
06/05/2025
প্রিয় মা। প্রিয় বোন আমার।
ধ্বংসের পথে যারা ধাবমান, জেনে শুনে ধ্বংসের পথেই যারা আগুয়ান-ধ্বংস তাদের অনিবার্য- এ কোনো বিচিত্র বা বিস্ময়ের বিষয় নয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল তাদের অবস্থা -যারা মুক্তির মহা সড়কে উঠে এসেও ছিটকে পড়ে। মনজিলে মকসুদে পৌছুতে পারে না।
শোনো!
তোমাকে রব্বে কা'বার কসম করে বলছি!
জান্নাত হল: এক হিরন্ময় আলো ঝলমল সুগন্ধি বেষ্টিত মহল। বিচিত্র কারুকার্জ মণ্ডিত আভরণ ও উমদা আচ্ছাদনগাহ। জান্নাত সুউচ্চ সুশোভিত এমন বাগ-বাগিচার সমাহার, যার ফলগুলো থাকবে খুব কাছাকাছি। হাতের নাগালে। ভোগের নাগালে। ঝুলন্ত।
তুমি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো জান্নাতে তোমাদের দেহাবয়ব কতটুকু দীর্ঘ হবে? তবে শোনো! তোমাদের দেহের উচ্চতা হবে ষাট মিটার। ঠিক তোমাদের আদি পিতা আদম-র মতো।
আর জানো! তোমাদের বয়সটা তখন কেমন হবে? ঠিক ঈসা-র মতো। অর্থাৎ ঈসা-কে আসমানে তুলে নেয়ার সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর ৩ মাস ৩৩ দিন। জান্নাতে তোমাদের বয়সটাও এমনই হবে।
জান্নাতে তোমাদের ধৈর্যের গুণ হবে আইয়ূব-র মতো।
এখন যদি বলো তোমাদের সৌন্দর্যের কথা- তবে যে সৌন্দর্য দেখে মিশরের নারীরা বিস্ময়ে বলে উঠে ছিল না। এ কোন মানুষ নয়। এ হলো সম্মানিত কোনো ফেরেশতা কিংবা যে সৌন্দর্যের ঝলক দেখে মিশরের নারীরা নিজেদের অজান্তেই নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল; জান্নাতে তোমরা হবে সেই ইউসুফের মতো সৌন্দের্যের অধিকারিণী।
আর তোমাদের আখলাক বা চরিত্র হবে, আখেরী নবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ-র আখলাক; যার ব্যাপারে কোরআনের ঘোষণা-
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। [সূরা কলম: ৫]
আর যদি জান্নাতে তোমাদের মর্যাদার কথা বলো, শ্রেষ্ঠত্বের কথা জিজ্ঞেস করো, তবে বলতে দ্বিধা নেই, জান্নাতে তোমরা হবে হুরদের চাইতেও মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। কারণ, তারা (হুরেরা) কোনদিন আমলের কষ্টের মুখোমুখি হয়নি। ইবাদত-ইতাআত কোনটাই করেনি। মুয়ামালাত, মুয়াশারাত, সামাজিক লেনদেন, আচার-আচরণ যেমন তাদের কোনদিন করতে হয়নি, করতে হয়নি তাদের কোন হুকুমের গোলামী কিংবা নিষেধাজ্ঞার পাবন্দী। আর তোমরা হলে আল্লাহ-র এমন বান্দী, যাদের উপরে রয়েছে রব্বে কারীমের আনুগত্যের গুরু দায়িত্ব। তার ইবাদাত-ইতাআতের সঙ্গে নিজেদের সন্তান লালন-পালন, স্বামীর আনুগত্য ও সেবার মধ্য দিয়ে তার মন জোগানোর মহা দায়িত্বও তোমাদের কাঁধেই ন্যাস্ত ছিল। অথচ এই সব হুরদের এ কোনটাই ছিল না। এজন্য তোমরা হুরদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তোমরাই তাদের সরদার।
