12/07/2025
যৌবন ত্যাগ করা মহা কঠিন
২৫শে অক্টোবর/১৯৯৬ ইংরেজী শুক্রবার।
ভোর বেলায় শ্রদ্ধেয় বনভন্তে ভান্তের শিষ্যদেরকে ধর্ম দেশনা দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন-ধর্ম দেশনা করতে হলে প্রথমে নরকের বর্ণনা ও কুফল সম্বন্ধে দেশনা করতেহয়। দ্বিতীয় স্বর্গের বর্ণনা ও সুফল সম্বন্ধে দেশনা করতে হয়। তৃতীয় ভাল মন্দ অবগত করায়ে নির্বাণ সম্বন্ধে দেশনা করতে হয়। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, দুষ্টের শান্তি ও শিষ্টের পুরষ্কার প্রাপ্য এবং তাই তারা পেয়ে থাকে।
সম্রাট অশোকের আমলে ৬০ হাজার দুষ্ট ভিক্ষুকে শাস্তি দিয়েছিলেন। যাঁরা ভালভাবে ছিলেন তাঁদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন।
সেরকম আমার নিকট যদি ৮ হাজার ভিক্ষু শ্রমন প্রব্রজ্যা ও উপসম্পাদা নিয়ে থাকে আমিও যথাযোগ্য ব্যবস্থা করব। শুধু মস্তক মুন্ডন করে প্রব্রজ্যা, উপসম্পাদা ও রংবস্ত্র পরিধান করলে ভিক্ষ শ্রমন নয়। যারা ভিক্ষ তাদেরকে অসাধারণ হতে হবে। সাধারণ লোক বহু দুঃখ পায়। বিভিন্ন বাঁধা অতিক্রম করতে পারে না। যারা অসাধারণ তারা সব সময় অক্ষুন্ন মনে থাকে ও সকল বাঁধার পর বাধা অতিক্রম করতে সাহসী হয়। হীনতে অগ্রত্ব হয় না। অগ্রত্বে অর্হতু লাভহয়। সব সময় উজ্জ্বল ও উচ্চভাবে চলতে পারলে তোমরা অবিষ্যত লক্ষ্যে
পৌছিতে পারবে।
তাতেই তোমাদের নির্বাণ প্রত্যক্ষ ও উচ্চতর জ্ঞান লাভ
করতে সহজ হবে।
তিনি একটি উপমা দিয়ে বলেন-
আমার ফলে এমনি মজা,
না খেলে যায় না বুঝা
ক্ষুধা তৃষ্ণা সেরে যাবে,
পরানেতে উঠবে বল।
তিনি বলেন-পূর্ব রক্ষিত পন্য না থাকলে বর্তমানে সুখ-স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে না। যারা ধনীর ছেলে তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দের সহিত দীর্ঘদিন থাকতে পারবে। মার্গ, ফল ও নির্বানে কোন অসুবিধা নেই। দুঃখ নেই, অভাব নেই। সর্বদা বিমলানন্দ মুখ অনুভব হয়।
তিনি বলেন-সংসারে ভিক্ষু সংঘ ছাড়া আরো অনেক সংঘ আছে। তারা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকতে পারে। ভিক্ষু সংঘকে কিন্তু এসবের সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী হিসাবে থাকতে হয়। যৌবন ত্যাগ করা মহা কঠিন ব্যাপার। যৌবন কাল ধ্যান-সমাধিতে অতিক্রম করতে পারলে কৃতকার্য হতে পারবে। বৃদ্ধকালে নারীরা গ্রহণ করবে না। প্রত্যেকটি নারী এক একটি ভিসি আর। আচ্ছা বলতো যুবক ভিক্ষুরা ভিসি আর দেখে কেন? আবার যারা ভাল (যুবক) ভিক্ষু তারা ভিসি আর দেখে না।
