18/09/2025
#বিরহের_বর্ষায়_প্রণয়ের_বারিধারা
#পর্ব_১৩
#লেখনিতে_খুশবু_আকতার
অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানুষ কান্নাকরে।আচরণ হিসেবে কান্নাকে অনেকেই
ঠাট্টা-উপহাস করেন।তারা বলেন,অশ্রু
হলো মেয়েলি,প্রশ্রয়পূর্ণ ও অতিনাটকীয়
বিষয়।অনেকে কান্না কে সস্তা বস্তু হিসেবে উল্লেখ করেন।অন্যদিকে মনোবিদরা ‘ভালো কান্নাকাটি’র প্রয়োজনীয়তা আছে বলে উল্লেখ করেন।মানব শরীর তিন ধরনের কান্না উৎপাদন করে।যার একটি হলো আবেগীয়,যা সংবেদনশীল কোনো কারণে ঘটে থাকে।রুবেলের ঘটনাটাও প্রভার কাছে ঠিক এমনই।হঠাৎ করে একটা ছেলের থেকে বাজে স্পর্শ পাওয়া।আবার তাকে হুম*কি দিয়ে যাওয়া পুরো ব্যাপারটাই প্রভাকে একদম ভ*য় পাইয়ে দিয়েছে।রুবেল তাকে আজ রাত পর্যন্ত সময় দিয়ে গেছে।এতোদিন প্রভা ভাবতো যে রুবেল হয়ত ওকে শুধু ভ*য় দেখাচ্ছে।কিন্তু আজকের ঘটনার পর প্রভা নিশ্চিত যে ও যেকোনো কাজ করতে পারে।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে প্রভার গায়ে আবারো জ্বর চলে এসেছে।সেই সৌমি যাওয়ার পর থেকেই দুই হাত বেঞ্চের ওপর ভাজ করে রেখে তাতে মাথা ঠেকিয়ে কাঁ*দছে।নির্ভীক যে ওর সামনে বসে আছে সেই খেয়াল ও তার হয়নি।ইতোমধ্যে সেখানে নির্ভয় আর সৌমিও চলে এসেছে।নির্ভীক কে প্রভার সামনে অসহায় মুখ করে বসে থাকতে দেখে নির্ভয় নিজেও কোনো শব্দ করলো না সৌমিকেও শব্দ করতে নিষেধ করে বলল,
"যমুনা সেতু,চুপচাপ শুধু শুনবে আর যা হচ্ছে দেখবে।একটা কথাও যদি বলেছো তাহলে আজকেই তোমায় নিয়ে গিয়ে যমুনা সেতুর ওপর থেকে ফেলে দেব।"
নির্ভয়ের কথা শুনে সৌমির রা*গ হলেও কিছু বলল না।তার কাছে এখন সবার আগে প্রভা।
নির্ভীক আলতো করে প্রভার মাথায় হাত রাখলো।প্রভার মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।সে এখনও একই ভাবে কাঁ*দছে।প্রভা ভেবেছে সৌমিই এসেছে।সে সৌমি ভেবেই নির্ভীক কে বলল,
"আমার খুব ভ*য় লাগছে সৌমি।ও আমাকে ছাড়বে না।আমার মনে হয় এবার বড় মামাকে জানাতেই হবে সবটা।আমার আর এখানে থাকা হলো না।"
"ওই শ*য়*তা*ন*টাকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তুমি কোথাও যাবে না।"
হঠাৎই সৌমির বদলে নির্ভীকের গলা শুনে প্রভার কা*ন্না থেমে গেল।মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো নির্ভীক বসে আছে।মুহূর্তের মাঝেই প্রভার নির্ভীকের ওপর করা অভিমানটা আবার মনে পড়ল।প্রভা চোখের জলটা মুছে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোরালো।নির্ভীক কে দেখে আবারো তার কা*ন্না*টা শুরু হলো।নির্ভীক বুঝতে পারলো যে প্রভা প্রচন্ড মাত্রায় অভিমান করেছে তার ওপর।এবং এখন এই অভিমানটা যে তাকেই ভাঙাতে হবে সেটাও বুঝতে পারলো।নির্ভীক শান্ত কন্ঠে প্রভার উদ্দেশ্যে বলল,
"কা*ন্না থামাও প্লিজ!"
