গল্পের শহর

গল্পের শহর নিয়মিত গল্প ও ভিডিও টাইমলাইনে সবার আগে পেতে পেইজে লাইক দিয়ে Follow বাটনে ক্লিক করে Favorite করে রাখুন!

 #যাতনা_আমার #সানজিদা_ইসলাম_সূচনা #পর্ব: ২৯নিধিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে পাঁচ দিন হলো। মেয়েটা একেবারে ঘরকোনো হয়ে আছে। কার...
26/07/2025

#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ২৯
নিধিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে পাঁচ দিন হলো। মেয়েটা একেবারে ঘরকোনো হয়ে আছে। কারো সাথে তেমন কোনো কথাই তার বলা হয় না। একেবারে চুপচাপ থাকে। খাবার বেলায় সোহানা বা নিপা কে জোর করে খাওয়াতে হয়। মির্জা বাড়ির লোকেরা অনেকটাই চুপসে রয়েছে। অন্যদিকে নাভানেরও একই হাল। দিনরাত আল্লাহর কাছে দোয়া চায় নিজের কৃতকর্মের জন্য। তবু সোহানা নাভানকে নিয়ে অতোটাও চিন্তিত নয়। সে এডাল্ট, নিজেকে সামলাতে শিখে নেবে নিশ্চয়ই। নিধি ঘরের সাথে লাগোয়া বেলকনিতে বসেছিলো। শিউলি ফুলের গাছের দিকে নজর তার। ফুল নেই তবুও এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো। আজকাল নিজের শরীর টাকেও তার প্রচুর ঘিন্না লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় শরীরটা কে কেটেকুটে ছিড়ে ফেলতে। এক বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধি। রুম থেকে অনবরত ফোনের আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু ফোনটা রিসিভ করতে মনে চায়না নিধির। আনুমানিক পনেরো টা কল তো হবেই। বিরক্ত হয়ে নিধি গিয়ে এবার ফোনটা রিসিভ করে।
-'' বলুন, এতোবার কল কেনো দিচ্ছেন? "
কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠেই প্রশ্ন করে নিধি। ফোনের ওপাশ থেকে ফাহাদ তেমন কোনো রিয়াকশন দেখায় না। শুধু শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-" কখন থেকে ফোন করছি নিধি। দরকারী ফোনও তো হতে পারে? "
নিধি কোনো উত্তর দেয় না চুপ করে রইল। ফাহাদ ফোনের ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব'লে,
-" দরজা টা খুলো। "
-" মানে? "
-" আমি সেই কখন তোমাদের বাড়িতে এসেছি। নিপা আন্টি তোমাকে দরজা খোলার জন্য এতোবার করে ডাকছে। কিন্তু তুমি? ট্রাস্ট মি, এখন দরজা না খুললে ভেঙে ফেলবো আমি। "
নিধি ফোন রেখে দরজা টা খুলে ককন থেকেই নিপা ডাকছিলো। দরজা খুলতেই ফাহাদ কে দেখে নিধি। শান্ত অবিচল মুখ। নিধি সড়ে গিয়ে কাউচে পা উঠিয়ে বসে থাকে। ফাহাদ ধীর পায়ে হেটে নিধির পাশে বসে।
-" নিধি সেদিনের বিষয়ে কথা ব... "
-" ওইদিনের বিষয়ে কিছু বলবেন না। আমার ভালো লাগে না জবাব দিতে। "
ফাহাদের মুখের কথা থাকতেই নিধি কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়। ফাহাদ হতাশ হয়ে নিধির দিকে তাকায়। বড়ো মুশকিলে পড়া গেছে যেনো। নিধি কিছু না বললে বুঝবে কিভাবে? এদিকে নাভানেরও কোনো হদিস নেই। ফাহাদ যথাযথ নিজেকে শান্ত রেখে ঠান্ডা গলায় ব'লে,
-" আই নো নিধি, ঘটনাটা তুমি ভুলে যেতে চাও। বাট নিধি তুমি কি জানো? তোমার ঘটনাটা কোনো স্বাভাবিক নয়। এরা আগে থেকেই প্লেন করে সবটা করেছে। "
নিধি এবার চোখ তুলে ফাহাদের দিকে তাকালো। কালো মনির চোখগুলো যে কতোটা রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছে তা জানান দিচ্ছে যেন। ফাহাদ এবার নরম হয়ে বলে ওঠে,
-" প্লিজ নিধি বলো সবটা। তুমি কি চাওনা তাদের শাস্তি হোক? "
নিধি চুপসে থাকে অনেক্ক্ষণ। কোনো কথা বলতে পারেনা সে। ফাহাদ নিধির হাতে ধরে রিকোয়েস্ট করে। নিধি চোরা চোখে একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
-" বিকালের পরপরই সেদিন আশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সিএনজি করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলাম। আর মাঝ রাস্তায় আসতেই লোকটার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাইরে দাড়িয়ে ড্রাইভার আংকেল কে অনেক্ক্ষণ কল করি। উনি ফোন তুলেন না। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার নাকে রুমাল চেপে ধরে। তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই আমি ওই বাড়িতে নিজেকে আবিষ্কার করি। আর......
নিধির গলা কেঁপে যায় আর কোনো বলার মতো সাহস পায় না সে। ফাহাদ আর জোর করে না। নিধি দু'হাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। ফাহাদ নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে কাঁদতে নিষেধ করে।
-" ওদের কাছে আমি কতো আকুতি মিনতি করেছি আমাকে ছেড়ে দিতে। জানেন? শেষ মুহূর্তে জ্ঞান হারাবার আগে আমি আমার মৃত্যু কামনা করেছি পর্যন্ত। ''
ফাহাদ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিধির কান্না কিছুটা থেমেছে। খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ করে কাটিয়ে দিলো। নিধি এবার গা এলিয়ে দিলো। ফাহাদ শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো নিধির দিকে। কিছুক্ষণ পরে কিছুটা মনে করার মতো ভয়ার্ত মুখে নিধি বলে ওঠে,
-" ওরা আমার ভিডিও করেছিলো ফাহাদ। আমার মনে আছে কিছুটা। "
কিঞ্চিৎ ভ্রুকুটি কুচকে গেলো ফাহাদের। নিধির তাকিয়ে তাকে ধাতস্থ করলো। সে সবটা সামলে নিবে।
,
,
,
,
,
,
দুপুর তিনটে, ইনায়া ভার্সিটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। হোস্টেলে এখন যাবে না সে। ভেবেছে বাইরে থেকেই কিছু খেয়ে নিবে। তারপর যাওয়া যাবে। আজকে টিউশনিও নেই৷ ইনায়ার ভাবনার মাঝেই সামনে গাড়ি রাখে জায়ান। ইনায়া চোখ ঘুরিয়ে দেখে সেটা। ইনায়া একটু অবাক হয় জায়ানের চোখে আজ পাওয়ারের চশমা। ইনায়া কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জায়ান মৃদু গলায় বলতে শুরু করে,
-" আর বলো না। গতকয়েক দিনের মাথা ব্যাথায়, ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। তিনি আমাকে চশমা ধরিয়ে এই হাল করে দিয়েছেন। "
