16/05/2023
"মেয়েরতো বয়স কম হলোনা ভাবি।বিয়ে দিচ্ছেন না কেনো?"
"আপনারও তো বয়স কম হলোনা আন্টি।আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি?"
সোফায় আয়েশ করে বসে চা খেতে খেতেই উক্ত কথাটি বলেছিলেন রিমা সরকার।তৎক্ষণাৎ যে তার প্রতিত্তোর স্বরূপ এমন অপ!মানজনক কথা তার শুনতে হবে কল্পনায়ও ভাবেননি তিনি।ভড়!কে গিয়ে চায়ের অর্ধকাপ রেখেই তিনি উঠে গিয়ে মেয়েটাকে বললেন,
"এমন লা!গামহীন বলেই বোধহয় এতোদিনেও বিয়েটা হয়নি তোমার"
"এই লা!গামহীন মেয়ের জন্যইতো আপনার ছেলে পাগল আন্টি"
অপ!মানে মুখ থমথমে হয়ে যায় রিমা সরকারের।সে তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করার উদ্যোগ নিতেই মেয়েটার মা সেখানে এসে মেয়েটার বাহু টে!নে ধরে বলেন,
"এগুলো কেমন ব্যবহার আইদা?আন্টির কাছে এক্ষুনি মাফ চাইবে তুমি"
আইদা রিমা সরকারের সামনে এসে দু'কানের লতিতে আঙুল রেখে ঠোট উল্টিয়ে বলে,
"সরি গো আমার শাশুড়ী আম্মাজান!আর এমন করবোনা প্রমিজ!"
রিমা সরকার কপাল কুচকে সেখান থেকে যেতে যেতে আইদার মা'কে বলেন,
"আপনার মেয়ে বড্ড ফাযিল ভাবি"
বলে দরজার কাছে চলে যেতেই শুনতে পান আইদার খানিকটা উচ্চ কন্ঠস্বর,
"এই ফাযিল মেয়েটাই কিন্তু আপনার ছেলের বউ হবে আন্টি"
ঘন্টা দুয়েক বাদেই আইদার ফোনে কল আসে।আসতেই সে রিসিভ করে বলে,
"বলো জামাইসোনা"
"এসব কী আইদা?"
"কী মানে?"
"তুমি আম্মুকে কী বলেছো হ্যা?আমি তোমার জন্য পাগল?তুমি আমার বউ হবে?"
"হ্যা হবোইতো।এতে মিথ্যা কোথায়?নাকি বিয়ে করবেনা আমায়?"
"বিয়েতো তোমাকে করবোই।তাই বলে এভাবে বলে বেড়াবে নাকি!জানোইতো আম্মু তোমায় পছন্দ করেনা"
"তো তোমার আম্মুর অপছন্দের মেয়ের সাথে প্রেম করতে বাধলোনা তোমার?"
"রাগছো কেনো জানপাখি?"
"শাট আপ রায়িন।বিয়ে করতে না পারলে প্রেম করাও সাজেনা তোমার।আর বিরক্ত করবেনা আমায়।রাখো"
বলেই কলটা কেটে রায়িনের নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলে দেয় আইদা।অতঃপর রায়িনের সাথে যোগাযোগের সকল ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয় সে।রায়িনকে সবকিছু থেকে ব্লক করে তবেই ক্ষান্ত হয়।
তিনদিন ধরে আইদার সাথে কথা হচ্ছেনা রায়িনের।ছেলেটা ছটফট করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা।একটু যে পাশের বাড়িতে যাবে তারও সুযোগ নেই।কোন বাহানায়ই বা যাবে?তাছাড়া চাকরিরত যুবক একজনের সারাদিন কাজ করে এসে রাত-বিরাতে কারো বাড়িতে যাওয়া আদৌ সাজে?কেন যে এই জ্বলজ্যান্ত লা!ভাটাকে ভালোবেসেছে সে!ভালোবেসেছে ভালো কথা মনে মনেও রাখতে পারলোনা?যেই না জানলো সে মেয়েটার ক্রাশ ব্যাস হয়ে গেলো তাদের প্রেমটা।এবার এই প্রণয়ের সম্পর্কটাকে পরিণতিতে নিতে হলে তারই কিছু একটা করতে হবে।
তারপর আরও দু'দিন অপেক্ষা করলো সে।আইদার কোনো রেসপন্স না পেয়ে হতাশ হয়ে রাতের বেলা মায়ের রুমে এলো সে।এসে দরজায় নক করতেই রিমা সরকার চশমা চোখে পরতে পরতে বললেন,
"আয় বাবা"
রায়িন বিছানার কাছে এসে মায়ের পাশে বসে।বসে কিছুক্ষণ মায়ের সাথে গল্প করে।অতঃপর বলে,
"আচ্ছা আম্মু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"
"পার্মিশন নিচ্ছিস দেখি?"
