09/06/2025
তুখোড় প্রতিভা। তাক লাগানো তাঁর সব রেজাল্ট। কাজের জায়গাতেও অত্যন্ত সফল। শুধু তাই নয় আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এই ভারতীয়! এমনই প্রতিভা হারিয়ে গিয়েছিলেন জনমানস থেকে। যখন ফের তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল তখন তিনি ফেলে এসেছেন তাঁর সেইসব সোনার দিনগুলির। হ্যাঁ, গণিতের আশ্চর্য প্রতিভা বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং সম্পর্কেই কথা হচ্ছে।
স্বাধীনতার আগে ১৯৪২ সালে বিহারের বসন্তপুরে জন্ম বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংয়ের। বাবা ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন বর্তমান ঝাড়খণ্ডের নেতারহাট স্কুলে। পাস করার পর তিনি চলে যান পাটনা সায়েন্স কলেজে। সেখানে থেকে বিএসসি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হন। এমএসসি-তেও প্রথম হয়েছিলেন। একসময় কাজ করেন আইআইটি ও নাসায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। তার পর থেকেই সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায়।
বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং সম্পর্কে একটা গল্প চালু রয়েছে। সেটি হল তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের কিছু জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁকে তলব করা হয়। মনে করা হয়ে তিনি আমেরিকার অ্যাপোলো মিশনে কাজ করেছিলেন। ওই মিশনে মানুষকে মহাকাশে পাঠাচ্ছিল আমেরিকা।
বশিষ্ঠের গাণিতক প্রতিভা দেখে তাঁকে পড়ানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয় বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রায় ৯ বছর আমেরিকায় কাটান বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং। দেশে ফিরে ভারতের একাধিক প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন বশিষ্ঠ নারায়ণ। পড়িয়েছেন খড়গপুর আইআইটিতে, মুম্বইয়ের টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল স্টাডিজে ও কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি এক জটিল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হন। সেই রোগই তাঁর জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।
১৯৬৭ সালে তাঁকে গণিত বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়। এর ঠিক দু'বছর পরে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর বিখ্যাত গবেষণা পত্র, 'দ্যা পিস অব স্পেস থিয়রি'। ওই গবেষণা পত্রেই তিনি আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটিকে চ্যালেঞ্জ করেন। ওই থিয়রির জন্যা তাঁকে পিএইচডি দেওয়া হয়। বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে জিনিয়াস উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে দেশে ফিরে খড়গপুর আইআইটির অধ্য়াপক হিসেবে যোগ দেন।
ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং। তার জেরেই ১৯৭৬ সালে তাঁর বৈবাহিক জীবন শেষ হয়ে যায়। চিকিৎসা চললেও একবার ট্রেনে যাওয়ার সময়ে উধাও হয়ে যান বশিষ্ঠ নারায়ণ। বেশ কয়েক বছর পর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় তার গ্রামের বাড়িতে। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়ে বেঙ্গালুরুর নিমহ্যানস হাসপাতালে। অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিংহা তাঁর চিকিত্সা করান দিল্লির এক হাসপাতালে। বহু চিকিত্সা হলেও বশিষ্ঠনারায়ণের প্রতিভা লোপ পেয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ৭২ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। সরকার অবশ্য শেষপর্যন্ত তাঁকে মরনোত্তর পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।