04/06/2025
............. জোর পূর্বক না সেচ্ছায়?............
একদিন সকালে তানিয়া বসে মোবাইল টিপছিল। হঠাৎ দেখল অপরিচিত কেউ একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, তো সে স্বাভাবিক ভাবে রিকোয়েস্ট টি গ্রহন করল। কিছ্ক্ষন পর তানিয়ার মোবাইলে একটি বার্তা এল কিন্তু তানিয়া তা ঐ মুহূর্তে লক্ষ করল না। তানিয়া সম্পর্কে চলুন একটু জেনে নেই। তানিয়া রুপে-গুনে মাশ-আল্লাহ। তানিয়ার বাবা তারিকুল ইসলাম খান (টিএস খান) একজন সফল ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। তানিয়ার বড় ভাই মনিরুল ইসলাম খান পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য তালিম নিচ্ছেন। মনিরুল ইসলাম খান তার বাবার দাপট নিয়ে এত মাথা ঘামায় না। সে তার নিজের মত চলতে পছন্দ করে। বলতে গেলে তানিয়াদের সুখের সংসার। তানিয়া অনার্স ফাইল বর্ষে পড়ে। তারদিকে কোন ছেলে তাকানোর সাহস করে উঠে না। কারণ তা বাবার একটি ফোন কলে শতশত পাতি নেতা এসে হাজির হবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য। তাই তানিয়াকে চেনে এমন কোন ছেলে প্রেম প্রস্তাব দেবার সাহস করে না। তার জন্য তানিয়াও মাঝে মাঝে ভাবে কেন ছেলেদের সাথে সে চলাফেরা করতে পারে না? একদিন তানিয়া কলেজে ক্লাসের পর বসে আছে এমন সময় পেছন থেকে তার নাম ধরে ডাক দেয়।
ঐ.... তানিয়া?
তানিয়া শোনেনি এমন ভাব নিল।
তানিয়া তুমি কি আমাকে শোনতে পাচ্ছ?
এবার তানিয়া শুনছে!
তানিয়া : আমাকে ডাকছেন?
তোমাকেই তো! এখানে তুমি ছাড়া কি তানিয়া কেউ আছে নাকি?
আমার নাম শ্রাবণ।
আমি এ কলেজে একাউন্টিং অনার্স করছি।
তানিয়া : ভাল! তো আমি কি করতে পারি?
শ্রবণ: আরে ভাই তোমার সাথে পরিচয় হতে এসেছি।
তানিয়া : আপনি আমার নাম জানেন, তো পরিচয়ের কি আছে?
শ্রাবণ: ওকে বাই!
শ্রাবণ চলে গেল।
তানিয়া বসে চিন্তা করতে লাগলো সে কি ভূল করেছে?
এত সুন্দর একটি ছেলে তার সাথে কথা বলতে চাইল আর সে কিনা ধুৎ ছাই! কি ভাবছি?
বাবা শুনলে আমাকে আর ওকে ইচছা মত কেলাবে!!!
তানিয়া লক্ষ করল তার মোবাইলে কয়েকটা বার্তা।
তাতে লিখা আমাকে চিনতে পেরেছ?
তানিয়া : কে আপনি?
তুমি আমাকে চিনবে না
এমন সময় তানিয়াকে তার বাবা ডাক দিল।
তানিয়া : জি ! কিছু বলবে বাবা?
না তেমন কিছু না?
তোর মোবাইল টা দেতো একটু!
এদিকে তানিয়ার পা কাপা কাপা অবস্থা বার্তা গুলো মুছা হয়নি।
তানিয়া: দিচ্ছি বাবা! এই নাও!
থাক লাগবে না নাম্বার টা পেয়েছি।
তানিয়া : আল্লাহ সহায়।
তানিয়া বসে বসে বই পড়ছে এমন সময় বার্তা,কি কিছু বলবে না, আমাকে চিনতে ইচ্ছে করছে না?
তানিয়া: আপনাকে চেনার দরকার নাই!
দেখ! এত ভাব দেখাবে না!
আমার কিছু কথা শোন।
তানিয়া : আমি আপনার কোন কথা শুনবো না, আপনি আমাকে আর বার্তা পাঠাবেন না।
যদি বার্তা পাঠান তাহলে আমি আপনার নামে....
কি করবে?
থানায় সাধারণ ডায়েরি করব।
এই বলে তানিয়া মোবাইল বন্ধ করে দিল।
কিন্তু তানিয়ার মনে কি ঝড় চলছে তানিয়া বুঝতে পাচ্ছে না। কেন জানি তানিয়ার কিছু ভাল লাগছে না।
তার মন উদাস। কিছুতেই মন বসছে না। শুধু মনে একটাই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে কে হতে পারে?
কিছুক্ষণ পর সে তার মোবাইলটা অন করে। মোবাইল অন করে তো চক্ষু চরক গাছ!!!
