07/09/2025
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:
💥 সূর্যগ্রহণ :
চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। আমাবস্যার পরে নতুন চাঁদ উঠার সময় এ ঘটনা বেশি ঘটে। পৃথিবীতে প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে পাঁচটি সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। এর মধ্যে শূন্য থেকে দুইটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। আরবিতে এর নাম কুসূফ, ইংরেজিতে একে Solar Eclipse বলে।
🌘 চন্দ্রগ্রহণ :
পৃথিবী তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এলে কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করতে থাকে। তখন পৃথিবী থেকে দেখা যায় যে চাঁদ অদৃশ্য হয়ে গেছে বা আংশিক ঢাকা পড়েছে। এটাকে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আরবিতে এর নাম খুসূফ, ইংরেজিতে একে Lunar Eclipse বলে।
🔘কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কোনো প্রভাব গর্ভবতী মা বা তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর পড়ে না।
গর্ভবতী মা কিছু কাটলে, ছিঁড়লে বাচ্চা ঠোঁটকাটা জন্মাবে, কোনো কিছু ভাঙলে বা বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেবে-এ ধরনের সব প্রচলিত ধারণা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এর সাথে কুরআন ও সুন্নাহর কোনো সম্পর্ক নেই।
🔘
চন্দ্র, সূর্য বা অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু অদৃশ্যভাবে কারো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। এ ধরনের বিশ্বাস রাখা তাওহীদের পরিপন্থী।
🔘
মুসলিমের করণীয়
আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণও একটি নিদর্শন। সুতরাং যখন গ্রহণ দেখা যায়, তখন রাসূল সা. এর সুন্নাহ অনুযায়ী আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত।
🔘
বাস্তবে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিংবা অন্য কারো জন্য কোনো জাগতিক কাজ করা বা না করার বিষয়ে ইসলামে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। সমাজে প্রচলিত সবকিছুই কেবল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। এগুলো মানা মারাত্মক গুনাহ।
বরং হাদীসে এসেছে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন মনে করতে হবে এবং পুরুষদেরকে জামাআতে সালাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণে) ও সালাতুল খুসূফ (চন্দ্রগ্রহণে) আদায় করতে বলা হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিধি-নিষেধ নেই।
কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণ
☀ আল্লাহ বলেন:
“...তোমরা যা কিছু রাসূল তোমাদেরকে দেন, তা গ্রহণ কর এবং তিনি যা কিছু থেকে তোমাদেরকে বিরত করেন, তা থেকে বিরত থাক।”
-সূরা হাশর: ৭
☀ রাসূল ﷺ বলেছেন:
“সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহণ হয় না। তাই যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর।”
-সহীহ বুখারী ৪৮১৮; ইফা
☀ অন্য বর্ণনায় এসেছে:
“সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে হয় না। বরং এগুলো আল্লাহর নিদর্শন, যা দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সতর্ক করেন। সুতরাং যখন গ্রহণ দেখতে পাও, আল্লাহর জিকিরে মশগুল হও যতক্ষণ না তা আলোকিত হয়ে যায়।”
-সহীহ মুসলিম ১৯৭২; ইফা।
উপসংহার : সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণে গর্ভবতী মহিলা বা গর্ভস্থ সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এগুলো আল্লাহর মহাশক্তির নিদর্শন। মুসলিমদের উচিত কুসংস্কার বর্জন করে সুন্নাহ অনুযায়ী নামায, দোয়া ও আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করা।