18/10/2025
🌿 “যে ভালোবাসা ছিল হারাম থেকে হালালের পথে” 🌿
আমি সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা করতাম। ২০২০ সালে, যখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমাদের বাসায় আমার আপুর ছেলে আরবি পড়াতে আসতো। সেদিনই প্রথম আমাদের দেখা। প্রথম দেখাতেই সে আমাকে ভালোবেসে ফেলে, কিন্তু আমি তখন তার প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। কিছুদিন পর আমিও তাকে পছন্দ করতে শুরু করি, এবং আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি।
প্রায় চার মাস সম্পর্ক থাকার পর তার বাবা আপত্তি জানান। সে একমাত্র ছেলে, তাই পরিবারের দায়িত্বের কথা ভেবে সে আমাদের সম্পর্ক থেকে সরে যায়। যদিও সে আমাকে খুব ভালোবাসতো, তবুও “হারাম সম্পর্ক” ভেবে ও পরিবারের কথা চিন্তা করে সে বিদায় নেয়।
আমি তাকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। সে চলে যায় এমনভাবে, যেন আমার পৃথিবীটাই ফাঁকা হয়ে গেল। আমি কেঁদেছি, কেঁদেছি আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। সে আমাকে বলেছিল — “ভাগ্যে থাকলে আমাদের দেখা হবেই, ইনশাআল্লাহ।”
আমি সেই আশাতেই ছিলাম। প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়তাম, দোয়া করতাম, নানা আমল করতাম — শুধু যেন আল্লাহ তাকে হালালভাবে আমার জীবনে ফিরিয়ে দেন।
প্রায় ছয় মাস আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ একদিন সে ফোন দিল। প্রথমে আমি ধরিনি, কিন্তু পরে জানলাম তার মা অসুস্থ। তখন আমার মা বললেন, “বিপদের সময় তো তোমার কথাই মনে করেছে, কথা বলো।”
আমি তখন তার সাথে কথা বললাম। সে জানালো, সে মনে করছে আমায় কষ্ট দিয়েছে, তাই এই অবস্থা হয়েছে। এরপর আবার আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
আমি তখনও হাল ছাড়িনি। আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে তাকে চেয়েছি।
এবং অবশেষে, ২০২৫ সালের মে মাসে হঠাৎ আমার মায়ের ফোনে তার কল আসে! আমি ধরতেই সে সালাম দিল, কণ্ঠ শুনে বুঝলাম — সে-ই। সে বলল, “তোমার আম্মুর সাথে একটু কথা বলো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন?”
সে শান্তভাবে বলল, “আগে দিন তো, তারপর বলব।”
আমি ফোন দিলাম। আর শুনে অবাক হলাম — সে বলল,
“৯ তারিখ, শুক্রবার আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসব, তোমাকে বিয়ে করতে।”
আমি তখন আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। পাঁচ বছর পর, যে মানুষটার জন্য আমি এত দোয়া করেছি, এত কান্না করেছি, সে সত্যিই ফিরে এসেছে — হালাল পথে, আল্লাহর রহমতে।
তার মা একসময় আমার গায়ের রং একটু শ্যামলা বলে পছন্দ করেননি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলেটি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তার মাকে রাজি করিয়েছে।
বিয়ের দিন আমি ও সে একসাথে কেঁদেছিলাম — আনন্দের কান্না। সে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেছিল,
“এই কয় বছর অনেক কেঁদেছো, এখন আর কাঁদবে না। নামাজ পড়বে, পর্দা করবে, আর সবসময় হাসিখুশি থাকবে। আল্লাহর পথে থাকলে আমিও সবসময় তোমার পাশে থাকব।”
বিয়ের রাতে আমরা দু’জন একসাথে দুই রাকাআত নামাজ পড়েছিলাম।
সে বলেছিল, “যে রবের জন্য তুমি এত দোয়া করেছো, তাকেই ভালোবাসো। আমি সেই রবের পক্ষ থেকেই তোমার জীবনে ফিরে এসেছি।”
আজ আমি পর্দা করি, নিয়মিত নামাজ পড়ি, আর আল্লাহর দেওয়া এই সুন্দর জীবনের জন্য সবসময় কৃতজ্ঞ।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ কখনও তাঁর বান্দার দোয়া বৃথা যেতে দেন না — যদি সেই দোয়া হয় হালাল পথে, আর তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য। 🌸
বিঃদ্রঃ আপনাদের দোয়া কবুলের গল্প গুলো চাইলে ইনবক্সে শেয়ার করতে পারেন।