11/05/2023
বাংলার ইতিহাসের মহাবিস্ময়
১
ইলিয়াস শাহের পৌত্র ন্যায়বিচারক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনামলে বাংলার প্রশাসনে হিন্দুদের প্রভাব বৃদ্ধি শুরু হয় ব্যাপকভাবে এবং প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুদের নিযুক্তির ফলে প্রশাসন প্রভাবশালী হিন্দু অভিজাতদের তীব্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বাংলায় হিন্দুদের এই অতিরিক্ত প্রভাব বৃদ্ধি দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রখ্যাত সূফী সাধক শায়খ নূর কুতুব-উল আলম (রহ.)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাধক শায়খ আলাউল হক (রহ.)- এর পুত্র।
তিনি প্রশাসনে হিন্দুদের এই অতিরিক্ত ক্ষমতায়নের বিষয়ে তাঁর বাল্যবন্ধু সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কে সতর্ক করে চিঠি খেলাম। সুলতানকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকলেন যে- 'সালতানাতে হিন্দুদেরকে নিম্নতর পদে নিয়োগ করা গেলে যেতে পারে কিন্তু গভর্নর বা ওয়ালির মতো বড় পদে তাদেরকে নিয়োগ করা উচিত হবে না। কারণ- উচ্চপদে নিয়োগ করলে তারা মুমিনদের উপর খবরদারি করবে'। বলা বাহুল্য, সুলতান শায়খের কথা কর্ণপাত করলেন না।
শায়খ নূর কুতুব উল-আলমের ভাই ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের প্রধান উজির মুহাম্মদ আজম খান। তিনিও ভাইয়ের কথা আমলে নিলেন না। এসময় ভাতুড়িয়া পরগণার (বর্তমান দিনাজপুর) সামন্ত রাজা গণেশ রাজসভায় উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলো এবং সে ছিলো গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী। গণেশ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং প্রশাসনে তার বড় ধরনের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৪১১ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে তাঁরই বিশ্বস্ত গণেশের হাত ছিলো বলে ধারণা করা হয়।
তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সাইফুদ্দীন হামজা শাহ সিংহাসনে বসলেও সমস্ত ক্ষমতা চলে যায় ভাতুড়িয়ার জমিদার গণেশের হাতে। গণেশ নিজে সিংহাসনে না বসলেও প্রশাসন তখন চলতে থাকে তারই অঙ্গুলি হেলনে। অতঃপর সাইফুদ্দীন হামজা শাহ কেও ঘাতক কর্তৃক হত্যা করিয়ে সরিয়ে দেয় গণেশ এবং ক্ষমতায় বসায় নিজের অনুগত ইলিয়াস শাহী বংশের এক কৃতদাস কে । সেই কৃতদাস 'শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহ' উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসে । এরপর তাকেও সরিয়ে দেয় গণেশ, ক্ষমতায় বসেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের অপর পুত্র আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ। ১৪১৪ সালে তাঁকে হত্যার মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে গণেশ নিজেই।
সে বাংলাকে হিন্দু সাম্রাজ্য ঘোষণা করে ও সালতানাত বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সে বাংলায় এক চরম অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। বাংলার মুসলমানদের উপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার ও নিপীড়ন। অসংখ্য সূফী দরবেশ কে সে হত্যা করে নির্মমভাবে। শিক্ষিত অভিজাত মুসলিমদের বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিয়ে হত্যা করে সে। সে রাজধানীর প্রধান শাহী মসজিদ- বিখ্যাত আদিনা মসজিদ কে কাছারিঘরে পরিণত করে এবং অসংখ্য মসজিদ-মাজার-স্তম্ভ ভেঙে ফেলে। আদিনা মসজিদে থেমে যায় আজানের সুর, স্থাপন করা হয় পাথরের মূর্তি.......