"আপনি কেন এসেছেন?আপনার তো অনেক কাজ থাকে,আপনি তো অনেক ব্যস্ত মানুষ।আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না আমি সব সামলে নেব।আপনাকে বি*রক্ত করবো না।"
কথাগুলো বেশ অভিমানী কন্ঠেই বলল প্রভা।এবার সৌমির দিকে তাকিয়ে হালকা রা*গী কন্ঠে বলল,
"তোমাকে তো আমি কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলাম সৌমি।তোমাকেও আমি আর এর মাঝে জড়াতাম না।তুমি কেন ওনাদেরকে বি*রক্ত করতে গেলে?তুমি জানো উনি কতো ব্যস্ত থাকে সারাদিন।"
প্রভার প্রতিটা খোঁচা দেওয়া কথা নির্ভীক খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।কিন্তু এসবের জন্য সে নিজেই দায়ী।তাই চুপচাপ মেনে নিলো প্রভার কথাগুলো।নিজেই নিজের ভুল স্বীকার করে প্রভাকে বলল,
"আ'ম স্যরি প্রভা।"
নির্ভীকের কথা শুনে প্রভা তাৎক্ষণিক নির্ভীকের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
"আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন?আপনার তো কোন দোষ নেই।আমারই তো ভুল হয়েছিল।আপনি ব্যস্ত মানুষ আমার সেটা বোঝা উচিত ছিল।আপনাকে যখন তখন বি*রক্ত করা আমার উচিত হয়নি।"
"এবারের মতন কি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা করা যায় না?যদি আমি প্রমিস করি যে আর কখনো এমন ভুল হবে না তাও কি ক্ষমা করা যায় না আমাকে?দেখো ক্ষমা চাওয়া আর ক্ষমা করা দুটোই কিন্তু মহৎ গুণ।আমি কিন্তু আমার কাজটা করে নিয়েছি এবার তুমিও তোমার কাজটা করে দাও।ঝটপট করে ক্ষমা করে দাও তো।"
প্রভা এখনো কাঁ*দছে।নির্ভীকের ওপর অভিমানটা তো ওর কন্ঠটা শুনেই শেষ হয়ে গেছে।প্রভাতো এই মানুষটার ওপর অভিমান করে থাকতে পারে না।এই মানুষটা ক*ষ্ট দিলেও আবার তার কাছেই ছুটে যেতে মন চায়।এই মানুষটার ওপর দূর্বলতাই প্রভাকে আজ তার পিছে ঘুরতে বাধ্য করেছে।কিন্তু এই মানুষটা কেন সেই কথা বোঝে না প্রভার এই একটাই আফসোস।এদিকে প্রভাকে কিছু বলতে না দেখে নির্ভীক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।প্রভা অনবরত কেঁ*দেই চলেছে।নির্ভীকের প্রভার এই কা*ন্না একদমই সহ্য হচ্ছে না।প্রভার এই কা*ন্না বারবার নির্ভীককে বোঝাচ্ছে যে প্রভার এই চোখের জলের জন্য সেই দায়ী।নির্ভীক আলতো করে প্রভার চোখের জল মুছে দিল।প্রভা নির্ভীকের মুখের দিকে তাকাতেই নির্ভীক প্রভাকে ইশারায় কাঁ*দতে মানা করল।ওমনি প্রভার কা*ন্না দেখে কে।প্রভা এবার জোড়ে কাঁ*দতে কাঁ*দতে বলল,
"আপনি কেন তখন ছিলেন না?আমি আপনাকে কত খুঁজেছিলাম জানেন?কিন্তু..কিন্তু আপনাকে কোথাও পাইনি।আপনি জানেন ওই শ*য়*তা*ন*টা আমার সাথে কি করেছে?ও আমার হাত ধরেছিল।কত লেগেছিল আমার তখন জানেন?ও আমার ওড়নাও.....।আপনি কেন তখন ছিলেন না?আপনি থাকলে তো এমনটা হতো না।"
কাঁ*দতে কাঁ*দতে প্রভার হেঁচকি উঠে গেছে।এদিকে প্রভার প্রত্যেকটা বাক্য প্রত্যেকটা অশ্রুকণা যেন নির্ভীকের বুকে বি*ষাক্ত তীরের ন্যয় বিধ*ছে।সত্যি সে তখন থাকলে এমনটা হতো না প্রভার সাথে।কিন্তু তার কি দোষ সে তো প্রভার বাড়িতেই ওর খোঁজ নিতে গেছিলো।কিন্তু ওই দারোয়ানটা না প্রভার ব্যাপারে কিছু বলতে পারলো আর না ওদেরকে ভিতরে ঢুকতে দিল।আজ দুদিন হলে ভার্সিটিতে না আসার কারণে নির্ভীকের প্রচন্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছিল প্রভাকে নিয়ে যে মেয়েটা আদৌও ঠিক আছে কিনা।আবার বেশি অসুখ করলো কিনা।সেই জন্যই তো ভার্সিটিতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল ওদের।কিন্তু নির্ভীকের মনে একটা প্রশ্ন জাগলো।এভাবে হঠাৎ করে একদিন প্রভার সাথে অসভ্যতা করার মানে কি?ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে নির্ভীক প্রভাকে জিজ্ঞেস করল,
"আচ্ছা প্রভা আজকে হঠাৎ করে ওই ছেলেটা তোমার সাথে এমন কেন করলো?মানে ও কি তোমাকে আগে থেকেই বি*রক্ত করতো নাকি আজকেই প্রথম?"
