05/10/2025
⏩ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
শিশুর মস্তিষ্ক খুবই সংবেদনশীল এবং তার বিকাশে দু'টি জিনিস বিশেষ ভূমিকা রাখে:
১. মায়ের মনের অবস্থা
২. পরিবারের পরিবেশ
১. মায়ের মনের অবস্থা (Suasana hati)
শিশুরা খুব সহজে মায়ের অনুভূতি বুঝে ফেলে। যদি মা চিন্তিত, রাগান্বিত বা হতাশ থাকেন, তাহলে শিশুর মনেও অস্থিরতা তৈরি হয়। গর্ভকালীন সময়ে এটার প্রভাব আরো বেশি পড়ে।
যদি মা হাসিখুশি থাকেন, শিশুরাও স্বস্তি বোধ করে এবং মনোযোগী হয়ে ওঠে।
২. ঘরের পরিবেশ (Low-Conflict Home)
শিশুরা যে ঘরে বেড়ে ওঠে, সেই ঘরের পরিবেশ তাদের মন ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ঘর শান্ত ও ইতিবাচক হয়, শিশুর মানসিক স্থিতি ভালো থাকে। তাই, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ঘরটি এমন হওয়া উচিত যেখানে দ্বন্দ্ব, চিৎকার বা অশান্তি কম থাকে।
• কীভাবে একটি Low-Conflict Home তৈরি করবেন?
Low-Conflict Home এর বৈশিষ্ট্য:
🏡 শান্তিপূর্ণ পরিবেশ:
যেখানে সবসময় ঝগড়া বা তর্ক হয় না। অর্থাৎ বাবা-মা সন্তানের সামনে তর্ক করেন না, বরং নিজেদের মধ্যে শান্তভাবে সমস্যার সমাধান করেন।
🏡 চিৎকার বা রাগ কম:
বাচ্চার সামনে চিৎকার বা রাগ করলে তাদের মস্তিষ্ক সংকুচিত হতে পারে এবং তারা ভয় পেতে পারে। তাই ঘরে অযথা চিৎকার-চেচামেচি না হওয়া।
অর্থাৎ যদি বাচ্চা কিছু ভুল করে, তাকে রাগারাগি না করে ধৈর্য ধরে শেখানো হয়।
🏡 পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক:
পরিবারের সবাই একে অপরের সঙ্গে আন্তরিক এবং সহনশীল হলে বাচ্চা নিরাপত্তা অনুভব করে। তাই পরিবারের সবাই একে অপরের প্রতি আন্তরিক ও সহনশীল থাকে।
কেন Low-Conflict Home জরুরি?
শিশুর মানসিক ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য। Low-Conflict Home এই কাজটি নিশ্চিত করে।
১. শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য
শিশুর মস্তিষ্ক তখনই সঠিকভাবে কাজ করে, যখন সে আত্মবিশ্বাসী ও নিরাপদ বোধ করে। Low-Conflict Home এই নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়।
যেমন: যদি শিশুটি দেখে তার মা-বাবা তার সামনে হাসিখুশি এবং ভালো আচরণ করেন, তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা ও আবেগ তৈরি হয়।
২. অস্থিরতা, ভয় এবং অনিরাপত্তা দূর করতে: চিৎকার বা ঝগড়ার পরিবেশ শিশুর মধ্যে অস্থিরতা, ভয়, এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। Low-Conflict Home এ তা ঘটে না।
যেমন: যদি বাবা-মা রাগের সময় শিশুর সামনে উত্তেজিত না হন এবং সমস্যাগুলো শান্তভাবে সমাধান করেন, শিশুর মনে অনিরাপত্তা দূর হয়।
● কঠিন পরিবেশ থেকে শান্ত পরিবেশে পরিবর্তন করা: পরিবেশ একদিনে বদলানো যায় না। তবে ধীরে ধীরে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেন:
• নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
• শিশুদের সামনে ঝগড়া এড়িয়ে চলুন।
• প্রশংসা ও ইতিবাচক কথাবার্তা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• সন্তান ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে শাসন না করে কিছু সময় নিন এবং তাকে শান্তভাবে বুঝান।
• ভালো সময় কাটাতে একসঙ্গে গল্প বা খেলার আয়োজন করুন।
শিশুর মানসিক বিকাশে শান্ত, ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা হয়তো একদিনে সম্ভব নয়, তবে নিয়মিত চেষ্টার মাধ্যমে ঘরটিকে একটি সুন্দর আবাসস্থলে পরিণত করা সম্ভব। একটু একটু করে পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুর জন্য এমন এক ঘর তৈরি করুন, যেখানে সে ভালোবাসা ও নিরাপত্তার মধ্যে বড় হতে পারে। মনে রাখবেন,
যত্নশীল পরিবার, যত্নশীল সন্তান।