25/05/2025
ইলান মাস্কে নয়, খলিলুর রহমানে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত!
——————————————————
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আলোচিত বিষয় এস.আলমের বিলিয়ন ডলার পাচার, আজিজ খান সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী হওয়া কিংবা মন্ত্রী এম.পিদের দেশে দেশে বেগম পাড়া গড়ে তোলা নয়, আলোচনার বিষয় হলো নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমান। "তার মত একজন দ্বৈত নাগরিককে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানানোতে জাতির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে যেতে পারে।"
অথচ সাউথ আফ্রিকার ইলান মাস্ক কানাডার নাগরিক,আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে হয়ে গেছেন ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টা, তাকে নিয়ে কোন মানুষ আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোন আশঙ্কা প্রকাশ করেনি! বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমানকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশকারীদের মধ্যে একজন ডাঃ জাহেদুর রহমান।
ডাঃ জাহেদরা বাম ভাবধারার রাজনীতি করেন। তাদের একটি জনপ্রিয় শ্লোগান "কেউ খাবে কেউ খাবেনা তা হবেনা তা হবেনা।" এই শ্লোগান দিয়ে সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া হাতিয়ে নিয়েছেন ৮টি প্লট ও হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক, বামদের অন্য পীর রাশেদ খান মেনন বনে গেছেন ২৫ হাজার কোটি টাকার মালিক আর প্লটতো আছেই , আরেক পীর ইনুও কয়েক কোটির মালিক আর হাতিয়ে নিয়েছেন একাধিক প্লটও । শুধু কি তাই, বিগত সরকারের ‘অনুগত ও তোষামদকারী’ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, সাংবাদিক, শিল্পীরা হাতিয়ে নিয়েছেন হাসিনার কাছ থেকে ৮৩০টি প্লট ।
এদের অনেকে আবার বিশ্বের নানান দেশে নিজের স্ত্রী সন্তানদের জন্য বেগম পাড়া গড়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ইস্টাব্লিস্ট করে নিয়েছেন সেই দেশের নাগরিকত্বও । সাবেক ভূমিমন্ত্রীও এম.পি. সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডন আমেরিকা আর দুবাইয়ে ৬২০টি বাড়ি কিনেছেন, নাটোরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের কানাডায় দুটি বাড়ি ,আব্দুস শহীদ গোলাপের আমেরিকায় ৯টি বাড়ি,সাবেক এম.পি ডাঃ এনামের মালয়েশিয়ায় কয়েকটি বাড়ি ...... এভাবে খোঁজ নিতে গেলে প্রবাসীর তালিকায় উঠে আসবে বাংলাদেশের প্রায় সকল মন্ত্রী, এম.পির নাম।
বাঙালিরা যেভাবে প্রবাসী হয়ে উঠে :
ইউরূপে টেক্সটাইল মিলের রেভ্যুলুশনের সময় ভাওচারের মাধ্যমে সিলেটের লোকজন সর্বপ্রথম প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলো. তার অনেকদিন পর শ্রমিক ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে লোকজনের যাতায়াত ঘটে. তারপর একে একে , গলাকাটা পাসপোর্ট , ভ্রমন ভিসা এমনকি টারজান ভিসায় জীবন বাজি রেখে লোকজন ইউরুপ আমেরিকায় পাড়ি দিতে থাকে । খুব অল্প সংখ্যক লোকই স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। সবার একটিই উদ্দেশ্য ছিলো দেশে থাকা পরিবার পরিজনকে ভালো রাখা. দিনরাত পরিশ্রম করে যে যা রুজগার করতো , নিজের কথা চিন্তা না করে তা দেশে পাটিয়ে দিতো। এদেরকে বলা হয় রেমিটেন্স যুদ্ধা।
নিজের পরবর্তী প্রজন্মকে রেমিটেন্স যুদ্ধা হিসাবে গড়ে তুলতে স্ত্রী সন্তানসহ মা বাবাকে দেখাশোনা করার প্রয়োজনে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা এক সময় সে দেশের নাগরিকত্বও নিয়ে, হয়ে যান ডুয়াল সিটিজেন। এরা ব্যবসা বানিজ্য চাকুরী বাকুররির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন নতুন দেশে। এরা উন্নত বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সেতুবন্ধন তৈরী করেছেন .