এসময় শায়খ নূর কুতুব-উল আলম বাংলার মুসলমানদের রক্ষার জন্য জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ শর্কিকে বাংলা আক্রমণের আহ্বান জানান। জৌনপুর সুলতান ইব্রাহিম শাহ শর্কি বাংলা আক্রমণ করেন, প্রথমে তিনি রাজা গণেশের অনুগত ত্রিহুতের রাজা কে পরাজিত করেন ও অতঃপর বাংলা আক্রমণ করলে রাজা গণেশ পরাজিত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে নূর কুতুব উল-আলমের খানকায় এসে তাঁর কাছে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে। নূর কুতুব-উল আলম তাকে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব করলে সে তার কনিষ্ঠ পুত্র রাজপুত্র যদু নারায়ণ রায় কে ইসলাম গ্রহণ করানোর ও তাঁর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে।
শায়খ এতে সম্মত হন এবং যদু ইসলাম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। কিন্তু এর অল্প কিছুকাল পর ইব্রাহিম শর্কীর মৃত্যু হলে উগ্র সাম্প্রদায়িক গণেশের সামনে আর কোনো বাধা থাকে না। ১৪১৬ সালে সে পুত্রকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে সিংহাসনে বসে ও আবার মুসলমানদের উপর শুরু হয় অত্যাচার। শায়খ নূর কুতুবের ছেলে শায়খ আনোয়ারকে হত্যা করা হয় এবং শায়খ নূর কুতুবের নাতি শায়খ জাহিদ সোনারগাঁয়ে বন্দি হন। নূর কুতুব-উল আলম অসহায় হয়ে বলেন- "এখন সারারাত নামাজ পড়ে দোয়া করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।" বাংলার বশ্যতা স্বীকারকারী করদ রাজ্যসমূহে চলছে হিন্দু শাসন। এমন অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করলেব শায়খ, নিভে গেলো সব আশা।
২
বাংলার মুসলিমদের রক্ষা করার আল্লাহ ছাড়া যখন আর কেউ নেই, অখণ্ড বাংলায় যখন গণেশ প্রতিষ্ঠা করেছে হিন্দুত্ববাদী শাসন, যখন গণেশই অখণ্ড বাংলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা,বাংলায় কালিমার ঝাণ্ডা উত্তোলনের কেউ যখন নেই, সব আশা যখন শেষ....
তখনই মহান আল্লাহ দেখালেন তাঁর মহান কুদরত। জন্ম নিলো এক আগুনের ফুলকি ; যে আগুনের ফুলকি চিরতরে ধ্বংস করে দিলো উগ্র কাফের শক্তির উত্থান কে.......
রাজা গণেশ পুত্র যদু কে 'সুবর্ণধেনু যজ্ঞে'র মাধ্যমে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনে ।
সুবর্ণধেনু যজ্ঞ অনুযায়ী- একটি স্বর্ণের গাভীর মুখ দিয়ে যদুকে ঢুকিয়ে পশ্চাদ্দেশ দিয়ে বের করা হয়। তারপর সেই গাভির অংশগুলো ব্রাহ্মণদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। এই ঘটনা যদুর মনে তীব্র প্রভাব বিস্তার করে। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে তার মনে বিস্বাদের সৃষ্টি হয় ও সূফী দরবেশদের প্রভাবে সে ধীরে ধীরে ইসলামমুখী হয়ে ওঠে। শেষে যদু ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে গণেশ মারাত্মকভাবে ভীত হয়ে তাকে বন্দি করে। কারাগারে বন্দি থেকেই পিতা গণেশকে হত্যার ছক আঁকে যদু। অতঃপর ১৪১৮ সালে যদুর প্রেরিত গুপ্তঘাতক হত্যা করে গণেশকে। পিতা গণেশকে হত্যার পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মহেন্দ্রদেব সিংহাসনে বসলে যদু সর্বশক্তি সঞ্চয় করে বড় ভাই মহেন্দ্রদেবকে উৎখাত ও হত্যা করে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির পতন ঘটিয়ে সিংহাসন অধিকার করেন এবং জালাল আদ-দুনিয়া ওয়া আদ-দ্বীন আবুল মুজাফফর মুহম্মদ শাহ উপাধি ধারণ করে সালতানাত-ই বাঙ্গালাহর মসনদে বসেন।
আর এভাবেই অখণ্ড বাংলায় হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদর্শী কুখ্যাত ইসলাম-বিদ্বেষী গণেশের পতন ঘটে তারই ঔরসে জন্মগ্রহণকারী তারই পুত্র যদুর হাতে।
আহ, আল্লাহর কী লীলাখেলা! আল্লাহর কী কুদরত!