-" গুন্ডামী পনা অব্যাহত থাকলে কয়দিন পরে জানটাই হারাবেন। ''
জায়ান হাসলো সেটা শুনে। সে ইনায়ার কাছে এসে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-" গাড়িতে উঠো, আজকে একটা স্পেশাল জায়গায় যাওয়া হোক। "
-" আমি লাঞ্চ করিনি এখনো, অতএব যাওয়া যাবে না। "
জায়ান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। করুন গলায় ব'লে,
-" আমারো না লাঞ্চ করা হয়নি। চলো আমার সাথে এখুনি। ''
লাস্টের কথাটা শক্ত গলায় বলে জায়ান। ইনায়ার কিছু না বলে জায়ানের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। চলতে চলতে প্রায় সময়ের ঘর এক ঘন্টা পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো জায়ানের নিদিষ্ট জায়গা আসে নি। ইনায়া প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে জায়ানের দিকে তাকালো। কিন্তু তার কোনো হুঁশ জ্ঞান নেই। সে এক ধ্যানে গাড়ি চালাতে মগ্ন। শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা রেস্টুরেন্টের দিকে গাড়ি থামায় জায়ান। ইনায়া কে হাতে ইশারা করে নামতে। ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে রেস্টুরেন্টে দিকে তাকায়। নেম প্লেটে জলজল করছে 'গ্রাম পাহাড়ি' নামটি। সম্পূর্ণ টাই বাঁশের বেত দিয়ে তৈরির। শুধু উপরে রঙিন টিনের ছাউনি। ইনায়া জায়ানের পিছন কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। রেস্টুরেন্টের ভিতরের দিকটা খুব আধুনিক। আলাদা আলাদা কেবিন করা এখানে। ইনায়া কিছুটা অবাক হলো ভেতরের পরিবেশ দেখে। বাইরের দিকে বাঁশের বেত হলেও ভিতর দিয়ে তার উপর মাটির প্রলেপ দেওয়া। তার উপর বিভিন্ন রঙের নকশা আঁকা।একদম মাটির ঘরের মতো। জায়ান ইনায়া কে একটা কেবিনে বসিয়ে দিয়ে খাবার অর্ডার করতে যায়। ইনায়া কেবিনটা দেখে পুলকিত হলো অনেক। মেঝেতে মাদুর পাতা। মাঝখানে গোল আকৃতির কাঠের খোদাই করা নিচু সাইজের টেবিল সেট করা। এখানে আসন পেতে বসে সাচ্ছন্দ্যে খেতে পারবে। ইনায়া হাসিমুখে সেখানে বসে পরে। কেবিনে লাগোয়া ছোট্ট বেতের জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। এদিকটা অনেক নিরিবিলি। ইনায়া বাইরে এক ধ্যানে
দিকে তাকিয়ে থাকে। তন্মধ্যে জায়ান কেবিনে ঢোকে ইনায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে, তড়িঘড়ি করে বসতে বসতে বলে ওঠে,
-" আর দশ মিনিট ওয়েট করতে হবে হরিণী। ওফ্ফ বড্ড দেরি হয়ে গেছে। "
জায়ানের হঠাৎ কথায় ইনায়ার ধ্যান ভাঙ্গে। শান্ত দৃষ্টি স্থির করে জায়ানের পানে। অতঃপর মৃদু হেঁসে প্রশ্নের স্বরে বলে,
-" মন শান্ত হয়ে গেলো, জানেন? শহরের কোলাহল যানবাহনের হন সব থেকে মুক্ত এই জায়গাটা। আসলেই গ্রামের ফিলিংস আসছে। কোথায় পেলেন এর খোঁজ? "
জায়ান ইনায়ার হাস্যজ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এমন কম সময় হয়েছে, ইনায়া তার সাথে হাসিমুখে কোনো কথা বলেছে। জায়ান আলতো হেঁসে জবাব দেয়,
-" দাদু থাকতে এই রেস্টুরেন্টে করেছিলাম। আইডিয়া টা তাঁরই ছিলো। উনার সাথেই এখানে আসতাম গ্রামীণ খাবারের স্বাদ নিতে। তিরি মারা যাওয়ার পর আজ তোমার সাথে আবার। "
ইনায়া অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-" এখানে সত্যিই গ্রামের ও পাহাড়ি আইটেম পাওয়া যাবে? "
-" হুম, কিন্তু এখন আমি বনমোরগ ছাড়া পাহাড়ি আইটেম আর কোনো অর্ডার করিনি। কারণ আমি তাদের খাবার দাবার বেশি একটা পছন্দ করিনা। কয়েক পদের ভর্তা আরো কিছু পদের খাবার। এতেই চলবে। দাদুর কারনে এটা ধরে রাখা। "
ইনায়া ভ্রু কুচকালো,
-'' কিন্তু আমার তাদের খাবার খুব পছন্দ। "
-" তাই? বলো কি খাবে?"
জায়ান ঝটপট জিজ্ঞেস করলো। ইনায়া কিছুক্ষণ ভেবে ঝটপট উত্তর দিলো,
-" ব্যাঙের স্যুপ। "
জায়ান বড়সড় চোখে ইনায়ার পানে তাকায়। ইনায়ার মুখে দুষ্টু হাসি। জায়ান হালকা হেসে বলে ওঠে,
-'' স্যরি মেম, আমাদের রেস্টুরেন্টে এমন ডিস বানানো হয়না। "
-'' তাহলে, শামুক সেদ্ধ? হবে তো স্যার? আমার ইচ্ছে জীবনে একবার হলেও এইসব ট্রাই করবো। "
বলেই উচ্চ স্বরে হেসে উঠে ইনায়া। জায়ান মৃদু হেঁসে তাকিয়ে থাকে ইনায়া দিকে। এই প্রানবন্ত ইনায়া কে তার প্রচন্ড ভালো লাগছে। আচমকা জয়ান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আলতোভাবে ঠোঁট নাড়িয়ে স্ফুট কন্ঠে বলে ওঠে,
-" চলো না হরিণী, দুজনে বিয়ে করে ফেলি। ''
জায়ানের আচমকা এমন কথায় হাসি থেমে গেলো ইনায়ার। দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে জায়ান তার দিকে তাকিয়ে। ইনায়া হকচকালো না। সেও শান্ত চোখে তাকিয়ে রইল জায়ানের পানে।
,
,
,
,
,
সোহানা মির্জা আজকে না পারতেই অফিসে এসেছেন। নিধি কে ফেলে আসতে তার মন সায় দিচ্ছিলো না। নিপার ভরসায় এসেছেন অনেকটা। দ্রুত কাজ সেড়ে জলদিই বাড়ি ফেরার তাড়া তার। তার আগেও এক জায়গায় যেতে হবে সোহানার।
এদিকে নাভানের স্তব্ধতা তাকে আরও পোড়াচ্ছে। টেবিলের এক কোনো কতো গুলো ফাইল পড়ে রয়েছে। সোহানা হাতে কলম ধরে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার ধ্যান ভাঙ্গে নাহিদ মির্জার হঠাৎ আগমনে। তিনি সোহানার সামনের চেয়ারে বসে হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠে,
-" ফাইল গুলো এখনো সিগনেচার করোনি? বাড়ি ফিরতে হবে তো। "
সোহানা তার এই কথায় কোনো জবাব দেয় না। শুধু মলিন মুখে বলে ওঠে,
-'' মিজানুল করিম ফোন করে বলেছেন, একবার তাদের বাড়িতে যেতে। হয়তো কোনো জরুরি কথা আছে। "
-" আমাদের সাথে কি কথা থাকতে পারে?
চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে নাহিদ মির্জা। সোহানা চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে শান্ত গলায় বলে,
-'' হয়তো ইশান আর তিথির বিষয়ে। "
চলবে..…......…..……
( আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ আছি। এখন থেকে রেগুলার গল্প দেবো।)

