Saimum Clips

Saimum Clips প্রাণের প্রিয় সাইমুম,
কেড়ে নিয়েছে আমার ঘুম।
সকল ভালোবাসা
শ্রদ্ধেয়,আবুল আসাদ স্যারের প্রতি

09/01/2025

اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মারযুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিক, ওয়ায’আল মাওতি ফি বালাদি রাসুলিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে শাহাদাতের মৃত্যু দিন এবং মৃত্যু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শহরে দিন।

27/12/2024

উচ্চারণঃ - ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু লাইলাহা ইল্লা আন্তা বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।
অর্থঃ -হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।
বর্ণনায় (তিরমিজি)

মোবাইল ফোন মালিকের আসল চরিত্রের খবর বলতে পারবে✅
25/11/2024

মোবাইল ফোন মালিকের আসল চরিত্রের খবর বলতে পারবে✅

26/01/2024
বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য; সুতরাং ইসলাম চরিত্রগত ভাবে সম্প্রসারণ মুখী। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যের সাথে সা...
19/07/2023

বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা ইসলামের চূড়ান্ত লক্ষ্য; সুতরাং ইসলাম চরিত্রগত ভাবে সম্প্রসারণ মুখী। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যের সাথে সাম্রাজ্যবাদের পার্থক্য কোনখানে?

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলই সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য। বিজিত জাতির উপর বিজয়ী জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠাই সাম্রাজ্যবাদের একমাত্র কাম্য বিষয়। অন্য পক্ষে ইসলাম এক মতাদর্শের নাম। যেহেতু বিশ্বের মানুষের জন্য বিশ্বস্রষ্ঠার এটা মনোনীত জীবন বিধান, তাই বিশ্বের মানুষের সার্বিক কল্যাণ এর মধ্যেই নিহিত। সুতরাং বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা এর চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে সানুষের কল্যাণ করতে চায় এক জাতির স্বার্থোদ্ধার বা অন্য জাতির ক্ষতি সাধন করা তার লক্ষ্য নয়। মুসলমান কখনও তার ব্যক্তিগত শাসন প্রতিষ্ঠা কিংবা মানুষকে নিজের গোলামে পরিণত করা এবং তাদের কঠোর শ্রমলব্ধ অর্থ অবৈধভাবে কেড়ে নিয়ে দুনিয়ার বুকে নিজের স্বর্গ সুখ রচনার জন্য যুদ্ধ করেনা আর মুসলমান হিসেবে এ সবের জন্যে সে সংগ্রাম ও করতে পারেনা। দুনিয়ার কোন প্রান্তের কোন দেশের বা কোন জাতির কে এসে শাসন ক্ষমতায় বসলো, তা নিয়েও কোন মাথা ব্যাথা ইসলামের নেই। ইসলাম শুধু দেখে, সে মংগলের ধর্ম ইসলামের অনুসারী কি না। বিজয়ী ও বিজেতা বলে মানুষের মধ্যে কোন বিভেদের দেয়াল তুলে দেয় না ইসলাম। মুসলমানরা যখন তাদের সংগ্রামে জয় লাভ করে, রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক হয়, তখন মুসলিম শাসদের উপর এক বিরাট দায়িত্ব এসে চেপে বসে। এর ফলে ঐ বেচারাদের রাতের ঘুম ও দিনের আরাম পর্যন্ত হারাম হয়ে যায়। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকের চাইতে বাজারের একজন নগণ্য দোকানদারের অবস্থা অনেক ভালো হয়ে থাকে। সে দিনের বেলা খলীফা বা শাসকের চাইতে বেশী উপর্জন করে এবং রাতের বেলা নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাতে পারে। কিন্তু খলীফা বেচারা না তার সমান উপার্জন করার সুযোগ পায় আর না পায় রাতের বেলায় নিশ্চিন্তে ঘুমানোর অবসর। দৃশ্যতঃ সাম্রাজ্যবাদও দেশ জয় করে, কিন্তু উভয়ের প্রকৃতিতে আসমান জমিন পার্থক্য বিদ্যমান।

14/12/2022

মিন্দানাওয়ের বন্দী | সপ্তম অংশ

কয়েকদিন খুবই ব্যস্ত ছিল আহমদ মুসা। মিন্দানাও, সোলো, পালওয়াং ও বাসিলান দ্বীপপুঞ্জের পিসিডার প্রশাসন ইউনিটের যে ট্রেনিং এক মাস আগে শুরু হয়েছিল, তা শেষ হয়ে গেল। ‘সুস্থ ও সফল জন-প্রশাসন ব্যবস্থা প্রশাসন কর্মীর চরিত্র ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল’- এরই অনুশীলন চলেছে ট্রেনিং শিবিরে। আহমদ মুসার পরিকল্পনা অনুযায়ী এই প্রশাসন কর্মীদেরকে তাদের স্ব স্ব অঞ্চলে গিয়ে ‘আইনের উৎস আইন ও আইনের ব্যবহার’ শীর্ষক শিক্ষা কোর্সে আরও ছয়মাস করে কাটাতে হবে।

ট্রেনিং কর্মিদের বিদায় দিয়ে সেদিন দুপুরে আহমদ মুসা ফিরে এলো তার কক্ষে। ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিল বিছানায়।

হঠাৎ টেবিলের ফুলদানির দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হল তার। সঙ্গে সঙ্গে সে উঠে বসলো।

ফুলদানির ফুলগুলো অমন শুকনো কেন? মনে হচ্ছে কয়দিন থেকে ফুল বদলানো হয়নি। এতদিনের মধ্যে এমনটি তো কখনো হয়নি?

আহমদ মুসা লক্ষ্য করল, আলনার কাপড়গুলোও বেশ অগোছালো। যে কাপড় যেভাবে সে রেখেছে, সেই ভাবেই আছে। বিছানারও সেই অবস্থা। চাদর ঠিকাভাবে পাড়া নেই। একদিকে বেশী ঝুলে আছে, অন্যদিকে কম।

এই সময় রুনার মা ঘরে ঢুকল। বলল, জনাবের খাবার তৈরী। আহমদ মুসা ওদিকে কর্ণপাত না করে বলল, ফুলদানিতে শুকনা ফুল কেন রুনার মা?

-আপা মনির অসুখ তো।

-কার শিরীর?

-জি।

-কতদিন ধরে অসুখ?

-আজ চারদিন।

-কি অসুখ?

-জ্বর।

-চারদিন থেকে জ্বর? মুর হামসারকে বাইরে পাঠালাম, সেদিনও কি জ্বর ছিল।

-মুর হামসার তো আমাকে কিছু বলেনি, সে গেল কেন? এটুকু থেমে সে বলল আবার, কি ওষুধ খাচ্ছে?

-ছোট সাহেব ডিসপেনসারী থেকে ওষুধ এনে দিতে বলে গিয়েছিলেন, এনেছি।

-জ্বর কমেনি?

-না, আরও বাড়ছেই যেন?

-রুনার মা, আমাকে এ সংবাদ কেন বলনি? আহমদ মুসার কন্ঠে কঠোরতা ঝরে পড়ল।

রুনার মা ভিত হয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে সে বলল, আপামনিও কিছু বলেনি, আমিও বুঝতে পারিনি। মাফ করবেন জনাব।

-শিরীকে কি খেতে দিচ্ছ?

-কিছুই খায় না। মাঝে মাঝে একটু আধটু গ্লুকোজ খায়।

আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি একটি স্লিপ লিখে রুনার মাকে দিয়ে বলল, এটা নিয়ে গার্ডরুমের খলিলকে দাও। সে যেন এখনি গিয়ে ব্যারাকের হসপিটাল থেকে ডাক্তার নিয়ে আসে। আর তুমি গিয়ে ওর কাছে বস। কোথাও যাবে না। রুনার মা সিস্নপ নিয়ে বেরিয়ে গেল। আহমদ মুসা অয়্যারলেসের সামনে গিয়ে বসল। দক্ষিণ মিন্দানাওয়ে মরো উপসাগরের তীরে সাহেলী ঘাঁটির সাথে যোগাযোগ করল সে। মুর হামসার ওখানেই গেছে।

-মুখ এখনও শুকনা কেন? কোথেকে আসছো রুনার মা?

-আপনার অসুখের কথা বড় সাহেবকে জানানো হয়নি, বড় সাহেব রাগ করেছেন? শিরীর চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, আমার অসুখের কথা কেমন করে উনি জানলেন?

-আমি বলেছি।

-তুমিই তো বলেছে, তাহলে রাগ করলেন কেন উনি?

-আমি তো বলিনি, উনিই জিজ্ঞেস করেছিলেন।

-হঠাৎ কেমন করে জিজ্ঞেস করলেন উনি?

-না, উনি জিজ্ঞেস করছিলেন-রুনার মা, ফুলদানিতে শুকনো ফুল কেন?

-তুমি কি বললে?

-আমি বললাম, আপামনির অসুখ।

-তারপর?

-আমাকে বকাবকি করলেন। খলিলকে ব্যারাকে পাঠালেন ডাক্তার আনতে।

শিরী আর কিছু বললো না। চোখ বুজলো সে। তার মনে আনন্দ বেদনার ঢেউ। ওর কাছ থেকে আর কি চাই। একটু স্মরণ করেছেন, করুণা করেছেন এই তো যথেষ্ট। উনি কাছে আসবেন আমাকে দেখতে অমন দুঃসাহসিক আকাংখা কি আমার সাজে।

খলিল সংবাদ দিল ডাক্তার এসেছে। রুনার মা গিয়ে ডাক্তার নিয়ে এলো।

সব শুনে ঔষধ দিয়ে চলে গেল ডাক্তার।

পাশেই বসে রয়েছে রুনার রুনার মা। শিরী এপাশ ওপাশ ফিরছে, স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। রুনার মা বলল, কষ্ট লাগছে আপামনি?

