29/06/2025
মাছের মিক্সোবোলাস (Myxobolus) হলো একটি প্রোটোজোয়ান পরজীবী যা মাইক্সোজোয়া (Myxozoa) গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এটি মাছের বিভিন্ন টিস্যুতে সংক্রমণ ঘটিয়ে বাণিজ্যিক ও প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদে ব্যাপক ক্ষতি করে। বিশ্বে ১,৩০০ টিরও বেশি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ২০টি প্রজাতি দেখা যায়।
👉 শ্রেণিবিন্যাস (Taxonomy)
পর্ব: Myxozoa (প্রোটোজোয়া-সদৃশ, তবে কিছু গবেষক এটিকে Cnidaria-এর অন্তর্গত বলে মনে করেন)
গণ: Myxobolus
প্রজাতি: ১,৩০০-এরও বেশি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে
যেমন:
• Myxobolus cerebralis (স্পিনাল ডিজিজ সৃষ্টিকারী)
• Myxobolus cyprini (কার্প মাছের গিলে সংক্রমণ করে)
• Myxobolus artus (মাংসপেশিতে টিউমার সৃষ্টি করে)।
👉 জীবনচক্র:
স্পোর পর্যায়: আক্রান্ত মাছ থেকে পানিতে ছড়ায়।
কেঁচো পর্যায়: Tubifex কেঁচোতে ৭-১০ দিন বিকাশ ঘটে।
মাছ পর্যায়: অ্যাক্টিনোস্পোর মাধ্যমে সংক্রমণ।
👉 বাংলাদেশে আক্রান্ত প্রধান মাছ:
• রুই, কাতলা, মৃগেল
• পাঙ্গাশ, শিং, মাগুর
• তেলাপিয়া
• সরপুঁটি
👉 রোগের লক্ষণঃ
সিস্ট গঠন: আক্রান্ত টিস্যুতে সাদা বা হলুদ রঙের গুটিকা দেখা যায়।
অঙ্গ বিকৃতি:
M. dermatobia → ত্বক ও পাখনায় সাদা গুটির ন্যায় সৃষ্টি করে।
M. ocularis → মাছের চোখ ফুলিয়ে দেয়।
M. artus → আক্রান্ত মাছের পেট ফুলিয়ে দেয়।
M. cerebralis → মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে "হুইর্লিং ডিজিজ" (ঘূর্ণন রোগ) সৃষ্টি করে।
M. cyprini → গিল ফুলে শ্বাসকষ্ট হয়।
👉 অন্যান্য লক্ষণ:
পাখনার ক্ষয়, ওজন হ্রাস, অস্বাভাবিক সাঁতার।
✊ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
প্রতিরোধ:
* পোনা ছাড়ার আগে জীবাণুনাশক / লবণ / পাটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে শোধন করে নেওয়া।
* পুকুরে প্রতি মাসে ৫০০ গ্রাম/শতাংশ হারে চুন প্রয়োগ।
* পুকুরের তলা পরিষ্কার রাখা এবং কেঁচো নিয়ন্ত্রণ।
চিকিৎসা:
* ৩ দিনে দুবার পরজীবিনাশক প্রয়োগ(প্রথমবার আইভারমেক্টিন এবং দ্বিতীয়বাত্র ডেল্টামেথ্রিন)।
* জীবাণুনাশক প্রয়োগ।
* Oxytetracycline- খাবারের সাথে (ডোজ-মৎস্যবিদদের সাথে পরামর্শক্রমে)।
* ভাল মানের মাল্টিভিটামিন বা ইমিউনিস্টিমুলেন্ট এর ব্যবহার।
⚠️ বিশেষ সতর্কতা:
- এই পরজীবী মানুষকে আক্রমণ করে না।
- ৬০°C তাপমাত্রায় রান্না করলে স্পোর নষ্ট হয়।
ধন্যবাদান্তে,
মৎস্যবিদ মাসুম বিল্লাহ (তমাল)
মৎস্য চাষ বিষয়ক পরামর্শক।