 #চিত্রলেখার_কাব্য ঊনপঞ্চাশতম_পর্ব~মিহিলম্বা সফর শেষে চিত্রলেখার মাথা ঝিমঝিম করছে। ঠিক করলো সোজা বাসায় ফিরে অর্ণবের সাথে...
26/07/2025

#চিত্রলেখার_কাব্য
ঊনপঞ্চাশতম_পর্ব
~মিহি
লম্বা সফর শেষে চিত্রলেখার মাথা ঝিমঝিম করছে। ঠিক করলো সোজা বাসায় ফিরে অর্ণবের সাথে কথা বলবে কিন্তু রঙ্গন তাকে একা ছাড়তে চাইছে না। চিত্রলেখার রঙ্গনকে বাড়িতে নিয়ে যেতে খানিকটা ভয় কাজ করছিল মনে। নিজের ভাইকে তো সে চেনে, আচমকা রঙ্গনের উপস্থিতি বোধহয় তার জন্য হজমযোগ্য হবে না। অর্ণবের রাগ কিঞ্চিত এখনো সঞ্চিত রঙ্গনের প্রতি। অনেকক্ষণ বুঝিয়ে রঙ্গনকে বোঝাতে সক্ষম হলো চিত্রলেখা। রঙ্গন চিত্রলেখাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
চিত্রলেখা বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে মুখোমুখি হলো সায়রা খালার। আচমকা চিত্রলেখার উপস্থিতি যেন তাকে মারাত্মক ঘাবড়ে দিয়েছে। চোর ধরা পড়লে যেমন একটা হাবভাব হয় মুখের, তেমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন সায়রা খালা। চিত্রলেখা এ প্রতিক্রিয়ার মানে বুঝতে পারলো না। এমন অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া তো সে প্রত্যাশা করেনি।
-খালা এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? যেন ভূত দেখেছেন! ভাইয়া কোথায় বলুন তো। আমার ফোন-টোন ধরছে না কেন? ভাইয়া এসেছে তো এতক্ষণে? কোথায় সে?
-অ..অর্ণব? সে...সে তো হা..হাস..
-খালা, কী বলতে চাচ্ছেন একটু তাড়াতাড়ি বলেন। এভাবে তোতলাচ্ছেন কেন? ভাইয়া কোথায়? এতক্ষণ তো দোকান থেকে চলে আসার কথা।
-তুমি আসবে তা বলোনি কেন? জানায়ে আসবা না?
-জানানোর উপায় কই? ভাইয়ার ফোন কতসময় ধরে বন্ধ সে হিসাব আছে? ভাইয়া কোথায় বলেন তো আগে। ভাইয়ার বিচার করি আগে।
-সে বাড়িতে নেই, লেখা। ও হাসপাতালে গেছে।
-হাসপাতালে কেন? কেউ অসুস্থ?
-অ..অপর্ণা অসুস্থ। সেই থেকে অর্ণব বাড়িতে কমই আসে, বাচ্চা দুটার কাছেই থাকে।
-ভাবীর কী হয়েছে?
-ও..ওনারে কয়েকটা লোক মিলে ধর্ষণ করছিল। শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ, বাঁচবে কিনা বলা যাইতেছে না। বাচ্চা দুইটা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে। আমি গেছিলাম গতকাল দেখতে।
-এই কথাটা আমাকে আগে কেন বলেননি খালা? কোন হাসপাতালে আছে ভাবী?
-অপেক্ষা করো একটু, অর্ণব এখন আসবে হয়তো বাচ্চাদের রাতে রেখে যেতে। রাতে বাচ্চারা এখানে থাকে, সকালে আবার মায়ের কাছে যাওয়ার জেদ ধরলে অর্ণব নিয়ে যায়।
চিত্রলেখা চৌকাঠেই বসে পড়লো। পৃথিবী যেন থমকে গেছে তার। সবকিছু এলোমেলো লাগছে এখন। এতকিছু হয়ে গেছে এত অল্প সময়ে অথচ তাকে কেউ জানায়নি অবধি! নিজেকে এ মুহূর্তে প্রচণ্ড অপরাধী মনে হচ্ছে চিত্রলেখার। তার জন্যই এ সবকিছু হয়েছে। নওশাদ লোকটাকে নিজ হাতে খুন না করা অবধি চিত্রলেখার যেন স্বস্তি হবে না। একটা মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে নওশাদকে না দেখলে ডানতেও পারতো না চিত্রলেখা। সায়রা খালা চিত্রলেখাকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলেন। চিত্রলেখার হাত পা অসাড় হয়ে আসছে, দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও যেন সে পাচ্ছে না। চোখের সামনে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে সে।
ঘণ্টাখানেক পেরিয়েছে। অর্ণব বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে চিত্রলেখার বিছানার পাশে এসে বসলো। এখনো জ্ঞান ফেরেনি মেয়েটার। বড়সড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে বলা যায়। নিজের ভাবীর এ পরিণতি সেও কখনো কল্পনাতে আনেনি। স্বভাবতই ভয়ের মাত্রাটা বেশি হবে। খানিক বাদেই চিত্রলেখা চোখ মেললো। চোখ মেলে অর্ণবকে সামনে দেখে চিত্রলেখার মনের ভয় যেন আরো বেড়ে গেল। নিজের ভাইয়ের চোখে চোখ মিলানোর সাহসটুকুও কি সে পাবে এখন?
-তুই আসবি বলিসনি কেন লেখা?
-তোমায় ফোনে পাচ্ছিলাম না, রেজাল্টের কথাও জানাতে পারছিলাম না। তাই ভেবেছিলাম সামনাসামনি এসেই সবটা বলবো কিন্তু বুঝতে পারিনি এসে এসব দেখবো।
-লেখা, এসব একরকম এক্সিডেন্ট। তুই রিল্যাক্স হ।
-আমার জন্য এসব হয়েছে ভাইয়া! ঐ নওশাদ লোকটাকে আমার মেরে এখান থেকে যাওয়া উচিত ছিল।
-নওশাদ ওর ভুলের শাস্তি পাচ্ছে সে। ওকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। ওর প্রাপ্য শাস্তি ও পাবেই।
-ভাইয়া, আমি ভাবীর সাথে একটু দেখা করতে চাই।
-কাল সকালে নিয়ে যাবো। এখন ঘুমা তুই।
চিত্রলেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল অর্ণব। নিজের বোনকে অপর্ণার বাড়ির লোকদের সামনে উপস্থাপন করতে সামান্য ভীতবোধ করছে সে। ঐ বাড়ির সব লোকই যে চিত্রলেখার পরিস্থিতি বুঝবে তা আশাও করা যায় না। অর্ণব দ্বিধার মধ্যে পড়লো।
___________________________
রঙ্গন বাড়িতে ফেরার পর থেকে চিত্রলেখার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। একবার ভাবলো মেয়েটা বোধহয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, পরক্ষণেই নানা দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মাথায়। কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না তার। অহমের ঘরে গিয়ে একটু আগে দেখে এসেছে অহম পড়ছে। ওর সমস্যা হবে ভেবে আর থাকেনি সেখানে। ঘরে আসার পর থেকে দুশ্চিন্তাগুলো আরো জেঁকে ধরছে তাকে। না পারছে সেগুলি ছুঁড়ে ফেলতে আর না পারছে মেনে নিতে। ভাবনার মাঝেই আশফিনা আহমেদ এলেন রঙ্গনের ঘরে। মাকে দেখে রঙ্গন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো।
-ফেরার পর থেকে একবারও আমার ঘরে আসোনি কেন রঙ্গন?
-গিয়েছিলাম, তুমি কাজ করছিলে তাই চলে এসেছি।
-ডাকা যেত না? তা বাদ দাও, মন খারাপ কেন তোমার?
-কিছু না মা, এমনি। এদিকের খবর কী?
-খবর একটা দিতে পারি। ভালো খবরই বলা চলে। বলবো?
-অবশ্যই।
-নওশাদের জেল হয়েছে। এখনো যোগাযোগ মাধ্যমে খবর আসেনি, অতি শীঘ্রই ভাইরাল হবে।
-মজা করছো মা? ঐ লোকটার ক্ষমতা আমরা জানি। তোমার ভাই তো কৈ মাছের প্রাণ। আমার এত মার খেয়েও বেঁচেছে আর তো জেলে একদিন।
-না এবারের প্রমাণ শক্তপোক্ত। নিজের মুখে দোষ স্বীকার করেছে।
-কার কাছে স্বীকার করলো?
-আমার কাছে?
-তুমি ধরিয়ে দিয়েছো ওকে?
-হুম।
আশফিনা আহমেদ হাসলেন। রঙ্গনের মুখে বিস্ময়। মায়ের এ রহস্যময় রূপের সাথে সে খুব একটা অবগত নয়। সে সবসময় তার মাকে দেখেছে কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে। আজ যেন সে ব্যক্তিত্ব রহস্যের চাদরে আবৃত।
-রঙ্গন!
-জ্বী মা।
-বিয়ে কবে করবে তুমি? তোমার প্রেয়সী তো ডাক্তার হবে। তার কি সময় হবে বিয়ে করার? নাকি আগে থেকেই এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবো? কী বলো রঙ্গন? কবে আমাদের ডাক্তার বউকে নিয়ে আসতে চলেছো এ গৃহে?
এ পর্যায়ে রঙ্গন কয়েকবার হৃদস্পন্দন মিস করলো। আজ আশফিনা আহমেদ তাকে প্রতি পদে পদেই অবাক করছে। অবশ্য মায়ের কথায় রঙ্গনের চোখে যে ঝলকানি দেখা গেল, তাতে রঙ্গন নিজের অনুভূতি আড়াল করতে পারলো না। তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে সে চিত্রলেখাকে একান্ত নিজের করে পেতে কতখানি উৎসুক।
________________________________
অপর্ণা নিঃশ্বাস নিতে না পেরে ছটফট করছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সে গলা দিয়ে আওয়াজটুকুও ঠিকঠাক বের করতে পারছে না। নার্স তার অবস্থা দেখে অনেকাংশ ভীত হলো। চটজলদি ডাক্তার ডেকে পাঠালো সে। রাতের প্রায় আড়াইটা। দায়িত্বে থাকা একজন ডাক্তার ছুটে এলেন। অপর্ণাকে চেক করতে লাগলেন। পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বুঝতে পারলেন তিনি। পরিবারের লোকদের কিভাবে বিষয়টা জানাবেন ভাবতে শুরু করলেন তিনি। ভাবার সময়টুকু অপর্ণা আর দিল না। জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা এবং বেঁচে থাকার তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে রাত দুইটা চৌত্রিশ মিনিটে পৃথিবীর মায়াত্যাগ করলো সে। ঘুমিয়ে থাকা তার সন্তানগুলো জানলো না তাদের মা এ পৃথিবীতে আর নেই। ডাক্তার অপর্ণার মৃত্যু সংবাদটা বাইরে থাকা অপর্ণার বাবা এবং মাকে জানালেন। বয়স্ক মানুষ দুজন নিজেরাই ভেঙে পড়লেন। কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। মেয়েকে হঠাৎ হারিয়ে তারা যে ধাক্কাটা খেয়েছেন তা সামলে উঠে কাউকে জানানোর বিবেক তাদের কাজ করছে না। অপর্ণার মা বহু কষ্টে অর্ণবের নম্বর ডায়াল করলেন। অর্ণব ফোন বিছানার পাশেই চার্জে দিয়ে ঘুমিয়েছিল। ফোনের ভাইব্রেশনে তৎক্ষণাৎ ঘুম ভাঙলো তার। অপর্ণার মায়ের নম্বর দেখে তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করলো সে। অপর পাশ থেকে ভাঙা ভাঙা গলায় কেবল একটি বাক্য ভেসে এলো," আমার মেয়েটা আর নেই..."।
চলবে...