রায়িন খানিকটা হেসে মাথা চুলকে বলে,
"ঐ আরকি মানে,তুমি তো চোখে ঠিকই দেখো তবে না দেখার ভান ধরো কেনো?"
মহিলা অবাক হলেন ছেলের কথায়।ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললেন,
"কোথায়?বয়স হয়েছে ঝাপসা ঝাপসাইতো দেখি"
"কি যে বলোনা আম্মু!তুমিতো এখনো ইয়াং লেডি।মাত্রইতো ছেচল্লিশে পা দিয়েছো।এখনই বয়স কোথায়?তাছাড়া এই চশমা খুললেই তুমি আমার পাশে দাড়ালে বড়জোর সবাই তোমায় আমার বড় বোন বলবে।এর বেশি কিছুইনা"
মহিলা হেসে ছেলের কান মো!চড়িয়ে বলেন,
"ফাযিল ছেলে!ঐ মেয়েটার দেখাদেখি তুইও ফাযিল হয়ে গেছিস হ্যা?"
"সত্যি কথার আসলেই ভাত নেই বুঝলে আম্মু?"
ছেলের কান ছেড়ে রিমা সরকার বললেন,
"হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো করলি?"
"জানতে ইচ্ছে হলো তাই"
"বলছি তবে।শোন"
"হ্যা বলো"
"তোর আব্বু যখন বেঁচে ছিলো।আমাদের বিয়ের আগে প্রায়ই বলতো আমার চোখগুলো ভীষণ সুন্দর কিনা!বিয়ের পরও একই কথা।এরপর কথায় কথায় একবার বলেছিলো এ চোখের মায়া যেনো কেউ আচ করতে না পারে।সেই সুবাদেই তোর আব্বুর থাকাকালীনই চশমা নিলাম।আর ছাড়লাম না।তোর আব্বু হয়তো নেই।কিন্তু তার কতশত স্মৃতি না আছে আমার কাছে!"
মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথা শুনে রায়িন বললো,
"তার মানে তোমাদের প্রেম ছিল তাইতো?"
"হ্যা।বলতে পারিস"
"আব্বুকে ছাড়া তোমার কেমন লাগে আম্মু?"
ছেলের প্রশ্নে হতবিহ্বল হয়ে রিমা সরকার বলেন,
"এটা কেমন প্রশ্ন রায়িন?কেমন লাগতে পারে তুই জানিস না?"
"জানো?আমারও তেমন লাগে আম্মু।যেই মেয়েটার সারাক্ষণ বদ!নাম করো।ঐ মেয়েটাকে ছাড়াও আমার এমনই লাগে আম্মু।মেয়েটাকে না পেলে ম!রেই যাবো আমি!"
"কিসব বলছিস!লজ্জা করছেনা?বেয়াদব মেয়েটার সাথে থেকে থেকে তুইও আদব-কায়দা ভুলে গেছিস?"
"কিছুই ভুলিনি আম্মু।আমি সত্যিই আইদাকে খুব পছন্দ করি।বলতে পারো ভালোবাসি।সেও বাসে।কিন্তু আমার একটা কথায় সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।আমার দম বন্ধ লাগছে আম্মু বিশ্বাস করো"
"কী করেছিলি তুই?"
"বলেছিলাম তুমিতো ওকে পছন্দ করোনা।আর সে ভেবে বসে আছে আমি অন্যসব ছেলের মতো পরিবারের দোহাই দিয়ে ওকে বিয়ে করবোনা।আমার পরিবার বলতেতো শুধু তুমি আর রাই ই আছো।তাছাড়া ও আগে প্রায়ই বলতো 'আন্টিতো মানবেনা রায়িন।আমাকেতো তার পছন্দনা।রিলেশনটা এতোদূর গড়ানো ঠিক হবে?যেখানে পরিণতি ই নেই।সেখানে প্রণয় থেকে কী লাভ?' আমি তখন শুধু বলেছিলাম আমি সবটা ম্যানেজ করে নেবো।তোমায় রাজি করিয়ে ফেলবো।পাঁচদিনের মতো হয়েছে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ নেই।মনে হচ্ছে পাঁচ মাস ধরে কথা বলিনা আম্মু!"