কে বেশী দোষী? নারী না ভিক্ষু।ভিক্ষু বেশী খারাপ। বৃদ্ধ ভিক্ষু নারীর জন্যে কি জান? লৌহার টুকরা আর লৌহার টুকরা খেতে পারে না। যুবক ভিক্ষু মূলার মত। অনেক যুবক ভিক্ষু বানরের মত। যুবতী নারী হল বাঘের মত। বাঘ বানরকে ভয় দেখিয়ে হতভম্ব করে গাছ থেকে ঝাপ মারতে বাধ্য করে এবং মাটিতে পড়লে খেয়ে ফেলে। অনেক বৃদ্ধ অজ্ঞানী ভিক্ষু আছে তারা শিয়ালের মত। শিয়ালে কি করে জান? মহিষ দেখলে চেয়ে থাকে কিন্তু ধরে খেতে পারে না। মহিষ হল যুবতী নারী। শিয়ালের মত চেয়ে থাকা হল আসক্তি। চিত্তের দুর্বলতা মাত্র। চিত্তের দুর্বলতাই মানুষকে ধ্বংস করে। তা হলে উপায় কি? স্ত্রী লোক দেখলে জ্ঞানযোগে দেখতে হবে। স্ত্রী নয় নামরূপ মাত্র। এখানে আগুন, পানি, মাটি ও বায়ুর সমষ্টি মাত্র। তোমাদের বিদ্যা উৎপত্তি করতে হবে। সত্য মিথ্যা যাচাই করে অবিদ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। অবিদ্যাকে দুরে ফেলে দিয়ে বিদ্যা উৎপত্তি কর। চারি আর্যসত্য জানলে, বুঝলে চারি অপায় দ্বার বন্ধ হবে। প্রতীত্য সমুৎপাদ জানলে, বুঝলে সর্ব দুঃখ মুক্তি নির্বাণ লাভ হবে। বিদ্যা কি? দুঃখে জ্ঞান, দুঃখের কারণে জ্ঞান, দুঃখ নিরোধে জ্ঞান ও দুঃখ নিরোধে প্রতিপদায় জ্ঞান। অবিদ্যা কি? দুঃখে অজ্ঞান, দুঃখের কারণে অজ্ঞান, দুঃখ নিরোধে অজ্ঞান ও দুঃখ নিরোধ প্রতিপদায় অজ্ঞান। তাহলে তোমরা বৌদ্ধ ধর্ম- গবেষনা কর ও নির্বাণ গবেষণা কর। না হয় ভবিষ্যতে ৫ প্রকার মহাচোর ভিক্ষুতে পরিণত হবে।
শ্রদ্ধেয় বনভন্তে বলেন- মহা কশ্যাপ তাঁর স্ত্রী কপিলানী ভদ্রানীকে ফেলে ভিক্ষু হয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর ৬টি মহাগুন ছিল। শীলবতী, শ্রদ্ধাবতী, দয়াবতী, রূপবর্তী, গুণবতী ও ধনবতী। তিনি কোনদিন তাকে সত্য সুখ বলে বিশ্বাস করেননি। বুদ্ধও কোনদিন নারীর নিকট আত্ম সমর্পণ করেননি। তোমরা যদি নির্বাণ যেতে না পার নারীর নিকট আত্ম সমর্পন করে চলে যেতে বাধ্য হবে। তোমরা হীনভাবে থেকো না। অপরের আশ্রয়ে থেকো না। সব সময় মার কি বনভন্তের কর্মকান্ডকে ক্ষতি করতে চায়? মেয়েদের মন চিত্তে মার প্রবেশ করে এখানে আছে। হুসিয়ার থাক। কামসুখ মারের প্রধান সেনাপতি। আলস্য, লোভ, দ্বেষ, মোহ ক্ষয় করতে বহুদিন সময় লাগে। লোভ, আসক্তি ও অজ্ঞানতা সব সময় বিপথে ধাবিত করতে চায়।
তোমরা শীল পালনে ধনী হও। বিশ্বাসেই ধর্ম। যতক্ষন আসবক্ষয় না হবে ততক্ষণ নিজে নিজেই বুঝতে পারবে না। এটাও তোমরা মনে রেখো আমার বিরুদ্ধে বা নীতির বিপরীতে চললে বিপদ ডেকে আনবে। এ উপদেশ সব সময় স্মরণ রেখো।
゚