কিছু কিছু পুরুষ মানুষের কোনো শখের না'রী হয় না!তারা যখন যাকে ভালো লাগে, তখনই তাকে শখের না'রী বানিয়ে ফেলে।তাদের মনে বিশাল ...
26/07/2025

কিছু কিছু পুরুষ মানুষের কোনো শখের না'রী হয় না!
তারা যখন যাকে ভালো লাগে, তখনই তাকে শখের না'রী বানিয়ে ফেলে।
তাদের মনে বিশাল জায়গা থাকে, লোকাল বাসের মতো এক সাথে পঞ্চাশ জন যাত্রী তোলার পরেও বলে সিট খালি আছে!
আসলে তারা অনেক দয়ালু হয়, এজন্য কাউকেই না করতে পারে না। এজন্য তাদের মনের ওই বিশাল জায়গায় যারে পাই তারেই জায়গা দেয় আর কি।
তারা ১২ ঘাটের পানি খাইতে একটু বেশিই পছন্দ করে! 🙂😒🤧😤
Misty Meye #সংগৃহীত

 াপ_চায়ে_আমি_তোমাকে_চাই #পর্ব_১৪ #লেখনিতে_খুশবু_আকতার "কিরে তোর আরো কতক্ষণ সময় লাগবে তৈরি হতে?তোকে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি ...
26/07/2025

