31/12/2024
বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নতুন অধ্যাপক তাঁর ক্লাস নিতে শুরু করলেন।
যে মুহুর্তে তিনি পড়ানোর জন্যে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঝুঁকলেন, সেই সময় ছাত্রদের মধ্যে কেউ একজন সিনেমা হলের মতো জোরে শীস বাজালো।
অধ্যাপক ঘুরে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, --কে, কে শীস দিয়েছে? কে সিটি মারলো?
কেউ উত্তর দিলোনা। সবাই চুপ।
অধ্যাপক শান্তভাবে চকটি টেবিলে রেখে বললেন, আজ আর লেকচার দেবোনা। তবে তোমাদের একটি গল্প বলব।
সবাই আগ্রহী হয়ে নড়ে চড়ে বসলো। অধ্যাপক গল্প শুরু করলেন।
--- গতকাল রাতে আমি ঘুমানোর জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ঘুম আমার চোখ থেকে কয়েক মাইল দূরে। ভাবলাম, ঘুম যখন আসছেনা আমার গাড়িতে রাতে পেট্রল ভরে রাখি, যা কাল সকালের ভিড়ে আমার সময় বাঁচাবে এবং তারপর নির্ভীগ্নে আমি ঘুমাতেও পারবো।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ট্যাঙ্কটি ফুল করে নেয়ার পরে দেখি রাস্তা খালি। বাতাসটিও ঠান্ডা, আকাশে হালকা মেঘের আড়ালে আধো চাঁদ, তাই ভাবলাম একটু আশেপাশে ঘুরেই আসি।
একটু সামনে এগুতেই হঠাৎ রাস্তার পাশের কোণে একজন ভদ্রবেশী তরুণী মেয়েকে দেখলাম আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় ভঙ্গী নিয়ে। আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মনে হলো প্রথম নজরেই প্রেমে পড়ে গেছি।
সৌজন্যতা বোধ হারিয়ে আমি গাড়িটি ঘুরিয়ে তার পাশে থামিয়ে কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম -- আমি কি কোনো সহায়তা করতে পারি আপনাকে?
তিনি মৃদু ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি? সে কোন ট্যাক্সি পাচ্ছেনা অনেক্ষন ধরে।
আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো, আমি গাড়ী থেকে নেমে সামনের দরজা খুলে দিলে তিনি আমার সাথে সামনের সিটেই বসলেন সানন্দে।
আমি তাকে নিজের পরিচয় জানিয়ে বললাম, আমি আপনাদের বাসার এলাকারই পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
উনি উনার পরিচয় জানালে আমরা কথা শুরু করি এবং অবাক হয়ে দেখলাম সে খুবই বুদ্ধিমতী এবং যেকোন টপিক নিয়ে আলোচনা করি, সবগুলিতেই তার জ্ঞান আছে যা আজকালকার অনেক যুবকেরই নেই।
তার ঠিকানায় যখন পৌঁছলাম, তিনি বললেন আমরা দুজনেই মুক্ত মনের মানুষ, আমাদের আবার দেখা হতে পারে, এবং লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে না গিয়ে বলেই ফেললেন, আমার মতো একজন যুবক ছিল তার কল্পনায়। রাখঢাক না করেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বিবাহিত? আমি বুঝে ফেললাম, তিনিও প্রথম দর্শনেই আমার প্রেমে পড়েছেন।
আমি বললাম, -- আপনার অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে প্রথমেই আমি গাড়ি ঘুড়িয়েছিলাম, এই রকম একজন রাজকন্যার স্বপ্ন আমি দেখতাম, যে দেখতে ঠিক আপনার মতো হবে। তারপর আপনার নলেজ, বুদ্ধি ও কথার গভীরতা শুনে আমি খোলাখুলি বলছি, ইতিমধ্যে আমিও আপনার গভীর প্রেমে পড়ে গেছি।
আরো কিছুক্ষন গল্প করে বিদায় নেয়ার সময় সে আমাকে বললো, আমার ভাই আপনার ক্লাসেরি ছাত্র, ও এখন বাসায় নেই। আপনি ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।
আমি বললাম, তোমার ভাই এর নাম কি?
আমার নব্য প্রেমিকা বললো, তুমি আর আমি পরস্পরকে আমাদের প্রখর বুদ্ধির কারণে স্বল্প সময়ে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি তোমার বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে পাবে তাকে, তাই নাম বললাম না। আমার ভাইয়ের একটা বৈশিষ্ট আছে যা দিয়ে তাকে চিনতে পারবে। পারবে তো?
বললাম, --আচ্ছা, কি সেই বৈশিষ্ট?
প্রেমিকা বললো, -- সে প্রায়ই হটাৎ জোরে শিস দেয়!
পুরো ক্লাসের সমস্ত চোখ তৎক্ষণাৎ যে ছেলেটি শিস দিয়েছিল তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো।
অধ্যাপক ধীরে চকটি আবার হাতে উঠিয়ে নিয়ে গম্ভীর ভাবে বললেন: "আমি মনোবিজ্ঞানে আমার পিএইচডি ডিগ্রিটি কিনিনি, আমি এটি অর্জন করেছি।"