কাউছার সোহেল

কাউছার সোহেল Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from কাউছার সোহেল, Book & Magazine Distributor, Chittagang Road, Shiddirganj, Narayanganj.

26/06/2023

বাংলায় গরু জবেহ করার অধিকার আদায় করতে লড়াই করেছেন বাবা আদাম শহীদ ও শাহাজালালরা । পলাশীর বিপর্যয়ের পর হিন্দু জমিদাররা গরু জবেহ করার অধিকার কেড়ে নেয় ।
বৃটিশ শাসিত পূর্ব বাংলার ঢাকা ছাড়া আর কোথায়ও গরু জবেহ করা সহজ ছিল না । ঢাকার নবাবদের কারণে ঢাকায় গরু জবেহ করা যেতো । সাতচল্লিশের পরপরই সারা বাংলায় গরু জবেহ করা শুরু হয়েছে ।

সাতচল্লিশের পর জমিদারি উচ্ছেদের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমান আবার গরু জবেহ করার অধিকার ফিরে পায় । ভারত ভাগ তথা পাকিস্তানের জন্মের ভিতর দিয়ে বাঙালি মুসলমান গরু কোরবানীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন এবংএতে করে বর্ণহিন্দু জমিদারদের শোষণের অবসান হয় ও পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মাথা তুলে দাঁড়াবার ও তাদের বৈষয়িক সমৃদ্ধি লাভের সুযোগও তৈরি হয় ।

পাকিস্তান না হলে বাঙালি মুসলমানের পক্ষে এটি কখনোই সম্ভব ছিল না । এর মস্তবড় প্রমাণ হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানরা । তারা সেখানে জনসংখ্যার দিক দিয়ে শতকরা ত্রিশ ভাগ হলেও সামাজিকভাবে তাদের কোনো জায়গা নেই বললেও চলে ।

গবেষক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন লিখেছেন:

"আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় অনায়াসে গরু(বা অন্য কিছু)কিনে এনে সহজেই কোরবানী দিয়ে ফেলি । আশি একশো দূরে থাকুক পঞ্চাশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না । আজকের প্রজন্ম হয়ত অবাক হবে যে,এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে এবং কোরবানী বিশেষ করে গরু কোরবানী দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছিল" ।

ঔপনিবেশিক বাংলায় গরু জবাই নিয়ে হিন্দু-মুসলমান
বিরোধ তীব্রতর ছিল । পাকিস্তান হওয়ার পরও গরু কোরবানী নিয়ে কম ঝামেলা হয় নি । প্রভাবশালী হিন্দুদের এলাকায় মুসলমানরা গরু কোরবানী দিতেন না এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্হাটাকেই তারা একরকম মেনে নিয়েছিলেন ।১৯৫০-এর দশকে নাটোরের এসডিও পি এ নাজিরের স্মৃতির পাতা থেকে গ্রন্হে এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে ।

সিলেট রেফারেন্ডামের সময় কংগ্রেসের নেতারা শ্লোগান তুলেছিলেন'হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই'তখন মুসলিম লীগ নেতারা মিছিলে শ্লোগান দিয়েছিলেন 'হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই/চলো দু'য়ে মিলে গরু খাই'
জানা যায় তখন মুসলিম লীগ রীতিমতো গরু জবাই দিয়েছিলেন এবং তারা স্হানীয় কংগ্রেসের হিন্দু নেতাদের সেখানে দাওয়াত দিয়েছিলেন ।
(আত্মজীবনী-দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ,উৎস প্রকাশন,ঢাকা,২০০৭।)

আজকের প্রেক্ষিতে এ ঘটনাটি অন্যরকম মনে হলেও মুসলিম লীগ নেতারা এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে করেন নি । তখনকার সামাজিক পরিস্থিতিতে তারা এটা করেছিলেন মুসলিম আত্মপরিচয়ের সাংস্কৃতিক দিকটি তুলে ধরতে,যাতে নিপীড়িত মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায় ।

— শেখ নজরুল

মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর (রহঃ)কে নিয়ে দুটা বিখ্যাত গল্প। ১.ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। একদিকে মুঘল সেনাবাহিনী, অন্যদিকে বুখারা...
23/06/2023

মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর (রহঃ)কে নিয়ে দুটা বিখ্যাত গল্প।
১.ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। একদিকে মুঘল সেনাবাহিনী, অন্যদিকে বুখারার আব্দুল আযিয খানের বাহিনী। বাদশাহ আওরঙ্গযেব হাতির ওপর বসা। যুদ্ধ চলা অবস্থাতে নামাজের সময় হল। সেনাপতিদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে হাতি থেকে নামলেন আওরঙ্গযেব। যুদ্ধ চলছে, আওরঙ্গযেব নামাজ আদায় করছেন। এ কথা শোনার পর আব্দুল আযিয খান কেঁদে ফেললেন।

'এমন মানুষের সাথে যুদ্ধ করার অর্থ নিজেকে ধ্বংস করা...'

যুদ্ধ স্থগিত করা হল।

২.আওরঙ্গজেবের জীবনের শেষ দিকের কথা। বয়স ততোদিনে ৮০ পাড় হয়ে গেছে। সৈন্যসামন্ত্র পরিবেষ্টিত বাদশাহকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজকীয় পালকিতে। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে 'আলমগীর'-কে দেখার জন্য। উপস্থিত এক ইউরোপীয় দর্শকের ভাষ্যমতে এই পুরো সময়ে আওরঙ্গজেব একবারও মুখ তুলে তাকাননি। সৈন্যসামন্ত, মুগ্ধ জনগণ - কোন কিছুতে তার আগ্রহ নেই। পুরোটা সময় তিনি কুরআন পড়ে গেছেন।
নিঃসন্দেহে মুঘলদের মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ মুসলিম শাসক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন ,বিদ্রোহী মারাঠারাদের তিনি দমন করেছিলেন কঠোর হস্তে। নির্মান করেছিলেন অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, ফাতোয়ায়ে আলমগীরী তার এক অবিস্মরণীয় কৃত্তী।
মুঘল সম্রাজ্যকে নিয়ে গিয়েছিলেন এর সর্বোচ্চ সীমানায়। ভারত উপমহাদেশ অধিকাংশ অংশ ছিল মুসলিমদের অধীনস্ত। ভারতবর্ষ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি।
মালিকুল হিন্দ, আসসুলতানুল আযীম
আওরঙ্গজেব আলমগীর - বিশ্বজয়ী আওরঙ্গজেব।
(রহমাতুল্লাহ আলাইহি)

বাঙালী জাতির মানসিকতা----------------নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যখন গ্রেফতার করে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অসংখ্য মানু...
22/06/2023

বাঙালী জাতির মানসিকতা
----------------
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যখন গ্রেফতার করে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অসংখ্য মানুষ হা করে নিরব দর্শকের মতো সেই দৃশ্য উপভোগ করেছিলো । শুধু তাই নয়, পিঠে ছুরিকাঘাত করার পূর্বে নবাবকে কাটাওয়ালা সিংহাসন ও ছেড়া জুতা দিয়ে যখন অপমান করা হচ্ছিলো, তখন শত শত মানুষ সেই কৌতুকে ব্যাপক বিনোদিত হয়েছিলো ! মাস সাইকোলজিটা একটু খেয়াল করে দেখুন, এই জাতি দুইশো বছরের গোলামী সাদরে গ্রহণ করেছিলো ওভাবেই ।