াপ_চায়ে_আমি_তোমাকে_চাই
#পর্ব_১৪
#লেখনিতে_খুশবু_আকতার
"কিরে তোর আরো কতক্ষণ সময় লাগবে তৈরি হতে?তোকে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি না কেয়া,আমরা কিন্তু পাত্রী কে দেখতে যাচ্ছি।তাই তোর এত সাজগোজ করার দরকার নেই।"
দরজার বাইরে থেকে কেয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলল শ্রাবণ।যদিও জানে যে আগে কবিতাকে তৈরি করবে তারপর নিজে তৈরি হতে কেয়ার একটু সময় লাগবে। তারপরও কেয়াকে জ্বা*লানোর জন্য শ্রাবণ আগেভাগে এসে তাড়া দিচ্ছে।মিনিট দুয়েক পর কেয়া বিষন্ন মুখ করে দরজা খুললো।শ্রাবণ তা দেখে ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলল,
"প্যাঁচার মতো মুখ করে রেখেছিস কেন?"
কেয়া বিষন্ন মুখেই উত্তরে বলল,
"কবিতাকে এত করে বোঝালাম তার পরেও যেতে রাজি হচ্ছে না ও।"
কেয়ার কথা শুনে শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে বলল,
"রাজি হচ্ছে না ?রাজি না হওয়ার কি আছে?"
"আরে জানি না। ও বারবার শুধু বলছে ওখানে পরিবারের লোকেদের মাঝে ও গিয়ে কি করবে?এত করে বোঝানোর চেষ্টা করছি তাও রাজি হচ্ছে না।"
শ্রাবণ আর কেয়া কে কিছু না বলে সোজা ঘরের ভিতরে চলে গেলে কবিতার সাথে কথা বলার জন্য।শ্রাবণ ভিতরে গিয়ে দেখল কবিতা বিছানার ওপর চুপচাপ বসে আছে।শ্রাবণ মৃদু রাগী কন্ঠে কবিতার উদ্দেশ্যে বলল,
"কি সমস্যা আপনার কবিতা?"
কারো কন্ঠ পেয়ে কবিতা সেদিকে তাকিয়ে শ্রাবণকে দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল।শ্রাবণের উদ্দেশ্যে ধীর কণ্ঠে বললো,
"কোন সমস্যা নেই আমার।"
"তাহলে যেতে চাইছেন না কেন?"
"যেখানে আমাকে মানায় না সেখানে আমি কেন যেতে যাবো বলুন তো। অযথা কেন চাইছেন আমি অপমানিত হই আবার?"
"আমি থাকলে আপনাকে অপমান করার সাহস কার আছে?"
"অপমান করার জন্য সাহস লাগে না মুখ লাগে,যেটা সবার কাছেই আছে।আর আপনি চাইলেও কারো মুখে আটকাতে পারবেন না।"
"আপনার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে তো পারব। এরপরেও আপনার আমাদের সাথে যেতে আপত্তি আছে কবিতা?"
"কার কোথায় যেতে আপত্তি আছে রে শ্রাবণ?"
কাব্যর কন্ঠ শুনে শ্রাবণ পিছন ফিরে কাব্য কে দেখতে পেয়েই ওকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"দেখো না ভাই কবিতা যেতে চাইছে না আমাদের সাথে। বারবার আজে বাজে কথা বলছে শুধু।"
শ্রাবণের কথা শুনে কাব্য ভ্রু কুচকে কবিতার উদ্দেশ্যে বলল,
"কি হয়েছে কবিতা যাবে না কেন?"
"এমনি ভাইয়া আপনারা যান না।"
কবিতার কথা শুনে শ্রাবণ মৃদু রাগী কণ্ঠে বললো,
"মিথ্যে বলছেন কেন কবিতা? বলুন না যে আপনি অপমানিত হওয়ার ভয়ে যাচ্ছেন না।"
শ্রাবণের কথা শুনে কাব্য অবাক কণ্ঠে বললো,
"বুঝলাম না ঠিক।কে অপমান করবে? কার ভয়ে যাচ্ছো না?"
কাব্যর কথা শুনে পাশ থেকে কেয়া বলে উঠলো,
"আমার মনে হয় কবিতা শ্রাবণের খালামণির ভয়ে যেতে চাইছে না।"
কেয়ার কথা শুনে শ্রাবণ বলে উঠলো,
"এই বিষয়ে কেন খালামণির ভয় করছে ঠিক বুঝলাম না?"
"আসলে আম্মু যখন কবিতা কে ঘরে বলতে এসেছিল যে ও যেন আমাদের সাথে যায় তখন আম্মুর সাথে শ্রাবণের খালামণি আর মামিও ছিল।তখন খালামণি বলেছিলেন যে কবিতাকে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার।আরো অনেক কিছুই বলেছিলেন। আমার মনে হয় কবিতা ওই জন্য এখনো যেতে চাইছে না।"
মুহূর্তেই রাগে শ্রাবণের চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে গেল।কবিতার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগী কণ্ঠে বললো,
"আমি আপনাকে বলেছিলাম না কবিতা কেউ বিন্দু পরিমাণ অপমানজনক কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। জানাননি কেন তাহলে?"
"কি হতো জানালে?আপনি আবার গিয়ে ওনাকে কিছু কথা শোনাতেন।কিন্তু উনি কি সত্যি থেমে যেতেন? থামতেন না, কখনোই উনি থামতেন না। শুধু আমার উপর একটা অপবাদ বাড়তো যে আমি পরিবারের মাঝে ঝ*গড়া লাগিয়ে দিচ্ছি। এর থেকে তো এটাই ভালো হয়েছে যে আমি চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিয়েছি। কেন আপনি বুঝতে চাইছেন না?যান না আমাকে রেখে!কি হবে আমি না গেলে!"
"তুমি না গেলে আমরা কেউই যাব না কবিতা।এবার বল এর পরেও তুমি যাবে না?"
কাব্যর এমন কথা শুনে কবিতা চমকে উঠলো।অবাক কণ্ঠে কাব্যর উদ্দেশ্যে সে বলল,
"এসব আবার কেমন কথা ভাইয়া?আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না বলুন তো আমার ওখানে যাওয়া অনেকেরই পছন্দ হবে না।"
"আর তুমি না গেলে সেটা অনেকের পছন্দ হবে না কবিতা।আমি এই নিয়ে দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাই না।২০ মিনিটের ভিতরে তোমরা দুজন রেডি হয়ে নিচে আসবে।আমরা অপেক্ষা করছি।"
কথাটা বলেই কাব্য কবিতাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।কবিতা বুঝতে পারলো যে তার না গিয়ে কোন উপায় নেই।তারমানে হয়তো তাকে আজকে আরোও একবার সবার সামনে অপমানিত হতে হবে।
__________________
শ্রাবণ আর কাব্য বেশ অনেকক্ষণ ধরেই গাড়িতে বসে কেয়া আর কবিতার জন্য অপেক্ষা করছে।সবাই এক গাড়িতে যেতে পারবে না বলে বাকিরা অন্য গাড়িতে চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই।অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর কেয়ার দেখা পাওয়া গেল অবশেষে।কিন্তু কবিতার দেখা এখনো পাওয়া গেল না।শ্রাবন কেয়া কে দেখে বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো,
"একা এসেছিস কেন এতক্ষণ পর?কবিতা কোথায়?"
"কবিতা কানের দুল পড়ছিল। ওটা পড়া হয়ে গেলেই চলে আসবে।আমি তাই আগে চলে এলাম।"
শ্রাবণ পুনারায় বিরক্তিকর কন্ঠে কেয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
"গা*ধা এতক্ষণ যখন অপেক্ষা করেছিলি আর একটা মিনিট করতে পারলি না। ওনাকে যে রেখে এসেছিস উনি দরজা লক করবেন কিভাবে?চাবি দিয়ে এসেছিস ওনাকে?"
কেয়া শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হেসে বলল,
"আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম।"
শ্রাবণ শুধু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে কেয়ার দিকে তাকালো। তারপর ওকে গাড়িতে বসতে বলে নিজেই আবার ফ্ল্যাটে গেল।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখলো কবিতা ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কবিতা নিচেই নামছিল কাউকে দরজাটা লক করার কথা বলার জন্য।এরই মাঝে শ্রাবণকে আসতে দেখে থেমে যায়।শ্রাবন কিছুটা সময় কবিতার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিল।সব সময়ের মতো আজকেও কবিতা থ্রি পিসই পড়েছে।কবিতার পড়নে হালকা বাদামি রঙের অরগ্যানজার থ্রি পিছ।সাথে ম্যাচিং কানের দুল ছাড়া আর কোনো অলংকারই নেই।সামনে কয়েকটা চুল ছেড়ে দিয়ে বাকি চুলগুলো পিছনে হালকা করে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙেট লিপস্টিক।শ্যামলা গায়ের রংটা বড্ড মানিয়েছে।অবশ্য শ্রাবণের কাছে মনে হলো একটু বেশিই মানিয়েছে।তার কাছে যে তার প্রেয়সি কে সব রূপেই দারুন লাগে।শ্রাবণ অন্যদিকে দৃষ্টি রেখেই কবিতাকে প্রশ্ন করলো,
"আপনি কি দরজা লক করতে পেরেছেন কবিতা?"
"না। আসলে আমি তো চাবি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সেজন্য নিচে যাচ্ছিলাম।তো দেখলাম আপনি আসছেন তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম।"
"ওহ আপনি একটু ওয়েট করুন।আমি চাবি আনছি ভেতর থেকে।"
কথাটা বলে শ্রাবণ চাবি আনতে ভিতরে গেল।চাবি এনে দরজাটা বাহির থেকে লক করলো।তারপর কবিতার উদ্দেশ্যে বলল,
"এবার চলুন।"
কবিতা মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই দুজনে হাঁটা ধরলো।নামতে নামতে শ্রাবণ কবিতার উদ্দেশ্যে বলল,
"আপনাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে কবিতা।"
কবিতা হালকা বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো,
"আবার শুরু করে দিলেন আপনি!"
শ্রাবণ অসহায় মুখ করে বলল,
"এখন আপনাকে যদি সুন্দর লাগে তো আমি কি করতে পারি বলুন তো?আমার কি বলাটাই ভুল হয়ে গেল?"
"হ্যা আপনার বলাটাই ভুল হয়ে গেল।চুপচাপ থাকুন।"
কবিতা চুপ থাকতে বললেও শ্রাবণ চুপ থাকলো না। পুনরায় কবিতাকে জিজ্ঞেস করল,
"আচ্ছা কবিতা আমাকে কেমন লাগছে?"
"জানিনা।"
"কিন্তু কেন জানেন না?"
"কারন আমি আপনাকে দেখিনি।"
"তাহলে দেখুন।"
"দরকার নেই। চুপ থাকতে বললাম না আপনাকে।"
"একবার একটু দেখে বলুন না কবিতা কেমন লাগছে আমায়? কি হবে একটু বললে!"
কবিতা শ্রাবণের দিকে না তাকিয়েই বলল,
"ভালো লাগছে না।একদম ভালো লাগছে না,আপনাকে দেখতে খুবই বাজে লাগছে। হয়েছে এবার।"
কবিতার কথা শুনে শ্রাবণ মুচকি হাসল।সে জানে কবিতা ইচ্ছে করেই এমনটা বলল যেন শ্রাবনের মন খারাপ হয়ে যায় কিংবা রাগ করে।শ্রাবণ হালকা হেসে কবিতার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
"আমি যেমনই হই না কেন দেখতে বিয়ে কিন্তু আপনার আমাকেই করতে হবে।নিজের ভবিষ্যতের জামাইকে খারাপ বলতে আপনার একটুও কষ্ট হলো না কবিতা?"
কবিতা পুনরায় বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো,
"না হলো না।"
"তারমানে আপনি মানেন যে আমি আপনার ভবিষ্যৎ জামাই হব তাই না?"
কবিতা অবাক কণ্ঠে বললো,
"সেটা আমি কখন বললাম।"
"আমি বুঝে নিয়েছি আপনাকে বলতে হবে না।"
কবিতা আবারো বিরক্তিকর দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আপনাকে আমি চুপ থাকতে বললাম না।"
"আচ্ছা বেশ।লাস্ট একটা কথা বলব তার পরে চুপ করে যাব।"
"তাড়াতাড়ি বলে চুপ হয়ে যান।"
শ্রাবণ মুখে মৃদু হাসি এনে কবিতার উদ্দেশ্যে বলল,
"ভালোবাসি কবিতা।আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।"
চলবে ইনশাআল্লাহ...............

