06/07/2025
হামিদুল ইসলাম, বয়স প্রায় ৫৫। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। স্ত্রী মারা গেছেন ৮ বছর আগে, একমাত্র ছেলে কানাডায় থাকে। ঢাকার উত্তরায় তার পুরোনো ফ্ল্যাটে একা থাকেন। একমাত্র সঙ্গী—ঘরের এক কোণে রাখা তার স্ত্রীর দেয়া একটা পুরোনো দেয়ালঘড়ি, যা আজও চলছে।
ঘড়িটার একটা অদ্ভুত বিষয়—প্রতি রাত ৩টা বাজলেই ঘড়ির কাঁটা একটা ক্কচ্ শব্দ করে আটকে যায়, ৫ মিনিট পর আবার চলতে শুরু করে।
প্রথমে বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাননি। তবে কয়েকদিন পর থেকে তিনি টের পান, ঘড়ি থেমে থাকা ওই ৫ মিনিটে তার বাসার আশেপাশে কেমন যেন অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে আসে। এমনকি পাখির ডাক, গাড়ির শব্দ, কুকুরের ডাকে বিরতি পড়ে যায়। একটা হিম হিম ঠাণ্ডা বাতাস ঘরের ভেতর দিয়ে বইতে থাকে।
একদিন, কৌতূহল থেকে তিনি রাত ৩টায় পুরো বাসা ভিডিও করে রাখেন। পরদিন ভিডিও চালিয়ে রীতিমতো হাড় হিম হয়ে যায়—ঘড়ির কাঁটা থেমে যাওয়ার সাথে সাথে ঘরের দরজা ধীরে ধীরে খুলে যায়, কেউ একজন ঢুকে পড়ে। সে ফ্যাকাশে মুখ, কালো পোশাক আর কুয়াশার মতো হালকা দেহবিশিষ্ট একজন মানুষ। সে চুপচাপ বসে থাকে হামিদুলের পেছনে ৫ মিনিট, আর তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়।
কিন্তু আশ্চর্য বিষয়, হামিদুল কিছুই টের পাননি। তিনি শুধু ভিডিওতে দেখেন।
তিনি আতঙ্কে পুলিশে যান। পুলিশ এসে সব কিছু দেখে, কিন্তু ভিডিও ফাইল খোলার সময় দেখা যায়—ফাইলটাই ডিলিট হয়ে গেছে। এমনকি তার ল্যাপটপের ঘড়িও এখন প্রতি রাত ৩টায় নিজে থেকে রিস্টার্ট হয়।
এরপর তিনি কাগজ-কলমে লিখে রাখেন ঘটনার বিবরণ। এবং একটা সিদ্ধান্ত নেন—পরের দিন রাত ৩টায় তিনি জেগে থাকবেন, মুখোমুখি হবেন এই ছায়ামানবের।
ঠিক রাত ৩টা। ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে। হঠাৎ দরজা খুলে গেলো। এবার সত্যি সে এসে দাঁড়াল তার সামনে।
ভয় পেয়ে গেলেন না হামিদুল। তিনি বললেন:
“তুমি কে?”
ছায়ামানব বলল না কিছুই। শুধু একটা কাগজ তুলে দিল।
তাতে লেখা ছিল—
> “ঘড়ির কাঁটা আটকে যায় যখন সময় এক জায়গায় দাঁড়ায়। আমি সেই সময়ের ভুল, যে সময় তোমার একটা সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তোমার স্ত্রী মারা যায়নি, তাকে তুমি নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলে... মনে নেই?”
হামিদুল স্তব্ধ। সে সত্যিই ভুলে গিয়েছিলেন, স্ত্রীকে সন্দেহ করে তিনি একদিন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর শুনেছিলেন, তিনি রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
ছায়ামানবটি এবার বলল,
> “আমি সেই সময়... যে তোমার কাছে ফিরে এসেছে। তুমি আমাকে দেখে গেছো, কিন্তু সত্য দেখনি।”