যে গণেশ চেয়েছিলো বাংলা থেকে ইসলাম কে চিরতরে মুছে ফেলতে, তার পতন ঘটলো কোনো আরব, তুর্কি, পাঠান বংশোদ্ভুত মুসলমানের হাতে নয়, তার পতন ঘটে তারই পুত্র, ব্রাহ্মণ গণেশেরই রক্ত যদু নারায়ণের হাতে।
আর এভাবেই মহান আল্লাহ হিন্দুত্ববাদী উগ্রের পতন ঘটিয়েছিলেন সর্বোচ্চ অপমানে , নিজেরই পুত্রের হাতে।
যখন সব আশা নিঃশেষ হয়ে যায় , তখনই আল্লাহ নতুন আশার সূচনা করেন....(যদি বান্দা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থেকে থাকে তাহলে)
সুলতান জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ বাংলা সালতানাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী সম্রাট ছিলেন। তিনি মিং রাজবংশ, তৈমুরি সাম্রাজ্য ও মিশরের মামলুক সাম্রাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং মক্কার শরিফ বারাকাত ইবনে হাসানের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিলো। তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মক্কা-মদিনায় দুইটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেগুলো 'মাদ্রাসা আল-বাঙ্গালিয়াহ' নামে আজও পরিচিত। তিনি মুদ্রায় কালেমা চালু করেন যা দীর্ঘদিন বাংলায় ছিল না।
বাংলায় বখতিয়ার খলজির মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও সর্বপ্রথম যে সুলতান নিজ উদ্যোগে বাংলায় রাজধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রসার ঘটান, তিনি ছিলেন অত্যাচারী কাফের শাসকের ঘরে জন্মগ্রহণকারী- সুলতান জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ্।
তিনি সর্বাধিক সংখ্যক হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন। ঐতিহাসিক ড.জেমস ওয়াইজ "Journal of the Asiatic Society of Bengal" এ মুহম্মদ শাহ সম্বন্ধে লিখেছেন- "জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ অসংখ্য ব্রাহ্মণ কে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণদের কোরান অথবা মৃত্যু -- যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন ; ফলে এসময় অসংখ্য হিন্দু পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্য ও আসামের জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলো।"
এটি ছিল ব্রাহ্মণদের থেকে বাঙালি মুসলমানের রক্তের উপযুক্ত প্রতিশোধ। জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের থেকে অনেক হিসাব বাকি ছিলো। তিনি ব্রাহ্মণদের অবরুদ্ধ করে তাদের গরুর গোশত খাইয়ে দেন ।
১৯ শতকে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টন লিখেছেন- "তিনি অসংখ্য হিন্দুকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন, ফলে হিন্দুরা কামরূপ রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছিলো"
সুলতান মুহম্মদ শাহ ছিলেন উত্তমের প্রতি উত্তম, অধমের প্রতি অধম। একটি সংস্কৃত শ্লোকের ( ডি.সি ভট্টাচার্যের) তথ্যানুসারে জানা যায়- তিনি রাজ্যধর নামে এক হিন্দু ব্যক্তি কে সেনাবাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন।
'স্মৃতিনহর' ও 'পদচন্দ্রিকা' নামক দুটি প্রাচীন পুঁথিতে সুলতানের সংস্কৃত সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বর্ধমানের কুলীনগ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ বৃহস্পতি মিশ্রকে 'সর্বভূমপণ্ডিত'(সভা পণ্ডিত) নিযুক্ত করেন এবং তাঁর পুত্র বিশ্বরায়কে মন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন অনেক ব্রাহ্মণ কবির পৃষ্ঠপোষক ও ব্রাহ্মণ কবিরা তাঁর দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলো।
হিন্দু ও বৌদ্ধদের প্রতি সহনশীলতা ছিলো সুলতানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
পরধর্মসহিষ্ণুতার কারণে সুলতান মুহম্মদ কে হিস্টোরিয়ান ফিরিশতা উল্লেখ করেছেন যুগের নাশরিউয়ান (পারস্য সম্রাট প্রথম খসরু) হিসেবে।
৩
বাঙালি মুসলমানের অস্তিত্ব রক্ষার্থে যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন যুগাবতার হিসেবে তিনি কোনো আরব,তুর্কি, পাঠান বংশোদ্ভুত মুসলমান ছিলেন না- তিনি জন্মগত কোনো মুসলিম অবধি ছিলেন না- তিনি ছিলেন অখণ্ড বাংলায় হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকারী কুলাঙ্গার গণেশেরই নিজের সন্তান -- তাওহিদের জন্য অস্ত্র ধরেছিলেন তিনি কাফের পিতার বিরুদ্ধে - পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলা সালতানাতের।
৪
জ্যোৎস্না রাত, সাল ১৪৩৩
ফিরোজাবাদের রাস্তায় ধীর পায়ে হেটে চলেছেন বাদশাহ। তিনি সামনে আসছেন, পেছনে শাহজাদা আহমাদ, সাথে পাইক-রক্ষীরা। জ্যোৎস্না রাতে কেন যেন সুলতানের ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সব ঘটনা- এই ফিরোজাবাদেই তাঁর তারুণ্যের উত্তাল দিনগুলো দেখেছেন, এই ফিরোজাবাদেই তাঁর শায়খ নূর কুতুব-উল আলমের সাহায্যে সত্যের সন্ধান পেয়েছেন তিনি, মিথ্যাকে ধ্বংস করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ধীরে ধীরে মনে পড়লো শায়খের কথা, মনে পড়লো মামলুক সুলতান বার্সবের প্রেরিত খিলাতের কথা - মনে পড়তে লাগলো সুলতানা আসমানতারার (ইলিয়াস শাহী রাজবংশের শাহজাদি) কথা। এই পান্ডুয়াতেই পরিচয় হয়েছিল জীবনসঙ্গিনী মহিয়সী আসমানতারার সাথে....! আজ কেন সবকিছু মনে পড়ছে এতো দ্রুত?
