08/07/2025
আতিকের জীবন সংগ্রামের গল্প
আতিক ছিল এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা ছিলেন দিনমজুর, আর মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। সংসারের চাহিদা মেটাতে মা-বাবা দুজনকেই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।
ছোটবেলা থেকেই আতিক এসব কষ্ট দেখে বড় হয়েছে। যখন তার বয়সী ছেলেরা খেলত, তখন আতিক পকেটে কয়েকটা পয়সা নিয়ে বাজার থেকে কিছু কেনার চিন্তায় ব্যস্ত থাকত। সকালে স্কুলে যেত, বিকেলে দোকানে বা মাঠে কাজ করত।
পড়াশোনার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মা সারাদিন অন্যের বাসায় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসত, আর বাবা মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতেন অবসন্ন শরীরে। আতিক মায়ের মুখের ক্লান্তি আর বাবার কপালের ঘাম দেখেই প্রতিজ্ঞা করেছিল, সে বড় হয়ে তাদের এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দেবে।
স্কুলের পর সে একটি মোবাইলের দোকানে ছোট চাকরি নিল। সেখানে সামান্য কিছু আয় করত, যেটা দিয়ে নিজের পড়ার খরচ আর সংসারের কিছুটা সাহায্য করত।
একদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে জানতে পেরে তার জীবনে নতুন স্বপ্নের শুরু হয়। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে, রাত জেগে, নিজের ফোনে ফ্রি ভিডিও দেখে ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরু করে। শুরুটা ছিল কঠিন, কাজ পাওয়া তো দূরের কথা, অনেক সময় মানুষ তাকে ভুল বুঝত, তুচ্ছ করত।
কিন্তু আতিক হাল ছাড়েনি। দিনের পর দিন চেষ্টা করে সে ছোট ছোট ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট পেতে শুরু করল। ধীরে ধীরে তার কাজের মান ভালো হলো, আর আয়ও বাড়তে থাকল।
কয়েক বছর পর আতিক ছোট চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনোযোগ দেয়। সে আজ নিজের ঘরে বসে দেশ-বিদেশের ক্লায়েন্টদের কাজ করে আয় করছে।
আতিক কারও কাছে বড় কিছু দাবি করেনি, কাউকে শেখানোর সময়ও তার হয়নি। সে শুধু নিজের জীবনের লড়াইটাই লড়ে গেছে।
আজ তার মা আর বাবার মুখে হাসি। মা আর অন্যের বাড়িতে কাজ করেন না, বাবা আর মাঠে শ্রম দেন না। আতিকের কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস তাদের এই জীবন এনে দিয়েছে।
---
👉 এই গল্প আমাদের শেখায়:
জীবন কতই কঠিন হোক, ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম থাকলে মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই বদলাতে পারে।