-না রুনার মা। একটু থেমে বলল, তুমি বসে বসে কষ্ট করছো কেন? শুয়ে আরাম করগে যাও।

-না। বড় সাহেব তোমার কাছে কাছেই থাকতে বলেছেন আমাকে। শিরী কিছু বলল না। অনেকক্ষণ পরে এক সময় ধীরে ধীরে বলল, উনি ঘরে আছেন রুনার মা?

-কে?

-তোমার বড় সাহেব?

-না, বাইরে গেছেন।

-আমি দাঁড়াতে পারব হাঁটতে পারব না। তুমি ধরে আমাকে একটু ওঁর ঘরে নিয়ে যাবে?

-কেন?

-আগে বল, পারবে কি না?

-তোমার হুকুম কোনটা না মেনেছি?

-তাহলে যাও বাগান থেকে ফুলদানির জন্য কয়েকটি গোলাপ নিয়ে এসো।

শিরী রুনার মা’র কাঁধে হেলান দিয়ে আহমদ মুসার কক্ষে গেল। দুর্বল হাতে ধীরে ধীরে ফুল সাজিয়ে রাখল। বিছানায় চাদর পাড়ার ঢং দেখে হাসল শিরী। বলল, এতদিনেও কাজ শিখলে না রুনার মা!

শিরী চাদর ঠিক করতে যাবে, এমন সময় আহমদ মুসার টেবিলের অয়্যারলেস যন্ত্রে লাল সংকেত জ্বলে উঠল, সাথে সাথে একটানা সংকেত শব্দ।

শিরী একটু দ্বিধা করল। একটু ভাবল। হয়তো কোন জরুরী মেসেজ। শিরী গিয়ে অয়্যারলেস রিসিভার তুলে নিল।

ওপার থেকে কন্ঠ ভেসে এলো, আবদুল্লাহ জাবের স্পিকিং।

-আমি শিরী বলছি। মুর হামসারের বোন।

-আমি মুসা ভাইকে চাই।

-উনি বাইরে গেছেন।

-আপনি কি মেসেজ রিসিভ করবেন? একটু দ্বিধা করলো শিরী। তারপর বলল, নিশ্চয় করব।

এই সময় আহমদ মুসা এসে দরজায় দাঁড়াল। শিরীকে অয়্যারলেসে দেখে আহমদ মুসা প্রথমে অবাক হলো। কিন্তু টেবিলের ফুলদানির দিকে চেয়ে ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ আঁচ করতে পারলো। অলক্ষ্যে এক হাসির রেখা খেলা গেল যেন তাঁর ঠোঁটে।

ছোট্ট একটি কাশি দিয়ে ধীর পদে ঘরে ঢুকল আহমদ মুসা। চকিতে মুখ তুলল শিরী। আহমদ মুসাকে দেখেই সে উঠে দাঁড়াল। হাত থেকে পড়ে গেল অয়্যারলেস রিসিভার। অবশ হয়ে গেল তার গোটা শরীর। পড়ে যাচ্ছিল সে। আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি ধরে ফেলল তাকে। নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিল তার বিছানায়।

অজ্ঞান হয়ে গেছে শিরী। মুখে তার পানির ছিটা দিল আহমদ মুসা। মিনিট তিনেকের মধ্যেই তার জ্ঞান ফিরে এলো।

এমন অবস্থার জন্য রুনার মা প্রস্তুত ছিল না। সে মেঝের মাঝখানে দাড়িয়ে কাঁপছিল। আহমদ মুসা তাকে বলল, শিরীকে একটু বাতাস কর রুনার মা, আমি ওদিকে একটু দেখি। তারপর উঠতে উঠতে শিরীকে বলল, আর একটু রেষ্ট নাও, তারপর উঠবে।

আহমদ মুসা গিয়ে রিসিভার তুলে নিল। ওদিকে আবদুল্লাহ জাবেরের উৎকন্ঠা সপ্তমে উঠেছিল। আহমদ মুসার কন্ঠস্বর পেয়েই সে জিজ্ঞেস করল, কিছু ঘটেছে জনাব?

-না কিছু ঘটেনি। অসুস্থ শিরী হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ভাল আছে এখন। বল, কি খবর?

-আজ দুপুরে কাগায়ানে সোভিয়েট এয়ার ফোর্সের প্রতীক চিহ্নিত দু’টি মাউন্টেন ট্রান্সপোর্ট জেট ল্যান্ড করছে। কিন্তু আরোহীদের প্রত্যেকেই ইহুদী প্যারাট্রুপারস। চারজন সোভিয়েট অফিসারকে ওদের সাথে দেখা গেছে।

-প্যারাট্রুপারসদের সংখ্যা কত?

-দুই জেটে বিশজন। আরও দু’টি নাকি আছে।

-তাহলে আরও বিশজন। তুমি কি আচঁ করছ?

-আমি বুঝতে পারছি না, এই সব অত্যাধুনিক মাউন্টে জেট এখানে কেন?

হাসলো আহমদ মুসা। বলল, কারণ ঐ জেটগুলোর পক্ষেই শুধু আপো-পর্বতের অসমতল উপত্যকায় ল্যন্ড করা সম্ভব।

-বুঝেছি জনাব, অসম্ভব দুঃসাহস।

-কাজের জন্য অসম্ভব দুঃসাহসই প্রয়োজন।

একটু থেমে আহমদ মুসা আবার বলল, সোভিয়েট ইউনিয়ন ও ইরগুন জাই লিউমির এটা এক যৌথ ব্লিৎস-ক্রিগ-পরিকল্পনা। কিন্তু এ পরিকল্পনাকে আপো-পর্বত পর্যন্ত গড়াতে দেয়া যাবে না। আমি আসছি।

-আজই আসছেন?

-খোদা করেন ভোর হবার আগেই আমি কাগায়ানে পৌছে যাব।

আহমদ মুসা লাইন কেটে দিল। ওদিকে শিরী আহমদ মুসার বিছানায় শুয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। গোটা দেহে অপরিচিত এক অদৃশ্য মধুর ছোঁয়াছ যেন অনুভব করছে সে। শিরীর মনে পড়ল, অয়্যারলেস টেবিল থেকে সে পড়ে যাচ্ছিল, কে যেন এসে তাকে ধরল, তারপর আর কিছুই মনে পড়ে না। ওখান থেকে তাঁকে বিছানায় আনল কে? রুনার মা? অসম্ভব তার পক্ষে। তাহলে উনি? কথাটা মনে হতেই গোটা দেহ তার থর থর করে কেঁপে উঠল। চোখ খুলে চাইবার সাধ্যও যেন নেই তার। আহমদ মুসার সবগুলো কথা সে শুনতে পাচ্ছিল, কিন্তু চোখ খুলে একবারও ওর দিকে চাইতে পারছিল না।

আহমদ মুসা অয়্যারলেস টেবিল থেকে উঠে দাড়িয়ে রুনার মাকে লক্ষ্য করে বলল, রুনার মা, শিরীর দিকে লক্ষ্য রেখ। যখন যেটা হয়, হসপিটাল থেকে ওষুধ এনে দেবে। আমি বলে যাব সবাইকে। আর মুর হামসার আজ কিংবা কালের মধ্যেই এসে পড়বে।

আহমদ মুসা বাথরুমে প্রবেশ করল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে দেখল শিরীও নেই, রুনার মাও নেই। ঠোঁটে তার একটুকরো হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু মন তার কেঁপে উঠলে ভীষণ ভাবে। সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে কোন প্রশ্রয় কি সে দিয়েছে শিরীকে? না কখনও না। শিরীর সাথে তার দেখা এবং যা যা ঘটেছে সবই ঘটনা প্রবাহের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। এমন কতই তো ঘটতে পারে-ঘটে থাকে। তবু আহমদ মুসা মেনে নিল, সাবধান হতে হবে। সোলো রাজকুমারীর দুঃখের বোঝা যেন সে আর না বাড়ায়।

আহমদ মুসা পোশাক পরে তার সেই পরিচিত ব্যগটি তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। উঠার সময় ফুলদানি থেকে একটি গোলাপ তুলে নিল, কিন্তু পরক্ষনেই কিছুটা কম্পিত হাতে সে গোলাপটি রেখে দিল ফুলদানিতে। কিন্তু রেখে দিয়েও স্বস্তি পেল না সে। মন যেন অতি স্পষ্ট কন্ঠে বলল, ফুলটি রেখে দিয়েই কি তুমি তোমার দুর্বলতাকে মুছে ফেলতে চাইছ? আবার কেঁপে উঠার পালা আহমদ মুসার। বিবেকের আলো যেখানে পৌছে না মনের এমন অবচেতন জগতে সে কি কোন অন্যায় করে বসে আছে তাহলে?

পা দু’টি তার থেমে গেল। উপরের দিকে চেয়ে বলল, ‘প্রভূ আমার মনকে তো আমি তোমার আনুগত্য থেকে পৃথক করে রাখিনি?