যদি বলো জান্নাতে তোমাদের খাবার কেমন কী হবে? তবে পাখির সুস্বাদু গোশত হবে তোমাদের পছন্দের খাবার। পছন্দের বিচিত্র স্বাদে ভরপুর নানান ফলমূল থাকবে তোমাদের খাবার তালিকায়।
জান্নাতের পানীয় সম্বন্ধে যদি জানতে চাও- তবে তা হবে এমন দুধ; যার রুচি কোনদিন ফিরবে না। সেই সাথে তোমরা পান করবে এমন শরাব- যা পান করতেই মনটা এক অভাবনীয়-অতুলনীয় প্রফুল্লতা আর আনন্দে ভরে ওঠবে। শরীর হয়ে ওঠবে চনমনে। অবশ্য এতে কোন ধরনের অনিষ্ট নেই। মাথাধরা-মাথা ব্যাথা নেই। থাকবে না কোন মাদকতা-মাতলামী কিংবা দেমাগ খর্বতা। আর জান্নাতে রয়েছে স্বচ্ছ সুমিষ্ট এমন পানি, যার স্বাদ-রং আর ঘ্রাণ থাকবে অপরিবর্তিত। পেয়ালা ভর্তি মধুও থাকবে তোমাদের জন্য।
এখন তোমাদের মন যদি চায় দুধ, শরাব, মধু, পানি সব এক করে শরবত খেতে, তবে তৈরী হয়ে যাবে মিশ্র শরবতের পেয়ালা। প্রস্তুত থাকবে অসাধারণ-অনাস্বাদিত শারাবান তহুরা।
কেউ যদি বল, জান্নাতীদের মলমূত্র তথা বর্জ্য- এগুলো যাবে কোথায়? তবে ভালো করে শুনে রাখো! জান্নাতে মল-মূত্র, ঘাম-সর্দি, হায়েয-নেফাস থাকবে না। থাকবে না কোন বিড়ম্বনা, অস্থিরতা। অসুখ-বিসুখ, ক্লান্তি-শ্রান্তি, ডর-ভয়, বিপদ-মুসিবত, অক্ষমতা-দুর্বলতা, চিন্তা-পেরেশানী, মন খারাপ এ জাতীয় কোন কিছুই জান্নাতীকে স্পর্শ করবে না।
পারস্পারিক বিরাগ-শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, লড়াই-ঝগড়া, ছিদ্রান্বেষণের মতো বিষয়গুলোও জান্নাতে থাকবে না।
ধোঁকাবাজী, চালবাজী, গর্ব-অহংকার, আত্মসাৎ, ফেতনা-ফাসাদও থাকবে না। থাকবে না অশীলতা, নীতিহীনতা, নাপাকী-নোংরামী বলতে কোনো কিছু। জান্নাতে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত আর যুদ্ধ-জিহাদের বিষয়গুলোও থাকবে না। যা খাবে পেটে গিয়ে
কস্তুরীর সুঘ্রাণযুক্ত একটা ঢেকুরে বেরিয়ে আসবে। আর অমনি সবকিছু হজম হয়ে যাবে। এখানে বদহজমী, পেট খারাপ কিংবা অস্বস্তি বলতে কিছু থাকবে না।
এই হল জান্নাত। তোমাদের ঠিকানা। এখন কেউ যদি তোমরা জিজ্ঞেস কর, জান্নাতের জীবনটা কেমন হবে স্থায়ী না অস্থায়ী? তো শুনে রাখো, ওখানে জীবন হবে চিরস্থায়ী। সেখানে তোমরা থাকবে চিরকাল। সেখানে ক্ষয়-লয়, ভয় কোন কিছু নেই। এবং একবার জান্নাতে প্রবেশ করলে সেখান থেকে বহিষ্কারের কোন নিয়মও নেই। আলাহ কত চমৎকার বলেছেন- انَ خَلِدِينَ فِيهَا أَبَدًا সেখানে চিরকাল থাকবে।] [সূরা তালাক: ১১]
Editor: Abdullah Al Mijan