29/08/2024
#বিদ্রোহী
ভাদ্র মাসের উত্তাপ মনে হয় পুরাটা দেশ জুড়েই৷ দেশের একটা অংশ বানের জলের সাথে যুদ্ধে ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত , আবার ব্যপক উদ্যমী।
গত মাস অর্থাৎ শ্রাবণ মাসটা পুরাটাই ছিল উত্তাল এক টানমাটাল অবস্থা। জাতীয় জীবনের একটা বড় বিবর্তন (অবশ্যই পরিবর্তন নয় বিবর্তন) ।
কোন এক দার্শনিক বলেছিলেন, "প্রকৃতি খুবই ন্যায়বিচারক, প্রকৃতি মানুষের প্রতিটি কর্মের (হোক ন্যায় কি অন্যায়) সঠিক জবাব সঠিক সময়ে দান করে। "
সকল দার্শনিকের তত্বের প্রভাব আমাদের জীবনে নিয়ে চলা মুশকিল। শুধু মুশকিল না কিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর।
আমাদের সাংস্কৃতিক প্রভাবে যাদের আমরা মান্য করি বিশেষ করে এই প্রজন্ম হুমায়ুন আহমেদ এর বিভিন্ন উক্তি আর কথার প্রেমে ভুদ (মানে ডুবে থাকে)।
ওনার কথা নানা বিশ্লেষণে যেমন আবগপ্রবণ, আবার অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক আর অবৈজ্ঞানিক ও বটে।
অনেকে বলতে পারেন, দার্শনিক মতবাদে আবার বিজ্ঞান আসলো কেন?
অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞান প্রয়োজনীয়। একজন লেখক কবি কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি সর্ব সময় মানুষের চাহিদা সমসাময়িক প্রজন্মের চাহিদা নিয়ে তার লেখা আর মতামত প্রদর্শন করবে।
তাই তাদের এই জনগোষ্ঠীর মন বিশ্লেষণের ব্যপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই জায়গায় মন বিজ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে।
কোন একটা বিপ্লব এমনি এমনি সংঘটিত হয় না।কোন বৃহৎ বিপ্লব সংগঠিত করার জন্য ও নানা প্রয়োজনীয় উপাদান দরকার হয়।
তার মাঝে অন্যতম সহায়ক উপাদান হল সাহিত্য।
মিছিলের ধ্বনি, জাগরনী গান, রক্তঝরা বক্তব্য, দেয়াল লিখন সবই অগ্নীভরা হৃদয়ের শক্তি আরো বাড়িয়ে দেয়।
আমাদের দেশে শাসক গোষ্ঠী সর্ব সময় ই শোষক।
দেশের কিংবা রাষ্ট্রের যে কোন দায়িত্ব কেউ পেলে, অদ্ভুত ভাবে সেই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে।
কোন সময় নিজের এই সাময়িক ক্ষমতা যে একটা দায়িত্ব এই বোধ কোন ভাবুক হৃদয়ে ও জাগ্রত হয় না।
তাই শুরু হয় ব্যক্তির "ক্ষমতার বিকারের" প্রদর্শন।
যাই হোক সময় বুঝে প্রকৃতি তার পাওনা সঠিক পাবে পরিশোধ করে। বিপ্লব নিয়ে নানা কথা আসতেছিলো মনে।
রুশ বিপ্লবের কথা শুনতাম, প্রায় সময়ই প্রিয় সব কমরেডদের মুখে। লেলিন স্টেলিন আর মার্কস আর মার্ক্সিম গোর্কির সাহিত্য।
তবে সত্য বলতে কি দেশী বিদেশি কোন সাহিত্য কোন লেখা আমার চেতনায় ঐ ভাবে নাড়া জাগাতে পারি নি।
কি জন্য আমি জানি না।
হয়তো, আমারি সাহিত্য বোধের কমতি। আমার কেন জানি মনে হয়, একটা সাহিত্য সর্ব সময়ে কার্যকর নয়।
বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ পড়লে নিশ্চিত এখনকার সনাতনী দের রক্তে বারুদ উৎপন্ন হবে, এমন টা আমি বিশ্বাস করি না।