তারপর সে আবার পা’ দুটি চালিয়ে দিল সামনে।

27/11/2022

মিন্দানাওয়ের বন্দী | ষষ্ঠ অংশ
লেখকঃ আবুল আসাদ স্যার

আপো পর্বতে পিসিডার হেড কোয়ার্টার। আহমদ মুসার কক্ষ। একটি সেক্রেটারিয়েট টেবিলের পাশে রিভলভিং চেয়ারে বসে আছে আহমদ মুসা। তাঁর ডান পাশে এক বৃদ্ধ। মাথায় শ্বেত-শুভ্র বাবরি, মেহেদিরঞ্জিত দাড়ি। সফেদ পোশাক পরিধানে। তাঁর মুখমন্ডল থেকে পবিত্র এক জ্যোতি যেন ঠিকরে পড়ছে। ইনি আবু আল্-মখদুম। সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে প্রাচীন পবিত্র কুঞ্জবন মসজিদের ইমাম। এই মসজিদের পাশেই এক সমাধিতে শুয়ে আছেন করিম আল-মাখদুম। আজ এগার শ’ বছর ধরে সোলো ও মিন্দানাওবাসীদের হৃদয় নিংড়ানো ভক্তি-শ্রদ্ধার কেন্দ্র এই মাজার-এই মসজিদ। সেই সুলতান আবুবকর থেকে সোলো ও মিন্দানাওয়ের সকল সুলতানের রাজ্যাভিষেকের কেন্দ্রও এই মসজিদ- এই মাজার।

আহমদ মুসার বাম পাশে বসেছিল মুর হামসার।

পাশের আপওয়ান উপত্যকা থেকে ভেসে আসছিল আজানের সুর। উপত্যকা অধিত্যকায় ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে কেঁপে কেঁপে আজানের শেষ সুরটুকুও মিলিয়ে গেল বাতাসে।

আলী আল-মখদুমের পাতলা ঠোট দু’টি নড়ে উঠল। অষ্ফুটে শ্রুত হলো তাঁর কণ্ঠ ‘‘আহ! আজ সে কত বছর আগে!! সোলো মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের মানুষ তখন পশুর মত পশুর সাথে উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াত। পূজা করত তারা জড়পদার্থের। স্রষ্টার কোন পরিচয় তারা জানত না। এমনি দিনে ১৩১১ খৃষ্টাব্দের এক সুবেহ সাদেক। সোলো সাগরের অথৈ জলে ভাসমান সোলো দ্বীপুঞ্জে ‘সীমনুল’ দ্বীপ। কাঠের উপরে লোহার পাত বসানো একটি নৌকা ঢেউয়ের তালে নাচতে নাচতে এসে ভিড়ল সেই দ্বীপে। জাহাজ থেকে প্রথমে নামলেন একজন আরব। পরে আরও কয়েকজন তাঁর চীনদেশী সাথী। সোলো সাগরের পানিতে অজু করলেন তাঁরা। তারপর সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে প্রথম বারের মত ধ্বনিত হলো আজানের সুর- আহ! এই সেই আজান! কিন্তুু যিনি সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আজান দিয়েছিলেন, প্রথম নামাজ পড়েছিলেন, সেই অলি আল্লাহ করিম আল-মখদুম আজ নেই। আমরা তারই অধস্তন। কিন্তু.........

থামলেন আলী আল-মাখদুম। রুমালে চোখ মুছলেন তিনি। মোহমুগ্ধের মত আহমদ মুসা চেয়ে আছে তাঁর দিকে।

আবার মুখ খুললেন তিনি। তারপর গড়িয়ে গেছে কতদিন। সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের অন্ধকার বুককে আলোকিত করে তুলল ইসলাম। মানুষকে মানুষ বানাবার সাধনায় মগ্ন হলো মুসলমানরা। আরো পরে সুমাত্রা থেকে এলেন যুবরাজ রাজাহ বরগুইবা আলী এক বিরাট নেŠবহর নিয়ে। ইসলামের শিখা উজ্জ্বলতার হলো আরও। উল্টে চললো কালের পাতা। গত হলো একশ’ উনচলিস্নশ বছর। আরব ভূমি থেকে এলেন পাদুকা মহাসরি মওলানা আস সুলতান শরিফ আল হাসমি সুলতান আবু বকর। সোলো ও মিন্দানাওয়ে মুসলিম সালতানাতের সৃষ্টি হলো তাঁর হাতেই। আইনের বিধিবদ্ধকরণ, শরিয়তী ব্যবস্থা প্রবর্তন, আরবী বর্ণমালার প্রচার ও প্রসার সাধন এবং শাসন সুবিধার জন্য আঞ্চলিক বিভাগ গঠন তার হাতেই সম্পাদিত হলো। তারপর অতি নীরবে, অপরিসীম প্রশান্তিতে এগিয়ে চলল ইসলামের অগ্রযাত্রা ছ’ শ’ বছর ধরে।

থামলেন আলী আল্ মাখদুম। ভাবনার কোন অতল রাজ্যে তিনি হারিয়ে গেছেন। আহমদ মুসা বললেন, তারপর জনাব।

-তারপর শান্তির রাজ্যে ঘটে গেল বিপর্যয়। গলায় ক্রস দুলিয়ে আর হাতে বন্দুক নিয়ে এল খৃষ্টান পর্তুগীজ ও স্পেনীয়রা। তারপরের ইতিহাস অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে সংঘাত আর সংঘর্ষের ইতিহাস।

একটু থামলেন আলী আল্ মাখদুম। তারপর পরিপূর্ণভাবে আহমদ মুসার দিকে চেয়ে তিনি বললেন, সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্যায়ে তোমাকে আমরা পেয়েছি বাবা আল্লাহর মহাদান হিসেবে। আমি আশা করি, আমি দোয়া করি অলি আল্লাহ করিম আল মখদুমের দেশে আবার তুমি হাসি ফুটিয়ে তুলবে।

শেষের কথাগুলো বলতে বলতে কন্ঠ ভারী হয়ে উঠল আলী আল মখদুমের। চোখ দু’টি বুজে গেল তার।

সবাই নীরব। নীরবতা ভাঙলেন আহমদ মুসা নিজে। মুর হামসারের দিকে চেয়ে বললেন, ভাবতে বিস্ময় লাগে, এত সম্পদ এত প্রাচুর্য সত্ত্বেও সোলো ও মিন্দানাওবাসীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।

মুর হামসার বলল, ভাগ্যের পরিবর্তন তাদের হয়েছে, তাদের অনেকের গলায় ক্রস ঝুলছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর কিছু না হোক দেশে আপনি বহু মিশনারী স্কুল ও মিশনারী হাসপাতালের সাইন বোর্ড দেখতে পাবেন। ঐসব মানুষ ধরার ফাঁদে যারা পা দিচ্ছে, তাদেরকে ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না।

থামল মুর হামসার। আহমদ মুসা বললো, ঘৃণ্য কৌশল এটেছে ওরা। মিন্দানাওবাসীদের অন্ধকারে রেখে, অনুন্নত রেখে বিশ্ববাসীর অলক্ষ্যে তাদের হজম করে ফেলার পরিকল্পনা এটেছে ওরা।

-বিপদ শুধু একদিক থেকে নয় ভাইয়া। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণের জন্য কমিউনিষ্ট শক্তি তৎপর হয়ে উঠেছে। আলী কাওছারের ঘটনা তাদের ষড়যন্ত্রের একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। এছাড়া রয়েছে ‘ফিলিপাইন জাতীয়তা’ নামক সর্বগাসী ষড়যন্ত্রের আর এক বিষাক্ত থাবা। ত্রিমুখী সংগ্রাম আমাদরে সামনে।

থামল মুর হামসার। কিছু বলার জন্য আহমদ মুসা মুখ খুলেছিল। কিন্তু বলা হলো না। টেবিলের অয়ারলেস যন্ত্রে লাল সংকেত জ্বলে উঠল। একটানা বিচিত্র এক শব্দ উঠল যন্ত্র থেকে।

অয়ারলেস যন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ল আহমদ মুসা। কানে তুলে নিল অয়ারলেস রিসিভার।

-আহমদ মুসা স্পিকিং।

ওপার থেকে একটি স্পষ্ট কন্ঠ ভেসে এলো, আমি আবদুল্লাহ জাবের।

-কি খবর বল! উৎগ্রীব কন্ঠ বলল আহমদ মুসা।

আবদুল্লাহ জাবের লিলিয়েভের ঘটনা সমস্তটা আহমদ মুসাকে জানাল, তারপর বলল, আমি বলছি, লিলিয়েভের সে চিঠি লিখে নিন জনাব।

আহমদ মুসা বাম হাতে ওয়ারলেস রিসিভার ধরে রেখে ডান হাতে প্যাড ও কলম টেনে নিল। সাইমুমের পরিচিত কোডে প্রেরীত চিঠিটি লিখে চলল সে-

চেয়ারম্যান

ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান

দিভাও মিন্দানাও।

আমরা আপনাদের হারানো জাহাজ, রেডিয়েশন বম্ব এবং আহমদ মুসার সঠিক অবস্থানের পুর্ণ তথ্য অবগত রয়েছি। আমরা এসব তথ্য দিয়ে আপনাদের সাহায্য করতে পারি, যদি আপনারা আমাদের সাথে নিম্নলিখিত শর্তে রাজী হনঃ

এক, দক্ষিণ চীন সাগর ও সোলো উপসাগরের মধবর্তী পালওয়াং দ্বীপে সোভিয়েট নৌবহরের স্থায়ী ল্যান্ডিং সুযোগ থাকবে।

দুই, সোলো ও মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে যীশুর রাজত্ব কায়েম হোক আপত্তি নাই, কিন্তু সেখানে প্রগতিশীল আন্দোলনের পথ বন্ধ করা চলবে না। দিভাও কারাগার থেকে প্রগতিশীল কর্মী চার্লস হ্যামিলটনকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে।

তিন, উত্তর মিন্দানাওয়ের কাগায়ান বেজ সোভিয়েট ইয়ারফোর্সে মাত্র তিনদিনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি চায়।

উপরোক্ত শর্তগুলো যদি ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান ও তার পরিচালিত সেখানকার সরকার মেনে নেয় তাহলে আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব পথ অনুসরণ করব।

কাগনোয়াভিচ

চেয়ারম্যান,

সোভিয়েট ফার ইষ্ট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস

চিঠি নোট শেষ করা হলে আহমদ মুসা বলল, লিলিয়েভ মিশনের ব্যর্থতায় সোভিয়েট ইনটেলিজেন্স আরও পাগল হয়ে উঠবে। আবার আসবে তারা দিভাওয়ে। তা আসুক। তুমি আজই চলে এসো কাগায়ানে। শরিফ সেখানে আছে। তোমাদের কাজ হবে কাগায়ান বেজের কার্যধারার প্রতি নজর রাখা। আর শোন, লিলিয়েভের ব্যাগ-ব্যাগেজ এখন তোমার ১১ নং কেবিনেই তো রয়েছে?