26/07/2025

আমি তো হাসতে হাসতে শেষ এটা কোনো কথা...! কেমনে কি কিছুই মাথায় ডুকছে না....,🤔🤔

 #প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৫২জড়সড়ভাব নিয়ে চেয়ারটার এক কোণে বসা পৌষ। ডাক্তার রিপোর্ট দেখছেন। তায়ে...
26/07/2025

#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫২
জড়সড়ভাব নিয়ে চেয়ারটার এক কোণে বসা পৌষ। ডাক্তার রিপোর্ট দেখছেন। তায়েফা সেদিকেই তাকিয়ে আছে আশানুরূপ কিছু কথা শুনতে।
সকাল দশটা নাগাদ মিথ্যা বলে এখানে এসেছে পৌষ। তৌসিফ আজ নয়টায় বের হয়েছে। পৌষ তখন জানিয়েছে ভার্সিটি যাবে। ড্রাইভারকে বলে রেখে গিয়েছে তৌসিফ। ও যাওয়ার আগ মুহুর্তে পর্যন্ত পৌষ'কে জিজ্ঞেস করেছিলো, কোন সমস্যা কি না? পৌষ মাথা নেড়ে না বলেছে। তৌসিফ কিভাবে জানি বুঝে যায় সবটা। পৌষ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছিলো৷
সেই দশটায় এসে এখন বাজে দুপুর একটা৷ টেস্ট করে ঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট করিয়েছে তায়েফা। তৌসিফ বউ একা ছাড়ে না। এরমধ্যে তিনবার ফোন এসেছে। পৌষ'কে খেতে বলেছে তৌসিফ। দিন দুই ধরে তৌসিফ কিছু একটা করেছে যার ফলে সে ব্যস্ত নাহয় পৌষ'র মিথ্যা ধরতে তার ততটাও কষ্ট হতো না।
তায়েফা পৌষ'কে দেখেই হাত ধরলো। শান্ত স্বরে বললো,
-- চিন্তা করিস না।
ফুলা চোখে তাকালো পৌষ। টেস্ট করার সময় থেকেই কাঁদছে ও৷ বুকটা ফেটে কান্না আসছে৷ মনে হচ্ছে রিপোর্ট খারাপ আসবে৷ যদি ও মা হতে না পারে তখন কি হবে? যদি তৌসিফ ছেড়ে দেয়? পৌষ তো এত ভালোবাসা ছাড়তে চায় না৷ তার মনটা দিন দিন লোভী হচ্ছে। ভালোবাসার লোভ তাকে আঁকড়ে ধরেছে।
ডাক্তার তাকালো পৌষ'র দিকে। পৌষ'র বুকটা তখন চিলিক দিয়ে উঠে। ডাক্তার শুধু বললো,
-- মিসেস তালুকদার, আই থিংক আপনার ছোট্ট একটা সমস্যা হয়েছে।
মুখে হাত চেপে এবার কেঁদে উঠলো পৌষ। এতক্ষণের চেপে রাখা কান্নাটা এবার বেরিয়ে এলো। তায়েফা পৌষ'কে উঠে জড়িয়ে ধরেই টের পেলো সমান তালে কাঁপছে পৌষ।
তায়েফা ওকে শক্ত করে ধরে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-- কি সমস্যা? কি হয়েছে?
ডাক্তার রায়া যেন বিপাকে পরলো৷ ঝটপট গলায় বললো,
-- মিসেস তালুকদার প্লিজ শান্ত হন৷ আমার কথাটা শুনুন৷ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুনতে পাচ্ছেন আপনি।
পৌষ তায়েফা'কে জড়িয়ে ধরেই বলে,
-- আপা, আমার ভালো লাগছে না।
-- আচ্ছা। বাড়ী যাব। রিপোর্টটা শুনে যাই। একটু বস সোনা।
পৌষ'র চোখ মুছিয়ে বসলো তায়েফা। ডাক্তার রায়া পৌষ'র দিকে তাকিয়ে বললো,
-- এত ভীতু তুমি। আমি কিন্তু সাহসী ভেবেছিলাম। তৌসিফ তালুকদারের বউ এত নরম হলে হয়?
পৌষ মনে মনে বললো,
-- জামাইকে তো আমি নাটাই এর মতো ঘুরাই। শুধু এখন একটু ভয়ে আছি।
ডাক্তার রায়া আবারও বললেন,
-- তোমার তো আয়রন ডেফিসিয়েন্সি আছে। আই থিংক এটা জানো।
পৌষ মাথা নাড়ে। নাক টেনে বললো,
-- উনি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খায়িয়েছেন। এখনও চলছে।
-- গুড। এছাড়া আরেকটা সমস্যা হচ্ছে তুই যথেষ্ট দূর্বল পৌষরাত। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো। তোমার বডি তৈরী নয় বেবি ক্যারি করার জন্য। কিছু মেডিসিন দিচ্ছি এগুলো স্টার্ট করে দাও। পনেরো দিন পর হাসবেন্ড সহ এসো।
পৌষ মাথা নাড়ে। সস্তির শ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে,
-- বাবু হতে তো সমস্যা নেই তাই না?
-- বোকা মেয়ে। কখন বললাম সমস্যা? এসব টুকটাক সমস্যা তো থাকেই। ফ্যাট জাতীয় খাবার একদমই ধরবে না কিন্তু স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাও৷ বডি আগে ঠিক করো। বাচ্চা তো আল্লাহ যখন খুশি হবেন তখন দিবেন।
পৌষ চুপ করে রইলো৷ তায়েফা আলাপ চালালো ডাক্তার রায়া'র সাথে। পৌষ এক ধ্যানে ভাইব্রেট হওয়া ফোনটা দেখছে। ওখানে ভেসে উঠছে তৌসিফের নাম্বার।
বিকেলে ঘুমেয়েছে পৌষ। বাইরে কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘুমের ঘোরে অল্প কাঁপে পৌষ। জানালা খোলা থাকায় ঠান্ডা বাতাস বইছে। গায়ে কম্বলটা নেই। থাকলে হয়তো একটু আরাম লাগতো। অলস পৌষ উঠে না। গায়ে কিছুই নেয় না। ঠান্ডা বাতাসে আরেকটু কুঁকড়ে গিয়ে তৌসিফে'র বালিশে মুখ গুজে দিলো। এই চরম শীতল মুহুর্তে তৌসিফ নামক পুরুষটার কথা ভীষণ মনে পরলো ওর। মনে পরলো তাকে যত্নে আগলে রাখা ঐ উষ্ণ বুকটার কথা। সেই গভীর আলিঙ্গনের কথা। পৌষ মনে মনে বিষাদে পরিপূর্ণ হয়েও হলো না। বালিশ থেকে আসা ঘ্রাণটা যেন তাকে বার বার মনে করাচ্ছে তৌসিফ তার কাছেই আছে। অতি নিকটে।
ঘুমটা তখন আধ কাঁচা। না জাগ্রত না গভীর। ধুপধাপ পা ফেলে কেউ এসেছে তা টের পেলেও চোখ খুলার মতো ততটাও সজাগ নয় পৌষ। স্ব শব্দে যখন দরজাটা বন্ধ হলো তখন ঘুমের মাঝেই কেঁপে উঠে ও। পিলে চমকে উঠে হুরমুরিয়ে উঠে। চোখ তখনও বন্ধ। পৌষ চোখ খুলার আগেই ওর গালটায় চাপ পরে। আস্তে ধীরে চোখ খুলে মুখে "উউ" উচ্চারণ করলেও ছাড়া পেলো না বরং চাপটা একটু বাড়লো। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকায় শরীরে বল পায় না পৌষ। চোখটা খোলা মাত্রই দৃশ্যমান হলো স্বয়ং তৌসিফ। পৌষ দুই হাত দিয়ে তৌসিফে'র কোমড়টা পেঁচিয়ে ধরে। হঠাৎ উঠায় ওর মাথা ঘুরছে। শরীর ছেড়ে দিয়ে তৌসিফে'র উপর জড়িয়ে যেতেই তৌসিফ গালটা ছেড়ে নিজের হাতটা রাখলো পৌষ'র মাথায়। সন্তপর্ণে ওকে নিয়ে শুয়ে পরলো। পায়ের জুতাটা তখনও পায়েই রয়ে গেছে। খোলার সুযোগ হয় নি তার।