একটি মজার তথ্য দেই । লর্ড ক্লাইভ তার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিখেছিল নবাবকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অপমান করতে করতে তখন দাঁড়িয়ে থেকে যারা এসব প্রত্যক্ষ করেছিল তারা যদি একটি করেও ঢিল ছুড়ত তবে ক্লাইভকে করুণ পরাজয় বরণ করতে হতো ।

আরো চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, প্রায় ১০ হাজার অশ্বারোহী, ৩০ হাজার পদাতিক এবং অসংখ্য কামান-গোলাবারুদসহ বিশাল সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনী নিয়েই পলাশীর ময়দানে এসেছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা । কিন্তু তার বিপরীতে রবার্ট ক্লাইভের সৈন্যসংখ্যা ছিলো মাত্র ৩ হাজার, যার মধ্যে ৯শ জনই ছিলো হাতে পায়ে ধরে নিয়ে আসা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শৌখিন অফিসিয়াল সদস্য যাদের অধিকাংশেরই তলোয়ার ধরার মতো সুপ্রশিক্ষণ ছিলো না, কোন দিন যুদ্ধ করেনি ।

এতো কিছু জেনেও রবার্ট ক্লাইভ যুদ্ধে নেমেছিলো এবং জিতবে জেনেই নেমেছিলো। কারণ, রবার্ট ক্লাইভ খুব ভালো করেই জানতেন একটি হীনমন্য ব্যক্তিস্বার্থলোভী দ্বিধাগ্রস্ত জাতিকে পরাস্ত করতে খুব বেশি আয়োজনের প্রয়োজন নেই ; রক্ত-যুদ্ধ এইসব এদের জন্য মশা মারতে কামান দাগার মতো অবস্থা। যাদেরকে সামান্য দাবার চালেই মাত করে দেয়া যায়, তাদের জন্য হাজার হাজার সৈন্যের জীবনের ঝুকি তিনি কেনো নিবেন ?
এছাড়াও, মীরজাফরকে যখন নবাবীর টোপ গেলানো হয়, রবার্ট ক্লাইভ তখনো জানতো যে, সিরাজকে পরাজিত করার পর এই বদমাশটিসহ বাকিগুলোর পাছায়ও লাথি দেয়া হবে এবং হয়েছেও তাই।

মীরজাফর, উমিচাঁদ, রায়বল্লভ, ঘষেটি বগমসহ সবগুলোরই করুণ মৃত্যু হয়েছিলো।

না ভাই, রবার্ট ক্লাইভ মীরজাফরের বেইমানীর উপর ভরসা করে যুদ্ধে আসেনি। সে যুদ্ধে এসেছিলো বাঙালীর মানসিকতা ও ভূত-ভবিষ্যতসহ বহুদূর পর্যন্ত নিখুঁতভাবে আন্দাজ করে। সে জানতো, মীরজাফরকে টোপ দিলে গিলবে এবং কাজ শেষ হলে লাথি দিবে।

সে জানতো, যুদ্ধশেষে জনসম্মুখে নবাবের পাছায় লাথি দিলেও এই জাতি বিনোদনে দাঁত কেলাবে, অথবা হা করে সব চেয়ে চেয়ে দেখবে। বিনা দ্বিধায়ই সার্টিফিকেট দেয়া যায়, বাঙালী জাতির মানসিকতা সবচেয়ে নিখুঁতভাবে মাপতে পারা ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তিটির নাম রবার্ট ক্লাইভ …

বায়তুল মুকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ।মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত।১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ ...
21/06/2023

বায়তুল মুকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ।মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত।১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মসজিদে একসাথে ৩০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে, ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তবে মসজিদটিতে জুমার নামাজ ছাড়াও বিশেষত রমজানের সময় অত্যধিক মুসল্লির সমাগম হয় বিধায়, বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নিত করে
ইতিহাস সম্পর্কিত কিছু তথ্য:

………………………………………………
আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি বৃহত্তর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য ৮.৩০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। সেই সময় মসজিদের অবস্থানে একটি বড় পুকুর ছিল। যা 'পল্টন পুকুর' নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট করে ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদের কাজের উদ্ভোধন করেন।

সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের জন্য এখানে নামাজ পড়া হয়।

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি আটতলা। নিচতলায় রয়েছে বিপণিবিতান ও একটি বৃহত্তর অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়।

২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

ওমর মুখতার ( ১৮৫৮ - ১৯৩১) এমন একজন মুজাহিদ, যিনি বন্দী অবস্থায় ইটালিয় উপনিবেশবাদী বিচারকের সামনে বলেছিল -" আমরা এক আল্লা...
19/05/2023

ওমর মুখতার ( ১৮৫৮ - ১৯৩১) এমন একজন মুজাহিদ, যিনি বন্দী অবস্থায় ইটালিয় উপনিবেশবাদী বিচারকের সামনে বলেছিল -
" আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।"

১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে অটোম্যান তুর্কি সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইতালির যুদ্ধের সময় ইতালির নৌবাহিনী হানা দেয় লিবিয়ার উপকূলে। সে সময় লিবিয়া ছিল তুর্কি সাম্রাজ্যের অংশ। ইতালিয়রা লিবিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তুর্কি সেনারা ও তাদের লিবিয় সহযোগীরা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে উপকূল ছেড়ে পেছনের দিকে সরে আসেন।
ইতালিয় হানাদার বাহিনী তিন দিন ধরে ত্রিপলি ও বেনগাজিতে বোমা বর্ষণ করে।

লিবিয়ার সাইরেনাইকা অঞ্চলের জনগণ ওমর মুখতারের নেতৃত্বে একের পর এক প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। মরুভূমির লড়াইয়ে অভিজ্ঞ ওমর মুখতার হয়ে ওঠেন ইতালিয় সেনাদের জন্য চক্ষুশূল। ২০ বছর ধরে যুদ্ধের পর অবশেষে ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক অতর্কিত হামলায় আহত ও বন্দি হন মুখতার। ৫ দিন পর আতঙ্কগ্রস্ত ইতালিয় দখলদাররা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে।
ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় মরুর সিংহ নামে খ্যাত ওমর মুখতারকে মুসোলিনির ইটালিয়ান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল: তুমি কি জান তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?
জবাবে ওমর মুখতার বলেছিলেন, হ্যাঁ।
ওই অফিসার বললেন, তুমি যা করেছ তার জন্য তুমি কী অনুতপ্ত?
ওমর মুখতার বললেন, প্রশ্নই হয় না, আমি আমার দেশ আর মানুষের জন্য লড়েছি।

সেনা আদালতের বিচারক তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার মত লোকের এমন পরিণতি দেখে আমি দুঃখিত ।
ওমর মুখতার বললেন, "কিন্তু এটাই তো জীবন শেষ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে এভাবে বীরের মত শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।”
এরপর বিচারক প্রস্তাব দিল তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে যদি তিনি মুজাহিদদের কাছে চিঠি লেখেন যাতে মুজাহিদরা ইটালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে । ওমর মুখতার বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন:
"যেই শাহাদত অঙ্গুলি দিয়ে আমি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেই যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। সেই আঙ্গুল দিয়ে অসত্য কোনো কথা লিখতে পারবো না। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।"

মহান আল্লাহ বীর মুখতারকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে স্থান করে দিন। আমীন।

