
01/07/2025
এক সময় আশেপাশের মানুষজন আমাকে বলতো "" নিজে থেকে স্যালারি চাওয়াটা লজ্জার । তুমি ভার্সিটিতে পড়ো । স্যালারি চাইতে হবে কেন ? ""
এই বিনয় মেনে টিউশন করতে গিয়ে পড়লাম মহাবিপাকে । মাসের ১০ তারিখ পার হয়ে গেলেও স্যালারি পাই না । পরপর চার মাস একই ঘটনা । ক্যাম্পাসে একটা টিউশন করাতাম । সেখানে ১ মাসের টাকা মেরে দিলো । আমার হাত খরচ আসে না । এখন উপায় ?
একদিন সাহস করে গিয়ে বললাম , আন্টি ,দেখেন আমি নিয়মিতই পড়াতে আসি । তাই আপনার উচিত স্যালারিটাও নিয়মিতভাবে দিয়ে দেয়া । সমস্যা থাকলে সেটা আমাকে জানাতে হবে ।
কোন রাখঢাক রাখি নাই । স্পষ্টভাবে বলেছি । এরপর থেকে আমার কখনো স্যালারি পেতে দেরি হয়নি । মাসের ৩ তারিখের মধ্যেই চলে আসতো টাকা ।
সব লজ্জা তাই ভালো নয় । কিছু লজ্জা ভাঙতে হয় ।
সেইবার আমার হাতে পয়সা নাই । মাসের শেষ । টিউশনির বেতন আসে নাই । কিন্তু সকালের নাস্তা তো মিস দেয়া যাবে না । অনেকেই আছে হোটেলে গিয়ে এমন ভাব করে , যে মানিব্যাগ নিজের রুমে রেখে আসছে ।
আমি সরাসরি গিয়ে বললাম , দেখেন মামা ,এই মাসে হাতে টাকা নাই । এখন যদি খাই ,পরের মাসে গিয়ে দিতে হবে । আমার খিদা লাগসে । যদি বলেন তাহলে বসতে পারি । নইলে চলে যাবো ।
কি মনে করে মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন হেসে বলল , এই মামারে ৩ টা পরটা দাও । মামা ভিতরে গিয়ে বসেন ।
আমি সেদিন বুঝলাম ,ঘুরিয়ে মিথ্যে বলার চাইতে সরাসরি সত্যি বলাটাই ভালো ।
আমি দেখেছি জীবনে লজ্জা শরম দেয়ার জন্য অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে । কিন্তু কেউ দুইটা ভালো কথা বলার জন্য নাই ।
তো সেইবার ভর্তি এক্সামের সময় এক আঙ্কেল ফোন দিলেন । নাম্বার বোধহয় কোন মাধ্যমে পেয়েছেন । আমি যখন চবিতে ভর্তি হতে আসি তখন তিনি বলেছিলেন ,এর চেয়ে ঢাবিতে সংস্কৃত পড়া ভালো । উল্লেখ থাকে যে ঢাবিতে আমার সাবজেক্ট ছিল ইতিহাস ( ৭৫৭ তম পজিশন ) ।
উনি যখন উনার ছেলের ব্যপারে বললেন তখন আমি বললাম , আপনার গাধা ছেলের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বসে নেই । এখানে দশবার এক্সাম দিলেও তার চান্স হবে কিনা সন্দেহ । অন্য রাস্তা দেখেন ।
ছেলেটি সত্যিই কোথাও চান্স পেলো না । কথার উত্তর যে কথা দিয়েই দিতে হয় সেটা বুঝলাম সেদিন । কটাক্ষ করলে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ না করে সময় মতো গিয়ে উত্তরটা দিতে হয় ।
মেধাবী মানুষের সাথে টক্কর দিতে হয় মেধা দিয়ে
গুন্ডার সাথে করতে হয় গুন্ডামি ।
বেহায়ার কাছে ধর্মের বাণী অসাড়
নির্লজ্জের কাছে লজ্জা পাওয়া অনর্থক
ইতর কখনো ভদ্রতার মূল্য বোঝে না ।
নিন্দুক কখনো গুনের কদর করে না ।
আর সেই কারনে মানুষের কথায় কান দেয়ার কোন দরকারই নাই । এরা কেউ অলি আল্লা নয় যে এদের কথায় শরম পেতে হবে । লজ্জা নিতে হবে । মাথা নিচু করতে হবে । সত্যটা মুখের উপর বলে দেয়াই ভালো । মানুষের কথায় ভবিষ্যৎ নির্ধারন করা বোকামী ।
একটা এক্সামে ফেইল করেছেন মানে ফেইলই করেছেন । ঘুরয়ে পেচিয়ে এটা প্রমান করার দরকার নেই যে আপনি পড়তে পারেন নাই । পড়তে না পারাটাই তো ব্যর্থতা । সোজা ভাবে বলে দিন , চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু পারি নাই । ল্যাঠা চুকে গেলো ।
মানুষের কথায় ফল আসে না । ফল আসে নিজের গুনে । একজন আপনাকে শুনিয়েছে ১০ ঘন্টা না পড়লে সরকারী জব হয় না । আপনি সেটা ধরেই বসে আছেন । চাকুরীজীবী মানুষ এতো সময় পাবেন কোথায় ? যা সময় পান সেটাই কাজে লাগান । আধা ঘন্টা পেলে আধা ঘন্টাই । আল্লাহ যদি এর চাইতে বেশি সময় আপনাকে না দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি আপনার আধা ঘন্টা পড়ার বিনিময়েই জব পাইয়ে দেবেন । এইটাই সত্যি ।
সারা বছর কিছুই পড়তে পারেন নাই ।
এক্সামের আগে কিছু সময় পেয়েছেন সেটাই কাজে লাগান । ফেইল করলে ফেইল । আফসোস করতে হবে না অন্তত । লজ্জাও পেতে হবে না ।
জীবনে মাঝে মাঝে একটু নির্লজ্জ হতে হয় । বেশি শরম রাখা ,বেশি
গা বাঁচিয়ে চলা অনেক সময় বিপদের কারণ হয় ।
Copy