গম্ভীরভাবে রিমা সরকার বললেন,
"এসব বলে লাভ নেই।ঐ মেয়েকে আমার পছন্দ না।একটা কথাও ছাড় দেয়না।বড়দের সাথে তর্ক করা যেনো নেশা হয়ে গেছে তার"
"আচ্ছা আম্মু?আব্বু যদি তোমায় বিয়ে না করতো?বিয়ের ওয়াদা দিয়ে দিয়ে পরে তোমার মনটা ভেঙে দিতো।তোমার কেমন লাগতো বলোতো?"
ছেলের পানে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে তিনি বলেন,
"তুই ঐ মেয়ের সাথে ইন্ডাইরেক্টলি আমার তুলনা দিচ্ছিস রায়িন!"
"তুলনা দিচ্ছিনা আম্মু।আমি শুধু বলছি যে তুমি যেমন কষ্ট পেতে মন ভাঙতো।আমি যদি তাকে বিয়ে না করি মেয়েটার মনটা ভাঙবে না বলো?নিজেকে একটু তার জায়গায় রেখে দেখোনা"
"এজন্যই আমি কখনো চাইতাম না আমার ছেলেমেয়েরা প্রেম করুক।"
"তুমিওতো করেছো আম্মু"
"রায়িন!"
মা'কে শান্ত করতে মায়ের দু'হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে রায়িন বলে,
"আইদাতো দেখতে শুনতে খারাপ না আম্মু?পড়াশুনায়ও ভালো।লাস্ট ইয়ার দিচ্ছে।শুধু একটু বেশি কথা বলে এইতো?ওটাও ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েরা বউ হলে দায়িত্ব বেড়ে যায় এরপর দায়িত্বশীল হয়ে উঠে।তুমিও তো হয়েছিলে আম্মু।তোমারতো সেই আঠারোতে বিয়ে হয়েছিলো।আর আইদাতো যথেষ্ট ম্যাচিওর"
"তো তুই ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবি?"
"তোমার অনুমতি ব্যতীত একদমই না।ও নিজেই চায়না তোমার অমতে বিয়ে করতে"
চশমা খুলে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে রিমা সরকার বলেন,
"মেয়েকে বলে দিবি আমার সাথে যেনো ফারদার ঠাট্টা-তামাশা না করে।এসব আমার পছন্দ না।আর কালই ওর বাসায় যাবো।তুইও থাকবি।মেয়েকে বলবিনা কিছু।নাহলে কিন্তু বিয়ে করাবোনা ওর সাথে"
মায়ের কথায় খুশিতে আপ্লূত হয়ে পেছন থেকে মা'কে জড়িয়ে ধরে রায়িন বলে,
"তুমি বেস্ট আম্মু!"
রায়িনের বোন রাই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনে চেচিয়ে বলে,
"আইদাপু আমার ভাবি হবে।ওয়াও!আপু কি জোস রে ভাইয়া।আমি সবসময় ভাবতাম সে যদি আমার ভাবি হতো!"
সন্ধ্যা তখন সাতটা বেজে এগারো মিনিট,
রায়িনের আইদাকে আংটি পরানোর মাধ্যমে তাদের বিয়ে পাকা করে সবেই শরবতের গ্লাসটা মুখে দিয়েছিলেন রিমা সরকার।ঠিক তখনই আইদা বলে,
"এবার তাহলে আপনার বউমা'টা আমি হয়েই যাচ্ছি পাশের বাসার শাশুড়ি আম্মু!"
আইদার কথায় শরবত গলায় আটকে যায় রিমা সরকারের।কাশতে কাশতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান তিনি আইদার পানে।আইদা রিমা সরকারকে একদফা অবাক করে দিয়ে তার পাশে বসে তারই গালে চুমু খেয়ে বলে,
"আই লাভ ইউ শাশুড়ি আম্মু"
সমাপ্ত...
~অণুগল্প
#পাশের_বাসার_শাশুড়ি_আম্মু
[বিঃদ্রঃ কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ!]