বাংলার ইতিহাসের মহাবিস্ময়১ইলিয়াস শাহের পৌত্র ন্যায়বিচারক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের  শাসনামলে বাংলার প্রশাসনে হিন্দুদে...
11/05/2023

বাংলার ইতিহাসের মহাবিস্ময়



ইলিয়াস শাহের পৌত্র ন্যায়বিচারক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনামলে বাংলার প্রশাসনে হিন্দুদের প্রভাব বৃদ্ধি শুরু হয় ব্যাপকভাবে এবং প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দুদের নিযুক্তির ফলে প্রশাসন প্রভাবশালী হিন্দু অভিজাতদের তীব্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বাংলায় হিন্দুদের এই অতিরিক্ত প্রভাব বৃদ্ধি দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রখ্যাত সূফী সাধক শায়খ নূর কুতুব-উল আলম (রহ.)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাধক শায়খ আলাউল হক (রহ.)- এর পুত্র।

তিনি প্রশাসনে হিন্দুদের এই অতিরিক্ত ক্ষমতায়নের বিষয়ে তাঁর বাল্যবন্ধু সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কে সতর্ক করে চিঠি খেলাম। সুলতানকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকলেন যে- 'সালতানাতে হিন্দুদেরকে নিম্নতর পদে নিয়োগ করা গেলে যেতে পারে কিন্তু গভর্নর বা ওয়ালির মতো বড় পদে তাদেরকে নিয়োগ করা উচিত হবে না। কারণ- উচ্চপদে নিয়োগ করলে তারা মুমিনদের উপর খবরদারি করবে'। বলা বাহুল্য, সুলতান শায়খের কথা কর্ণপাত করলেন না।
শায়খ নূর কুতুব উল-আলমের ভাই ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের প্রধান উজির মুহাম্মদ আজম খান। তিনিও ভাইয়ের কথা আমলে নিলেন না। এসময় ভাতুড়িয়া পরগণার (বর্তমান দিনাজপুর) সামন্ত রাজা গণেশ রাজসভায় উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলো এবং সে ছিলো গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী। গণেশ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং প্রশাসনে তার বড় ধরনের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৪১১ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে তাঁরই বিশ্বস্ত গণেশের হাত ছিলো বলে ধারণা করা হয়।

তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সাইফুদ্দীন হামজা শাহ সিংহাসনে বসলেও সমস্ত ক্ষমতা চলে যায় ভাতুড়িয়ার জমিদার গণেশের হাতে। গণেশ নিজে সিংহাসনে না বসলেও প্রশাসন তখন চলতে থাকে তারই অঙ্গুলি হেলনে। অতঃপর সাইফুদ্দীন হামজা শাহ কেও ঘাতক কর্তৃক হত্যা করিয়ে সরিয়ে দেয় গণেশ এবং ক্ষমতায় বসায় নিজের অনুগত ইলিয়াস শাহী বংশের এক কৃতদাস কে । সেই কৃতদাস 'শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহ' উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসে । এরপর তাকেও সরিয়ে দেয় গণেশ, ক্ষমতায় বসেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের অপর পুত্র আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ। ১৪১৪ সালে তাঁকে হত্যার মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে গণেশ নিজেই।
সে বাংলাকে হিন্দু সাম্রাজ্য ঘোষণা করে ও সালতানাত বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সে বাংলায় এক চরম অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। বাংলার মুসলমানদের উপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার ও নিপীড়ন। অসংখ্য সূফী দরবেশ কে সে হত্যা করে নির্মমভাবে। শিক্ষিত অভিজাত মুসলিমদের বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিয়ে হত্যা করে সে। সে রাজধানীর প্রধান শাহী মসজিদ- বিখ্যাত আদিনা মসজিদ কে কাছারিঘরে পরিণত করে এবং অসংখ্য মসজিদ-মাজার-স্তম্ভ ভেঙে ফেলে। আদিনা মসজিদে থেমে যায় আজানের সুর, স্থাপন করা হয় পাথরের মূর্তি.......

এসময় শায়খ নূর কুতুব-উল আলম বাংলার মুসলমানদের রক্ষার জন্য জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ শর্কিকে বাংলা আক্রমণের আহ্বান জানান। জৌনপুর সুলতান ইব্রাহিম শাহ শর্কি বাংলা আক্রমণ করেন, প্রথমে তিনি রাজা গণেশের অনুগত ত্রিহুতের রাজা কে পরাজিত করেন ও অতঃপর বাংলা আক্রমণ করলে রাজা গণেশ পরাজিত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে নূর কুতুব উল-আলমের খানকায় এসে তাঁর কাছে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে। নূর কুতুব-উল আলম তাকে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব করলে সে তার কনিষ্ঠ পুত্র রাজপুত্র যদু নারায়ণ রায় কে ইসলাম গ্রহণ করানোর ও তাঁর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে।
শায়খ এতে সম্মত হন এবং যদু ইসলাম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। কিন্তু এর অল্প কিছুকাল পর ইব্রাহিম শর্কীর মৃত্যু হলে উগ্র সাম্প্রদায়িক গণেশের সামনে আর কোনো বাধা থাকে না। ১৪১৬ সালে সে পুত্রকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে সিংহাসনে বসে ও আবার মুসলমানদের উপর শুরু হয় অত্যাচার। শায়খ নূর কুতুবের ছেলে শায়খ আনোয়ারকে হত্যা করা হয় এবং শায়খ নূর কুতুবের নাতি শায়খ জাহিদ সোনারগাঁয়ে বন্দি হন। নূর কুতুব-উল আলম অসহায় হয়ে বলেন- "এখন সারারাত নামাজ পড়ে দোয়া করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।" বাংলার বশ্যতা স্বীকারকারী করদ রাজ্যসমূহে চলছে হিন্দু শাসন। এমন অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করলেব শায়খ, নিভে গেলো সব আশা।



বাংলার মুসলিমদের রক্ষা করার আল্লাহ ছাড়া যখন আর কেউ নেই, অখণ্ড বাংলায় যখন গণেশ প্রতিষ্ঠা করেছে হিন্দুত্ববাদী শাসন, যখন গণেশই অখণ্ড বাংলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা,বাংলায় কালিমার ঝাণ্ডা উত্তোলনের কেউ যখন নেই, সব আশা যখন শেষ....
তখনই মহান আল্লাহ দেখালেন তাঁর মহান কুদরত। জন্ম নিলো এক আগুনের ফুলকি ; যে আগুনের ফুলকি চিরতরে ধ্বংস করে দিলো উগ্র কাফের শক্তির উত্থান কে.......