-হ্যাঁ।

-তাহলে, লিলিয়েভের ঐ চিঠি তুমি যেখানে পেয়েছিলে, সেখানেই রেখে দাও গিয়ে। কাল সকালে ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান নিশ্চয় সেখানে যাবে, পরে হয়তো আসবে সোভিয়েট ইনটেলিজেন্সেরও কেউ। চিঠি যেন তারা ওখানে পায়। নিরুদ্বেগে তারা তাদের প্লান নিয়ে এগোক সামনে। থামল আহমদ মুসা। একটু থেমে আবার বলল, আর কিছু বলবে জাবের।

-লিলিয়েভকে কি করব? হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দেব?

-না, এখানে স্মার্থা আছে। সবাইকে একখানে করা ঠিক হবে না। ওকে ওখানেই আটকে রাখবে।

-আচ্ছা।

-আচ্ছা রেখে দাও।

বলে লাইন কেটে দিল মুসা। তারপর ওয়্যারলেসের কাটা ঘুরিয়ে ভিন্ন এক ওয়েভলেংথে জাম্বোয়াঙ্গোতে এহসান সাবরীর সাথে যোগাযোগ করল।

ওপার থেকে এহসান সাবরীর কন্ঠ ভেসে এল- আমি এহসান সাবরী।

-আমি আহমদ মুসা।

-আদেশ করুন জনাব।

-শুধু আদেশ করার জন্যই কি তোমাদের খোঁজ নিয়ে থাকি এহসান?

-মাফ করুন জনাব। আপনি আমাদের নেতা। আদেশ তো আপনার কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।

-আমি যেটা দিয়ে থাকি, ওটা পথ নির্দেশনা মাত্র, আদেশ নয়। আদেশের অধিকার তো একমাত্র আল্লাহরই। ইনিল্ হুকমো ইলল্লা-লিলল্লাহ’- পড়নি?

ওপারে এহসান সাবরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। বলল সে, আপনার এ নির্দেশ আমার মনে থাকবে।

শুন এহসান, মিন্দানাওয়ে আমাদের অবস্থান ইরগুন জাই লিউমি, ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান ও সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্স-এর কাছে অজানা নেই। এখানে ব্যর্থ হবার পর সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্স কাগায়ানে বেজ করে কিছু করতে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটা হবে ঐ ত্রিপক্ষের কোন এক যৌথ পরিকল্পনা তুমি প্রস্তুত থেকো। ওদের ওদিকে ব্যস্ততার সুযোগে আমরা জাম্বুয়াঙ্গোতে আঘাত হানব। জাম্বুয়াঙ্গো বন্দর আমাদের হাতে এলে সমগ্র সোলো সাগর ও সেলেবিস সাগরের উপর নজর রাখতে পারবো-আমাদের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর উপকূল নিরাপদ হবে।

আর শোন, আমাদের ৫০ স্পিড বোটের সবগুলোকেই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র সজ্জিত করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে আমি পাঁচটিকে কাগায়ান উপসাগরে রেখে অবশিষ্টগুলোকে জাম্বুয়াঙ্গো ঘাঁটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি এর মধ্যে পাঁচটি তোমার জন্য রেখে অবশিষ্টগুলো ২টি করে সবগুলো উপকূলীয় ঘাঁটিতে পৌছে দেবে। রাতের অন্ধকারে অতি গোপনে সমাধা করবে একাজ।

-কিন্তু পেট্টোলের যে ষ্টক আছে, তা তো খুব অল্প।

-সে চিন্তা আমি করেছি। লিবিয়া থেকে ওয়েল ট্যাংকার এম,ভি, সেনুসি আসছে। ওটা এসে নোঙ্গর করবে নর্থ বোর্নিওর সান্দাকান বন্দরে। সেখান থেকে ইন্দোনেশীয় কোষ্টার পিপা ভর্তি তেল নিয়ে আসবে জাম্বুয়াঙ্গো থেকে ৭৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে জনমানবহীন জামুন দ্বীপে। সেখান থেকে তোমাকে তেল সংগ্রহ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি।

-আচ্ছা।

-আর কিছু বলার আছে?

-জি না।

-রেখে দিলাম।

অয়্যারলেস ছেড়ে দিয়ে আলী আল-মখদুমের দিকে চেয়ে আহমদ মুসা বলল, হুজুর, কষ্ট দিলাম আপনাকে, অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি।

-একি বলছ বাবা, আমার ১১০ বছরের জীবনে এমন আনন্দ আমি কোনদিন পাইনি। অপরিসীম কষ্ট করছ তোমরা এ দুঃখী জাতির জন্য। আজ অমি যদি যুবক হতাম.......... কান্নায় বৃদ্ধের গলা বুঁজে এলো। থামল সে। ঢোক গিলে আবার সে বলল, আজ মনে হচ্ছে, আমার কর্ম-জীবনের দীর্ঘ ৮০টি বছর বৃথাই নষ্ট করেছি করিম আল-মখদুমের মাজারে বসে তসবি টিপে আর-হা-হুতাশ করে। জালল্লাজালালুহুর তসবি টিপেছি বটে মাজারে বসে, কিন্তু তাঁর প্রতাপে তোমাদেরকে যেমন জাতির মুক্তির জন্য আজ পাগল করে তুলেছে, তেমন তো কোনদিন হয়নি আমার।

বৃদ্ধের দু’গন্ড বেয়ে অবিরাম ধারায় নামছিল অশ্রু। হৃদয়ের বেদনা যেন তাঁর চোখ দু’টি দিয়ে ঠিকরে পড়ছে। সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসার হাত দু’টি ধরে বলল, তোমাদের কিছু কাজ আমাকে দাও বাবা। এ বৃদ্ধ কিছু করতে না পারলেও শত্রুদের একটি বুলেট, আর কিছু সময় তো নষ্ট করতে পারবে। আর এটাই হবে আমার জীবনের পরম সঞ্চয় তাঁর কাছে।

আহমদ মুসা উঠে দাঁড়িয়ে আলী আল-মখদুমকে ধীরে ধীরে বসিয়ে দিতে দিতে পরম শ্রদ্ধাভরে বললো, যুবকদের জন্য এ প্রেরণা সৃষ্টিই আপনার আজ সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জনাব। আহমদ মুসা বলল, তারপর আজ এই রাতে এই মুহূর্তে যে প্রেরণার উষ্ণ পরশ আপনার কাছ থেকে পেলাম, তা অক্ষয় হয়ে থাকবে আমার জীবনে। আপনার অশ্রু হয়ে নেমেছে আপনার চোখে। এ অশ্রুর মূল্য অপরিসীম। এ অশ্রুর জ্বালা যুবকদের পাগল করে। আর এ পাগল যুবকরাই পারে রক্তের সাগর পিছনে ফেলে লক্ষ্যে পৌছুতে।

বয়সের ভারে পীড়িত আলী আল মাখদুম অবসন্ন হয়ে পড়েছে চেয়ারের উপর। চোখ দু’টি তাঁর মুদ্রিত।

আহমদ মুসা মুর হামসারের দিকে চাইল। মুর হামসারের অশ্রুসিক্ত চোখে শপথের দীপ্ত শিখা। ধীর স্বরে আহমদ মুসা তাকে বলল, আজকেই জেদ্দার এমপিআই (মুসলিম প্রেস ইন্টারন্যাশনাল) হেড কোয়ার্টারে একটি চিঠি লিখ। লিখ- ইরগুন জাই লিউমি’ তাদের স্বীয় স্বার্থ সংশিস্নষ্ট একটি তথ্যের বিনিময়ে সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্সকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক জটিল মারণাস্ত্র ‘ঘুমন্ত টর্পেডো’ সম্পর্কিত গোপন তথ্য পাচার করছে। আরও বলতে হবে, এই ষড়যন্ত্রের সাথে পেন্টাগনের ইহুদী মারণাস্ত্র বিজ্ঞানীদের যোগ-সাজস রয়েছে। ব্যস এইটুকুই যথেষ্ট।

-কিন্তু এ থেকে আমরা কি বাস্তব ফল লাভ করব ভাইয়া।

-সর্বোচ্চ লাভের কথা বাদ দিলাম, সর্বনিম্ন লাভ হল, এর ফলে ইহুদী স্বার্থ ও মার্কিন স্বার্থের মধ্যে অলক্ষ্যে এক ভেদরেখার সৃষ্টি হবে। ইরগুণ জাই লিউমি ও ইহুদী বিজ্ঞানীদের উপর মার্কিন গোয়েন্দারা চোখ রাখবে যার ফলে ইরগুণ জাই লিউমির পক্ষে সোভিয়েট ইন্টেলিজেন্সকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা কঠিন হবে।

হেসে উঠল মুর হামসার। বলল, ঠিক ভাইয়া, রেডিয়েশন বম্ব কেলেঙ্কারী হয়েছে, এবার ‘ঘুমন্ত টর্পেডো’ কেলেঙ্কারী প্রকাশ হয়ে পড়লে ইহুদী মার্কিন চীড় ধরা স্বার্থে ফাটল ষ্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং পরিনামে তা সংঘাতে রূপান্তর লাভ করতে পারে।

আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বললো, হুজুরকে শুইয়ে দেবার ব্যবস্থা কর মুর হামসার।

