভেতরের স্যাঁতসেঁতে বাতাসে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।
জন-এর সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ করা গেল। তাঁর দুর্বল গলার আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, তাঁর জীবনদীপ নিভে আসছে। উল্টো হয়ে আটকে থাকার কারণে জনের হার্টের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ছিল। রক্ত ঠিকমতো তাঁর মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারছিল না। তিনি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন। একটা সময় পুলি ছিঁড়ে গেল, একজন উদ্ধারকর্মী আহত হলেন। যেন প্রকৃতিই চায়নি জন ফিরে আসুক।
টানা ২৭ ঘণ্টা ধরে উদ্ধারকাজ চলল। জনের পরিবার বাইরে অপেক্ষায়, প্রতি মুহূর্তে একটা ভালো খবরের আশায়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। ২৫শে নভেম্বর মাঝরাতের ঠিক আগে, জন এডওয়ার্ড জোন্স শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তাঁর শরীরটা গুহার এমন এক কঠিন জায়গায় আটকে ছিল যে, জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থাতেই তাঁকে বের করে আনা সম্ভব ছিল না।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে একটা খুব কষ্টদায়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। জন-এর দেহ গুহার ভেতরেই রেখে দেওয়া হবে, আর গুহাটা চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। গুহার প্রবেশপথ সিমেন্ট দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
আজ, নাটি পুটি গুহা আর কোনো অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীকে ডাক দেয় না। এটি এখন এক নীরব সমাধি, যেখানে জন এডওয়ার্ড জোন্স চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছেন। এই ঘটনাটা শুধু একটা গুহা দুর্ঘটনার গল্প নয়, এটা প্রকৃতির বিশাল শক্তির কাছে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক ভয়ঙ্কর পরিণতির গল্প। জন-এর স্মৃতি হয়তো আজও সেই গুহার অন্ধকারে ফিসফিস করে, এক নীরব সতর্কবার্তা হয়ে।
Supriyo Ahmad