রাজা গণেশ পুত্র যদু কে 'সুবর্ণধেনু যজ্ঞে'র মাধ্যমে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনে ।
সুবর্ণধেনু যজ্ঞ অনুযায়ী- একটি স্বর্ণের গাভীর মুখ দিয়ে যদুকে ঢুকিয়ে পশ্চাদ্দেশ দিয়ে বের করা হয়। তারপর সেই গাভির অংশগুলো ব্রাহ্মণদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। এই ঘটনা যদুর মনে তীব্র প্রভাব বিস্তার করে। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে তার মনে বিস্বাদের সৃষ্টি হয় ও সূফী দরবেশদের প্রভাবে সে ধীরে ধীরে ইসলামমুখী হয়ে ওঠে। শেষে যদু ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে গণেশ মারাত্মকভাবে ভীত হয়ে তাকে বন্দি করে। কারাগারে বন্দি থেকেই পিতা গণেশকে হত্যার ছক আঁকে যদু। অতঃপর ১৪১৮ সালে যদুর প্রেরিত গুপ্তঘাতক হত্যা করে গণেশকে। পিতা গণেশকে হত্যার পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মহেন্দ্রদেব সিংহাসনে বসলে যদু সর্বশক্তি সঞ্চয় করে বড় ভাই মহেন্দ্রদেবকে উৎখাত ও হত্যা করে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির পতন ঘটিয়ে সিংহাসন অধিকার করেন এবং জালাল আদ-দুনিয়া ওয়া আদ-দ্বীন আবুল মুজাফফর মুহম্মদ শাহ উপাধি ধারণ করে সালতানাত-ই বাঙ্গালাহর মসনদে বসেন।

আর এভাবেই অখণ্ড বাংলায় হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদর্শী কুখ্যাত ইসলাম-বিদ্বেষী গণেশের পতন ঘটে তারই ঔরসে জন্মগ্রহণকারী তারই পুত্র যদুর হাতে।
আহ, আল্লাহর কী লীলাখেলা! আল্লাহর কী কুদরত!

যে গণেশ চেয়েছিলো বাংলা থেকে ইসলাম কে চিরতরে মুছে ফেলতে, তার পতন ঘটলো কোনো আরব, তুর্কি, পাঠান বংশোদ্ভুত মুসলমানের হাতে নয়, তার পতন ঘটে তারই পুত্র, ব্রাহ্মণ গণেশেরই রক্ত যদু নারায়ণের হাতে।

আর এভাবেই মহান আল্লাহ হিন্দুত্ববাদী উগ্রের পতন ঘটিয়েছিলেন সর্বোচ্চ অপমানে , নিজেরই পুত্রের হাতে।

যখন সব আশা নিঃশেষ হয়ে যায় , তখনই আল্লাহ নতুন আশার সূচনা করেন....(যদি বান্দা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থেকে থাকে তাহলে)

সুলতান জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ বাংলা সালতানাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী সম্রাট ছিলেন। তিনি মিং রাজবংশ, তৈমুরি সাম্রাজ্য ও মিশরের মামলুক সাম্রাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং মক্কার শরিফ বারাকাত ইবনে হাসানের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিলো। তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মক্কা-মদিনায় দুইটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেগুলো 'মাদ্রাসা আল-বাঙ্গালিয়াহ' নামে আজও পরিচিত। তিনি মুদ্রায় কালেমা চালু করেন যা দীর্ঘদিন বাংলায় ছিল না।

বাংলায় বখতিয়ার খলজির মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও সর্বপ্রথম যে সুলতান নিজ উদ্যোগে বাংলায় রাজধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রসার ঘটান, তিনি ছিলেন অত্যাচারী কাফের শাসকের ঘরে জন্মগ্রহণকারী- সুলতান জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ্।
তিনি সর্বাধিক সংখ্যক হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন। ঐতিহাসিক ড.জেমস ওয়াইজ "Journal of the Asiatic Society of Bengal" এ মুহম্মদ শাহ সম্বন্ধে লিখেছেন- "জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ অসংখ্য ব্রাহ্মণ কে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণদের কোরান অথবা মৃত্যু -- যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন ; ফলে এসময় অসংখ্য হিন্দু পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্য ও আসামের জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলো।"

এটি ছিল ব্রাহ্মণদের থেকে বাঙালি মুসলমানের রক্তের উপযুক্ত প্রতিশোধ। জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের থেকে অনেক হিসাব বাকি ছিলো। তিনি ব্রাহ্মণদের অবরুদ্ধ করে তাদের গরুর গোশত খাইয়ে দেন ।
১৯ শতকে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টন লিখেছেন- "তিনি অসংখ্য হিন্দুকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন, ফলে হিন্দুরা কামরূপ রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছিলো"
সুলতান মুহম্মদ শাহ ছিলেন উত্তমের প্রতি উত্তম, অধমের প্রতি অধম। একটি সংস্কৃত শ্লোকের ( ডি.সি ভট্টাচার্যের) তথ্যানুসারে জানা যায়- তিনি রাজ্যধর নামে এক হিন্দু ব্যক্তি কে সেনাবাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন।
'স্মৃতিনহর' ও 'পদচন্দ্রিকা' নামক দুটি প্রাচীন পুঁথিতে সুলতানের সংস্কৃত সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বর্ধমানের কুলীনগ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ বৃহস্পতি মিশ্রকে 'সর্বভূমপণ্ডিত'(সভা পণ্ডিত) নিযুক্ত করেন এবং তাঁর পুত্র বিশ্বরায়কে মন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন অনেক ব্রাহ্মণ কবির পৃষ্ঠপোষক ও ব্রাহ্মণ কবিরা তাঁর দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলো।
হিন্দু ও বৌদ্ধদের প্রতি সহনশীলতা ছিলো সুলতানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
পরধর্মসহিষ্ণুতার কারণে সুলতান মুহম্মদ কে হিস্টোরিয়ান ফিরিশতা উল্লেখ করেছেন যুগের নাশরিউয়ান (পারস্য সম্রাট প্রথম খসরু) হিসেবে।



বাঙালি মুসলমানের অস্তিত্ব রক্ষার্থে যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন যুগাবতার হিসেবে তিনি কোনো আরব,তুর্কি, পাঠান বংশোদ্ভুত মুসলমান ছিলেন না- তিনি জন্মগত কোনো মুসলিম অবধি ছিলেন না- তিনি ছিলেন অখণ্ড বাংলায় হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকারী কুলাঙ্গার গণেশেরই নিজের সন্তান -- তাওহিদের জন্য অস্ত্র ধরেছিলেন তিনি কাফের পিতার বিরুদ্ধে - পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলা সালতানাতের।



জ্যোৎস্না রাত, সাল ১৪৩৩

ফিরোজাবাদের রাস্তায় ধীর পায়ে হেটে চলেছেন বাদশাহ। তিনি সামনে আসছেন, পেছনে শাহজাদা আহমাদ, সাথে পাইক-রক্ষীরা। জ্যোৎস্না রাতে কেন যেন সুলতানের ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সব ঘটনা- এই ফিরোজাবাদেই তাঁর তারুণ্যের উত্তাল দিনগুলো দেখেছেন, এই ফিরোজাবাদেই তাঁর শায়খ নূর কুতুব-উল আলমের সাহায্যে সত্যের সন্ধান পেয়েছেন তিনি, মিথ্যাকে ধ্বংস করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ধীরে ধীরে মনে পড়লো শায়খের কথা, মনে পড়লো মামলুক সুলতান বার্সবের প্রেরিত খিলাতের কথা - মনে পড়তে লাগলো সুলতানা আসমানতারার (ইলিয়াস শাহী রাজবংশের শাহজাদি) কথা। এই পান্ডুয়াতেই পরিচয় হয়েছিল জীবনসঙ্গিনী মহিয়সী আসমানতারার সাথে....! আজ কেন সবকিছু মনে পড়ছে এতো দ্রুত?