24/11/2022

বলছিলাম ""১৪৯১ সালের গ্রানাডার তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা আব্দুল্লাহর কথা:""

যখন সুলতান আবু আবদুল্লাহ ফার্ডিন্যান্ডের হাতে গ্রানাডা নগরীর চাবি তুলে দিয়ে তার সামনে মাথা নত করে নিরাপত্তা ও ক্ষমা–ভিক্ষা করতেছিল।
তখন গ্রানাডার আরেক সিংহ–দিল তরুনের কথা আমার মনে পড়েছিল। তিনি তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা আবদুল্লাহ।
যখন সুলতান আবু আব্দুল্লাহর আত্ন-সমর্পণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন দরবারে আমির-উমরাহ ও উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিক আত্নসমর্পণের পক্ষে মত দিচ্ছিল।

তখন প্রতিবাদের জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে এই তরুন সেনাধ্যক্ষ বলল, ‘শেষ পর্যন্ত শত্রুর সঙ্গে লড়াই করা হোক। দরকার হয়, তাদের বর্ষার মুখে গিয়ে আমরা আত্মহত্যা করব।
যেখানে শত্রু সবচেয়ে প্রবল, সৈনিকদের সেখানে নিয়ে যেতে আমি প্রস্তুত।
যারা বেঁচে থেকে গ্রানাডা নগরীকে শত্রু হস্তে অর্পণ করবে, তাদের মধ্যে গণ্য হওয়ার চেয়ে যারা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন-পাত করবে, তাদের মধ্যে গন্য হওয়াকে আমি গৌরবের মনে করি।
কিন্তু এই তরুণের প্রতিবাদ কোন কাজে আসেনি।

সুলতান এবং দরবার আত্নসমর্পণেরই সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গোটা দরবার শিশুর মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

শুধু কান্না ছিল না ওই তরুণ সেনাধ্যক্ষের চোখে। সে কান্নার রোলের মধ্যে উঠে দাঁড়াল সেই তরুণ আবার।

উচ্চ কন্ঠে বলল, ‘জাতির প্রবীণ সর্দারবৃন্দ, অর্থহীন রোদন আর বিলাপ ছেলেদের ও অবলা নারীদের জন্যে রেখে দিন। আমরা পুরুষ। আমাদের অন্তর অশ্রু বর্ষণের জন্যে সৃষ্টি হয়নি, রক্ত বর্ষণের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে।

আসুন আমরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে করতে বীরের মত আত্নবিসর্জন করি। গ্রানাডার উপর যে অন্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতিকারার্থে মৃত্যুকে বরণ করি। আমাদের মৃত দেহকে আচ্ছাদিত করার জন্যে যদি এক মুঠো মাটিও না জোটে, উদার অন্তহীন আকাশের কখনও অভাব হবে না।’ তরুণ সেনাধ্যক্ষ কথা শেষ করে থামল।

সমগ্র দরবার নিরব, নিস্পন্দ। সুলতান আবু আবদুল্লাহ আগ্রহ ভরে দরবারের মুখগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। সাহস, শৌর্য ও আগ্রহের একটি কথাও বিশাল দরবারে একটি কন্ঠ থেকেও উচ্চারিত হল না।

দূর্বল চিত্ত সুলতান আবু আবদুল্লাহ কাতর কন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তকদীরের বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই। তকদীরের ফলকে অতিস্পষ্টভাবেই লেখা আছে, আমার জীবন হতভাগ্যের জীবনেই পর্যবসিত হবে। সাম্রাজ্য আমার শাসনকালেই বিলুপ্ত হবে।

অবশেষে আত্নসমর্পণের সিদ্ধান্ত যখন দরবারে চুড়ান্ত হয়ে গেল, আত্নসমর্পণ পত্রে স্বাক্ষরের জন্যে সুলতানের কলম উত্তোলিত হলো, তখন তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা ক্রোধ-কম্পিত কন্ঠে শেষবারের মত চিৎকার করে উঠল,

‘আপনারা নিজেদের প্রতারিত করবেন না। মনে ভাববেন না যে, খৃষ্টানেরা তাদের অঙ্গীকার পালন করবে। যে লাঞ্ছনা এবং বিপদ আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, তার তুলনায় মৃত্যু তুচ্ছ ব্যাপার। আমাদেরই চোখের সামনে আমাদের এই প্রিয় নগরী লুন্ঠিত হবে, আমাদের মসজিদ, এবাদতগৃহ নিগৃহীত, অপমানিত হবে, আমাদের গৃহ-সংসার বিধ্বস্ত হবে, আমাদের স্ত্রী-কন্যারা উৎপীড়িত-ধর্ষিতা হবে।

নিষ্ঠুর অত্যাচার, হৃদয়হীন অসহিষ্ণুতা, চাবুক এবং শৃঙ্খল, অন্ধকার কারাগৃহ, মৃত্যুর অগ্নিকুন্ড, ফাঁসির কাষ্ট,এ সবই আমাদের দেখতে হবে, এ সবই আমাদের সহ্য করতে হবে। অন্ততঃ এই সব হতভাগ্য কাপুরুষেরা এসব দেখবে- এখন যারা সম্মানজনক মৃত্যুকে বরণ করতে কুন্ঠিত।

আমি নিজের কথা বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ, আমার চোখ এসব কখনো দেখবে না।’ তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা কথা শেষ করে বেরিয় এল দরবার থেকে।
সে নেমে এল রাজপথে। কারও সাথে কথা বলল না, কারও দিকে তাকালোও না সে। ঘরে গিয়ে অস্ত্রে-শস্ত্রে নিজেকে সজ্জিত করল, আরোহন করল নিজের প্রিয় অশ্বে। তারপর গ্রানাডা নগরীর ‘এলভিরা’ নামক সিংহদ্বার অতিক্রম করে দৃঢ় পদক্ষেপে যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলল।

আমরা হারালাম তরুণ সেনাধ্যক্ষকে,,,
তারসাথে আমাদের অতীতকেও হারিয়ে ফেললাম।

24/11/2022

""বলছিলাম, কর্ডোভার বড় মসজিদটির কথা
বলছিলাম,স্পেনের মুসলিম স্বর্ণযুগের কথা""

সূর্য অস্ত যাবার তখনও বাকি।

এক খন্ড কালো মেঘ ঢেকে দিয়েছে সূর্যকে।

চারদিকে সন্ধ্যার আগেই নেমেছে সন্ধ্যার বিষণ্ণতা।

সেই বিষণ্ণতার ছাপ পড়েছে গোয়াদেল কুইভারের বুকে। গোয়াদেল কুইভারের নিরব স্রোত যেন বেদনার অশ্রু। আর তার দু’তীরে দাঁড়ানো কার্ডোভা নগরী যেন বিধ্বস্ত এক মুখচ্ছবি।

গোয়াদেল কুইভারে বয়ে চলেছে সেই বিধ্বস্ত মুখচ্ছবিরই অশ্রুর প্রস্রবণ।

গোয়াদেল কুইভারের তীরে দাঁড়ানো স্পেনে ৮শ’ বছর রাজত্বকারী খলিফাদের প্রাসাদ আল কাজার থেকে যন্ত্রণার বিলাপ উঠছে। সে প্রাসাদ মৃদু বিধ্বস্ত-উলংগ নয়, অপমানের আগুনে দগ্ধ করার জন্যে তাকে বানানো হয়েছে জেলখানা।

আল-কাজারের অল্প দূরে এক ফোঁটা তপ্ত অশ্রুর মতো দাঁড়িয়ে আছে কর্ডোভার বড় মসজিদ। ১২৯৩টি স্তম্ভ, যাকে ষ্ট্যানলি লেনপুলও স্তম্ভ অরণ্য বলে অভিহিত করেছেন, এর ওপর দাঁড়ানো যে মসজিদটির বুক আবৃত থাকতো ৪৭ হাজার ৩শ কার্পেটে, যার বুক আলোকিত করতে ১০ সহস্র আলোক শিখা,

তার সুউচ্চ মিনার আজ ভগ্ন, দরজা-জানালা লুন্ঠিত, দেয়াল-গাত্রের সৃদৃশ্য পাথর অপসৃত, মেঝে ক্ষত-বিক্ষত, তার সমগ্র বুকটি জমাট অন্ধকারে আবৃত, মুয়াজ্জিন নেই, আজানের অনুমতিও নেই, নামাজী নেই, নামাজীদের পদক্ষেপও সেখানে নিষিদ্ধ। আসন্ন সন্ধ্যার বিষণ্ণ অন্ধকারে মুখ গুঁজে ক্ষত-বিক্ষত দেহ আর হৃদয়ের অসীম যন্ত্রণা নিয়ে মসজিদটি যেন গুমরে কাঁদছে! এই কান্নার রোল উঠছে দশ মাইল দীর্ঘ কর্ডোভার ২ লাখ ৬০ হাজার বিশ্বস্ত ভবনের অন্তরদেশ থেকেও।

সে দেখতে পাচ্ছে কর্ডোভার অতীতকে, কর্ডোভার মধ্য দিয়ে স্পেনের মুসলিম অতীতকে।

সমগ্র ইউরোপ অজ্ঞতার অন্ধকারে যখন নিমজ্জিত, তখন মুসলমানদের হাতে প্রজ্বলিত জ্ঞানের শিখায় স্পেন ছিল সূর্যকরোজ্জ্বল মধ্যদিনের মতো দেদীপ্যমান।

স্ট্যানলি লেনপুল (Moors in Spain)-এর ভাষায় ‘খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর কথা।