প্রবাস যাত্রার নতুন ধারা ইনভেস্টমেন্ট:
বিগত ১৫-২০ বছর যাবৎ প্রবাস যাত্রায় যে নতুনত্ব যোগ হয়েছে তাতে দেখা যায়, রাজনীতির সাথে জড়িত এম.পি.-মন্ত্রী আর সরকারের সুনজরে থাকা ছোট বড় আমলারা বিরাট বিরাট ইনভেস্টমেন্টের মাধমে স্থায়ী ভাবে বিদেশে বসবাসের সুযোগ করে নিচ্ছেন। মন্ত্রী-এমপি নির্বাচিত হওয়া আর সরকারের সুনজরে থাকার মানেই যেন বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পাসপোর্ট ভিসা।
বাংলাদেশের নির্বাচিত মন্ত্রী-এম.পিরা পাচারকৃত টাকায় ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন তাতে যেমন কারো জাত যেতে দেখিনি তেমনি সংবিধানেরও ব্যত্যয় যেমন ঘটেনি, কিন্তু বাংলাদেশে জন্ম নেয়া কোন দ্বৈত নাগরিক বাংলাদেশে মন্ত্রী/এম.পি নির্বাচিত হতে গেলেই সবার গায়ে ফুসকা পড়ে যায় জাত গেলো জাত গেলো বলে সংবিধানের ধারা কপচায় !
ডাঃ জাহেদের মত দিলীপ বড়ুয়াদের যখন কোন কিছু ছিলোনা, পাঞ্জাবি পাজামা আর চটি পরে মাঠে ময়দানে বাস্তুহারাদের মত ঘুরে বেড়াতেন তখন তারাও " জন্ম সূত্রে বাংলাদেশি-দ্বৈত্ব নাগরিকদের , বাংলদেশে এম.পি. মন্ত্রী নির্বাচিত হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে " এই অজুহাতে নাগরিকদেরকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্তা থেকে দূরে রাখতেন।
যে দেশে বিডিআর মিউটিনির নামে একদিনে ৫৭জন আর্মি অফিসার হত্যা হয়ে যায় , যে দেশের আর্মির প্রধান এমন কি মন্ত্রী এমপি নির্বাচিত হতে লাগে পার্শবর্তী রাষ্ট্রের আশীর্বাদ সে দেশে জন্ম সূত্রে বাংলাদেশি-দ্বৈত্ব নাগরিকদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় "জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত!"
বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি, এমন পরিস্তিতিতে মেয়ে জামাইকে সম্মান দেখাতে মাথা ঢাকতে গেলে শাশুড়ির শরীর উদোম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাইতো লুৎফুন্নেছা, বদি আর মমতাজের মত অজ্ঞ অশিক্ষিতদেরকে বাংলাদেশের মন্ত্রী এমপি হিসাবে দেখতে হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় নাই যে সব দেশের তাদের শীর্ষে আমেরিকা আর ইসরাইল, অথচ আমেরিকা আর ইসরাইল, দেশ দুটিতে শুধু দ্বৈত নাগরিকই নয় ত্রিদেশীয় এমনকি নন সিটিজেন ও মন্ত্রী এমপি এমনকি প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হতে পারে!