একলাখি সমাধিসৌধের ভেতরে এগিয়ে চলতে লাগলেন সুলতান.....!! জ্যোৎস্না আলোয় সুলতানা আসমানতারার কবরে হাত রাখলেন সুলতান। ঠাণ্ডা হয়ে আছে, হয়তো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন তিনি....জীবনে শায়খের পর এই একটি মানুষকেই অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন সুলতান। এই একটি মানুষ কাফের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবসময় ছিল তাঁর পাশে সুখে-দুঃখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও...!!
সুলতান বুঝলেন সময় হয়তো তাঁরও আসন্ন- অপেক্ষার পালা হয়তোবা এবার শেষ।আসমানতারা হয়তো ওইপারে তার অপেক্ষায় আছেন!
ধীরে ধীরে দীর্ঘকায় মানুষটির দেহ নিঃসাড় হয়ে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে। প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহে বাঙ্গালাহ জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ ঢলে পড়লেন.. কণ্ঠ থেকে উচ্চারণ করলেন সেই মহান বাণী-"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।নিশ্চয়ই মুহম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।"
শাহজাদা আহমাদ দেখামাত্রই দ্রুত পিতার কাছে এলেন, সাথে নিরাপত্তাকর্মীরা।দীর্ঘকায় মানুষটির নিঃসাড় দেহখানি পড়ে রয়েছে।
নি:শ্বাস পড়ছে না আর।
বাদশাহ আর নেই, জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ আর নেই, বিদায় নিয়েছেন বাদশাহ-- বিদায় নিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী শক্তির যম- বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিস্ময় সুলতান-ই বাঙ্গালাহ্ জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ, যিনি এই বাংলায় দিয়েছিলেন ইমানের সর্বোচ্চ পরীক্ষা, হত্যা করেছিলেন হিন্দুত্ববাদী অপশক্তির স্বপ্ন।

ইতিহাস সাক্ষী- গণেশদের পতন ঘটেছে আর ঘটবেই,
"যতবার বাংলায় গণেশদের উত্থান ঘটবে, ততবারই যদুর জন্ম হবে!"

✍️✍️লেখক:- রাজিত তাহমীদ জিত
তারিখ:- ১২/০৫/২২

রেফারেন্সঃ

1.Sarkar, Jagadish Narayan Hindu-Muslim relations in Bengal (1985) medieval period.

2. Idarah-i Adabiyat-i-Delli. p. 52. OCLC 13980579.

3. The Philological Secretary, Journal of the Asiatic Society of Bengal, Volume 43 (1874), p.294

4. Taher, MA (2012). "Jalaluddin Muhammad Shah". In Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A. (eds.). Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second ed.). Asiatic Society of Bangladesh.

5.The rise of Islam and the Bengal frontier, 1204-1760.

6.A Geographical, Statistical and Historical Description of the District or Zila of Dinajpur in the Province or Soubah of Bengal. Calcutta: Baptist Mission Press. pp. 23–4.

7.Abdul Karim (1960). Corpus of the Muslim Coins of Bengal: (down to A. D. 1538).
8..Asiatic Society of Pakistan.
Al-Sakhawi. Al-Daw al-lami' li ahli al-Qarni al-Tasi (in Arabic).

9.বাংলার ইতিহাস (সুলতানি আমল)- আব্দুল করিম
10. রাজা গণেশ- বাংলাপিডিয়া

মানসা মুসাহজের সফরে চলছেন রাজা। সাথে আছে ৬০ হাজার সঙ্গী। এর মধ্যে রাজার সেবকই আছেন প্রায় ১৪ হাজার। প্রতিজন সেবকের কাছে আ...
05/05/2023

মানসা মুসা

হজের সফরে চলছেন রাজা। সাথে আছে ৬০ হাজার সঙ্গী। এর মধ্যে রাজার সেবকই আছেন প্রায় ১৪ হাজার। প্রতিজন সেবকের কাছে আছে সোনার বার। এই কাফেলার সাথে আছে ১০০ উট-বোঝাই স্বর্ণ। মালি থেকে মিসর হয়ে হেজাজের পথে যেখানেই কাফেলা বিরতি দিল, রাজা দুহাতে স্বর্ণ দান করলেন স্থানীয়দের। তাঁর স্বর্ণদানের কারণে মিসরে সোনার দামই কমে গেল।

মক্কায় হজ সেরে আরো তিনমাস অবস্থান করলেন রাজা। ততদিনে তাঁর বিশাল ধনভাণ্ডার শূন্য হয়ে গেছে। এবার তিনি ব্যবসায়ীদের থেকে ঋণ নিলেন। ঋণের টাকায় কিনলেন ফিকহে মালেকির বইপত্র। এবার চললেন নিজের রাজ্যের দিকে। সাথে জুটিয়ে নিলেন আলেম, কবি, সাহিত্যিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের এক বিশাল জামাতকে। উদ্দেশ্য, এঁদেরকে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাবেন। রাজ্যকে সমৃদ্ধ করবেন।

রাজা ফিরলেন দেশে। লোকেরা বলল, ‘বাহ, উটভর্তি সোনা নিয়ে গেলেন, ফিরে এলেন উটভর্তি বই নিয়ে!’

এই রাজার নাম মানসা মুসা। তিনি ছিলেন বর্তমান মালির শাসক। রাজ্যে সোনার খনি ছিল। তাই অভাবের মুখ দেখেননি কখনো। যেভাবে সোনা এসে কোষাগারে ঢুকত সেভাবেই আবার তা বিলি করে দিতেন দুস্থ-দরিদ্র প্রজাদের মাঝে। মানসা মুসাকে বলা হয় সর্বকালের ধনীদের একজন। ২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ১০ জনের তালিকা করে। এতে সর্বকালের সেরা ধনী বলা হয় মানসা মুসাকে।

মানসা মুসা সিংহাসনে আরোহণ করেন ৭১২ হিজরিতে (১৩১২ খ্রিস্টাব্দ)। ইবনু আমির হাজিব মনসা মুসাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি কীভাবে এই রাজত্ব লাভ করলেন?’

মনসা মুসা শুনিয়েছিলেন নিজের সিংহাসন আরোহণের গল্প। ‘আমাদের অঞ্চলে লোকজনের বিশ্বাস ছিল আটলান্টিক মহাসাগরই পৃথিবীর শেষ। এর ওপাড়ে আর কোনো ভূখণ্ড নেই। আমার আগে যিনি শাসক ছিলেন, দ্বিতীয় আবু বকর কেইতা, তিনি মনে করতেন আটলান্টিকের ওপাড়েও ভূখণ্ড আছে। তিনি দুইশো জাহাজ দিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনীকে কয়েক বছরের রসদ দেয়া হয়। তাদের উপর আদেশ ছিল, তারা আটলান্টিকের ওপাড়ে নতুন ভূখণ্ড সন্ধান করে বেড়াবে। নতুন ভূখন্ডের সন্ধান না পেলে তাদের ফিরে আসা নিষেধ ছিল। এই বাহিনী চলে যায়। কয়েক বছর তাদের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এরপর আবু বকর কেইতা দুই হাজার জাহাজ নিয়ে নতুন ভূখণ্ডের সন্ধানে যান এবং আমাকে রাজত্বের দায়িত্ব দিয়েন যান।’ (১)

আল্লামা মাকরেজির বর্ণনামতে, মানসা মুসা হজ করেন ৬২৪ হিজরিতে (২)। তাঁর এই হজের সফরই ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। সফরের শুরুতেই তিনি পৌঁছেন মিসরে। সেখানে তখন আল-মালিকুন নাসির মুহাম্মদ বিন কালাউনের শাসন চলছিল। মানসা মুসার আগমনের সংবাদ শুনে সুলতান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সুলতান তাঁর নিজের কেল্লায় মানসা মুসাকে অবস্থান করার অনুরোধ করেন। প্রথম যেদিন মানসা মুসা সুলতানের দরবারে উপস্থিত হন তাঁকে বলা হয় দরবারের রীতি মেনে সুলতানের সামনে মাটি চুম্বন করতে। তখন মানসা মুসা বলেন, ‘আমি শুধু আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সামনেই মাথা নিচু করি।’ সুলতান এ কথায় প্রভাবিত হন। তিনি মানসা মুসাকে খুব সম্মানের সাথে রাখেন। তাঁকে অনেক উপহার দেন।