"না আজকেই প্রথম না।ও প্রায় আমাকে ৫-৬ দিন হল বি*রক্ত করছে।এর আগেও একদিন ভার্সিটির ক্যান্টিনে আমার হাত ধরেছিল।আমার ফোনে রাতে কল করতো, ম্যাসেজ দিয়ে আমাকে হুমকি দিত।একটা নাম্বার ব্লক করলে আবার অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিত।এ পাঁচ দিন আমি কমপক্ষে ওর দশটার বেশি নাম্বার ব্লক করেছি।কিন্তু ও আবার আরেকটা নতুন নাম্বার থেকে কল দেয়।জানিনা ও এত নাম্বার কই থেকে পায়।"
৫-৬ দিন থেকে বি*রক্ত করছিলো এই কথাটা শুনে নির্ভীকের প্রচন্ড রা*গ হলো।যদি আগেই নির্ভীক কে প্রভা বলে দিত যে ছেলেটা ওকে ফোন দিয়ে হু*মকি দিচ্ছে তাহলে আজ এ পরিস্থিতিই হতো না।নির্ভীক রা*গী কন্ঠেই প্রভা কে বলল,
"এতদিন হলো বির*ক্ত করছে আর তুমি আমাকে একটা বারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না প্রভা?তুমি যদি আমাকে আগেই বলে দিতে তাহলে ওই শ*য়*তা*ন*টা এতদূর এগোনোর সাহসই হতো না।"
নির্ভীকের কথা শুনে প্রভা অসহায় চাহনিতে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,
"সবার আগে তো আপনাকেই জানাতে চেয়েছিলাম।আমি তো এটাই জানতাম যে আপনাকে আমার যে কোন সমস্যার কথা বললে আপনি নিমিষেই সেটা সমাধান করবেন।সে ভরসাতেই তো আমি আপনাকে বলতে গিয়েছিলাম।কিন্তু আপনি যে তখন ব্যস্ত ছিলেন।আপনার কাছে তো আমার কথা শোনার মতন সময় ছিল না।আপনি আমাকে মুখের উপর বলে দিলেন যে আপনার এখন সময় নেই।আমি তাও আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তখন আপনি আমাকে অন্য মেয়ের মতন বলে দিলেন যারা আপনার থেকে অ্যাটেনশন পেতে চাইছে।আপনি বললেন আমার নাকি আত্মসম্মান নেই।আমার কাছে নাকি নিজের আত্মসম্মান কোন ম্যাটারই করে না।সেজন্যই তো আপনাকে আর বলতে যাইনি।একবার শুধু মনে করে দেখুন আমি ওই দিন আপনাকে কতবার করে বলেছিলাম যে আমার একটা দরকারি কথা আছে আপনার সাথে।কিন্তু আপনি তো সেদিন আমাকে গোটা রাজ্যের ব্যস্ততা দেখালেন।এখন আপনিই বলুন তো আমার মাঝে সত্যি আত্মসম্মানবোধ থেকে থাকে তাহলে কি আমি দ্বিতীয়বার আপনার কাছে যেতে পারতাম?পারতাম না।সেজন্যই তো যায়নি।এই কারণেই আমি দু'দিন ধরে ভার্সিটিতেও আসিনি।একে তো ওই রুবেলের ভ*য় ছিল।ও বারবার করে আমাকে ফোন দিয়ে বলছিল যে আমি ভার্সিটিতে আসলেই আমার কিছু একটা করে ফেলবে।তারপরেও আমি আসতাম যদি আপনি আমার সাথে কথা বলতেন।কিন্তু আপনি তো আপনার কাজ নিয়ে তখন ব্যস্ত ছিলেন।"
"কিন্তু সৌমি যে বলেছিল তোমার জ্বর তাই তুমি ভার্সিটিতে আসোনি।"
নির্ভীকের কথা শুনে প্রভা হালকা হেসে বলল,
"যদি আপনি আমাকে একবার আসতে বলতেন তাহলেই আমি চলে আসতাম।আপনি শুনলেন আমি অসুস্থ তাও তো একবারো আমার খোঁজ নিলেন না।এই দুই দিনে তো একবারো জানতে চাইলেন না যে আমি বেঁচে আছি না ম*রে গেছি।অবশ্য জানতে চাইবেনই বা কেন?আমি কে হই আপনার?কিন্তু জানেন তো আমি আপনাকে নিজের কেউ একজন মনে করি।সেই জন্যেই রুবেলের এত হুমকির পরেও আমি বাড়িতে কিছু জানাইনি।কারণ আমি জানি যদি আমার বাড়ির লোক জানতে পারে তাহলে আমাকে এখানে আর এক মুহূর্ত থাকতে দেবেনা।আমি আপনার জন্য নিজের ক্ষতি হতে পারে এই চিন্তাটা একবারের জন্যও না করে এখানে থেকে গেলাম।অথচ আপনি একবার ফোন করে আমার খোঁজ নিতে পারলেন না।"
নির্ভীক যেন কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।ও তো সকালে গিয়েছিলো প্রভার খোঁজ নেওয়ার জন্য।কিন্তু প্রভাকে সেখানে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসলো।এখন এই কথাটা প্রভাকে বলতেও পারছে না।নির্ভীক আমতা আমতা করে একটা অজুহাত দেখিয়ে বলল,
"আমার কাছে তো তোমার নাম্বার ছিল না প্রভা।"
নির্ভীক এর কথা শুনে প্রভা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
"হাসালেন আমাকে।যদি আপনি চেষ্টা করতেন তাহলেই আমার নাম্বার পেয়ে যেতেন।আপনার তো সৌমির সাথে দেখা হয়েছিল।ওর থেকে কেন নাম্বারটা নিলেন না?কিংবা ওই আপুটা যার সাথে সেদিন আমাকে পাঠিয়ে দিলেন ওনাকে বললেও তো আমার নাম্বারটা এনে দিতে পারতো আপনাকে।এখন এটা বলবেন না যে আপনি ওনার সাথে কথা বলেন না।সেদিন তো ওনাকে ডেকে এনে আমাকে ওনার সাথে ঠিকই পাঠিয়ে দিতে পারলেন আর আমার নাম্বার চাইতে পারলেন না?"
