19/07/2025
#ফাউল_কলেরাঃ (Fowl Cholera) – বিস্তারিত বিশ্লেষণ
জানুন,সচেতন হউন-
ফাউল কলেরা একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ,যা Pasteurella multocida নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত মুরগি, হাঁস, কোয়েলসহ অন্যান্য পাখির মধ্যে ছড়ায় এবং মৃত্যুহার খুব বেশি হতে পারে। বাংলাদেশের পোল্ট্রি খামারে ফাউল করেলা একটি মারাত্মক ক্ষতির কারন,তাই এই রোগ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকলে, এই রোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়া চলা সম্ভব।
❖ #ফাউল_কলেরা_কীভাবে_ছড়ায়?
এই রোগটি মূলত নিচের কয়েকটি উপায়ে ছড়ায়:
1. #সংক্রমিত পাখির সংস্পর্শে – আক্রান্ত মুরগির শরীরের লালা, মল-মূত্র বা নিঃসরণ থেকে সংক্রমণ ঘটে।
2. #দূষিত খাদ্য ও পানি – রোগাক্রান্ত পাখির মল বা নিঃসরণের মাধ্যমে খাদ্য ও পানি দূষিত হয়ে গেলে তা খেলে সুস্থ মুরগি সংক্রমিত হয়।
3. #বাতাসের মাধ্যমে – রোগটি ফার্মের বাতাসে ছড়িয়ে অন্যান্য মুরগির শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে।
4. #ইঁদুর ও অন্যান্য প্রাণী – ইঁদুর, বন্য পাখি বা অন্যান্য প্রাণী রোগের জীবাণু বহন করতে পারে।
5. #নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব – অপরিষ্কার খামার, অপরিষ্কার পানির পাত্র ও খাবারের জায়গায় জীবাণুর সংক্রমণ দ্রুত হয়।
6. #পোল্ট্রি শ্রমিকদের পোশাক বা সরঞ্জাম – সংক্রমিত ফার্ম থেকে অন্য ফার্মে পোশাক বা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।
❖ #ফাউল কলেরার লক্ষণ ও প্রভাবঃ
▶ #তীব্র_সংক্রমণঃ (Acute Infection):
🔘আকস্মিক মৃত্যু (খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে)।
🔘মুরগি হাঁপাতে থাকে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
🔘ঝিমিয়ে থাকা, খাবার কম খাওয়া।
🔘গা গরম হয়ে যাওয়া এবং পাখনা ঝুলে যাওয়া।
🔘হলুদ বা সবুজ বর্ণের পাতলা মল।
▶ #দীর্ঘস্থায়ী_সংক্রমণঃ (Chronic Infection):
🔘মাথা, ঝুঁটি, কান ও মুখ ফুলে যায়।
🔘চোখ ও নাক থেকে পুঁজের মতো নিঃসরণ বের হয়।
🔘গিঁট বা জয়েন্ট ফুলে যায়, পা ও ডানা অবশ হয়ে যেতে পারে।
🔘ডিম উৎপাদন কমে যায়।
🔘দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার কম হলেও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
❖ #প্রতিরোধ ও প্রতিকারক
✔ #প্রতিরোধ_ব্যবস্থাঃ
1. টিকাদান:
🔘নিয়মিত ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন (Killed vaccine বা Live vaccine) প্রয়োগ করতে হবে।
🔘হাঁসের জন্য আলাদা টিকা রয়েছে ( প্রানি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন)
2. #পরিচ্ছন্নতা:
🔘ফার্মের চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখা।
🔘নিয়মিত খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র জীবাণুমুক্ত করা।
🔘মৃত মুরগি দ্রুত ফার্ম থেকে সরিয়ে পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
3. ইঁদুর নিয়ন্ত্রণঃ
ইঁদুর, বিড়াল ও অন্যান্য জীবাণুবাহক প্রাণী থেকে ফার্ম মুক্ত রাখা।
4. নতুন মুরগি আলাদা রাখাঃ
নতুন আনা মুরগিকে অন্তত ১৫ দিন আলাদা (Quarantine) রেখে পর্যবেক্ষণ করা।
5. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণঃ
পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মেঝে শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
6. সঠিক খাদ্য ও পুষ্টিঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার নিশ্চিত করা।
✔ #প্রতিকার_ব্যবস্থা (চিকিৎসা)
1. অ্যান্টিবায়োটিকঃ
সালফোনামাইড, টেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রানি চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
2. নির্দিষ্ট টিকা প্রয়োগঃ
রোগ দেখা দিলে সুস্থ মুরগির জন্য ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
3. সাপোর্টিভ কেয়ারঃ
ইলেকট্রোলাইট ও ভিটামিন খাওয়ানো যেতে পারে।
4. সংক্রমিত মুরগি আলাদা করাঃ
রোগাক্রান্ত মুরগিকে আলাদা (Isolation) রেখে চিকিৎসা করা উচিত।
5. মৃত মুরগির যথাযথ নিষ্পত্তিঃ
সংক্রমণ রোধে মৃত মুরগি দ্রুত সরিয়ে ফেলা দরকার।
উপসংহার
🔘 #পোল্ট্রির ফাউল কলেরায় আক্রান্ত হলে পোস্টমর্টেম লক্ষণঃ
ফাউল কলেরায় আক্রান্ত পোল্ট্রির অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
1. #রক্তক্ষরণ (Hemorrhage):
হৃদপিণ্ড, যকৃৎ (লিভার), অন্ত্র এবং পেশিতে ছোট ছোট রক্তক্ষরণ দেখা যায়।
অন্ত্রের মিউকোসায় গাঢ় লাল দাগ দেখা যায়।
2. #যকৃৎ (Liver) পরিবর্তনঃ
ফোলা এবং গাঢ় লাল বা কালচে রঙের হয়ে যায়।
সাদা বা হলুদ রঙের ছোপ (Necrotic foci) দেখা যেতে পারে।
3. #প্লীহা (Spleen) বৃদ্ধিঃ
স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় এবং কালচে হয়ে যায়।
4. #ফুসফুসে পরিবর্তনঃ
ফুসফুস ফুলে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
কখনো কখনো ফুসফুসে পুঁজ বা তরল পদার্থ জমতে পারে।
5. #পেরিকার্ডিয়াল তরল বৃদ্ধিঃ
হৃদপিণ্ডের চারপাশে তরল জমে যেতে পারে (Pericarditis)।
6. #সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বৃদ্ধিঃ
হাঁটুর জয়েন্টগুলো ফুলে যায় এবং তরল জমতে পারে।
7. #অন্ত্রের প্রদাহ (Enteritis):
অন্ত্রের লাইনিং লালচে ও ক্ষতযুক্ত হতে পারে।
8. #ডিম্বাশয়ে ক্ষতঃ
স্ত্রীরোগী মুরগির ডিম্বাশয়ে ক্ষত বা বিকৃত ডিম দেখা যেতে পারে।
🐔 #ফাউল_কলেরা একটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগ, যা সময়মতো প্রতিরোধ করা না গেলে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। তাই নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, সঠিক টিকা, খাদ্য ও পানি সরবরাহ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে খামারকে রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক
অঞ্জন মজুমদার
পোল্ট্রি সাপ্লাই চেইন স্পেশালিষ্ট।
#বিঃদ্রঃ যে কোন ঔষধ ব্যহারের জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রানি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।