মানসা মুসার বিশাল কাফেলার আগমনে মিসরের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ে। একদিকে তাঁর স্বর্ণ বিতরণের কারণে সোনার দাম কমে যাচ্ছিল, আবার তাঁর কাফেলার কাছে জিনিসপত্র বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা খুব লাভবান হচ্ছিলেন। এ সময় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা বেশ মুনাফা লুটে নেয়। তারা এক দিনার মূল্যের কাপড় ৪৬ দিনারে বিক্রি করতে থাকে (৩)।

এরপর মানসা মুসা পৌঁছলেন মক্কায়। সেখানেও তিনি প্রচুর দান করেন। তবে মক্কার আবহাওয়া তাঁর কাফেলার সদস্যদের জন্য সহনীয় হয়নি। তাঁর কাফেলার এক তৃতীয়াংশ সদস্যই এই সফরে মারা যান (৪)।

মানসা মুসা ছিলেন প্রজাবান্ধব শাসক। সাম্রাজ্যের উন্নতিতে তিনি প্রচুর কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। হজের সফর থেকে ফেরার সময় তিনি আন্দালুসের কবি আবু ইসহাক ইবরাহিম সাহেলিকে সাথে নিয়ে আসেন। তিনি নিজের রাজ্যে প্রচুর মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ করেন। থিমবুকতু শহরেও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে তা মাদরাসায় রূপান্তরিত হয়। এবং তারও পরে এটি ইউনিভার্সিটি অব শাংকোর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। বর্তমানে এর কার্যক্রম খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।

আটলান্টিকের তীর থেকে তিম্বাকতু পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মাইল এলাকায় মানসা মুসা রাজত্ব করেছিলেন। সুদানের অমুসলিম গোত্রগুলোর সাথে বারবার তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। শত্রুপক্ষের সেনারা বন্দি হলে তাদের পাঠানো হতো স্বর্ণের খনিতে। শ্রমিক হিসেবে। ২৫ বছরের শাসন শেষে ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে মানসা মুসা মারা যান।

সূত্র
----------
১। শিহাবুদ্দিন উমরি, শিহাবুদ্দিন আহমাদ বিন ইয়াহইয়া (মৃত্যু ৭৪৯ হিজরী), মাসালিকুল আবসার ফি মামালিকিল আমসার, ৪/৫৬,৫৭ (বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)
২। মাকরেজি, তকিউদ্দিন আহমাদ বিন আলি (মৃত্যু ৮৪৫ হিজরী), আয যাহাবুল মাসবুক ফি যিকরি মান হাজ্জা মিনাল খুলাফাই ওয়াল মুলুক, পৃ- ১৪০ (মাকতাবাতুস সাকাফাতিদ দিনিয়্যাহ, ১৪২০ হিজরী)
৩। শিহাবুদ্দিন উমরি, শিহাবুদ্দিন আহমাদ বিন ইয়াহইয়া (মৃত্যু ৭৪৯ হিজরী), মাসালিকুল আবসার ফি মামালিকিল আমসার, ৪/৫৮ (বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)
৪। ইবনু হাজার আসকালানি, শিহাবুদ্দিন আহমাদ বিন আলি বিন মুহাম্মদ (মৃত্যু ৮৫২ হিজরী), আদ দুরারুল কামিনাহ, ৪/৩৮৩, (বৈরুত, দার এহইয়াইত তুরাসিল আরাবি, ১৩৪৯ হিজরী)
৫। The Encyclopaedia Of Islam, part- ৬, page- 422 (E J Brill, 1991)

©ইতিহাস-কথন

কালাপাহাড়: এক মহান বাঙালি বীরের গল্প শাহী বাঙ্গালা সালতানাতে অসংখ্য সুদক্ষ সুলতান ও বীর সেনাপতির আগমন ঘটেছে। তবে আসাম থে...
04/05/2023

কালাপাহাড়: এক মহান বাঙালি বীরের গল্প

শাহী বাঙ্গালা সালতানাতে অসংখ্য সুদক্ষ সুলতান ও বীর সেনাপতির আগমন ঘটেছে। তবে আসাম থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত কিংবদন্তিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে বাংলার যে সেনানায়কের নাম, তিনি হলেন কালাপাহাড়। সাহিত্য কিংবা সিনেমা, লোকমুখে প্রচলিত মিথ বা কিংবদন্তি সব কিছু ছাপিয়ে যাঁর নাম আজও বিখ্যাত হয়ে রয়েছে যে মহান বীরের নাম, তিনি আর কেউ নন, তিনিই কালাপাহাড়। কে ছিলেন কালাপাহাড়? কেনই বা তার নামে এতো কিংবদন্তী তুল্য উপাখ্যান? আজ আলোচনা করবো সে কথাই, আলোচনা করতে চলেছি "বঙ্গ রক্ষক" কালাপাহাড় সম্পর্কে।

কালাপাহাড় বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী মতান্তরে নওগাঁ জেলার বীরজোয়ান গ্রামে সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভাদুড়ি বংশের সম্ভ্রান্ত বারেন্দ্রী ব্রাহ্মণ। তাঁর বাল্যনাম ছিলো রাজীবলোচন রায় মতান্তরে কালাচাঁদ রায়- ডাকনাম ছিলো রাজু। রাজু ভাদুড়ী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন কালাপাহাড়। তাঁর পিতা নয়নচাঁদ রায় ছিলেন বাংলার সুলতানের অধীনস্থ ফৌজদার। অকালে পিতৃহারা হয়ে রাজীবলোচন রায় ভাদুড়ি ভাগ্যের সন্ধানে সুলতান সুলায়মান শাহ'র সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মেধা ও সমরকুশলতায় সুলতান ও অন্যান্য পদস্থ কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উচ্চপদে নিযুক্তি লাভ করেন। ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ ছিলেন রাজু, নিয়মিত বিষ্ণুপূজা করতেন। সুদর্শন কালাপাহাড়ের সাথে সুলায়মান শাহ কারলানীর সুন্দরী কন্যা দুলারী বিবির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুলারী বিবি পিতার কাছে কালাপাহাড়কে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কালাপাহাড় শাহজাদীকে বিবাহ করার জন্য ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন ও মুহাম্মাদ ফর্ম্মুলী নাম ধারণ করেন। কালাপাহাড়ের সাথে দুলারী বিবির শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। তিনি অচিরেই সুলায়মান শাহ'র প্রধান সেনাপতি পদ লাভ করেন।

কালাপাহাড় মুসলিম হওয়ায় বর্ণবাদী ব্রাহ্মণ সমাজ তাকে সমাজচ্যুত করে। তিনি ইসলাম গ্রহণের পরও তাঁর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রাখবার চেষ্টা করলেও ধর্মান্তরের কারণে হিন্দু সমাজ তাঁকে পরিত্যাগ করে, বারংবার তাঁকে অপদস্থ হতে হয়।