কথাটা বলেই প্রভা ভেংচি কাটলো।নির্ভীক সেটা দেখে হেসে ফেলল।নির্ভীক বুঝতে পারলো যে আরেকদিন রিমির সাথে ওকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচন্ড রে*গে আছে।আর রা*গটা যে ওর সাথে যেতে না পারার কারণে হয়েছে সেটাও বুঝতে পারলো নির্ভীক।হঠাৎই প্রভার ফোনে মেসেজের টুং শব্দটা করে উঠলো।প্রভা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিতেই দেখলো আবারো একটা অচেনা নাম্বার থেকে তার কাছে মেসেজ এসেছে।সাথে সাথে প্রভার হাতটা কাঁপা শুরু হলো।প্রভার চোখেমুখে এখন ভ*য়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।নির্ভীক হঠাৎ করে প্রভার এমন পরিবর্তন দেখে জিজ্ঞেস করল,
"কি হলো প্রভা?এমন করছো কেন?আর কে মেসেজ পাঠিয়েছে?"
প্রভা ভ*য়ার্ত দৃষ্টিতে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
"আআবার ও মেসেজ দদিয়েছে।"
নির্ভীক প্রভার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেসেজটা পড়তে লাগলো।এদিকে প্রভার এমন অস্থিরতা দেখে সৌমি ওর দিকে এগিয়ে এলো।ওর সাথে নির্ভয়ও এগিয়ে এসে নির্ভীক কে জিজ্ঞেস করল,
"ওই ছেলেটাই কি আবার মেসেজ দিয়েছে?কি লিখেছে?"
নির্ভীক মেসেজটা নির্ভয় কে পড়ে শোনালো।
❝কি করছো সোনা?আজকের রাতের কথাটা মনে আছে তো?❞
মেসেজটা শুনে নির্ভয় প্রভাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল,
"ও কিসের কথা বলছে প্রভা?আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।"
নির্ভীকও বলল,
"হ্যাঁ আসলেই তো।ও তোমাকে কিসের কথা বলছে পরিষ্কার করে বলতো প্রভা?"
প্রভা মাথা নিচু করে রেখেছে।ওই শ*য়*তা*ন*টা প্রভাকে যে কথা বলেছে সে কথা মুখে বলতে প্রভার ল*জ্জা লাগছে।প্রভাকে চুপ থাকতে দেখে সৌমি বলে উঠলো,
"ওকে যে কথা বলেছে সেটা ও বলতে পারবে না ভাইয়া।আমি বলছি আপনাদের।ওই শ*য়*তা*ন*টা বলেছে যে আজকেই নাকি প্রভার শেষ সুযোগ।আজ রাতটা প্রভাকে ওর সাথে কাটাতে হবে।ও বলেছে যে আজ রাতটা যদি প্রভা ওর সাথে না কাটায় তাহলে কাল সকালে ভার্সিটির পেছনের ঝোপে.. কি যে করবে সেটা বলেনি।কথাটা সম্পূর্ণ করে নি ও।"
ভার্সিটির পেছনের ঝোপের কথাটা শুনতে নির্ভয় আর নির্ভীক দুজনেরই যেন রুহ কেঁ*পে উঠল।ওই ঝোপের আড়ালেই তো নিজেদের প্রিয় একজনকে ম*র্মান্তিক অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিল।ওই ঝোপটাই তো একটা নিরীহ মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।সেই একই ইতিহাসের আবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছিলো কথাটা ভাবতেই নির্ভীক এর বুক কেঁ*পে উঠছে।যদি সে এই ঘটনাগুলো আরেকদিন পরে জানত তাহলে প্রভার সাথে কি হত?ওর হয়তো একই অবস্থা হতো।আরো একবার হয়তো নির্ভীক আপন মানুষ হারানোর য*ন্ত্রণা পেতো।আরো একবার হয়ত নিজের ব্যর্থতার জন্য সারা জীবন নিজেকে দোষী ভাবতো।সৌমি আবারও বলা শুরু করলো,
"জানেন নির্ভীক ভাইয়া ও আরো জ*ঘন্য জ*ঘন্য মেসেজ পাঠিয়েছে প্রভাকে।ওগুলো একবার পড়লে আপনার ওর চাম*ড়া ছি*লে লবণ লাগাতে ইচ্ছে করবে।আপনি দেখুন ওর মেসেজগুলো।"
সৌমির কথা শুনে নির্ভীক প্রভার ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে বাকি মেসেজগুলো পড়লো।তার সারা শরীরে আ*গুন জ্ব*লছে যেন। রা*গে তার র*ক্ত টগবগ করে ফুটছে।নির্ভয় নির্ভীকের চেহারা দেখে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে যে আজকে ভার্সিটিতে একটা র*ক্তা*র*ক্তি কান্ড ঘটবে।এদিকে নির্ভীকের রা*গ সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে।ফর্সা মুখটা রা*গের চোটে একেবারে লাল হয়ে উঠেছে।চোখ দিয়ে যেন অ*গ্নি বর্ষণ হচ্ছে।মনে হচ্ছে যে কেউ ওই চোখে তাকালে সে একেবারে শেষ হয়ে যাবে।নির্ভীক পকেট থেকে ফোন করে বের করে একটা নাম্বারে ডায়াল করলো।ফোনটা ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই নির্ভীক গম্ভীর কণ্ঠে ছেলেটাকে আদেশের স্বরে বলল,
"এক্ষুনি ক্রিকেট ব্যাট,হকি স্টিক সহ যতগুলো লাঠি পাবি সব নিয়ে সাথে কয়েকজন ছেলে সহ দোতলার ফাঁকা রুমটাতে আয়।পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।ভালো করে মনে রাখিস পাঁচ মিনিট মানে পাঁচ মিনিট।এক সেকেন্ডও বেশি পাবি না।"
ফোনটা রেখে নির্ভীক প্রভার উদ্দেশ্যে বলল,
"ছেলেটার নাম কি প্রভা?"