কিন্তু এই উপন্যাসটিই একটা সময়ে ছিল এক শ্রেণীর মানুষের জন্য ছিল বিপ্লবী উপাদান।
আমার মনে হয় কিছু সাহিত্যের মান সমসাময়িক। যা রচনাকালের সাথে সর্ম্পকিত। পরবর্তী সময়ে যা অকার্যকর। (এই ধারণাবোধে ই ছিলাম এতকাল আমি)
কিন্তু, বারবার আবারো বারংবার যে মানুষটি আমাদের হৃদয়ে দোল দেয়, যার সাহিত্য সর্বাবস্থায় অন্যায়ের বিপক্ষে তুমুল বজ্রকঠিন ভাষার রূপ নেয়।
শাসকের সিংহাসন ভেদ করে তার লেখা প্রতিটি শব্দ।
যার কবিতা সর্বকালে সর্বসময়ে অত্যচারির বিরুদ্ধে দাড়ালো তরবারি।
বিপ্লবী প্রাণে যার গান রণউল্লাস তৈরি করে। জীবনের মানে খুঁজে পায় পথ হারা তরুণ। বৃদ্ধের শুকনা বাহুতে অদম্য শক্তি আনে যায় বক্তব্য।
যার কবিতা আজো -অতীতের মত প্রাসঙ্গিক। মনে হয় যেন আজকের ঠিক যেন, এই পরিস্থিতির জন্য লেখা কবির এই গান।
বলতেছিলাম, আমাদের কাজী নজরুলের ইসলামের কথা। আমাদের নজরুল। হৃদয়ের মাঝে একমাত্র তিনিই হয়তো চিরস্থায়ী স্থান দখল করে নিয়েছেন সর্ব বাঙালির।
এমন প্রতিভাবান সাহিত্যের জগৎ-তে আর আসবে না।
কারণ এমন সাহিত্যের রচনার জন্য যে সকল উপাদান, মানব জীবনে প্রয়োজন , তা নজরুলের জীবনে এসেছিল সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায়।
আমি যখন বলি আমাদের নজরুল। তখন আসলেই মনে হয় কবিকে নিজেদের মাঝে সীমাবন্ধতার বেড়ী পড়িয়ে দিলাম না ত।
নজরুল নিজেকে এভাবে ভাবতে পছন্দ করতেন না। ওনি সবার, সারা বিশ্বের।
কিন্তু আমার বাঙালি হৃদয়ে সর্ব অবস্থায় গর্ব জাগ্রত হয়, আমি বাঙালি, নজরুল বাঙালি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজে কিংবা পাঠাগারে নানা জায়গায় কবির নানা সময়ের ছবি আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি।
কবির চোখের মাঝে দৃষ্টি গেলেই আমার হৃদয়ের মাঝে রবীন্দ্রনাথের এই বাণী ভাসমান হয়।
"আমি অবাক হয়ে দেখি, কেবল দেখি "
" তুমি কেমন করে গান কর, হে গুণী "
আমাদের দেশে নজরুলের সাহিত্যের মান বিচারে নানা গুণীর নানা মতবাদ।
আমরা ছোট সময়ে নজরুলের আর রবীন্দ্রনাথের জন্মতারিখটি বাঙলা সন হিসেবে পড়তাম। এখনো হয়তো এভাবেই পড়ানো হয় স্কুলে।
এই দীপ্তময় কবির অন্তর্ধান দিবস বাঙলায় ১৪ ভাদ্র।
আবার ইংরেজিতে ২৯ আগষ্ট।
কোন বিশেষ দিবসে কাওকে বিশেষ স্মরণের পক্ষে আমি কোন সময়ই নই।
তবুও বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে,
পরম করুণাময় রবের নিকটে একটাই প্রার্থনা তিনি যেন এই জীবনসংগ্রামী
বিপ্লবী চির বিদ্রোহী - কবি কে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
(( "উৎপীড়ক আর ভোগীদের আসিয়াছে রোজ কিয়ামত
ধূলি-রেণু হয়ে উড়ে সব উহাদের নেয়ামত।
এদেরি হাতের অস্ত্র কাটিবে এদেরই স্কন্ধ,শির
ইহারা মরিলে দুনিয়া হইবে স্নিগ্ধ শান্ত স্থির"))
----কবির "নবযুগ " কবিতার অংশ।
১২ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।।।