তখন আমাদের স্যাকসন পূর্বপুরুষগণ কদর্য কুটিরে বসবাস করতেন, তখন আমাদের ভাষা গঠিত হয়নি; লেখা-পড়া প্রভৃতি অর্জিত গুণাবলীও অত্যল্প সংখ্যক মঠাধ্যক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, ইউরোপ তখন বর্বরোচিত অজ্ঞতা ও অসভ্যোচিত আচার-ব্যবহারে নিমগ্ন ছিল,
আন্দালুসিয়ার রাজধানী (কর্ডোভা) সে সময় বিম্ময়কর বৈসাদৃশ্যের পরিচয় দেয়।’ এ কর্ডোভা নগরীতেই তখন ৩৫০টি হাসপাতাল ও ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। অসভ্য ইউরোপীয়রা যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বুঝত না এবং পানি স্পর্শ না করাকেই কৃতিত্বের মনে করতো, তখন এক কর্ডোভাতেই ছিল ৯০০টি পাবলিক হাম্মামখানা জনগনের গোসলের জন্যে।

কর্ডোভাতে যখন মানুষ সরকারী বাতির আলোকে উজ্জ্বল রাস্তায় আনন্দে চলাফেরা করত, তার সাতশ’ বছর পরেও লন্ডনের রাস্তায় সরকারী বাতি জ্বলেনি।

ইউরোপ যখন বিদ্যালয় কাকে বলে জানতো না, তখন স্পেনের মুসলিমরা জ্ঞান চর্চার জন্যে যে অগণিত বই ব্যবহার করতো তার নামের তালিকাটাই ছিল ৪৪ খন্ডে বিভক্ত।
তাতে হেনরী স্মীথ ইউলিয়ামস বলেছেন,
‘মুসলমানরাই স্পেনকে সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল করেছে, তারা স্প্যানিশদের শিল্পকলা, দর্শন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, অংক ও জ্যোতির্বিদ্যা।’

এই মুসলমানদেরকে সীমাহীন বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। এই বর্বরতার চিহ্ন পাওয়া যায় সমগ্র স্পেনে, পাওয়া যায় মালাগা, গ্রানাডা, শেভিল প্রভৃতি অসংখ্য শহরে, সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় কার্ডোভায় এলে।

মিন্দানাওয়ের বন্দী | পঞ্চম অংশলেখকঃ আবুল আসাদ স্যারক্লু-ক্লাক্স-ক্লান পাগল হয়ে উঠেছে। জলজ্যান্ত জাহাজটি গেল কোথায়? বানিও...
21/11/2022

মিন্দানাওয়ের বন্দী | পঞ্চম অংশ

লেখকঃ আবুল আসাদ স্যার

ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান পাগল হয়ে উঠেছে। জলজ্যান্ত জাহাজটি গেল কোথায়? বানিও সেলিবিসের মধ্যে দিয়ে জাহাজটি যখন মাকাসার প্রণালী পার হচ্ছিল তখনও জাহাজটি দিভাও-এর সাথে রেডিও লিংক বজায় রেখেছে। তারপর সেলিবিস সাগর থেকে জাহাজ যাবে কোথায়?

ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান ও ইরগুন জাই লিওমির যৌথ অনুসন্ধানকারী দল গত এক মাসে সোলো সাগর, সেলিবিস সাগর, মরো উপ-সাগর ও দিভাও উপ-সাগর চষে ফেলেছে। ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান আর কিছু নয় চায় শুধু রেডিয়েশন বম্ব। আবদুল্লাহ হাত্তাকে তো মেরেই ফেলা হয়েছে। সুতরাং জাহাজের ১০০টি রেডিয়েশন বম্ব ফিরে পেলে জাহাজ শুদ্ধ সবকিছু চুলোয় যাক ক্ষতি নেই। আর ইরগুন জাই লিউমি আঙুল কামড়াচ্ছে আহমদ মুসাকে হাতে পেয়ে হারিয়ে। একবার ওকে হাতের মুঠোয় পেলে ফিলিস্তিনের বিজয় উলল্লাসকে তারা থামিয়ে দিতে পারতো।

সুতরাং তারা হন্যে হয়ে খুঁজছে সব জায়গা। সেলিবিস সাগর থেকে মিন্দানাও পর্যন্ত কোন দ্বীপের উপকুল অঞ্চলও তারা বাদ দেয়নি। মিন্দানাও ও সোলো দ্বীপপুঞ্জের সমগ্র উপকুল তারা আতি পাঁতি করে খুঁজেছে। কিন্তু না পেয়েছে তারা জাহাজ না পেয়েছে তারা কোন সূত্র। পাবে কেমন করে? জাহাজটি আপো পর্বতে পৌছার দু’দিন পরেই আহমদ মুসার নির্দেশে উত্তর মিন্দানাওয়ের দুর্গম ও সংকীর্ণ ফাগায়ান উপসাগরে ওটাকে ডুবিয়ে ফেলা হয়েছে।

দীর্ঘ একমাস অনুসন্ধানের পর ক্লান্ত শ্রান্ত অনুসন্ধানকারী দল মিন্দানাওয়ে ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের হেড কোয়ার্টার দিভাওয়ে ফিরে এলো।

রিপোর্ট শুনে মিন্দানাওয়ের ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান প্রধান মাইকেল এঞ্জেলো রাগে দুঃখে চুল ছিড়তে লাগল। রেডিয়েশন বম্ব কেলেঙ্কারী প্রকাশ হয়ে পড়ার পর ওগুলো পাওয়ার পথই শুধু বন্ধ হয়নি, সংগঠনের মাথার উপর বিপদের খাড়াও ঝুলছে। কিন্তু এত কিছু করে লাভ হলো কি? পরীক্ষামূলক দু’টি বম্ব ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না তারা। সব রাগ গিয়ে পড়ল অনুসন্ধানকারী দলের নেতা জন উইলিয়ামের উপর। মাইকেল এঞ্জেলা দাঁত খিঁচিয়ে বলল, অপদার্থ তোমরা। জাহাজ নিশ্চয় আছে কোথাও। রেডিয়েশন বম্বের খবর সেই জাহাজ সূত্র থেকেই খবরের কাগজে প্রকাশ পেয়েছে এবং এটা করেছে এ দেশের নেটিভ মুর শয়তানরাই। তা না হলে খবরটি এম পি আই পেল কি করে?

ক্রিং ক্রিং ক্রিং। মাইকেল এ্যাঞ্জেলোর লাল টেলিফোনটি বেজে উঠল। বিরক্তির সাথে টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিল সে।............

মাইকেল এ্যাঞ্জোলোর পাঁচ তলা ভবনটির নীচে প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি পাইলক টেলিফোন বুথে কানে টেলিফোন এলো- কে? মাইকেল এ্যাঞ্জেলোর কন্ঠ।

-লিলিয়েভ। সোভিয়েট ফার ইস্ট ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের একটি চিঠি নিয়ে এসেছি।

-কার জন্য?

-আপনার নামে।

-আমার নামে? আমি কে?

-মাইকেল এ্যাঞ্জেলো। ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের মিন্দানাও প্রধান।

-আসুন।

-কখন আসব, এখনি?

-না, এখন আমি ব্যস্ত। আগামীকাল সকাল ন’টা।

-আচ্ছা। বলে টেলিফোন রেখে দিল লিলিয়েভ।

লিলিয়েভ টেলিফোনের রিসিভার রেখে দেবার সাথে সাথে একজন লোক টেলিফোন বুথের বন্ধ দরজার সামনে থেকে সরে গেল। এতক্ষণ সে দরজার ফুটায় কান লাগিয়ে কথোপ-কথন শুনছিল। লোকটি দ্রুত একটি দ্বিতল হোটেলে গিয়ে উঠল।

লোকটি আবদুল্লাহ জাবের। কায়রো থেকে তাকে এনে দিভাও-এ রাখা হয়েছে। দিভাও পিসিডা শাখার অধিনায়ক সে।

এখানে তার পরিচয়ঃ একজন নেটিভ খৃস্টান। ম্যানিলায় রেস্টুরেন্ট চালাত। উন্নতির আশায় এসেছে দিভাওয়ে। হঠাৎ সে হোটেলটি পেয়ে কিনে নিয়েছে। আবাসিক এ হোটেলটিতে মোট ২১ টি কক্ষ। এর একটিতে আবদুল্লাহ জাবের নিজেই থাকে। আবদুল্লাহ জাবের এখানে কলিন্স নামে পরিচিত। সবাই জানে লোকটি বড় আমুদে। অল্পদিনেই সে সবার সাথে সম্পর্ক পাতিয়েছে। দেড়শ’ গজ দুরের ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান হেড কোয়ার্টারের সবাই এখন তার ঘনিষ্ঠ খদ্দের।

টেলিফোন বুথ থেকে বেরিয়ে লিলিয়েভ মেয়েটাও এসে হোটেল ঢুকল। আজ ভোরে সে ম্যানিলা থেকে দিভাও এসেছে। সোজা এই হোটেলেই এসে উঠেছে সে।

লিলিয়েভ রাশিয়ান মেয়ে। কিন্তু তার দেহে জাপানী বৈশিষ্ট্যই যেন বেশী। বয়স ২৪/২৫ এর বেশী হবে না। উচ্ছ্বল যৌবনে অপরূপ লাবন্যের মোহনীয় প্রলেপ।

মিনিস্কার্ট পরে মাজা দুলিয়ে হাইহিলের গট্ গট্ শব্দ তুলে যখন লিলিয়েভ হোটেলের করিডোর দিয়ে প্রবেশ করছিল, তখনি আবদুল্লাহ জাবের স্বগতঃ কন্ঠে বলেছিল, ভদ্রে, হয় তুমি বল্লাক মার্কেটের, নয় কোন ভয়ংকর এজেন্ট, নতুবা হবে কলগার্ল।

কিন্তু কোনটি?