প্রভা কাঁপাকাঁপা গলায় উত্তর দিল,
"রুবেল।থার্ড ইয়ার ডিপার্টমেন্ট বাংলা।"
কথাটা শুনে নির্ভীক আবার একটা নাম্বারে ফোন দিল।
"বাংলা ডিপার্টমেন্টের এ থার্ড ইয়ারের রুবেল কে চিনিস?"
-----------
"দুই মিনিট সময় দিলাম।আমাকে খবর দে ওই কু*ত্তা*র বা*চ্চা এখন কোথায় আছে?"
কথাটা বলে নির্ভীক ফোন রেখে দিল।দুই মিনিট সময় লাগলো না।এক মিনিটের মাথায় ফোন আসলো।ওপাশ থেকে জানালো যে রুবেল দলবল সহ মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে।এদিকে নির্ভীকের এসব কথা শুনে নির্ভয়ের প্রচন্ড ভ*য় করছে এখন ওকে নিয়ে।নির্ভয় ওকে শান্ত করার জন্য বলল,
"দেখ নির্ভীক,রা*গের মাথায় কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিস না।এতে কিন্তু তোর রাজনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।আর এভাবে ভার্সিটির ভেতরে মা*রা*মা*রি করা কিন্তু আমার মনে হয় ঠিক হবে না।ওকে আগে এখান থেকে বের হতে দে তারপর না হয় কিছু করিস।"
"ওকে যে এতক্ষণ আমি বাঁচতে দিয়েছি সেটা ওর কপাল ভালো।তোর কি মনে হয় আমি ওই জা*নো*য়া*রে*র মেসেজগুলো দেখার পরেও ওকে বাঁচতে দেব।ও আজকে ম*র*বে আমার হাতে।আমি ওকে আজকে শেষ করবই।তাতে যদি আমার রাজনীতির ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় হোক।আমাকে যদি ভার্সিটি থেকে রাস্ট্রিকেট করে তাও আমার যায় আসে না।কিন্তু আমি আজকে ওকে শেষ করবই।ও জানেনা যে ও কার গায়ে হাত দিয়েছে।"
কথাগুলো বলা শেষ করতেই সেখানে দশ-বারোজন ছেলে হাতে ক্রিকেট ব্যাট আর হকি স্টিক নিয়ে হাজির হয়।নির্ভীক কে দেখেই একটা সালাম দিল।নির্ভীক বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাতে একটা হকি স্টিক নিয়ে ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলল,
"আশেপাশে নজর রাখবি কেউ যাতে আমার কাজ বাঁধা দিতে না আসে।যদি একবার বাঁধা পাই তাহলে কিন্তু পরে তোদের খবর আছে!"
"আচ্ছা ভাই।আপনি চিন্তা করবেন না কেউ আপনাকে বাঁধা দেবে না।"
নির্ভীক সেখানে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে গেল।ওর পিছু পিছু ছেলেগুলোও সবাই বেরিয়ে গেল।নির্ভয় তাড়াহুড়ো করে বাইজিদ কে ফোন দিয়ে শামীম আর মহিন কে নিয়ে মাঠে আসতে বলে প্রভার উদ্দেশ্যে বলল,
"প্রভা তুমি তাড়াতাড়ি নিচে চলো।নির্ভীক আজকে যা ক্ষে*পেছে তাতে মনে হচ্ছে ওই রুবেল একেবারে শেষ।তোমাকেই থামাতে হবে নির্ভীক কে।তাড়াতাড়ি চলো প্রভা।"
কথাটা বলে নির্ভয় সেখান থেকে চলে গেল।প্রভা চোখ মুখ মুছে নিয়ে সেও সৌমির সাথে নিচে গেল।
__________
"ভাই ওই নির্ভীক দেখলাম হকি স্টিক হাতে নিয়ে মাঠের দিকে গেল।কাউকে মনে হয় পে*টাবে।"
"তাই নাকি?কাকে পে*টাবে খবর পেয়েছিস?"
"ভাই শুনলাম একটা মেয়েকে কে জানি বি*রক্ত করেছে।ওই নির্ভীকের চেনা মনে হয়।ওই ছেলেটাকেই হয়ত মা*রতে যাচ্ছে।"
উৎসব বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাসুমের কাঁধে হাত রেখে বলল,
"প্রেমিকার গায়ে অন্য পুরুষ হাত দিলে প্রেমিকের হৃদয় কেমন জ্ব*লে সেটা কখনো স্বচক্ষে দেখেছিস মাসুম?"