এমতাবস্থায় নিজ জাতি কর্তৃক অপমানে জর্জরিত হয়ে শেষমেশ তিনি মায়ের পরামর্শে পদ-পদবী, ক্ষমতা, প্রিয়তমা নবপরিণিতা স্ত্রীর ভালোবাসা, রাজবংশের জামাতার সম্মান, জীবন-মৃত্যুর ভয়, শাস্তি সবকিছু উপেক্ষা করে প্রায়শ্চিত্তের জন্য পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে গমন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু জগন্নাথ ধামের পুরোহিতরা তাকে অত্যন্ত জঘন্য ভাষায় অপমান করে তাকে দেবালয়ে প্রবেশ করতেই দেয় নি। ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের দ্বারা অপমানিত-অপদস্থ হয়ে কালাপাহাড়ের মনে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে তীব্র বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে হিন্দু রীতি-নীতি সম্পর্কে তাঁর মনে জন্ম নেয় তীব্র ঘৃণা। তিনি প্রচণ্ড হিন্দু ধর্মবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন।

বাংলায় তখন চলছে পাঠান কারলানী রাজবংশের শাসন, তান্ডার সিংহাসনে আসীন সুলতান সুলায়মান শাহ্ কারলানী (রহ.) উড়িষ্যার সিংহাসনে তখন পরাক্রমশালী সম্রাট মহারাজ গজপতি হরিচন্দন মুকুন্দদেব। গজপতি হরিচন্দন মুকুন্দদেবের একের পর এক আক্রমণ আসছে দক্ষিণ ভারতীয় সালতানাত ও বাংলার উপর। তান্ডা দখলের অভিপ্রায়ে বারবার সপ্তগ্রামে আক্রমণও করেছেন উড়িষ্যারাজ। এইভাবে শাহী বাঙ্গালাহ্'র সার্বভৌমত্ব তখন উড়িয়া গজপতিদের কাছে হুমকির মুখে। বাংলা সালতানাত বারবার হুমকির মুখে পড়ছে উড়িয়া হিন্দুদের। উড়িয়াদের একের পর এক হানায় বাংলার মুসলিম সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলার মুসলিম শাসনকে রক্ষার জন্য মুশরিক শক্তির বিরুদ্ধে আবির্ভূত হলেন যে মহামানব, তিনিই কালাপাহাড়।

১৫৬৪-৬৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নেন ও উড়িষ্যার গজপতি হরিচন্দন মুকুন্দদেব গৌড় আক্রমণ করে গঙ্গার তীরে অবস্থিত সপ্তগ্রাম অধিকার করে নেন। ১৫৬৫ সালে ত্রিবেনীর যুদ্ধে পরাজিত হলেন সুলায়মান শাহ কারলানী, সন্ধি করতে বাধ্য হলেন মুকুন্দদেবের সাথে।

বাদশাহ আকবর যখন মেবারের শিশোদীয় রাজপুতদের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন, সুলায়মান শাহ ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা আক্রমণ করেন। মুকুন্দদেব কোটসামা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলে সুলায়মান শাহ্ কালাপাহাড়ের অধীনে ময়ূরভঞ্জের অরণ্যসংকুল পথে উড়িষ্যা আক্রমণ করতে সৈন্য পাঠান। এইসময় মুকুন্দদেব তার এক বিদ্রোহী সামন্তের হাতে নিহত হন, এর ফলে ওই বিদ্রোহী সামন্ত এবং রঘুভঞ্জ ছোটরায় উড়িষ্যার সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু উভয়েই কালাপাহাড় কর্তৃক পরাজিত ও নিহত হন।

১৫৬৮ সালে মহাপরাক্রান্ত সম্রাট গজপতি মুকুন্দদেবকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও পৃথিবী থেকে গজপতিদের সমূলে উৎখাত করে চিরস্থায়ীভাবে উড়িষ্যা বিজয় করেন কালাপাহাড়। এরপর ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে সম্রাট দাউদ শাহ্ কারলানীর পরাজয়ের পর্যন্ত আর কখনো উড়িষ্যা বাংলা সালতানাতের হাতছাড়া হয় নি।

উড়িষ্যা জয় করে কালাপাহাড় উপস্থিত হলেন পুরীর কুখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরে। দেবালয়ে প্রবেশ করেই পূর্বের স্মৃতি মনে পড়লো কালাপাহাড়ের। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে কী নিদারুণ যাতনা ভোগ ও অপমানের শিকারই না হতে হয়েছিলো তাঁকে। কেউ তাকে গ্রহণ করেনি। বাংলার ব্রাহ্মণ্যবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত মহাবীর কালাপাহাড়। প্রতিশোধ গ্রহণের তীব্র স্পৃহা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী বিভাজনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন কালাপাহাড়। জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করে গরুর চামড়ার বিশাল ঢোল হাতে নিয়ে বাজাতে লাগলেন। ঢোলের তীব্র শব্দে মন্দিরের বিগ্রহগুলো খসে খসে পড়তে লাগলো। বাঙ্গালীবীরের তীব্র ঢোলের আওয়াজে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির অন্তরাত্মা ক্রন্দন করে উঠলো। এককালে অপমানিত হয়েছিলেন যেই মন্দিরে, সেই জগন্নাথ মন্দির তছনছ করে দিলেন কালাপাহাড়।

তিনি কোচরাজ বিশ্বসিংহের পুত্র বিখ্যাত সমরনায়ক শুক্লধ্বজ কে পরাজিত ও বন্দি করেন এবং কোচরাজ্যসহ আসামের তাজপুর পর্যন্ত অধিকার করে বাঙলার অন্তর্ভুক্ত করেন।

কালাপাহাড়ের আসাম জয়ের সময় ইতিহাসের এক অভিনব পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে ১৩৫৬ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের কামরূপ জয়ের সময় আসামের কামাখ্যা মন্দিরের সীতাযোনীপূজারীরা ধারণা করেছিলো, তাদের পূজ্য সীতাযোনির কারণেই ইলিয়াস শাহ কামরূপ দখল করতে পারবেন না, তাদের সেই ধারণা সেদিন ব্যর্থ হয়েছিলো। কালাপাহাড়ের আসাম অভিযানেও তারা একই চিন্তা করলো যে, সীতাযোনিমূর্তির জন্যই কালাপাহাড় আসামের কিছুই করতে পারবেন না। এবারো পূজারীদের আশায় নিরাশ হতে হলো।

সুলায়মান শাহ-এর মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বায়াজিদ শাহ সিংহাসনে বসলেও আমির ওমরাহ তার অযোগ্যতার কারণে তাকে হটিয়ে কনিষ্ঠ পুত্র দাউদ শাহ কররানীকে সিংহাসনে বসান। দাউদ শাহ-এর সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন কালাপাহাড়।

রাজমহলের যুদ্ধ:
১৫৭৫ সালের তুর্কাইয়ের যুদ্ধে দাউদ শাহ্ পরাজিত হলে বিহার-বাংলা মুঘলদের অধীনে চলে যায়, কররানী দের নিয়ন্ত্রণে থাকে কেবল উড়িষ্যা। কিন্তু তান্ডায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে ৫০০০ সৈনিক ও ১৫ জন সেনাপতিসহ সুবাদার মুনিম খান মৃত্যুবরণ করলে এই সুযোগে কালাপাহাড় কে সঙ্গে নিয়ে উড়িষ্যা থেকে গৌড় পর্যন্ত প্রতিটি দুর্গ অধিকার করেন দাউদ শাহ। অন্যদিকে দাউদ শাহর ডানহাত ভাটির রাজা ঈসা খাঁ তাঁর শক্তিশালী নৌবহর দিয়ে হামলা চালিয়ে পূর্ববাঙলাকে মুঘল নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন।