এই জবাব পাবার জন্যই আবদুল্লাহ জাবের চোখ রেখেছিল তার প্রতি।

কিন্তু যে জবাব পেল, তা রাতের ঘুম কেড়ে নিল। সোভিয়েট ফার ইস্ট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের এজেন্ট দিভাওতে কেন। পশ্চিমী সন্ত্রাসবাদী সংস্থার কাছে কি চিঠি বয়ে এনেছে লিলিয়েভ? আপো পর্বতে কুপোকাত হবার পর আবার কোন চাল শুরু করেছে তারা।

শেষে মনে মনে একটি বুদ্ধি স্থির করে খুশীতে গুনগুন করে উঠল আবদুল্লাহ জাবের।

নতুন বোর্ডারদের রুমে রুমে শুভেচ্ছা সফর আবদুল্লাহ জাবেরের বিশেষ একটি অভ্যাস।

এই শুভেচ্ছা সফরে সেদিন রাত সাড়ে ন’টায় সে গিয়ে নক করল লিলিয়েভের রুমে।

কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। ভিতর থেকে চাবি খোলার খুট খাট শব্দ এল। দরজা খুলে গেল।

দরজা খুলে আবদুল্লাহ জাবেরকে দেখেই লিলিয়েভ সহাস্যে বলে উঠল, হ্যাল্লো মিঃ কলিন্স, হাউ-ডু-ইউডু আসুন আসুন।

-ও! অল রাইট লিলিয়েভ। বলতে বলতে ঘরে ঢুকল আবদুল্লাহ জাবের।

লিলিয়েভ গিয়ে সোফায় বসল। ওর গায়ে জড়ানো ছিল বড় এক তোয়ালে। ছুড়ে ফেলে দিল তা দূরে। তার গোটা দেহে এখন মাত্র দু’চিলতে কাপড় অবশিষ্ট রইল।

ঘরের চারদিকে নজর বুলাল জাবের। লিলিয়েভের সামনের টেবিলে ছিল একটি রিভলভার, একটি সিগার কেস ও একটি লাইটার। ঘরে আর বাড়তি জিনিসের মধ্যে রয়েছে একটি ব্রিফকেস ও একটি সাইড ব্যাগ।

আবদুল্লাহ জাবের সোফায় বসতে বসতে রিভলভারটির দিকে ইংগিত করে বলল, ও বস্তুটি সরিয়ে নিন মিস লিলিয়েভ, আপনার মত মনোরমার সাথে কোন ঝগড়া-ঝাঁটি আমার নেই।

খিল খিল করে হেসে উঠল লিলিয়েভ। বলল, ‘ইউ আর ইন্টারেষ্টিং মিঃ কলিন্স।’ বলে সে রিভলভার ছুড়ে দিল বিছানার উপর।

-এন্ড নাও মিস লিলিয়েভ কিছু একটা গায়ে জড়িয়ে নিলেই ভাল হয়।

-কেন?

-শান্ত মনে দুটো কথা বলতে পারি।

-মন অশান্ত হওয়ার কি ঘটেছে?

-তোমার অবারিত ওই উত্তাপ?

আবার সেই ঠান্ডা খিলখিল হাসি। বললো সে, সত্যিই তুমি এক প্রাণবন্ত পুরুষ মিঃ কলিন্স। কিন্তু এর পরের আবদারটা হবে কি শুনি।

-মিস লিলিয়েভ ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের জন্য কি সংবাদ বহন করে এনেছো?

লিলিয়েভ বিস্মিত হলো না, নড়ে চড়ে বসল। সেই ঠান্ডা হাসি তার মুখে। বলল, জানতাম এ প্রশ্ন তোমার কাছ থেকে আসবে, কিন্তু এমন সহজ আব্দার হয়ে আসবে, তা ভাবিনি। তুমি কে মিঃ কলিন্স?

-ইরগুণ জাই লিউমি’র ডেভিড আব্রাহাম। আজ একমাস ধরে কলিন্স সেজে হোটেল খুলে বসে আছি আমি।

-প্রমাণ?

-তুমি যে সোভিয়েট ফার ইস্ট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের লিলিয়েভ তার প্রমাণ?

লিলিয়েভ কোন উত্তর দিল না। আবদুল্লাহ জাবেরের চোখে চোখ রেখে কি ভাবছিল। বলল, পাবলিক টেলিফোন বুথে তোমার আড়িপাতা আমি ধরে ফেলতে পেরেছি, কিন্তু আমাকে তুমি সন্দেহ করেছিলে কখন?

-ম্যানিলা থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল।

-কিন্তু আমরা ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের জন্য যে সংবাদ বহন করে এনেছি, তা তোমরা জানতে চাও কেন?

-তার সবটুকু আমরা জানতে চাই না, হারানো জাহাজ সম্পর্কে কিছু থাকলে সেটা আমরা জানতে চাই।

-ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের হারানো জাহাজের সাথে ইরগুন জাই লিউমির সম্পর্ক?

জাহাজে ছিল আহমদ মুসা জাহাজের সন্ধান পেলে তারও সন্ধান মিলবে।

-কিন্তু এটা তো ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানের কাছ থেকেও জানতে পার।

-না, আমরা আর ওদের মুখাপেক্ষী হতে চাইনে।

৫০ মিলিয়ন ডলার আমরা পানিতে ফেলে দিতে চাইনে আর।

মিটি মিটি ঠান্ডা হাসি হাসছে লিলিয়েভ। সিগারেট কেস থেকে একটি সিগারেট বের করে হাতে নিল। বলল, কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝলে যে সোভিয়েত ফার ইস্ট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস খয়রাতি প্রতিষ্ঠান? পায়ে হেঁটে এসে এমনি এমনি তোমার পকেটে দিয়ে যাবে খবর?

-আহমদ মুসার উৎখাতের মধ্যে আমাদের কমন ইন্টারেস্ট রয়েছে লিলিয়েভ।

-তাহালে ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানকে এ থেকে বঞ্চিত করতে চাও কেন?

-বঞ্চিত নয়, ওদের উপর নির্ভরশীল হতে চাইনা।

-হু। বলে সিগারেটটি মুখে পুরে দিল লিলিয়েভ।

আবদুল্লাহ জাবের লিলিয়েভের চোখের দিকে মুহূর্তের জন্য চেয়ে এক ঝটকায় উঠে দাড়িয়ে লিলিয়েভের মুখ থেকে সিগারেটটি কেড়ে নিতে নিতে বলল, রিভলভারের চেয়েও বড় সিরিয়াস, এর আলপিন হেডড বুলেট।

অদ্ভুত শক্তিশালী নার্ভ লিলিয়েভের। কোন ভাবান্তর এলনা তার মধ্যে। সাপের মত ঠান্ডা সেই নিঃশব্দ হাসি দেখা দিল তার ঠোঁটে। বলল, আমি যতটা মনে করেছিলাম, তার চেয়েও বেশী চালাক তুমি। এস শক্রতা ভুলে গিয়ে আমরা বন্ধু হই।

-কিন্তু তার আগে তোমার হাতের ঐ লাইটার ফেলে দাও। ওতে গ্যাস চেম্বার নেই কে বলবে?

লাইটারটি বিছানার উপর ছুঁড়ে দিতে দিতে লিলিয়েভ বলল, বড় শক্ত চিজ তুমি।

থামল লিলিয়েভ। একটু পরে আবার বলল, তুমি আমাকে জান, আমিও তোমাকে জানি। তুমি শক্তিমান, সুদর্শন, তীক্ষ্ণধী। তোমাকে বন্ধু হিসাবে পেলে আমি সুখী হব মিঃ কলিন্স।

চোখ দু’টি চক্ চকে হয়ে উঠেছে লিলিয়েভের।

-কিন্তু শত্রুতার কোন সুযোগ, কোন উপায়কেই তো তুমি হাতছাড়া করছ না।

লিলিয়েভ হাসল। বলল নিশ্চয়তা দাও, চিঠিটি তুমি চাইবে না।

-বন্ধুর প্রতি বন্ধুর এই কি মনোভাব।

-চিঠির সাথে আমাদের স্বার্থের প্রশ্ন জড়িত।

কত কোটি টাকা নিয়ে সোভিয়েট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস ক্লু-ক্লাক্স-ক্লানকে জাহাজ সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করছে?

প্রথমবারের মত লিলিয়েভের চোখে বিস্ময় ফুটে উঠল। কিন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করে বলল, টাকার স্বার্থ নেই, স্বার্থটি অনেক বড়।

-কি সে স্বার্থ?

অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু এ প্রশ্ন? এর সাথে ইরগুন জাই লিউমি’র কোন সম্পর্ক নেই।

-নিশ্চয় আছে আমরা যদি সে মূল্য দিয়ে সে চিঠি কিনে নিতে পারি?

-তা যদি সম্ভব হতো আমার আপত্তি ছিল না।

কথাটি শেষ করেই লিলিয়েভ এসে আবদুল্লাহ জাবেরের পাশে বসল। তার মসৃণ উরুটি আবদুল্লাহ জাবেরের উরু স্পর্শ করেছে। ও সোফায় হেলান দিয়ে বসেছে। দু’টি হাত দু’দিকে সোফার উপর দিয়ে প্রসারিত। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তার উন্নত বুকের উঠা-নামা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নীরব লিলিয়েভ।

আবদুল্লাহ জাবের বলল, দুনিয়ায় কি অসম্ভব কিছু আছে লিলিয়েভ?

লিলিয়েভ আবদুল্লাহ জাবেরকে জড়িযে ধরে বলল, ওসব সম্ভব অসম্ভবের কথা এখন থাক মিঃ কলিন্স। এস আমরা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যাই সব।

আবদুল্লাহ জাবেরের ঠোটে খেলে গেল এক টুকরা হাসি। বলল সে, এটাই তোমার শেষ অস্ত্র লিলিয়েভ?

