09/09/2025
শুধু বর্তমান সময়ে নয় বহু পূর্বকাল থেকে যে কোন সাধারণ সনাতনীর আবেগের বিষয়" শ্রীমতি রাধারানী এবং ভগবান ব্রজেশ্বরের বৃন্দাবন লীলা বা উপমা অর্থে ভাগবৎপ্রেমের মহিমা" তা নিয়ে অপপ্রচারের শেষ নেই।।
কালে কালে বহু মনীষী ও পন্ডিত তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বা আর্য সমাজের অনুসারীদের মত মানুষরা এই মহিমাকে অস্বীকার করে গেছেন।।
স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টি থেকেও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বাদ যায়নি।। এই বিষয়ে কি বলেছিলেন স্বামীজি....
স্বামীজীর বাণী ও রচনার চতুর্থ খন্ড থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:-
স্বামীজীর দৃষ্টিতে ভগবৎপ্রেম ও তার ব্যাখ্যা:-
""দিব্য প্রেমে মাতোয়ারা ভক্তগণ ভগবৎ প্রেম বর্ণনা করিতে গিয়া সর্বপ্রকার মানবীয় প্রেমের ভাষাই ব্যবহার করিয়া থাকেন, উহাকেই যথেষ্ট উপযোগী মনে হয়।
মূর্খেরা ইহা বুঝেনা—তাহারা কখনো ইহা বুঝবে না। তাহারা উহা কেবল জড় দৃষ্টিতে দেখিতে থাকে।
কেমন করিয়া বুঝিবে?
'হে প্রিয়তম, তোমার অধরের একটিমাত্র চুম্বন! যাহা কে তুমি একবার চুম্বন করিয়াছো, তোমার জন্য তাহার পিপাসা বর্ধিত হইয়া থাকে। তাহার সকল দুঃখ চলিয়া যায়। সে তোমা ব্যতীত আর সব ভুলিয়া যায়।' শ্রীমদ্ভাগবত, ১০/৩১/১৪
প্রিয়তমের সেই চুম্বন—তাহার অদরের সহিত সেই স্পর্শের জন্য ব্যাকুল হও—যাহা ভক্তকে পাগল করিয়া দেয়, যাহা মানুষকে দেবতা করিয়া তুলে। ভগবান যাহাকে একবার তাহার অধরামৃত দিয়া কৃতার্থ করিয়াছেন, তাহার সমুদয় প্রকৃতিই পরিবর্তিত হইয়া যায়। তাহার পক্ষে জগত অন্তর্হিত হয়—.... সমস্ত জগত প্রপঞ্চই সেই এক অনন্ত প্রেমের সমুদ্রে বিগলিত হইয়া যায়। ইহাই প্রেমোন্মত্ততার চরম অবস্থা।।
প্রকৃত ভগবত প্রেমিক আবার ইহাতেও সন্তুষ্ট নন। স্বামী স্ত্রীর প্রেমও তাহার নিকট তত উন্মাত্মক নয়। ।
ভক্তেরা অবৈধ প্রেমের ভাব গ্রহণ করিয়া থাকেন, কারণ উহা অতিশয় প্রবল।।
উহার অবৈধতা তাহাদের লক্ষ্য নয়।
এই প্রেমের প্রকৃতি এই যে,উহা যতই বাধা পায় , ততই উগ্রভাব লাভ করে।।
যতই ঐ প্রেম বাধাপ্রাপ্ত হয়, ততই উহা প্রবল ভাব ধারণ করিতে থাকে।
শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে কিরূপ লীলা করিতেন, কিরূপে সকলে উন্মুক্ত হইয়া তাহাকে ভালোবাসিতো, কিরূপে তাহার কণ্ঠস্বর শুনিবা মাত্র গোপীরা—সেই ভাগ্যবতী গোপীরা সব কিছু ভুলিয়া—জগৎ ভুলিয়া ,জগতের সকল বন্ধন ,সাংসারিক কর্তব্য, সংসারের সুখ দুঃখ ভুলিয়া তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিত, মানবীয় ভাষা তাহা প্রকাশ করিতে অক্ষম। মানুষ— মানুষ, তুমি ভগবত প্রেমের কথা বলো, আবার জগতের সব অসার বিষয়ে নিযুক্ত থাকিতেও পারো; তোমার কি মনমুখ এক?
'যেখানে রাম আছেন, সেখানে কাম থাকিতে পারে না।
যেখানে কাম, সেখানে রাম থাকিতে পারেন না, এই দুইটি কখনো একত্রে থাকে না।আলো এবং অন্ধকার কখনো একসঙ্গে থাকে না।।(দোঁহা, তুলসী দাস)
যখন প্রেমের এই উচ্চতর আদর্শে উপনীত হওয়া যায়, তখন দর্শনশাস্ত্র ফেলিয়া দিতে হয়, কে আর তখন ওইগুলোর জন্য ব্যস্ত হইবে.? মুক্তি, উদ্ধার,নির্বাণ—এ সবই তখন কোথায় চলিয়া যায়! এই ঈশ্বর প্রেম সম্ভোগ করিতে পাইলে কে মুক্ত হইতে চায়?
ভগবান, আমি ধন,জন,সৌন্দর্য,বিদ্যা —এমনকি মুক্তি পর্যন্ত চাইনা। জন্মে জন্মে তোমাতে যেন অহৈতুকী ভক্তি থাকে। (শিক্ষাষ্টকম, শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য)
ভক্ত বলেন, চিনি হওয়া ভালো নয়, চিনি খেতে ভালোবাসি। তখন কে মুক্ত হইবার ইচ্ছা করিবে? কে ভগবানের সহিত এক হইয়া যাইবার আকাঙ্ক্ষা করিবে? .. ভক্ত বলেন, আমি জানি— তিনি ও আমি এক, তথাপি আমি তাহা হইতে নিজেকে পৃথক রাখিয়া প্রিয়তম কে সম্ভোগ করিব।
প্রেমের জন্য প্রেম—ইহাই ভক্তের সর্বোচ্চ সুখ।।।""
....................................