30/08/2025
যুগের সাথে সাথে আপনার বিবেককে যদি আপনি পরিবর্তন না করতে পারেন সেটা আপনারই ব্যর্থতা। মনে রাখবন, আপনার স্ত্রী আপনার উত্তম সঙ্গী। তাই স্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করবেন সবসময়। আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করবো যা আপনার স্ত্রীর সুস্থতা এবং আপনার অনাগত সন্তানের জন্যঃ
❝সি সেকশন vs স্বাভাবিক প্রসব❞
বর্তমান আধুনিক যুগে এসে আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নয়তো আপনার স্ত্রী এবং আপনার অনাগত সন্তানের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। আগে বুঝেন,,,,
***Normal delivery বা স্বাভাবিক প্রসব সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে মায়ের মৃত্যু ঘটতে পারে। এ ধরনের মৃত্যুকে মাতৃমৃত্যু (Maternal mortality) বলা হয়। স্বাভাবিক প্রসবের সময় মা মারা যাওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:
🩺 প্রসবকালে মায়ের মৃত্যুর কারণসমূহঃ
1. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণঃ (Postpartum Hemorrhage – PPH)
>প্রসবের পর জরায়ু সঠিকভাবে সংকুচিত না হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে।
>এটি সবচেয়ে সাধারণ ও প্রধান কারণ।
2. প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও এক্লাম্পসিয়াঃ (খিঁচুনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা)
>গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, প্রোটিনুরিয়া, ও খিঁচুনির কারণে প্রসবের সময় বা পরেও মায়ের মৃত্যু হতে পারে।
3. প্রসবজনিত জটিলতাঃ (Obstructed labor)
>যদি শিশুর অবস্থান ঠিক না হয় বা দীর্ঘক্ষণ প্রসব আটকে থাকে তবে জরায়ু ফেটে যেতে পারে (Uterine rupture)।
>এতে মা মারাত্মক রক্তক্ষরণে মারা যেতে পারেন।
4. সংক্রমণঃ (Puerperal sepsis)
>প্রসবের সময় বা পরে জীবাণু সংক্রমণ হলে শরীরে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
5. অ্যানেস্থেশিয়া জটিলতাঃ (যদি অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে যায়)
>হঠাৎ সিজার করতে হলে অ্যানেস্থেশিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
6. অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এম্বোলিজমঃ (AFE)
>খুব বিরল হলেও অ্যামনিওটিক ফ্লুইড মায়ের রক্তে ঢুকে গেলে শ্বাসকষ্ট, হার্ট ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
7. রক্তস্বল্পতাঃ (Severe anemia)
>অনেক নারীর গর্ভকালীন সময়ে রক্তস্বল্পতা থাকে। প্রসবের সময় সামান্য রক্তক্ষরণও তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
***গর্ভাবস্থায় বাচ্চা (fetus) মায়ের গর্ভে সবসময় নড়াচড়া করে এবং সময়ের সাথে সাথে তার অবস্থান পরিবর্তন হয়। তবে শেষের দিকে (বিশেষ করে ৩৬ সপ্তাহের পর) শিশুর অবস্থান প্রসবের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
🤰 গর্ভের শিশুর সাধারণ অবস্থান (Fetal Positions)
1. Cephalic / Head-down Position (মাথা নিচে) ✅
>সবচেয়ে স্বাভাবিক ও নিরাপদ পজিশন।
>শিশুর মাথা জরায়ুর নিচের দিকে থাকে, অর্থাৎ প্রসবপথের দিকে।
>এর ভেতরে আবার কয়েক ধরনের ভ্যারিয়েশন আছে:
i) Anterior (OA): মাথার পিছন মায়ের সামনের দিকে থাকে (সবচেয়ে ভালো ও সহজ প্রসবের জন্য)।
ii)Occiput Posterior (OP): মাথার পিছন মায়ের পিছনের দিকে থাকে, এতে প্রসব দীর্ঘ ও কষ্টকর হতে পারে।
2. Breech Position (পা বা নিতম্ব নিচে) ❌
>শিশুর মাথা ওপরে আর নিতম্ব বা পা নিচে থাকে।