জন্ম সূত্রে সাউথ আফ্রিকার নাগরিক ইলন মাস্ক কানাডার নাগরিক, ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ২০০২ সালে আমেরিকার নাগরিকত্বও নেন। তিনি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুধু উপদেষ্টাই নয় তাকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তরসূরি হিসাবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের ১৭% মানুষ দ্বৈত্ব নাগরিক।ইসরাইলের প্রতি ইউরুপ আমেরিকার দ্ব্যর্থহীন সাপোর্টের মুলে এই সব দ্বৈত্ব নাগরিদের প্রভাব। ইসরাইলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে সারা বিশ্বের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই জুইশরাই । জার্মানে জন্ম নেয়া আমেরিকান নাগরিক আলবার্ট আইনস্টাইনকে ইসরাইল প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অথচ তিনি ইসরাইলের নাগরিকই ছিলেন না ! তিনি রাজনীতি জানেনা বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনে তার অবদান তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে আজও।
ইসরায়েলের বেশির ভাগ প্রধান মন্ত্রী আর প্রেসিডেন্ট ছিলেন আমেরিকান অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সিটিজেন। বর্তমান প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও ইসরাইল আর আমেরিকান নাগরিক।
আমেরিকা আর ইসরায়েল, সি.আই.এ. আর মোসাদের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে দাবড়ানির উপর রেখেছ ! আমেরিকা আর ইসরাইলকে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়তো দূরের কথা দেশ দুটির স্পর্শকাতর সংবাদের কেউ টিকিটিও ছুতে পারেনি আর পারবে বলেও মনে হয়না।
যে দ্বৈত নাগরিকদের মাধ্যমে বাংলদেশ বহির্বিশ্বের নিজেদের প্রভাব পতিপত্তি বৃদ্ধি করতে পারে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার টুনকো অজুহাতে সেই নাগরিকদের দূরে ঠেলে দেয়া মোটেই সুস্থ বুদ্ধির পরিচয় বহন করেনা .
আমেরিকা আর ইসরাইলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দ্বৈত নাগরিকদের অবস্থান দেখে এটি কি বোধগম্য হয়না যে , জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে দ্বৈত নাগরিকদের মন্ত্রী এমপি হতে অনুমতি না দেওয়াটা ডাঃ জাহেদদের স্রেফ মেকি অজুহাত মাত্র।
ডাঃ জাহেদরা লুৎফুন্নেছা, বদি আর মমতাজের মত অজ্ঞ অশিক্ষিতদের বাংলাদেশের মন্ত্রী এমপি বানাতে রাজি থাকলেও ডঃ আলী রিয়াজ, ডঃ খলিলুর রহমানদের মত জ্ঞানী গুণী পন্ডিত ব্যক্তিদের ডুয়াল সিটিজেনশিপ আছে এই অজুহাতে বাংলাদেশের মন্ত্রী এমপি বানাতে রাজি নন। অথচ আমেরিকা- ইসরায়েল এমনতর জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিদের সারা বিশ্ব থেকে খোঁজে নিয়ে নিজেদের মন্ত্রী এমপি বানিয়ে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা সুসংহত করেছে . ডাঃ জাহেদদের
"জ্ঞানী গুণী ব্যক্তির মন্ত্রী এমপি বানালে
জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার " অজুহাত ডাল মে কুচ কালা হায়,বুঝতে হবে ইন্টেনশনে কোন ঝামেলা আছে ?
দিলীপ বড়ুয়াদের মত ডাঃ জাহেদরাও এক দলের এক নেতা। কোন মতে একবার মন্ত্রী এমপি হতে পারলে তাদের শত শত প্লট বাড়ি গাড়ি ব্যবসাপাতি আর বিদেশী পাসপোর্টের হাতের মুঠোয় চলে আসবে অনায়াসে। যারা ইতিমধ্যে প্রবাসে চাকুরী-বাকুরী ব্যবসা বাণিজ্য করার সূত্রে ডুয়েল সিটিজেনশিপ নিয়েছেন তারা যদি বাংলদেশে এমপি মন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হোন তাহলে ডাঃ জাহেদর মত এক দলের এক নেতাদের ভবিষ্যৎ বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয়না।
এই ইনটেনশন থেকে ডাঃ জাহেদের মত নেতারা দ্বৈত নাগরিকদের বাংলদেশের নির্বাচন ব্যবস্তা থেকে দূরে রাখতে আদা জল খেয়ে বিরোধীতায় মাঠে নেমে পড়েছেন।