"না ভাই দেখিনি।"
"বেশ চল আজকে তোকে দেখাবো।আজকে তোকে দেখাবো সত্যিকারের প্রেমিক কাকে বলে।আজকে তোকে দেখাবো কেউ নিজের ধ্বং*স কিভাবে নিজেই ডেকে আনতে পারে।"
___________
ভার্সিটির মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল রুবেল।প্রভাকে কিভাবে কিভাবে সে ভ*য় দেখিয়েছে,কি কি বাজে কথা বলেছে সেসবই আলোচনার মূল বিষয়।রুবেলের কাছে এখনো প্রভার ওড়নাটা আছে।গলার সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।হঠাৎই রুবেলের পিঠে কেউ লা*থি মা*রা*য় রুবেল ছি*টকে গিয়ে সামনে উপুড় হয়ে পরে।রুবেলকে উঠে দেখারোও সুযোগ দিল না নির্ভীক।উপুড় হয়ে পরে থাকা অবস্থাতেই হাতের হকি স্টিক দিয়ে এলোপাথাড়ি মা*র শুরু করলো।রুবেলকে কে মা*র*ছে এতটুকু বোঝারোও সময় দিল না।এদিকে রুবেলের এই অবস্থা দেখে ওর সাথের ছেলেগুলো ইতোমধ্যে সেখান থেকে পালিয়েছে।ওদের কারোরই সাহস নেই যে নির্ভীক চৌধুরী কে আটকাবে।অবশ্য সাহস না হওয়ারই কথা।একেই তো নির্ভীকের ভয় তার ওপর আবার নির্ভীকের কথামতো ওর দলের ছেলেরা চারিপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে হকি স্টিক আর ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে।নির্ভীক রুবেলকে আচ্ছামতো পে*টাচ্ছে আর ওর কথা মতো কেউ যাতে ওকে বিরক্ত না করে সেই অনুসারে ছেলেগুলো সেই দিকটাতেই লক্ষ্য রাখছে।আশেপাশে দাঁড়িয়ে সবাই শুধু নির্ভীকের এই রুদ্রমূর্তী চুপচাপ দেখছে।কারণ সবাই খুব ভালো করেই জানে যে নির্ভীক চৌধুরী অকারণে কাউকে এভাবে পে*টা*বে না।এমনিতেই সে খুব একটা মা*রামা*রিতে জড়ায় না।যদি প্রভার মতো অন্য মেয়ের সাথে কখনো এমন কিছু হয় তাহলে তার দলের ছেলেরাই সেসব সামলে নেই।কিন্তু সবাই তখন একটা বিষয় নিয়েই কানাঘুঁষা করছে।আজ তাহলে হঠাৎ করে কেন নির্ভীক এই মেয়েটার জন্য মা*রপিট করছে।এটা কি এমনি এমনি করছে নির্ভীক নাকি কোনো বিশেষ কারণ আছে।কয়েকজন বলাবলি করছে,
"এই মেয়েটাকে নির্ভীক ভাইয়ার সাথে প্রায়ই কথা বলতে দেখেছি।মনে হয় ওদের মধ্যে কিছু একটা চলছে।"
এদিকে নির্ভীক মারপিট করছে শুনে সেটা দেখার জন্য মুন্নি মাঠে ছুটে আসলেও পরে যখন জানতে পারলো যে কারণটা প্রভা এবং সবাই বলাবলি করছে যে ওদের মধ্যে কিছু একটা চলছো তখন আর সেসব কথা সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে গটগট পায়ে বেরিয়ে পড়ল।
এদিকে দোতলায় দাঁড়িয়ে উৎসব এক দৃষ্টিতে নির্ভীককে দেখছে।নির্ভীক চৌধুরীর এই রুপ খুব কমই নজরে আসে।উৎসব নির্ভীককে প্রভার ব্যাপারে যতটা সিরিয়াস ভেবেছিল নির্ভীকের এই রুপ দেখে তার থেকেও অনেক বেশি সিরিয়াস মনে হচ্ছে।কারণ উৎসব জানে যে নির্ভীক কাউকে ঠিক কতটা ভালোবাসলে তার জন্যে এই আচরণটা করতে পারে।সেই প্রমাণ তো সে নিজেই পেয়েছে।উৎসবের কেন জানি আনন্দ হচ্ছে আবার বুকের কোথাও একটা সুক্ষ্ম ব্যাথাও অনুভুত হচ্ছে।সেও তো একজনের জন্যে এর থেকেও বেশি মরিয়া ছিল।কতকিছু করলো তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।অথচ তার নিজেরই করা একটা ভুলের জন্য সেই মানুষটাকে হারিয়ে ফেলল।উৎসবের কাছ তার নিজের ভাগ্যকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয় যেই ভাগ্য তাকে অসহায়ত্ব ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।যেই ভাগ্য তার থেকে শুধু তার আপন মানুষদেরকে কেড়েই নিয়েছে।
এদিকে মাঠে এসেই প্রভারা দেখল যে নির্ভীক রুবেলকে হকি স্টিক দিয়ে মা*রা শুরু করেছে।নির্ভয় বুঝতে পারলো এভাবে মা*রতে থাকলে রুবেল হয়ত দশ মিনিট ও টিকতে পারবে না।নির্ভয় দৌড়ে গিয়ে নির্ভীককে থামানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু একার পক্ষে ওকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।ইতোমধ্যে সেখানে বায়োজিদ উপস্থিত হয়েছে।বায়োজিদ ও এগিয়ে গিয়ে নির্ভীক কে থামানোর চেষ্টা করলো।দুজন মিলে ধরে নির্ভীক কে একটুর জন্য থামানো গেল।এই সুযোগে রুবেল কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে জীবন বাঁচাতে দৌড় লাগালো।কিন্তু লাভ হলো না।কেননা সে ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছে না।নির্ভীক শেষের কয়েকটা আঘাত একেবারে ওর পায়ে করেছে।রুবেল কিছু দুর যেতেই নির্ভীক বায়োজিদদের থেকে নিজের ছাড়িয়ে রুবেলের পিঠের শার্ট ধরে ওকে নিজের দিকে ঘোরালো।পরপর বিরতিহীন ভাবে পাঁচ থেকে ছয়টা চ*ড় মা*রা*র পর আবার শুরু করলো লা*থি আর ঘু*ষি মা*রা।এতো মা*র খেয়ে যখন রুবেলের নাক মুখ ফেটে র*ক্ত পরা শুরু করলো তখন নির্ভীক ওকে একটু ছাড়লো।গিয়ে আবারো হকি স্টিকটা নিয়ে আসল।রুবেলের কাছে আবার ফিরে এসে নির্ভীক ওকে জিজ্ঞেস করলো,
"বল তোকে এসব কে করতে বলেছে?"
