20/09/2025
মদিনার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন এক নারী। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন উদ্যমী, দানশীল ও সাহসী। মাত্র দু’জন নারী ব্যক্তিগতভাবে রাসূল (ﷺ) এর নিকট থেকে সরাসরি কালিমার শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি শুধু নামাজ-রোজা করা সাধারণ মুমিনাহ নন, বরং আল্লাহর পথে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়া এক সাহসী যোদ্ধা।
উহুদের ময়দান, মুসলিম বাহিনী বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, কিন্তু ধনুর্বিদরা রাসূল ﷺ এর আদেশ অমান্য করায় পট পরিবর্তন হয়ে যায় খুব দ্রুত। শত্রুরা হঠাৎ পিছন দিক থেকে আক্রমণ করায় মুসলিম বাহিনী হয়ে যায় ছিন্ন ভিন্ন। যোদ্ধারা উদ্ভ্রান্ত হয়ে ছুটতে শুরু করেন এদিক-ওদিক। সেই সময়ে এই বীরাঙ্গনা তাঁর তরবারি ও ঢাল হাতে নিয়ে নবীজির (ﷺ) পাশে ছুটে আসেন তাঁকে নিরাপত্তা দিতে।
তিনি এক হাতে নবীজিকে (ﷺ) রক্ষা করছেন আরেক হাতে তলোয়ার চালাচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং পরবর্তীতে বলেন, “ডানে, বামে যেদিকেই আমি তাকিয়েছি, দেখেছি তিনি আমার জন্যে লড়াই করে চলেছেন। তিনি অনেক পুরুষ যোদ্ধাদের থেকেও ভালো লড়াই করেছেন।”
শত্রুর আঘাতে তাঁর শরীরে বারোটি মারাত্মক ক্ষত হয়েছিল, ঘাড়েও মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন কিন্তু তিনি পিছু হটেননি। তিনি ছিলেন উহুদের ময়দানের একমাত্র নারী যিনি অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন।
তিনি হুদাইবিয়ার চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন এবং নবীজির (ﷺ) সাথে বাইআত নেন। খাইবার ও ইয়ামামার যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তাঁর এক ছেলে শহীদ হন, আরেক ছেলে আহত। তবুও তিনি আল্লাহর পথে স্থির ছিলেন।
অকুতোভয় যোদ্ধা, যিনি মাথা উঁচু করে ইসলামকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন যুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, নুসাইবা বিনতে কা'ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)।
তিনি যেমন ছিলেন ক্ষীপ্রতার সাথে তরবারি চালাতে সক্ষম তেমনই ছিলেন ইবাদতে নিবেদিতপ্রাণ। রাতের অনেকটা সময় তিনি কিয়ামুল লাইলে কাটাতেন। তাঁর সাহসিকতা দেখে সাহাবিরা তাঁকে সম্মান করতেন। নবীজি ﷺ নিজেও তাঁকে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, “হে আল্লাহ, তুমি নুসাইবা ও তাঁর পরিবারকে আমার জান্নাতের সঙ্গী বানিয়ে দাও।”
জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি আল্লাহর পথে কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর এই অবদান তাঁকে ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ও সম্মানিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লেখা — নিয়াজ আহমদ খান