22/06/2024
গ্রামের বাড়ি ছেড়েছি সেই ২০০৬ সাল। গ্রামের বাড়ি ছাড়ার পর তেমন লন্বা সময় নিয়ে থাকা হয় না। ছুটি পেলে আসি আর যায় এই সময় টুকুর ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। তখন কার সময়ে পড়াশুনার জন্য স্কুল হোস্টেলে যেতে হয় এখন কর্মের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরের বাসায় থাকতে হয়। এই ভাবেই যাচ্ছে দিনকাল। ছোট থাকতেই মা কে হারিয়েছি তাই মায়ের ভালবাসা তেমন পাইনি । মা মারা যাওয়ার পর দাদির বাড়ি, মাসি বাড়ি, খালা বাড়ি, থেকে থেকে মায়ের ভালাবাসা- আদর তাদের কাছ থেকে পেয় বড় হয়েছি । আর বাবার ভালবাসা সে তো অফুরন্ত। এত তাই আমার প্রতি খেয়াল করেছে যে ছোট থাকতে মায়ের অভাব তা পর্যন্ত বুঝতে দেয়নি। মাসি মারাও বুঝতে দেইনি কারন সেই ভাবে আমাকে লালন পালন করে বড় করিয়েছে। এখন বড় হয়েছি বুঝতে শিখে গেছি "মা" নামক এই ছোট শব্দটি শুনলে মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়।
ছোট বেলার দিন গুলি খুব দুষ্টু ছিলাম। সম্ভবত খুব অল্প বয়সে আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল। পড়া লেখায় মন বসত না শিক্ষকরাই আমার প্রতি বিরক্ত লেগেছিল । তার পরেও ফেল করে প্রাইমারি স্কুল জীবন শেষ করেছি। তখন কার সময় ফেল করলেও সমস্যা হত না এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ভর্তি করা যেতো। প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে যখন উঠলাম তখনেই বাবা আমাকে হোস্টেল জীবনে ভর্তি করালো। শুরু হল গঠন জীবন শুরু হল নিয়মানুবর্তিতা। তখন চাইলে নিজের ইচ্ছে মত সব কিছু করা যায় না। হোস্টেলের নিয়মানুবর্তিতা পালন করতে করতে জীবনে কিছু তা হলেও পরিবর্তন দেখা মিলল। তিন বছর এই ভাবেই কাটালাম। অস্টম শ্রেনী পাশ করে নিজ এলাকার স্কুল- হোস্টেল নিজ গ্রামের বন্ধু বান্ধব ছেড়ে চলে এলাম মধুপুর বনাঞ্চল এলাকায় । এখানেও এসে দেখি গঠন জীবন খুব কঠিন । অস্টম শ্রেণীপাশ করে আবারও সেই অস্টমেই ভর্তি হলাম। মানে একেই ক্লাসে দুবছর। যাই হোক নতুন এলাকা নতুন স্কুল প্রথম প্রথম খুব এক্সসাইটেট ছিলাম তার পরেও সব নিছু মেনে শুরু করলাম অধ্যয়ন। মধুপুর বনাঞ্চলে থাকা সেই আদর্শ কর্পোস খ্রিষ্টী হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছি তার পর ময়মনসিংহ শহর নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বনানি কেম্পাশে ভর্তি হয়ে ঢাকায় পদার্পণ করলাম । স্কুল কলেজ থাকা অবস্থায় অনেক মজার মজার স্মৃতি জমে আছে সেই দিনগুলি নাহ হয় আরেক দিন চারন করবো।
গ্রামে কতই বা থেকেছি এই ধর ১০ কি ১২ বছর পর্যন্ত। তার পর এই এলাকা সেই এলাকা থেকে থেকে রাজধানী শহর পর্যন্ত চলে আসলাম । কত জায়গায় কত ভাবেই এই শহরে থাকা হয়েছে। ম্যাসে, বাসা বাড়িতে, সাব প্লেটে রোড- বৃষ্টি দিন রাত প্রকাশ্যে গোপনে খেয়ে না খেয়ে অনেক জায়গাই অনেক ভাবেই থেকেছি। বাজার করে নিয়ে আসা নিজের জন্য নিজেই রান্না করে খাওয়া। রান্না করা অনেক আগেই শিখেছি তাই এত তা কষ্ট হয়নি। এখনও সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে নিজের মত করে রান্না করে খাই। জ্ঞান -বুদ্ধি শিক্ষা শ্রম সময় অসময় অকাতরে এই শহরে কাটিয়েছি । এই শহর আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। দিয়েও লাভ নাই কিছুই ধরে রাখতে পারি না। যা পাই এই শহরেই রেখে দিতে হয়। তার পরেও জীবনের তাগিদে ও পরিস্থিতি শিকার হয়ে আজও এই শহরে বসবাস করছি। মাঝে মাঝে মনে হয় এই শহরের ইট পাথরের বানানো বাসার চার দেওয়াল আমাকে বন্ধি বাক্সের মত ঘিরে রেখেছে । এ জনেই এই শহর আজও আমার কাছে আপন হয়ে উঠেনি। কেমন জানি এই শহরের কোন কিছুর প্রতি টান কিংবা অনুভব হয় না। আমার টান লাগে গ্রামের মাটির প্রতি এখনও অনুভব করি,, পুকুরে সাতার শিখেছি মহাদেও নদীতে দিন ভর গোসল করেছি কলা গাছের ভেলা ভাসিয়ে নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত সাতার কেটেছি। মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে বেড়ানো। খুলা মাঠে গরু ছড়ানো মধ্য দুপুরে আবারও নদীতে গিয়ে গোসল করে আসা। বিকেলে খেলার মাঠে বন্ধু বান্ধব কে নিয়ে আড্ডা গল্প জমানো মান অভিমান করা। মার্বেল খেলা আরো নাম না জানা খেলায় অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে । মাঝে মাঝে মনে হয়, যে বন্ধু গন গ্রামে থেকে গেছে ওরাই খুব ভাল আছে। এই শহরে থাকা খুব একটা প্রয়োজন ছিল না। এই শহরের বিষন্নতা, হতাশা একাকীত্ব,মানসিক যন্ত্রণা, অকারণে ব্যস্ততা,অপ্রয়োজনীয় বস্তুর অবাধ ব্যবহার,নানান দিক আমাকে পেড়া দেয়। এই শহরে থেকে যা করে দিচ্ছি হয়তো গ্রামে থেকেও আরো ভাল কিছু হতো। এই শহর নিতান্ত স্বার্থপর,পাষান, অভিনয়ের শহর। এই শহরের সমীকরন আমার মত সাধারণ ব্যওি ভবিষ্যতেও মিলাতে পারবো না।
এখন চাইলেও সেই কিশোর জীবনে ফিরে যেতেও পারবো না শুধু দুচোখে সেই ভাসমান দৃশ্য গুলো দেখে অনুভব নিতে পারবো। কারন জীবনের বাস্তবতার অগ্রগতি আমাকে মানতে হবে।গ্রামে থেকে ১০ - ১২ বছরে যারা আপন হয়েছিল তারাই হয়তো শেষ আপন হবে। পাখির কিচিরমিচির ডাক,পোকা মাকরের ঝিঝি আওয়াজ,সন্ধায় শিয়াল মামার হুক্কাহুয়া, পুর্নিমা রাতে উঠানে বসে গল্প জমানো এই মুহূর্ত গুলোই হবে বিশেষ মুহূর্ত ও জীবনের শেষ আপনজন।