"আআমাকে আমাকে ককেউ ককরতেএ ববলেনি।আআমার ওওকে পছন্দ হহয়েছিল।"
কথাটা বলার সাথে সাথে নির্ভীক ওর হাতে থাকা হকি স্টিক দিয়ে রুবেলের পায়ে আঘাত করল।রুবেল পা ধরে জোরে আর্তনাদ করে উঠল।
"তুই যদি ওকে পছন্দ করতি তাহলে ওই নোংরা কথাগুলো বলতি না।তোর ওই নোংরা মুখে তুই যদি আর দ্বিতীয়বার বলেছিস যে তুই ওকে পছন্দ করিস তাহলে আমি তোর জিভ ছি*ড়ে ফেলব।"
নির্ভীক এবার রুবেলের সামনে বসে ওর গলায় পেঁচানো প্রভার ওড়নাটা ধরে বললো,
"মেয়েদের ওড়না নেওয়ার খুব শখ না?আজ তোকে এই ওড়না পেঁচিয়েই আমি শেষ করব।"
কথাটা বলেই নির্ভীক রুবেলের গলায় থাকা ওড়নাটা দিয়েই ওর গলা পেঁচিয়ে ধরল।এদিকে রুবেলের অবস্থা বেগতিক দেখে নির্ভয়রা সবাই ছুটে এসে নির্ভীক কে থামানোর চেষ্টা করছে।বাধ্য হয়ে এবার প্রভাও আসল নির্ভীক কে থামানোর জন্য।
"বড় ভাই,ওকে ছেড়ে দিন।ম*রে যাবে তো।ওকে ছেড়ে দিন।"
"ওর মতো ছেলেদের বাঁচার অধিকার নেই প্রভা।ওর মতো ছেলেরা আমাদের সমাজের কলঙ্ক।"
অনেক ক*ষ্টে সবাই মিলে নির্ভীক কে থামাতে সক্ষম হলো।কিন্তু ওর রা*গ এখনো যেন একটুও কমেনি।নির্ভয়দের কাছ থেকে ছোটার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে।কিন্তু সক্ষম হতে পারছে না।বায়োজিদ নির্ভয় কে নির্ভীক কে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলল।কিন্তু নির্ভীক কে নিয়ে নির্ভয়ের একার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।একবার যদি ও ছাড়া পায় তাহলে রুবেল আজকে শেষ।প্রভা এগিয়ে এসে নির্ভীকের উদ্দেশ্যে বলল,
"আর ওকে মা*র*বে*ন না।অনেক হয়েছে আর দরকার নেই।আপনি প্লিজ চলুন এখান থেকে।আমি না দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না শরীরটা খারাপ লাগছে।আবার আপনাকে একা রেখে যেতেও পারছি না।প্লিজ চলুন এখান থেকে।"
প্রভার কথা শুনে নির্ভীক উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
"শরীর খারাপ লাগছে মানে?আবার কি জ্বর এসেছে?"
প্রভা হালকা করে বলল,
"মনে হয়।আপনার রা*গ আর মা*রা*মা*রি দেখে আমার ভ*য়ে*তে আবার জ্বর চলে এসেছে।"
প্রভার কথা শুনে নির্ভীকের আবার রাগ উঠল।রাগ করা দেখে আবার কারোও জ্বর আসতে পারে?আর এতটুকু মা*রামা*রি দেখেই যার এই অবস্থা সে নাকি নির্ভীকের জন্য মনের মাঝে অনুভুতিদেরকে পুষছে?নির্ভীক সৌমিকে উদ্দেশ্য করে রাগী কন্ঠে বলল,
"সৌমি তোমার বান্ধবিকে নিয়ে এসো।"
কথাটা বলেই নির্ভীক আগে আগে রওনা দিল।আর ওর কথামতো সৌমি প্রভাকে ধরে ধরে নিয়ে আসল।ওদের সাথে নির্ভয় ও আসলো।চারজন আবার আগের জায়গাতেই ফিরে আসল।সৌমি প্রভার জন্য যেই পানিটা নিয়ে এসেছিল সেটা নির্ভীককে দিল।নির্ভীক এক ঢোকেই পুরো বোতলের পানিটা শেষ করে দিল।এদিকে নির্ভয় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আর একটু হলেই একটা সর্ব*নাশ হয়ে যেত।এখনই যে কিছু হবে না নির্ভয় সেটাও বলতে পারছে না।প্রভা নির্ভীকের পাশে বসে মৃদু কন্ঠে বলল,
"আপনি একটু শান্ত হন।আপনার রা*গ দেখে আমার ভ*য় লাগছে।"
নির্ভীক প্রভার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল,
"চেষ্টা করছি কমানোর।একটু সময় দাও।"
এরপর কিছুক্ষণ কেউই কোন কথা বলল না।কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙ্গে নির্ভীক প্রশ্ন করল,
"আমি তখন ভার্সিটিতে এসেছিলাম না তো আমাকে একটা কল করতে পারনি?"
