
20/06/2024
আজ বাংলা সাহিত্যের এক নক্ষত্র অবিনশ্বর শক্তিমান কবি ও সমাজনেত্রী বেগম সুফিয়া কামাল এর জন্মদিন। তিনি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। তার পিতা সৈয়দ আবদুল বারি পেশায় ছিলেন উকিল। সুফিয়ার যখন সাত বছর বয়স তখন তার পিতা গৃহত্যাগ করেন। নিরুদ্দেশ পিতার অনুপস্থিতিতে তিনি মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের স্নেহ-পরিচর্যায় লালিতপালিত হতে থাকেন।
যে সময়ে মুসলিম মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল একেবারেই পশ্চাৎপদ, সে সময়ে সুফিয়া কামালের মতো স্বশিক্ষিত ও সমাজপ্রগতি-সচেতন নারীর আবির্ভাব ছিল এক অসাধারণ ব্যাপার। শায়েস্তাবাদে নানার বাড়ির রক্ষণশীল অভিজাত পরিবেশে বড় হলেও সুফিয়া কামালের মনোগঠনে দেশ, দেশের মানুষ ও সমাজ এবং ভাষা ও সংস্কৃতি মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। সুফিয়া কামাল তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবেশে বাস করেও তিনি নিজ চেষ্টায় হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। বাড়িতে উর্দুভাষার চল থাকলেও নিজ উদ্যোগেই তিনি বাংলা ভাষা শিখে নেন।
তিনি ১৯২২ সালে ১১ বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেন কে বিবাহ করে করেন ( সম্পর্কে ছিল জ্ঞাতিভাই)। পরে তিনি ‘সুফিয়া এন হোসেন’ নামে পরিচিত হন। সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন। সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়ার যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। ফলে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন তার প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’, যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সৈয়দ নেহাল হোসেন মারা যান ১৯৩২ সালে। স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি কোলকাতার একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে ২৮ বছর বয়সে কামাল উদ্দিন এম এস সি — কে বিয়ে করেন করেন প্রথম পক্ষে সুফিয়া কামালের কোনো সন্তান থাকলেও দ্বিতীয় বিয়ে তাদের ঘর আলোকিত করে আছে একটি কন্যা সন্তান জন্মনেয় যার নাম রাখেন 'সুলতানা কামাল'।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে সুফিয়া কামাল বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এখানে নারীশিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শ সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে। তিনি রোকেয়ার ওপর অনেক কবিতা রচনা করেন এবং তার নামে মৃত্তিকার ঘ্রাণ শীর্ষক একটি সঙ্কলন উৎসর্গ করেন। তিনি ‘রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠনে সহায়তা করেন, যার প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হল ‘রোকেয়া’ তার নামে করা হয়। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছিলেন।
সুফিয়া কামালে কাব্য গ্রন্থ হচ্ছে : মোর যাদুদের সমাধির পরে, মায়াকাজল, মন ও জীবন, সাঁঝের মায়া, মৃত্তিকার ঘ্রাণ, উদাত্ত পৃথিবী, অভিযাত্রিক, প্রশস্তি ও প্রার্থনা।
গল্প গ্রন্থ: কেয়ার কাটা
উপন্যাস: অন্তরা
শিশুতোষ: ইতল-বিতল এবং নওলকিশোরের দরবারে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ: একাত্তরের ডায়েরি
পুরস্কার :
তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক লাভ করেন।
সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বিশিষ্ট মহিলা কবি ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। নারী আন্দোলনে ব্রতী হয়ে তিনি শুধু কবি হিসেবেই বরণীয় হননি, জননী সম্ভাষণেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ এ নভেম্বরে ঢাকায় পরলোকগমন করেন।
✒️ মোঃ আরিফুল ইসলাম আকাশ
লেখক ও সংগঠন, প্রেরণায় ঝালকাঠি।
#প্রেরণায়_ঝালকাঠি #প্রেরণা #সুফিয়া_কামাল #বরিশাল #ঝালকাঠি