লিলিয়েভের হাতের বাঁধন দৃঢ়তর হলো। বলল সে, আবার সেই কথা। এসো না আমরা কিছুক্ষণের জন্য চাকরির জগত থেকে দূরে সরে যাই।

আবদুল্লাহ জাবেরের বাম কাঁধে লিলিয়েভের মাথা। ওর নরম ওষ্ঠাধরের উষ্ণ স্পর্শ সে অনুভব করছে তার গলায়। এক নির্মল শুড়শুড়ি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেহে। লিলিয়েভের ডান হাত জড়িয়ে রয়েছে তার গলা। আর তার বাম হাত আবদুল্লাহ জাবেরের জানুর উপর ছড়িয়ে রাখা ডান বাহুর উপর ন্যস্ত। লিলিয়েভের বাম হাতের মধ্যমায় একটি আংটি। বড় রকমের নীলাভ পাথর বসানো আংটিতে। পাথরের ঠিক মধ্যখানে সুক্ষ একটি ফুটো চোখে পড়ল আবদুল্লাহ জাবেরের। চেতনার দুয়ারে একটা কথা ঝিলিক দিয়ে গেল তার ডেথরিং-মৃত্যু আংটি।

ম্পাইগার্লদের একটা মোক্ষম অস্ত্র এই ডেথরিং। আংটির পাথরে একটু চাপ পড়লেই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সূচের অতি তীক্ষ অগ্রভাগ। ভয়ংকর পটাসিয়াম সাইনাইড মাখানো তাকে তার মাথায়। শেষ অস্ত্র এটা স্পাইগার্লদের। কামনার জালে বেঁধে প্রতিদ্বন্দ্বীকে সে তুলে নেয় বুকে। তারপর নায়ক যখন উন্মুক্ত কামনার অথৈ স্রোতে ভুলে যায় নিজেকে, ভুলে যায় সব কিছু। তখন আস্তে করে সে ডেথরিং চেপে ধরে তার দেহে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই খেলা সাঙ্গ হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী ঢলে পড়ে নীল মৃত্যুর কোলে।

আবদুল্লাহ জাবের লিলিয়েভের বাম হাতটি তুলে নিল হাতে। মুখনীচু করে ফিসফিসে কন্ঠে ডাকল, লিলিয়েভ।

লিলিয়েভ কোন কথা বলল না। মুখ উচু করে ওষ্ঠাধার মেলে ধরল। ধীরে ধীরে তা এগিয়ে এল আবদুল্লাহ জাবেরের ঠোট লক্ষ্যে।

আবদুল্লাহ জাবের মুখ ঈষৎ উঁচু করে বলল, কত লোককে এই ডেথ রিং দিয়ে হত্যা করেছ লিলিয়েভ?

এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াল লিলিয়েভ। এক লাফে গিয়ে রিভলভার তুলে নিল সে। চোখ ওর ধকধক করে জ্বলছে। রিভলভারের নল আবদুল্লাহ জাবেরের কপাল লক্ষ্যে চেয়ে আছে।

ঘটনাটা এমন আকস্মিকভাবে ঘটে গেল যে, আবদুল্লাহ জাবের বিস্ময় বিমুঢ় হয়ে পড়ল। কিন্তু তা মুহূর্তের জন্য। সে লিলিয়েভের চোখে চোখ রেখে বলল, দেবী যে বাহুপাশ থেকে একেবারে রণভূমে? আমি খারাপ তো কিছু বলিনি।

-আমার বাহুপাশ থেকে তুমিই প্রথম জীবিত বেরিয়ে গেলে। ডেথরিং থেকে বেঁচেছো, কিন্তু এ বুলেট তোমাকে খাতির করবে না।

-কিন্তু আমার দোষটা কোথায়?

আবদুল্লাহ জাবেরের চোখে কিন্তু পলক পড়েনি। লিলিয়েভের চোখও যেন গেথে আছে তার চোখের সাথে।

আবদুল্লাহ জাবেরের সামনে একটি কাঠের টিপয়, তারপর সোফা। সোফার ওপারেই দাড়িয়ে আছে লিলিয়েভ। দুরত্ব প্রায় ৩ গজের মত। ইঞ্চি ইঞ্চি করে আবদুল্লাহ জাবের টিপয়ের দিকে এগুচ্ছিলো। টিপয় পায়ের নাগালে আসলে একবার দেখা যেত।

-তুমি চালাক, আমি স্বীকার করি। কিন্তু আমাকে ফাকি দিতে তুমি পারনি। তুমি জাননা, ইরগুণ জাই লিউমির সাথে আমাদের আগেই চুক্তি হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবিষ্কৃত সাগর তলার ‘ঘুমন্ত ক্ষেপনাস্ত্র’ সম্বন্ধনীয় গোপন তথ্য সরবরাহের বিনিময়ে আমরা ওদের আহমদ মুসা সম্পর্কিত তথ্যাদি দিয়ে দিয়েছি। সোলো সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যবর্তী ‘পাল-ওয়াং’ দ্বীপ যদি ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান আমাদের দিতে রাজী হয় তাহলে ওদেরকেও আমরা জাহাজ ও রেডিয়েশন বম্ব সম্পর্কিত সব খবর দিয়ে দিব।

কথা বলার সময় লিলিয়েভের চোখ আনন্দে চিক্ চিক্ করছিল।

কাঠের টিপয়টি আবদুল্লাহ জাবেরের পায়ের আওতায় এসে গেছে। কিন্তু ব্যাপারটা লিলিয়েভের দৃষ্টি এড়াল না। বলল সে, আর এক ইঞ্চি সামনে এগিও না, গুড়ো করে.....

কিন্তু কথা তার শেষ হলো না। আবদুল্লাহ জাবেরের পা বিদ্যুৎ গতিতে উপরে উঠল। এক নিখুঁত আঘাতে কাঠের ক্ষুদ্র টিপয়টি ছুটে চলল লিলিয়েভের মাথা লক্ষ্যে।

একটু সরে দাঁড়িয়েছিল লিলিয়েভ। রিভলভারের নল সরে গিয়েছিল। এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল আবদুল্লাহ জাবের। সে সোফার উপর দিয়ে এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়ল লিলিয়েভের উপর। লিলিয়েভের তর্জ্জনি রিভলভারের ট্রিগার চেপে ধরল বটে, কিন্তু গুলী গিয়ে পড়ল দক্ষিণের দেয়ালে।

রিভলবার কেড়ে নিল আবদুল্লাহ জাবের। কিন্তু লিলিয়েভ দাঁত দিয়ে প্রচন্ড শক্তিতে কামড়ে ধরেছে তার বাম বাহু। দাঁত বসে যাচ্ছে তার চামড়া কেটে ভিতরে। লিলিয়েভের ডেথরিং এর শিতল স্পর্শ অনুভব করল আবদুল্লাহ জাবের তার বাম পাজরে। প্রচন্ড এক ধাক্কায় সে সরিয়ে দিল লিলিয়েভকে। ভীষণ যন্ত্রণা অনুভব করল জাবের তার বাম বাহুতে। বাম বাহুর খানিকটা মাংস তুলে নিয়ে গেছে লিলিয়েভ। রক্তে ভিজে গেছে লিলিয়েভের মুখ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আবদুল্লাহহ জাবেরের বাম বাহু।

-রক্তপায়ী ডাইনি। বলে এক প্রচন্ড লাথি মারল লিলিয়েভের তলপেটে। বসে পড়ল লিলিয়েভ। তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়ল মেঝেতে।

লিলিয়েভের ব্রিফকেস, সাইডব্যাগসহ সমগ্র ঘর আতি-পাতি করে খুঁজল আবদুল্লাহ জাবের। কিন্তু চিঠি কোথাও পেল না। শেষে ওয়েষ্টপেপার বাস্কেটের তলায় সে পেয়ে গেল চিঠিটি।

চিঠিটি পকেটে পুরে লিলিয়েভকে বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রেখে দরজার চাবি এঁটে বেরিয়ে এলো জাবের।

আবদুল্লাহ জাবেরের কক্ষে উৎকণ্ঠিতভাবে বসে ছিল হোরায়রা। আবদুল্লাহ জাবেরের রক্তাক্ত হাত, আর বিরাট ক্ষত দেখে চমকে উঠল সে। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে ধরল আবদুল্লাহ জাবেরের দিকে।

হোরায়রা দিভাও থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরের ছানাবাও অঞ্চলের ছালেমী গোত্রের সরদার জাফর আলীর ছেলে। ১০ বছর আগে মিশনারী ও নেটিভ খৃষ্টানদের সাথে সংঘটিত এক সংঘর্ষে জাফর আলী নিহত হয়। ২৫ বছরের যুবক হোরায়রা এখন পিসিডার একজন নিষ্ঠাবান কর্মী। দিভাওয়ে সে আবদুল্লাহ জাবেরের সহকারী হিসেবে কাজ করছে।

আবদুল্লাহ জাবের হোরায়রাকে লিলিয়েভের ঘরের চাবি দিয়ে বলল, রাত বারটার দিকে লিলিয়েভকে সরিয়ে ফেলতে হবে এখান থেকে। আপাততঃ ওকে রাখতে হবে শহরের বাইরে আমাদের নুরানাও ঘাঁটিতে। তারপর মুসা ভাইয়ের নির্দেশ মোতাবেক যা হয় করা যাবে।

আর সবাইকে বলে দেবে এবং থানাতেও জানিয়ে রাখবে আমাদের ১১ নং বোর্ডার রাত্রিতে বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।

-আচ্ছা জনাব। বলে উঠে দাঁড়াল হোরায়রা।

আবদুল্লাহ জাবের আলমারী খুলে ফার্স্ট এইডের বাক্সটি নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করল।

দরজা টেনে বন্ধ করে বেরিয়ে গেল হোরায়রা।

Address

Mymensingh

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Saimum Clips posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Saimum Clips:

Share