একলাখি সমাধিসৌধের ভেতরে এগিয়ে চলতে লাগলেন সুলতান.....!! জ্যোৎস্না আলোয় সুলতানা আসমানতারার কবরে হাত রাখলেন সুলতান। ঠাণ্ডা হয়ে আছে, হয়তো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন তিনি....জীবনে শায়খের পর এই একটি মানুষকেই অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন সুলতান। এই একটি মানুষ কাফের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবসময় ছিল তাঁর পাশে সুখে-দুঃখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও...!!
সুলতান বুঝলেন সময় হয়তো তাঁরও আসন্ন- অপেক্ষার পালা হয়তোবা এবার শেষ।আসমানতারা হয়তো ওইপারে তার অপেক্ষায় আছেন!
ধীরে ধীরে দীর্ঘকায় মানুষটির দেহ নিঃসাড় হয়ে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে। প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহে বাঙ্গালাহ জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ ঢলে পড়লেন.. কণ্ঠ থেকে উচ্চারণ করলেন সেই মহান বাণী-"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।নিশ্চয়ই মুহম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।"
শাহজাদা আহমাদ দেখামাত্রই দ্রুত পিতার কাছে এলেন, সাথে নিরাপত্তাকর্মীরা।দীর্ঘকায় মানুষটির নিঃসাড় দেহখানি পড়ে রয়েছে।
নি:শ্বাস পড়ছে না আর।
বাদশাহ আর নেই, জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ আর নেই, বিদায় নিয়েছেন বাদশাহ-- বিদায় নিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী শক্তির যম- বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিস্ময় সুলতান-ই বাঙ্গালাহ্ জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ, যিনি এই বাংলায় দিয়েছিলেন ইমানের সর্বোচ্চ পরীক্ষা, হত্যা করেছিলেন হিন্দুত্ববাদী অপশক্তির স্বপ্ন।
ইতিহাস সাক্ষী- গণেশদের পতন ঘটেছে আর ঘটবেই,
"যতবার বাংলায় গণেশদের উত্থান ঘটবে, ততবারই যদুর জন্ম হবে!"
✍️✍️লেখক:- রাজিত তাহমীদ জিত
তারিখ:- ১২/০৫/২২
রেফারেন্সঃ
1.Sarkar, Jagadish Narayan Hindu-Muslim relations in Bengal (1985) medieval period.
2. Idarah-i Adabiyat-i-Delli. p. 52. OCLC 13980579.
3. The Philological Secretary, Journal of the Asiatic Society of Bengal, Volume 43 (1874), p.294
4. Taher, MA (2012). "Jalaluddin Muhammad Shah". In Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A. (eds.). Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second ed.). Asiatic Society of Bangladesh.
5.The rise of Islam and the Bengal frontier, 1204-1760.
6.A Geographical, Statistical and Historical Description of the District or Zila of Dinajpur in the Province or Soubah of Bengal. Calcutta: Baptist Mission Press. pp. 23–4.
7.Abdul Karim (1960). Corpus of the Muslim Coins of Bengal: (down to A. D. 1538).
8..Asiatic Society of Pakistan.
Al-Sakhawi. Al-Daw al-lami' li ahli al-Qarni al-Tasi (in Arabic).
9.বাংলার ইতিহাস (সুলতানি আমল)- আব্দুল করিম
10. রাজা গণেশ- বাংলাপিডিয়া