আকবর খান জাহান হোসেইন কুলী খান তুর্কমান কে পাঠান দাউদ শাহকে দমনের জন্য। বাবা খান কাকশাল, ইসমাইল বেগ, জান বাহাদুর বাহসুতী, রাজা গোপাল, রাজা তোডরমল, শাহাম খান, কিয়া খান, মোজাফফর হোসেন খান তুর্বাতী প্রমুখ বড় বড় মানসাবদারদের নিয়ে ৯১ হাজার সৈন্যসহ রাজমহলের প্রান্তরে গঙ্গার তীরে উপস্থিত হয় মুঘল বাহিনী। দীর্ঘ আটমাস তোপযুদ্ধে কেউ কারোর ক্ষতি করতে না পারলেও ১১ই জুলাই রাতে বিশ্বাসঘাতক কুতলু খান লোহানি মুঘলদের জানিয়ে দেয়- সাইফ-ই-পাখতুন ফৌজ জুনায়েদ খান কররানী আজ প্রচন্ড গরমের কারণে সেনাশিবিরের বাইরে চারপায়ার উপরে ঘুমুচ্ছেন। সঠিক জায়গায় তোপ দাগে মুঘল ফৌজ। গোলার আঘাতে উড়ে যায় জুনায়েদ খান কররানীর একটি পা।

পরের দিন ১২ই জুলাই বিশ্বাসঘাতক শ্রী হরি ও কুতলু খান লোহানির প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে মুঘলরা গঙ্গানদী পেরিয়ে বাংলার বাহিনীকে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়। বাবা খান কাকশাল অতর্কিতে কালাপাহাড়কে আক্রমণ করে বসেন। কালাপাহাড় বাবা খান কাকশালের বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে দেন।

সবাই ভেবেছিলো প্রচন্ড আহত হওয়ায় জুনায়েদ খান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু সবাই হতবাক হয়ে দেখলো, একটি পা উড়ে যাবার পরেও জুনায়েদ হাতির পিঠে চড়ে লড়াই করছেন ও বিহারের মুঘল সুবাদার মোজাফফর হোসেন খান তুর্বাতীর বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে দেন। কিন্তু ক্রমশ প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হতে থাকলে হাওদাপৃষ্ঠে লুটিয়ে পড়েন জুনায়েদ, শহীদ হলেন সাইফ-ই-আফগান ফৌজ জুনায়েদ খান কররানী। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।

এমন ক্রান্তিকালে রণাঙ্গন ছেড়ে নিজেদের বাহিনীসহ চলে যায় কুতলু খান লোহানী ও শ্রী হরি বিক্রমাদিত্য। ফলে বাংলার বাহিনী ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে কালাপাহাড় নিজে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন ও সুলতান দাউদ শাহ কে পালানোর জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। বীরদর্পে হিন্দুস্তানী ফৌজের বিরুদ্ধে লড়াই করেন দাউদ শাহ।

আবুল ফজলের ভাষায়-
[সেই উগ্র সিংহ প্রবল বিক্রমে অনেককেই আহত ও নিহত করলেন। যদি তিনি কোনো অশ্বারোহীকে আঘাত করছিলেন, তাহলে ঘোড়াসহ সেই অশ্বারোহীকে তিনি দ্বি-খণ্ডিত করছিলেন। যখনই তিনি কাউকে আঘাত করছিলেন তার মাথা তার পায়ের কাছে পড়ছিলো।]

শেষে দাউদ শাহ পালাতে সম্মত হন। কিন্তু, প্রচণ্ড যুদ্ধে সুলতানের ঘোড়াও নিহত হয়েছিলো। তখন দাউদ শাহর এক চাকর দালিত বাদাখনী সুলতানকে নিজের ঘোড়া প্রদান করলো ও জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে সুলতান কোন পথে যাচ্ছেন তা মুঘলদের জানিয়ে দিলো। সুলতান বেশিদূর যেতে পারলেন না। একটি পার্বত্য নদীর কাছেই ধৃত হলেন সুলতান। তাঁকে হাজির করা হলো খান জাহানের সামনে। খান জাহান হোসেন কুলী খান তুর্কমানের প্রতি আকবরের নির্দেশ ছিলো দাউদ শাহ যদি আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নেন, তাহলে তিনি বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত হবেন।

দাউদ শাহকে খান জাহান বললেন- বাদশাহ আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নিন। কিন্তু বাংলার সার্বভৌম সম্রাট যিনি, তিনি কি আর হিন্দুস্তানের অধীনতা মানতে পারেন!

দাউদ শাহ উদ্ধতস্বরে জবাব দিলেন- "বাংলার বাদশাহ আসমানের বাদশাহ ব্যতীত অন্য কারো সামনে মাথা নত করে না।" দাউদ শাহের মাথা তীক্ষ্ণ তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলা হলো। দাউদের রক্তে বাংলার মাটি লাল হয়ে গেলো। বাঙ্গালার সার্বভৌমত্ব লুপ্ত হলো।

বাংলা সালতানাতের পতনের পর বাংলা নামেমাত্র মুঘল সাম্রাজ্যের প্রদেশে পরিণত হয়, ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহ। উড়িষ্যায় গাদ্দার কুতলু খানকে রাজত্ব দেয়া হয়, সুন্দরবনে গাদ্দার শ্রীহরি ও তার ভাই বসন্ত রায়কে রাজত্ব দেয়া হয়। বেশিরভাগ অংশ স্বাধীন হয়ে যায়। ভাটির রাজা ঈসা খাঁ বিদ্রোহের লাল ঝান্ডা উত্তোলন করেন। সকল ভূস্বামী ও আফগান দলপতিরা ঈসা খাঁর অধীনে যোগ দিতে থাকেন।
আকবর দ্বীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করে সরাসরি মুর্তাদ হয়ে গেলে আকবরের অনেক সেনানায়ক বিদ্রোহ করেন এবং ভাটিরাজ ঈসা খাঁর কাছে আশ্রয় নেন।

মাসুম খান কাবুলির সাথে আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগদান করেন কালাপাহাড়। আজীবন হিন্দুস্তানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন কালাপাহাড়। ১৫৮৩ সালের ৪ এপ্রিল বিহারে মুঘল বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহিদ হন কালাপাহাড়।

২০০৬ সালে উ_গ্র-বাদী হিন্দুরা বিহারে কালাপাহাড় ও তাঁর সহযোদ্ধাদের সমাধি ধ্বংস করে দেয়।

লেখক : রাজিত তাহমীদ জিত

তথ্যসূত্র:
(১) উড়িষ্যা-কামরূপ বিজয়ী বাঙালি বীর 'কালাপাহাড়' - সরদার আব্দুর রহমান
(২) তারিখ-ই-সালাতিন-ই আফগানা /তারিখ-ই-শাহী - আহমেদ ইয়াদগার
(৩) তারিখ-ই-দাউদী- আব্দুল্লাহ
(৪) তারিখ-ই-বাঙ্গালাহ- মুফতি সলিমউল্লাহ

Address

Chittagang Road, Shiddirganj
Narayanganj
1430

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when কাউছার সোহেল posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to কাউছার সোহেল:

Share