19/07/2025
ঢাকায় জাতিসংঘ অফিস হলে সমস্যা কি??
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR) ১৮ জুলাই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে জানানো হয়—
এ সপ্তাহে তারা বাংলাদেশের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় বাংলাদেশে একটি মিশন/অফিস খোলা হবে।
প্রশ্ন হল, এটা নিয়ে এত আপত্তি কেন! ঢাকায় জাতিসংঘ অফিস হলে সমস্যা কি? আসুন— বিষয়টা খতিয়ে দেখি, আসলেই কোনো সমস্যা আছে কিনা।
সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্ক ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। বিজ্ঞপ্তিতে ভলকার টার্ক বলছেন—
“এই স্মারকে স্বাক্ষরের একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল—বাংলাদেশ কর্তৃক মানবাধিকারকে তার ট্রানজিশনের একটি ভিত্তি হিসেবে গ্রহনের অঙ্গীকার।”
“The signing of this memorandum sends an important message of the country’s commitment to human rights as a cornerstone of the transition.”
অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন যে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই ট্রানজিশনে অন্যতম ভিত্তি হবে মানবাধিকার। এটা বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে MoU স্বাক্ষরের মাধ্যমে।
তবে কি সংস্কার কাজ এগুচ্ছে পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনে? কমিশনগুলো বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে!
দেশে এখন এত কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঐক্যমত কমিশন হচ্ছে; কিন্তু সংস্কারের ভিত্তি কী হবে এটা সরকার নিজে নিজে ঠিক করে ফেলে কেন!
কোনো আলোচনা ছাড়া— জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারকে সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে গ্রহনের অধিকার সরকারকে কে দিলো?
আসুন দেখি— জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার মানে কি?
জাতিসংঘের মানবাধিকারের ভিত্তি হল Universal Declaration of Human Rights (UDHR)। এর বেশ কিছু ধারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন।
এমনকি, এর বিপরীতে মানবাধিকারের একটা ইসলামি ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছে OIC, যা Cairo Declaration on Human Rights in Islam (CDHRI) নামে পরিচিত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার আর OIC প্রস্তাবিত মানবাধিকার এক নয়। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টা সহজে বুঝতে পারবেন।
কেউ ধর্ম অবমাননা করলে, আল্লাহ তায়া’লা ও রাসূল (সা.)-কে কটুক্তি করলে জাতিসংঘের মানবাধিকার (UDHR article 19) বলবে এটা তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।
কিন্তু OIC প্রস্তাবিত মানবাধিকার অনুযায়ী (CDHRI article 22) ধর্ম অবমাননা, আল্লাহ তায়া’লা ও রাসূল (সা.)-কে কটুক্তি ইত্যাদি শ ড় ঈ সীমা অতিক্রম করে, তাই এগুলো অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
ফলে দেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারকে ভিত্তি ধরে নিলে শাহ ভাগী শাটিমরা যা ইচ্ছা তা-ই লিখতে পারবে, বলতে পারবে। তা অপরাধ তো বলা হবে না, বরং রাষ্ট্রই তাকে নিরাপত্তা দেবে। এই হল তাদের নীতি।
সমঝোতা স্মারক সংক্রান্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ আছে— এই মিশন বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে..
কারিগরি সহায়তা বলতে তারা আসলে কী বোঝায়?
OHCHR-এর ওয়েবসাইটে কারিগরি সহায়তা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
"ভোগান্তি (suffering), বৈষম্য (discrimination), বঞ্চনা (marginalisation), সংঘর্ষ (conflict)... এগুলো প্রতিরোধের একটা মাধ্যম হল কার্যকর কারিগরি সহায়তা।"
তারা suffering, discrimination, marginalisation, conflic —এজাতীয় শব্দগুলোকে সাধারণত কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
বিভিন্ন প্রকাশনা ও গবেষণাপত্রে দেখবেন— জাতিসংঘ discrimination শব্দটাকে নারীবাদের সাথে, marginalisation-কে সম কাওমীতা, এইল ZeeTV ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত করে। conflict শব্দটাকে ব্যবহার করে ওয়ার অন টেইরর প্রকল্পের গঙ গি নাটকে। এগুলোর ভুরিভুরি উদাহরণ আছে, কারন তারা এটাতে কোনো লুকোছাপা করে না।
তার মানে কি— ওয়ার অন টেরর, এইল ZeeTV.. এসব প্রকল্প এদেশে বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দেবে তারা?
বিজ্ঞপ্তিতে ভলকার টার্ক আরও বলেছেন—
"এই সমঝোতা স্মারক তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সাহায্য করবে.."
কীভাবে সাহায্য করবে?
তাদের সাহায্য করা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক আছে। যেমন:
- দেশের সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে পরা
- অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ
- পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া
- পক্ষপাতিত্ব বা রাজনৈতিক পক্ষ নেয়া
- সুশীল নামের একটা এলিট গ্রুপকে ক্ষমতায়ন
- ডাবল স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ পাশ্চাত্যপন্থী হলে একভাবে, আর না হলে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন
- অশ্লীলতার প্রসার ইত্যাদি।
আরেকটা দুঃখজনক বিষয় হলো— সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের ঘটনা আমরা তাদের প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেনেছি। সমঝোতা স্মারকে আসলে কী কী আছে, তা আমরা এখনো বিস্তারিত জানি না।
সরকার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে আমাদেরকে অন্ধকারে রেখেছে।
© Tariq Bin Mutalib