একটি নয় বিশটি বার্তা, প্রত্যেকটায় লিখা আমি তোমাকে "ভালবাসি"। তানিয়া তাড়াতাড়ি ঐ বার্তা গুলো মুছে ফেলে কারণ যে কোন সময় তা মা কিংবা বাবা দেখে ফেলতে পারে।
সে মনে মনে খোঁজতে থাকে, কে সে? জীবনের প্রথম ভালবাসা শোনার স্বাদ মিটালো!! আর এত সাহস ই বা পেলো কোথায় আমাকে ভালবাসার?!!
এ প্রথম কোন ছেলে তানিয়াকে ভাল লাগার কথা বলল তাও মোবাইল বার্তায়।
তানিয়াও ছাড়ার পাত্রী নন, সে যে করেই হউক জানবে কে সেই ছেলে?
পরের দিন তানিয়া সকাল সকাল তৈরি হয়ে কলেজে চলে গেল। আজ তানিয়া অন্য রকম একটু সেজে কলেজে এসেছে। এমনিতেই সুন্দরী, সাজায় তাকে আরো অপরুপা লাগছে!! সেও বুঝতে পাচ্ছে আজ তাকে অন্য রকম লাগছে! কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
দুটো ক্লাস করার পর তানিয়ার ভাল লাগছে না। যার কারণে সেজেগুজে কলেজে আসলো সে তো তাকে দেখা দিচ্ছে না! সবাই তার রুপের প্রসংসা করছে কিন্তু ভালবাসার কথা বলছে না। সাত-পাঁচ ভেবে ওয়াস রুমে চলে গেল। ওয়াস রুমে ডুকে নিজর সাজ তুলে হাত মুখ ধৌত করে বের হল। বাড়ি চলে যাবে তাই রওনা দিল! এমন সময় দেখলো একটি ছেলে কলেজ গেইটের পাশে হাতে গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো যদি এই ছেলেটা হয় তাহলে তো তার মান-সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ কলেজ গেইটে যদি সবার সামনে তাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে বসে! এই সব ভেবে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো কলেজ গেইটের দিকে। যখন তানিয়া কলেজ গেইটের কাছে গেল তখন তার হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে গেইট পার হয়ে একটি রিক্সায় উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিল। রিক্সা চলতে লাগলো, আর তানিয়া ভাবতে লাগলো আল্লাহ ঠের বাচা বাঁচাল! মান-সম্মান তো রক্ষা হলো। কলেজে এই সব ভাবতে ভাবতে তাদের গাড়ি চালককে তানিয়ার ডাকতে মনে নেই তাই রিক্সা নিয়েই বাড়ি দিকে রওনা দেয়। হঠাৎ রিক্সার কোন সমস্যা দেখা দেওয়ায়, রিক্সা চালক বলল!
আপা! গাড়িতে মনে অয় কোন সমস্যা অইছে। একটু বসেন আমি দেহি কি অইছে!
আচ্ছা তাড়াতাড়ি দেখেন।
রিক্সা চালক রিক্সা থেকে নামতেই দুইটি ছেলে মোটর বাইক নিয়ে তানিয়ার সামনে হাজির।!!!
তানিয়া: শ্রাবণ তুমি?
শ্রাবন: কেন, তুমি কি বিরক্তবোধ করছো?
তানিয়া : না! মানে!!!
শ্রাবণ : তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
তানিয়া : দেখ! এই জায়গায় তোমাদের সাথে কথা বললে যদি কেউ নাও দেখে তাও কেমন জানি লাগছে।
শ্রাবণ : তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার দিন তো বলতে চেয়েও পারিনি তোমার জন্য। আমাকে তুমি পাত্তাই দাও নি। তাই সুযোগ আজ হাত ছাড়া করতে পারবো না।
তানিয়া মনে মনে চিন্তা করলো যদি কথা না শুনি, তবে জোর করে কিছু একটা করে বসে!
তানিয়া : কি বলবে বল!
শ্রাবণ : রিক্সা থেকে একটু নেমে এসো!
তানিয়া : ওহ্ আচ্ছা!
শ্রাবণ : তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই! ইনি হচ্ছেন জীবন ভাই! ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় থেকে অনার্স-মাষ্টার্স করে বাহিরের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিেত কাজ করছে।
তানিয়া : আসসালামু আলাইকুম।
জীবন : অলাইকুম আস সালাম। কেমন আছো তানিয়া?
তানিয়া : আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?
জীবন : আলহামদুলিল্লাহ, ভাল!
জীবন কে দেখে তানিয়ার মনে নতুন স্বপ্ন মাথা চারা দিয়ে উঠে। দেখতে যেমন সুদর্শন তেমন তার বাহু -শরীর। তানিয়াও চায়! এমন একজন পুরুষ তার পথ চলার সাথী হউক।
জীবন : কথা তো শ্রাবণের নয়, কথাটা আমার!