পৌষ ছাড়ে না বরং আরেকটু ঘেঁষে মাথাটা পেট থেকে বুকে আনে। ভয়ে রীতিমতো ভেতরে ভূমিকম্প হলেও প্রকাশ করছে না। হাজার ফটর ফটর করুক না কেন পৌষ জানে সত্যি তো এটাই যে তৌসিফ'কে এখনও জমের মতো ভয় পায় সে।
আজ না বলে বাইরে গিয়েছিলো। তৌসিফে'র এত এত কল ধরা হয় নি। বাসায় এসে কল দিলেও তৌসিফ রিসিভ করে নি। বুয়ারা জানিয়েছে তাদের ফোন দিয়েই তৌসিফ জেনেছে যে তায়েফা'র সাথে গিয়েছে পৌষ। কোথায় গিয়েছে সেটা বোধহয় জানতে তার আর বাকি রয় নি তাই শেষ কলটা দিয়েছে। পৌষ তখন কলটা রিসিভ করে কানে ধরা মানেই শোনা গিয়েছে যথেষ্ট ঠান্ডা এক কণ্ঠ,
"বাসায় যাও এখনই।"
পৌষ'র সারা শরীর তখন বরফের মতো ঠান্ডা হলো। দরদরিয়ে ঘাম ছুটে গেলো তখন। তারাতাড়ি তায়েফা'কে নিয়ে ছুটে এসেছে। সেই থেকে বাড়ী ফিরে কতই না কল দিলো রিসিভ হয় না।
বুকের ভেতর নাক, মুখ ঘঁষে পৌষ। চুলের ভাজে তখন তৌসিফে'র হাত। পৌষ হাত তুলে কোমড় থেকে এবার পিঠ জড়িয়ে ধরে। আস্তে করে গলায় মুখ গুজে রাখে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে তৌসিফ নিজেকে শান্ত করে। পৌষ পিঠে হাত বুলায়। আস্তে করে হাত এগিয়ে এনে শার্টের বোতাম গুলো খুলতে থাকে। তৌসিফ কিছুই বলে না। বুক উন্মুক্ত করে মাথা রাখে সেখানে। তৌসিফে'র হাত তখন চুল ছেড়ে এলোমেলো বিলি কাটছে।
রাগটা হয় তো পরে গেলো এখানেই। কথার মারপ্যাঁচ কিছুই তাদের হলো না। যা হলো সবটা অতি শুভ্র, কোমল, নীরব এক উষ্ণ আলিঙ্গন। স্ত্রী খুবই দক্ষ হাতে সামাল দিলো তার রাগী স্বামী'কে। ভালোবাসে ছোট্ট একটু একটু টুকরো করা ভাঙা ভাঙা আদর উড়িয়ে দিলো কতশত রাগ, অভিযোগ।
তৌসিফ আদুরে গলায় ডাকলো,
-- হানিই?
-- হুম।
-- ক্ষুধা লেগেছে।
-- উঠুন। রান্না করেছি তো।
-- কি কি রাঁধলে?
-- শুধু মুড়িঘণ্টাটা আমি করেছি। ঐ দিন না খেতে চাইলেন?
-- হুম। মা রান্না করতো। আপারও পছন্দ এটা।
-- দেখি, উঠুন। দুপুর গড়ালো সেই কখন৷ আমারও ক্ষুধা লেগেছে?
-- খাও তো নি। জানি তো।
-- ঘুমিয়ে গেলাম কিভাবে জানি।
-- আমি জানি তো কিভাবে ঘুমালে। আসো।
উঠে বসে পৌষ। তৌসিফ দেখলো গালে লাল হয়ে আছে ওর। বুক ফুলিয়ে শ্বাস টানে তৌসিফ। কথা আছে তার পৌষরাতের সাথে। এখন না বললেও তার বলতে হবে। আজই বলতে হবে।
পৌষ হাত বাড়ালো। গা এলিয়ে তখনও তৌসিফ আধ খোলা শর্ট নিয়ে শুয়ে আছে। পৌষ ঝুঁকে তৌসিফে'র জুতা, মুজা খুলতে খুলতে বললো,
-- এই জুতাটা ভালো লাগে না আমার৷ কেমন একটা রং। বাঁশ কালার! আপনি দেখে মুখ ঠিক রাখলাম নাহলে এটাকে বাঁশ কালার বলে সম্মান করতাম না।
তৌসিফ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-- তাহলে কি কালার বলে অসম্মান করতে?
-- * কালার বলে।
তৌসিফ হা করে তাকালো। পৌষ তখন খ্যাঁচখ্যাঁচ করছে সমান তালে। তৌসিফ বেচারা বউয়ের কথা হজম করতে পারলো না। নাক, মুখ কুঁচকে শুধু বললো,
-- তুমি এত পাঁজি কেন?
পৌষ হাত বাড়িয়ে দিলো। ভাবখানা এমন সে টেনে তুলবে তৌসিফ'কে। তৌসিফ মাথার পেছনে হাত দিয়ে বললো,
-- তুলতে পারবে আমাকে?
পৌষ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-- কোন সন্দেহ?
-- একদমই না।
-- তাহলে আর কি। হাত দিন... এক টানে উল্টে দিব আপনাকে। আমাকে দূর্বল ভাববেন না একদমই। আমি কিন্তু একবার এক বুইড়া ব্যাটা'কে দৌড়ানি দিয়েছিলাম। শা*লার ব্যাটা লুঙ্গি তুলে দৌড় দিতে গিয়ে উল্টে পরলো। সেই থেকে আমার সামনে আসে নি ভয়ে।
তৌসিফ ফাটা চোখে তাকিয়ে বললো,
-- মানে কি? বুড়ো লোককে দৌড়ানি দিয়েছো কেন?
কোমড়ে হাত দিয়ে পৌষ কটমট করে বললো,
-- বাড়ীর সামনের দোকানে দাঁড়িয়ে পান, চা গিলতো আর মেয়ে দেখলেই পুতুপুতু করতো। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েদের দেখে টিটকারি মা'রতো। একদিন দেখি পিহা'কে টিটকারি মা'রছে। আইক্কা ওয়ালা বাঁশ নিয়ে দিলাম দৌড়ানি। বারি একটা দিতে পারলে কলিজা আমার ঠান্ডা হয়ে যেতো। আহা....এখনও আশা নিয়ে আছি বুইড়াকে পেলেই ধোলাই দিব নাহলে আমার নামও পৌষরাত হক পৌষ না।
তৌসিফ মুখটা অসহায় করে তাকালো। বউ বলে কি এটা? আইক্কা ওয়ালা বাঁশ নিয়ে নাকি দৌড়ানি দিয়েছে? সেবার সিনিয়র এক ছেলেকে টুনটুনিতে কিক করেছিলো। সেটা আবার গর্ব করে বলে। পৌষ আবার ঝাঁকি দিয়ে বললো,
-- কি হলো? হাত দিন।
মাথার পেছন থেকে হাত বের করে এগিয়ে দিলো তৌসিফ। পৌষ দিলো এক টান। তৌসিফ নড়লো না এক ইঞ্চি। পৌষ দাঁত কিটিমিটি করে। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নিজেই বল দিয়ে উঠে তৌসিফ। পৌষ দাঁত বের করে হাসলো। ভ্রু উঁচু করে ইশারা করলো। তৌসিফ বুঝলো হয়তো বউ বলছে, "এই যে দেখলেন উঠালাম আমি"।
____________________
-- শুনলাম দেশের বাইরে যাচ্ছিস?
তায়েফা'র প্রশ্নে তৌসিফ টিভি থেকে নজর সরালো। এক পলক দেখলো বারান্দায় থাকা পৌষ'কে। ভিডিও কলে শ্রেয়া'র সাথে কথা বলছে। নেটওয়ার্ক ইস্যু হওয়ার দরুন বারান্দায় যাওয়া তার। তায়েফা'র দিকে তাকিয়ে তৌসিফ বললো,
-- সারাদিন বাসায়ই থাকে। ভাবলাম ঘুরিয়ে আনি।
-- কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
-- অস্ট্রেলিয়া।
-- হজ্জটা সেরে ফেলতি।
-- ইনশা আল্লাহ আপা। ইচ্ছে আছে বাচ্চাকাচ্চা নিয়েই যাব।
-- ইনশা আল্লাহ। তুসু একটা কথা ছিলো।
তায়েফা ইতস্তত করে কথাটা বললো। তৌসিফ এবার টিভির সাউন্ডটা মিউট করে দিয়ে ঘুরে বসে জিজ্ঞেস করলো,
-- কি হয়েছে আপা? সব ঠিক?
-- তোকে না বলে পৌষ'কে নিয়ে গেলাম। রেগে আছিস আপা'র উপর? আমি আসলে চাইছিলাম যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই..
তায়েফা'র কথা থামিয়ে দিয়ে তৌসিফ বলে উঠলো,
-- আমার বউ আমি বুঝে নিতাম আপা। তোমার কষ্ট করার দরকার ছিলো না। আমি জানি তুমি ভালোর জন্য করেছো কিন্তু জানো এখানে সমস্যাটা হবে কোথায়?
তৌসিফে'র কণ্ঠস্বর দৃঢ় এবং রুষ্ট। তায়েফা বুঝে গেলো চট করে। ভাই রেগে গিয়েছে। বউ নিয়ে সে অনেক সিরিয়াস। যাকে মন থেকে একবার গ্রহণ করে তাকে সে ছাড়তে পারে না। এই ক্ষেত্রে পৌষ'কে তৌসিফ একটু বেশিই আপন করেছে তা দেখা যায়। বুঝা যায়। লোকমুখে শোনা যায়।
তৌসিফ তায়েফা'কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-- আপা, ওর স্বভাব আমার জানা। ওর মাথা থেকে পা সবটা আমার মুখস্থ, ঠোঁটস্থ। এই যে এখন ডাক্তার দেখালে না তুমি, এখন ও এটা নিয়েই পরে থাকবে। সারাক্ষণ ওর মাথায় এটাই ঘুরবে। পা'গল হয়ে যাবে এটার জন্যই। ও আমাকে খুশি করার জন্য এই বাচ্চাই দিতে চাইবে এখন। ওর মাথায় ঢুকে গিয়েছে আমার বাচ্চা চাই। সেই সাথে আমি না বলাতেও নিজে নিজেই ভেবে নিয়েছে হয়তো বাচ্চা না হলে আমি ওকে অবহেলা করব৷ এখানে ওর দোষ নেই আপা। ছোট থেকে আমার তোতাপাখি এভাবেই বড় হয়েছে। ওই বাড়ীতে ওকে বসিয়ে খাওয়ানো হতো না। ওর চাচিরা হাসতে হাসতে হাতে কাজ তুলে দিতো। ওর রান্নার হাত দেখেছো? পাক্কা গৃহিণী। এই হাত শখ করে শেখা রান্নার হাত না। এই হাত চাপে পরে করা রান্নার। আমি চিনি। মায়ের হাতের স্বাদ পাই। ওর লবন দিতে চামচ লাগে না আপা। মায়ের মতো আন্দাজে দিয়ে দেয়। ওর চামড়ায় ছিটাফোঁটা দেখো। বহু বছর পুরাতন তেলের ছিটার দাগ। এগুলো তাহলে কবে থেকে করে আসছে ও বলো? নিশ্চিত স্কুলে থাকাকালীন সময় থেকে। ওর ভাই-বোনরা থাকায় আর চাচারা হয়তো কিছুটা সদয় ছিলো।
একবার ভাবো আমার মতো বিবাহিত, সংসার করা, এলাকায় যার নামে নারী ঘটিত ব্যাপার যারা মুখে মুখে তার কাছে কেউ মেয়ে দেয়? দেয় না কিন্তু ভাতিজী দিয়ে দিলো তারা। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করি আমি অপরাধী। চাপ দিয়েছি কিন্তু কতটা আপা? ওটা চাপ না বরং লোভ ছিলো। তারা এখন বুক ফুলিয়ে হাঁটে আর বলে, "চাচা হওয়ার দায়িত্ব পালন করেছি। ভাতিজী বড় ঘরে দিয়েছে। সুখে আছে। ভরপুর সংসার"। কোথায় একটাবার নাহয় আমার অনুপস্থিতিতে সেই চাচারা জোর করেই নিয়ে যেতো। যেভাবে জোর করে বিয়ে দিলো।
ওকে আমি বিয়ের আগে ভালোবাসি নি আপা। ভালোবেসেছি বিয়ের পর। ওর প্রতি আমার ভালোবাসা পবিত্র। ওর সাথে জড়িয়ে আছে এমন সবটার দায়িত্ব আমার। বাচ্চা আমার চাই কিন্তু পৌষরাতের স্বাস্থ্যের বিপরীতে গিয়ে না। আমি চেয়েছি বাচ্চা যাতে ও প্রস্তুত থাকে কিন্তু এখন ও উঠেপড়ে লাগবে বাচ্চার জন্য। ওকে ফিরিয়ে দেয়ার সাধ্য আমি তৌসিফ হারিয়েছে বহু আগে। পাঁজি, দুষ্ট আর দূরন্ত এই তোতাপাখি আমি পুষে রাখি যত্নে আপা। ওর অযত্ন হবে এই দায় আমি নিতে পারব না। সৃষ্টিকর্তা সেই ক্ষমতা আমায় দেয় নি।
তায়েফা থম ধরে গেলো। আসলে ও বুঝতেই পারে নি তৌসিফ যে এভাবে ভেবেছে। মূলত স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঢুকাটাই উচিত হয় নি। তায়েফা চেয়েছিলো একটু গুছিয়ে দিতে কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে যাবে এটা ওর ধারণার বাইরে ছিলো। তৌসিফ বুঝে তাই তায়েফা'র হাত ধরে বললো,
-- আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে করো নি।
-- কি ঝামেলা পাকিয়ে দিলাম বল তো সোনা।
-- কোন ঝামেলা না। বললাম না পুষে রেখেছি এই পাখি। আমি বুঝিয়ে বলব ওকে কিন্তু কথা হলো বিনিময়ে তোমার তুসু'র ডুগডুগি বাজাবে সে।
তায়েফা মৃদু হাসলো। তৌসিফ যে এতটা ভালোবাসে পৌষ'কে তা ধারণার বাইরে ছিলো ওর।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে পৌষ নাক টেনে বললো,
-- ভাবী হেমু ভাইকে বলবে আমার এখানে আসতে তোমাদের নিয়ে।
-- বলব তো। বাবুর চল্লিশ দিন হোক আগে।
-- আচ্ছা ভাবী, বাবু জ্বালায় কেমন?
-- এই যে সারারাত ঘুমায় নি৷ এখন ঘুমাচ্ছে। আবার রাতে উঠে যাবে। তোর ভাই হাঁটে কোলে নিয়ে। ইনি, মিনি এসেছে দেখ।
পৌষ দেখলো জমজ দুটো একসাথে ভাতিজার গালে চুমু দিচ্ছে। বুকটা জুড়িয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে। পৌষ মনে মনে হাসে। তার বাচ্চা হলে সে কলিজায় পুরে রাখবে। তৌসিফ তখন আরো ভালোবাসবে। পৌষ আবার ভাবে, যদি বাচ্চা হতে গিয়ে সে ম'রে যায় তখন কিভাবে হবে ভালোবাসা? কতই তো খবর দেখায়। ইদানীং আবার এসবই মাথায় ঘুরে।
পৌষ ভয় পায় পরক্ষণেই ভাবে, "লাগলে ম'রণ হোক তবুও সে আমার হোক"।
#চলবে.....

Address

Nabinagar

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পের শহর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to গল্পের শহর:

Share