
28/03/2025
হাসবেন্ড আমার প্রাক্তন সম্পর্কে জেনে গিয়েছে।মূহুর্তেই আমার ফিউচার এলেমেলো হয়ে গেছে,
কি করবো বুঝতে পারছি না তাই পোস্ট করা।
আমার বিয়ের বয়স ৫ মাস ১৮ দিন। বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল। বিয়ের আগে আর সাথে সামনাসামনি দুই দিন কথা হয়েছিল। প্রথম দিন উনার পছন্দ অপছন্দ,অতিত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেয়ার করে। আমার কাছে তার চাওয়া গুলো শেয়ার করে। আমাকেও তার কাছে কি কি আশা করি, আমার পছন্দ অপছন্দ জানতে চায়। আমি তেমন কিছু বলিনি।
এর কয়দিন পর দ্বিতীয় বারের মত মিট করি!
সেদিন আমি অনেকটা ফ্রী হয়ে অনেক গল্প করি একপর্যায়ে উনি কাবিনের বিষয়ে বলে —"দেখুন আমি এখনো প্রতিষ্ঠিত না ক্যাশ টাকাও তেমন নেই। তবু্ও কাবিন দিয়ে বিয়ে করতে চাই। আপনি কেমন আশা করেন? আমার সামর্থ্য হলে আগাবো।"
আমি বলি এটা আমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলুন। উনি রিফিউজ করে আমার কাছেই জানতে চায়! তো আমি বলি আমার বান্ধবীর পাঁচ লক্ষ দিয়ে কাবিন হয়েছে।
এরপর অনেক প্রসঙ্গে কথা হয়। একপর্যায়ে উনি বলে, আমার একটা কন্ডিশনাল চাহিদা আছে, ইন্সাল্টিং মনে করবেন না। আমি চাইনা বিয়ের পর এটা নিয়ে ঝামেলা হোক।
আমি অনুমতি দিলে বলে —আজ্ঞে আমি একজন নিট এন্ড ক্লিন মেয়ে খুঁজছি। আপনি যদি এমন কেউ না হয়ে থাকেন প্রশ্নটা স্কিপ করতে পারেন আমি অন্য কারণ দেখিয়ে বিয়েটা ভেঙে দিব।
উনি ইইউ ভুক্ত একটা দেশের রেসিডেন্ট। কথাবার্তায় অনেক স্মার্ট আর উদার মনের তো স্বাভাবিকভাবেই আমি মিথ্যে বলেছি যে আমি কোন ধরনের সম্পর্কে জড়ায়নি। উনিও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কনভারসেশন শেষ করলেন।
যথারীতি বিয়েটা হলো,যদিওবা কাবিন নিয়ে আব্বু একটু ঝামেলা করেছিল। তো চারদিন পর আমাদের মাঝে সম্পর্ক হলো কিন্তু ব্লি!;ডিং না হওয়ায় উনাকে কিছুটা চিহ্নিত মনে হলো।আমাকে কিছু বুঝতে দেয়নি।
তবে সে তখন থেকেই লোক নিয়োগ দিয়ে আমার কলেজ আর এলাকায় অনেক টাকা উড়িয়ে অবশেষে গত আট তারিখে আমার খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছ থেকে অতিত সম্বন্ধে জেনে গিয়েছে।
এদিকে সে স্পাউস ভিসার জন্য আমার পাসপোর্ট রেডি করেছিলেন। আর আমি সন্তানসম্ভবা হয়ে পরেছিলাম!
এই অবস্থায় সেদিন আমাকে উনি চেয়ারে বসিয়ে উনি হাটুতে ভর দিয়ে আমার সামনে বসে আমার দুই হাত একসাথে করে উনি উনার হাত উপরে রাখলেন। বললেন —"আজ কোন ইমোশন আর মিথ্যে কাজে আসবে না। আমাদের তিনজনের যদি ভাল চাও যা বলবা সত্য বলবা।
আমি তখন কান্নায় কথা বলতে পারছিলাম না। উনিও হাল ছাড়ে না। পরে আস্তে আস্তে আমি সব বললাম। এবং এটাও এক্সপ্লেইন করলাম কেন এটা করেছি। উনার প্রতি ভালবাসা,অনুভূতি,মায়া সব বুঝালাম। উনার চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে, হাত কাপছিল, আমার হাত তখনো ছাড়েনি।
শেষে উনি বললেনঃ
জীবনে আমার সাথে ছোট বড় অনেক ইনজাস্টিস হয়েছে। এর অধিকাংশ মাফ করর দিয়েছি কারণ মহাত্মা গান্ধীর আইডোলজি আমাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আমার একটা খারাপ অভ্যাস হচ্ছে; (কথাটা উনি ইংরেজিতে বলেছিল যার অর্থ কিছুটা এরকম: "যেই অন্যায় গুলো মাফ করতে পারিনা সেগুলো কোনদিন ভুলি না। যেদিন আমার সব শক্তি দিয়ে আঘাত করে তার সর্বোচ্চ ক্ষতি করতে পারবো সেদিন পর্যন্ত মনে রাখি!
এরপর কান্নায় সেদিন আর কথা হয়নি, উনি ঘুমিয়ে যায়। আমি সারারাত সেই চেয়ারেই বসে কাটিয়ে দিই। পরদিন থেকে উনি স্বাভাবিক আচরণ করছে। কিন্তু আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি!প্রতিদিন কান্না করি। তার কাছে মাফ চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছি না। এই প্রসঙ্গ কথা বলতে গেলে বলে -সেদিন রাতে যা হইসে বাদ দাও, ফরগেট ইট।"
আগে তাকে নাম ধরে ঢাকতাম। তুমি বলে সম্বোধন করতাম। এখন আগের মত বিহেভিয়ার আসে না কথা বলতে গেলে জড়তা চলে আসে। সবসময় ভয়ে থাকি কখন কি হয়। তার বাবা নেই। সে বড় ছেলে তাই ফ্যামিলির সব সিদ্ধান্ত তার কথা-ই ফাইনাল। যদিও যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ফ্যামিলির সবাইকে ডেকে সবার মতামত চায়। তার পত্নী হিসেবে আমাকে সবাই অনেক সমীহ করে চলে।
আশেপাশের মানুষজনও খুব ভাল,মোটকথা হাসবেন্ডের চেয়ে বেশি তাদের পরিবেশের প্রেমে পরে গেছি। আমি চাইনা সংসারটা হারাতে। আম্মু বলছে রাগের সময়ে মানুষ কত কিছুই বলে।কিচ্ছু করবে না। কিন্তু আমি উনার সেদিনের শেষ কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছিনা! মনে হচ্ছে উনি আমাকে এমন সময় ত্যাগ করবে যখন আমার যাওয়ার রাস্তা থাকবে না। নাকি অন্যভাবে ক্ষতি করবে তাও ভাবছি।
গতকাল সে চলে গেছে। অনেক দূরের রাস্তা তিনটা ট্রানজিট আছে। তাই এখনো হয়তো কোন ফ্লাইটে বা এয়ারপোর্টে বসে আছে। আমার পাসপোর্ট কি করেছে কিচ্ছু বলে যায়নি।
যাইহোক এই ঘটনাগুলো আমার আম্মু আর হাসবেন্ড এর কয়েকজন স্থানীয় বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না। এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না।
এই কয়দিনে আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমার বাচ্চাটার কি হবে তা ভাবছি। ওভারথিংকিং আমায় শেষ করে দিচ্ছে।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)