27/05/2025
চুয়াডাঙ্গার কুড়ুলগাছির রাইসা বিলের পুরোনো গল্পগুলো কিন্তু বেশ গা ছমছমে।
‼️ রাইসা বিলের কান্না ‼️
( কাল্পনিক চিন্তা ভাবনা থেকে)
অনেক বছর আগের কথা। কুড়ুলগাছির মানুষজন বলত, রাইসা বিলের গভীর জল নাকি দিনের বেলায়ও সূর্যের আলো শুষে নেয়, আর রাতের আঁধারে সেটা হয়ে ওঠে এক মায়াবী ভয়ের জগৎ। বিলের চারপাশে ছিল ঘন ঝোপঝাড় আর বড় বড় শিমুল গাছ। মাঝেমধ্যে নাকি রাতের বেলা বিলের মাঝখান থেকে ভেসে আসত চাপা কান্নার আওয়াজ, যেন কেউ ভীষণ কষ্টে কাঁদছে।
গ্রামের মানুষজন পারতপক্ষে সন্ধ্যার পর রাইসা বিলের ধারেকাছে যেত না। বলা হতো, বিলের নাকি একটা জলপরী আছে। তবে সে কোনো সুন্দর জলপরী ছিল না, ছিল এক অভিশপ্ত আত্মা। অনেক বছর আগে নাকি রাইসা নামের এক তরুণী এই বিলে ডুবে মারা গিয়েছিল। গ্রামের লোকের ধারণা ছিল, সে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু কেউ কেউ বলত, তাকে খুন করে বিলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তার আত্মা নাকি আজও শান্তি পায়নি, তাই সে রাইসা বিলে আটকে আছে।
বিশেষ করে পূর্ণিমার রাতে, যখন চাঁদ বিলের জলে তার রূপালী আলো ছড়াতো, তখন নাকি রাইসার কান্নার শব্দ আরও স্পষ্ট শোনা যেত। অনেক সাহসী যুবক নাকি সাহস করে গিয়েছিল রাইসা বিলের ধারে, কিন্তু ফিরে এসে তারা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যেত। কেউ কেউ নাকি জ্বরে ভুগত, আবার কেউ কেউ অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখত।
একবার, গ্রামের এক রাখাল ছেলে, যার নাম ছিল মজনু, সে তার গরু নিয়ে রাইসা বিলের কাছে গিয়েছিল ঘাস খাওয়াতে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মজনু খেয়াল করেনি। গরুগুলো যখন গভীর ঝোপের দিকে যাচ্ছিল, তখন মজনু সেদিকে গেল। হঠাৎ সে শুনতে পেলো, বিলের মাঝখান থেকে একটা মিষ্টি মেয়ের কন্ঠস্বর তাকে ডাকছে, "মজনু... মজনু... কাছে আয়...।" প্রথমে মজনু ভয় পেল না, ভাবল হয়তো কোনো পথিক। সে যখন বিলের দিকে তাকালো, দেখলো জলের উপর দিয়ে একটা আবছা আলো তার দিকে এগিয়ে আসছে। মজনু ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসতে শুরু করলো। আলোটা আরও কাছে আসতেই সে দেখলো, একটা অস্পষ্ট নারীমূর্তি জলের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার চুল খোলা, আর চোখ দুটো থেকে যেন আগুনের শিখা বের হচ্ছে। মজনুর বুক ধড়ফড় করতে শুরু করলো। সে দৌঁড়ে পালাতে চাইল, কিন্তু তার পা দুটো যেন আটকে গেল। নারীমূর্তিটা আরও কাছে এসে চাপা গলায় বলতে লাগলো, "আমার খুব কষ্ট... আমাকে মুক্তি দে..."
মজনু কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গ্রামের দিকে দৌঁড় দিল। গ্রামে ফিরে এসে সে জ্ঞান হারালো। অনেকদিন সে অসুস্থ ছিল। সুস্থ হওয়ার পর সে আর কখনো রাইসা বিলের দিকে পা বাড়ায়নি।
আজও নাকি রাইসা বিলের আশপাশে সন্ধ্যার পর একটা চাপা বিষণ্ণতা আর রহস্যময় নীরবতা নেমে আসে। গ্রামের বয়স্করা এখনও তরুণদের সাবধান করে, সন্ধ্যার পর যেন কেউ রাইসা বিলের কাছে না যায়। কে জানে, আজও হয়তো রাইসার অতৃপ্ত আত্মা সেই বিলের গভীর জলে মুক্তির অপেক্ষায় কান্নার রোল তুলে।
এই ধরনের ভৌতিক গল্পগুলো সাধারণত লোকমুখে প্রচলিত থাকে।
গল্প টি ভালো লাগলে পেজ টি ফলো করে। কমেন্ট করবেন। আরও ভালো গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো।
Follow: গল্প in Life シ