06/09/2024
পাহাড়ে_সাবধান!
বান্দরবনে এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আলিকদম খোলা আছে, বাকি জায়গাগুলোতে আপাতত পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই আলিকদমের ভ্রমণে হাইপ চলছে। আলিকদমের কিছু অনন্য সুন্দর জায়গা যেমন কির্সতং ও রুংরাং সামিট আজকাল অনলাইন ট্রাভেল গ্রুপগুলোর প্রধান প্রচারণা। সত্যি বলতে, এই রুটের কিছু কিছু জায়গা অদ্ভুত সুন্দর। তবে, এইসব সুন্দর স্থানকে সামনে রেখে কিছু লোভী ট্রাভেল গ্রুপ ফাঁদ পেতে বসেছে, আর কিছু অসচেতন ভ্রমণকারী সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়ছে।
আমরা পাহাড়কে বড় মনে করি, কিন্তু মাঝে মাঝে পাহাড় ট্র্যাকিংকে খুব হালকা ভাবে নেই। কিন্তু বাস্তবে, প্রতিটি ট্র্যাকিং রুটের পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভিন্ন হয়। তাই প্রত্যেকটি জায়গায় ট্র্যাকিং করার কৌশলও আলাদা হওয়া উচিত।
মূল কথায় আসি, বাংলাদেশে অন্যতম কঠিন একটি ট্র্যাকিং রুট হলো বান্দরবানের ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ খ্যামচং পাড়া রাস্তা। এই রুটের কঠিনতা মূলত যাত্রা পথে পানির উৎস না থাকার কারণে। আলিকদম থেকে যে পানিটুকু বহন করবেন, সেটিই পুরো ট্র্যাকিংয়ের জন্য যথেষ্ট হতে হবে। খুব কম মানুষই আছে, যারা এই রুটে ট্র্যাকিং করে পানি শেষ করেনি। যার পানি শেষ হয়ে যায়, সে বুঝতে পারে বাকি পথ কতটা মুশকিল।
বর্ষাকালে এই পথে ট্র্যাকিং বেশি হয়, আর এই সময়টাতে জোঁক এবং মশার অত্যাচার প্রচুর থাকে। এছাড়া, রাস্তায় আপ হিল–ডাউন হিল এর চক্রাকারে চড়াই–উতরাই পার করতে হয়।
অনেক গ্রুপ এই রুটে ইভেন্ট আয়োজন করে, কিন্তু তারা শুধুমাত্র রঙ মাখা লেখনী আর দৃষ্টিনন্দন কিছু ছবি দিয়েই ট্রাভেলারদের আকৃষ্ট করে। রুটের আসল চ্যালেঞ্জ এবং এর প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে কোন সঠিক আলোচনা হয় না। ফলে অনেকেই বিশ্বাস করে চলে যায়, আর পরে গিয়ে নিজের উপরই ক্ষোভ জমে কেন এলাম এখানে। উপভোগের বিষয়গুলো তখন শাস্তিতে পরিণত হয়।
এখন সময় সচেতন হওয়ার, হতে হবে একজন দায়িত্বশীল ভ্রমণকারীও। সচেতন ভ্রমণকারী হতে হলে যেখানে যাবেন, সেই জায়গার সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে যেতে হবে। বন্ধুরা যাচ্ছে, তাই আমিও যাচ্ছি, এমন স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে, আগে থেকেই পরিকল্পনা করে যান। এতে আপনি সুন্দর্য আরো গভীরভাবে উপভোগ করতে পারবেন। আর একজন সচেতন ভ্রমণকারী হিসেবে, আপনার দ্বারা পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
কিছু বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে:
১. ট্র্যাকিংয়ের জন্য আপনার শরীর ফিট কিনা।
২. নতুন বা অনভিজ্ঞদের জন্য বড় ধরনের ট্র্যাকিং রুট এড়িয়ে চলা। প্রথমে ছোট খাটো ট্র্যাকিং করে কনফিডেন্স বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে চন্দ্রনাথ পাহাড় হতে পারে হাতেখড়ি।
৩. ট্র্যাকিংয়ের আগে কিছুদিন ফিজিক্যাল এক্টিভিটি করে নিজেকে প্রস্তুত করা। এ ক্ষেত্রে সাইক্লিং, দৌড়ানো বা জগিং করে পায়ের জোর বাড়ানো।
৪. প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার আর ওষুধ সঙ্গে রাখা, বিশেষ করে স্যালাইন, প্যারাসিটামল।
এত কিছু লেখার কারণ হলো— সম্প্রতি আমার পরিচিত একজন ভ্রমণকারী এই রুটে ট্র্যাকিং করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও তথ্যের অভাবে তিনি প্রচণ্ড পানির অভাব এবং শরীরের অত্যাধিক ক্লান্তির কারণে বিপদে পড়েন।
মূল কথা— পাহাড়কে বড় মনে করি ঠিকই, তবে পাহাড় ট্র্যাকিংকে হালকাভাবে নেবেন না। যথাযথ খোঁজ নিয়ে, নিজের শারীরিক সক্ষমতা বুঝে পাহাড়ে যান। ভ্রমণকে উপভোগ করুন এবং পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয় এমন কাজ বর্জন করুন।
সচেতনতায়: এস আহমেদ ভোর
ছবি: ইন্টারনেট