আমি দীর্ঘদিন ধরে তোমাকে অনুসরণ করছি কিছু কথা বলবো বলে।
তানিয়া : এমন কি কথা আমাকে বলতে চান?
যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন! আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
জীবন : আমি যা বলতে চাই, তুমি কি অনুভব করতে পাচ্ছো?
তানিয়া : এটা কি করে সম্ভব? আমি আপনাকে চিনি না, জানি না, এমন কি কোন দিন দেখিও নি তাহলে কি করে অনুভব করবো?
জীবন : দারুণ তো! খুব সুন্দর করে কথা বল তুমি!
তানিয়া : ভাইয়া! আমাকে দেরি করাবেন না! আমার তাড়া আছে।
দূর থেকে শ্রাবণ, আরে ভাইয়া! যা বলার বলে ফেল তো!!
জীবন : না, মানে? কি করে বলি?
তানিয়া : মানে মানে করতে থাকেন, আমি চললাম।
মামা চলেন তো!
জীবন : আমি তোমাকে ভালবাসি!!!!!!!
তানিয়ার মনে অনেক আনন্দ হচ্ছে, এই প্রথম কোন ছেলে তাকে সরাসরি ভালবাসি কথাটি বলল। কিন্তু না!!!
তানিয়া : আপনি আমাকে চেনেন? আপনার সাহস দেখে তো বাঁচি না? আপনি ভদ্র ঘরের সন্তান নয়।
আমার সাথে প্রথম দেখা হল, আর তাতেই আমাকে ভাল লেগে গেল? এমন আর কত মেয়েকে ফাঁদে ফেলেছেন? আমি আপনার নামে বাবার কাছে নালিশ করবো। জীবন ও শ্রাবণকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রিক্সায় উঠে বাড়ি চলে যায়। কোন কথা না শুনে
তানিয়া চলে যাওয়ায় শ্রাবণ আর জীবন দুজনেই চিন্তিত যদি সত্যিই তানিয়া তার বাবাকে বলে দেয়।
জীবন তানিয়ার বাবাকে ভয় পাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে লোকে শুনলে কি তারা আমাকে নিয়ে কি ভাববে! এদিকে তানিয়া তো জীবনকে আগেই হৃদয়ে জায়গা দিয়ে দিয়েছে। তবুও তার জন্য জীবন কি করতে পারে, তা দেখবে না তা কি হয়?
জীবন শ্রাবণকে বলল! যা হবার হবে, তানিয়ার সাথে এখুনি ফোনে কথা বলব।
তানিয়াকে জীবন ফোন দিল। তানিয়া তো এই অপেক্ষায় ছিল। তানিয়া ইচ্ছে করেই ফোন ধরে না।জীবনও ছাড়ার পাত্র নয়। বেশ কয়েক বার ফোন দেয়ার পর তানিয়া ফোন ধরে।
তানিয়া : কি চাচ্ছেন আপনি? আপনি কি চান আমার মান-সম্মান নষ্ট হোক?
জীবন : দেখ! আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব তোমার বাড়িতে পাঠাতে পারতাম কিন্তু করিনি।
কারণ তোমার মতামত টা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তানিয়া : আপনি ভাবলেন কি করে? আমাকে এখন বিয়ে দিবে?
জীবন : এজন্যই তো তুমি আমাকে জানতে পারো, আমাকে বুঝতে পারো। আর তুমি যখন বলবে তখন বিয়ের প্রস্তাব দিবো।
তানিয়া : আমি প্রেম-ভালবাসা করতে পারবো না। আপনার যদি আমাকে পছন্দ হযেই থাকে অপেক্ষা করেন। পড়াশোনা শেষ করি।
জীবন মনে মনে, এই তো পাখি ধরা দিচ্ছে। তাহলে তাই হউক। আমি তোমার অপেক্ষায় রইলাম।
এভাবে কেটে যায় তাদের বেশ কিছুদিন। তানিয়া আর জীবন মাঝে মাঝে কথা বলতো।
জীবন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেও, তানিয়া জীবনকে মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলে। তানিয়া অনার্স পরিক্ষা দিয়ে ভাল ফলাফল করে। ঐদিকে জীবনও প্রমোশন পায়।
হঠাৎ তানিয়া একদিন জীবনকে ফোন দেয়!
জীবন : ফোন ধরে! আজ দেখি আকাশের চাঁদ আমাকেই আলো দিচ্ছে! তবে আমি ধন্য।
তানিয়া : তেমন কিছু না! কয়দিন ধরে আমি তোমাকে ফোন দিবো দিবো ভাবছি, ওহ্ দুঃখিত তুমি বলে ফেললাম!।
জীবন : তুমি শোনার অপেক্ষায় তো আমি আছি।
তানিয়া : এখন তোমায় অনেক অনুভব করি, চিন্তা তোমাকে নিয়ে।
চলবে তো বন্ধরা?…........................……...............কি ঘটে!!!!!
জানার ইচ্ছায় ফলো দিয়ে রাখুন।