সৌমি মিনমিন করে বলল,
"আপনার মত সেলিব্রেটির নাম্বার আমরা কই পাবো ভাইয়া।আমি একজনের থেকে আপনার নাম্বার চেয়েছিলাম কিন্তু বলেছিল যে ওর কাছে নাকি নেই।আর বাকি সবার কাছ থেকে চাওয়ার মতন সময় ছিল না।তখন প্রভা একা ছিল।"
নির্ভীক প্রভার দিকে তাকিয়ে হালকা রা*গী কন্ঠে বলল,
"সারাদিনই তো বড় ভাই বড় ভাই করে ডাকো।এটা হয়েছে,ওটা হচ্ছে সব সময় বকবক করতেই থাকো।অথচ নাম্বারটা চেয়ে নিতে পারোনি?এক্ষুনি আমার নাম্বারটা সেভ করে নাও।দুজনেই।আর শোন কেউ চাইলে কিন্তু আমার এই নাম্বারটা দেবে না।বলবে তোমাদের কাছে নেই।এটা আমার পার্সোনাল নাম্বার।এই নাম্বারটা শুধু আমার কাছের মানুষদের কাছে আছে।তোমাদেরকে দিলাম যাতে তোমরা কল করলে বুঝতে পারি কোন সমস্যা হয়েছে।কিংবা কোন দরকার।বুঝতে পেরেছো দুজনেই?"
দুজনে মাথা নেড়ে বুঝেছে সেটা ইশারা করলো।
___________
"কি হলো ভাই হঠাৎ করে মা*রা*মা*রি দেখে খুশি হয়ে গেলেন যে।আর ওই ছেলেটা তো আমাদের দলেই ছিলো।আপনি তো ওকে কি জানি কাজ করতে বলছিলেন।তাহলে ওকে যখন নির্ভীক চৌধুরী মা*র ছিলো আপনি ওকে বাঁচালেন না কেন ভাই?"
উৎসব গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
"তোকে আবার কমপ্ল্যান খাওয়াতে হবে মাসুম।দিন দিন তোর বুদ্ধি কমে যাচ্ছে।আমার সাথে থেকে তো তোর বুদ্ধি বাড়ার কথা কমছে কেন?"
"কি জানি ভাই জানিনা।আপনি বলেন না ওই নির্ভীক চৌধুরীর রুবেলকে মা*রা দেখে আপনি খুশি হলেন কেন?"
"নিজের সব থেকে বড় শত্রুর ধ্বং*স শুরু হলো আজ।সেটা আমি নিজ চোখে দেখে খুশি হব না?"
"কি বলেন ভাই কিছুই তো বুঝি না?"
"আজকে ওই হা*রা*মি নিজ ইচ্ছেয় জা*হা*ন্না*মে*র আ*গুনে ঝাঁপ দিল।কিন্তু এই জা*হা*ন্না*ম টা একটু অন্যরকম।এখানে একেবারে না ধীরে ধীরে পু*ড়ে ম*র*বে ও।আমি ধীরে ধীরে আ*গু*ন*টা বাড়াবো আর ও আমাকে আ*গুন*টা বাড়ানোর জন্য জ্বা*লানি সংগ্রহ করে দেবে।এক সময় যখন আমি ওর কাছে আমাকে দেওয়ার মতোন কোনো কিছু রাখবো না তখন ওকে আমার আগুনেই পু*ড়ে ম*র*তে হবে।তখন ওর কাছে বাঁচার কোনো পথ থাকবে না।ও ধুকে ধুকে ম*র*বে।না ও ম*র*বে না আমি ওকে মা*র*বো।জানিস আমি ওকে কখন মা*রবো?যখন ও আফসোস করবে ও কেন নিজ ইচ্ছেতে জাহা*ন্নামের আ*গুনে পা দিল।ও আফসোস করবে এটা ভেবে যে ও কেন এই জাহান্নামের আগুন টাকে একসময় জান্নাত ভেবে নিয়েছিল।প্রতিটা মুহুর্তে ও এটা উপলব্ধি করবে যে ভালোবাসা ওর জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে।ও যেমন আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছিল আমিও তেমন ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নেব।প্রতিটা মুহূর্তে ওকে মনে করিয়ে দেব যে ও আমাকে যেই ক*ষ্টটা দিয়েছে আমিও ওকে একই ক*ষ্টটা ফেরত দিয়েছি।যতদিন না ও নিজে সেই ক*ষ্টটা পাবে ততদিন ও আমার ক*ষ্টটা বুঝতে পারবে না।শা*লা হা*রা*মি।"
চলবে ইনশাআল্লাহ........
(অনেক ব্যস্ততার মধ্যে লিখেছি।রি চেইক দেওয়ার সময় পাইনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর হ্যা অবশ্যই জানাবেন কেমন হচ্ছে গল্পটা।ধন্যবাদ)