>এ অবস্থায় স্বাভাবিক প্রসব কঠিন হয়, অনেক সময় সিজার করতে হয়।
Breech-এর ধরন:
i)Frank Breech: দুই পা সোজা ওপরে, নিতম্ব নিচে।
ii)Complete Breech: নিতম্ব নিচে, পা ভাঁজ করে থাকে।
iii)Footling Breech: এক বা দুই পা নিচে থাকে।
3. Transverse Lie (আড়াআড়ি শোয়া) ❌
>শিশু জরায়ুর ভেতর আড়াআড়ি থাকে, মাথা বা পা কোনোটাই নিচে থাকে না।
এ অবস্থায় স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয়, অবশ্যই সিজার করতে হয়।
4. Oblique Lie (তির্যকভাবে শোয়া)
>শিশু তির্যক অবস্থায় থাকে, না পুরোপুরি আড়াআড়ি, না পুরোপুরি সোজা।
>সময়ের সাথে সাথে এটি সাধারণত head-down বা transverse-এ পরিবর্তিত হয়।
---
🩺 মনে রাখবেন
গর্ভের বাচ্চা ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত নড়াচড়া করে বিভিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণত ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ শিশু মাথা-নিচে (Head-down) অবস্থায় চলে আসে।
যদি শেষের দিকে breech বা transverse থাকে, তবে ডাক্তার বিশেষ ব্যবস্থা নেন (যেমন External Cephalic Version বা সিজারিয়ান)।
***স্বাভাবিক প্রসবের আগেরটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গর্ভফুল কোথায় থাকলে ভালো কিংবা খারাপ।
🩺 গর্ভফুল কোথায় থাকলে সুবিধা হয়?
✅ জরায়ুর উপরের দিকেঃ (Fundal / Upper Segment Placenta)
>গর্ভফুল যদি জরায়ুর ওপরের দিকে বা পাশের উপরের দিকে থাকে, তাহলে সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ ধরা হয়।
>এতে প্রসবপথ (Cervix) বাধাহীন থাকে এবং স্বাভাবিক প্রসব সহজ হয়।
✅ জরায়ুর পাশেঃ (Anterior বা Posterior wall, কিন্তু উপরের দিকে)
>সামনে বা পিছনে থাকলেও যদি ওপরের দিকে থাকে, সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
>মা কিছুটা বেশি নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন (বিশেষ করে যদি সামনে থাকে)।
---
❌ অসুবিধা জনক অবস্থানঃ
1. Placenta Praevia : (গর্ভফুল নিচের দিকে, জরায়ুর মুখ ঢেকে ফেলে)
>প্রসবপথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
>এতে স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হয় না, অনেক সময় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়।
এ ক্ষেত্রে সাধারণত সিজার করতে হয়।
2. Low-lying Placenta: (গর্ভফুল নিচে কিন্তু পুরো মুখ ঢাকে না)
>গর্ভাবস্থার শুরুতে অনেকের Placenta নিচে থাকে, তবে গর্ভকাল বাড়ার সাথে সাথে সাধারণত ওপরে উঠে যায়।
>যদি শেষ পর্যন্ত নিচেই থাকে, তখন প্রসব জটিল হতে পারে।
---
📌 সারসংক্ষেপঃ
>সবচেয়ে ভালো অবস্থান: জরায়ুর উপরের দিকে (Fundal বা Upper segment)।
>ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান: নিচে বা জরায়ুর মুখ ঢেকে থাকলে (Placenta Praevia)।
পরিশেষেঃ আমাদের অনভিজ্ঞের কারনে অনেক সময় স্বাভাবিক প্রসবের সময় মা ও শিশু/ মা / শিশু মারা যায়। যেটা শতাব্দীর পর শতাব্দী হয়ে আসছে। পোস্টটা লিখার উদ্দেশ্যে ওইসকল পুরুষদের জন্য, যারা এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। তখন তারা হয়তো ধায়ী মা/ গাইনি / ডাক্তারের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি সতর্ক না হউন সেটা একান্তই আপনার বিষয়। তাই আপনার স্ত্রীর প্রেগ্ন্যাসির জার্নিতে অবশ্যই আপনার স্ত্রীর বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। ৯ মাসে অন্তত ৩ বার আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করান এবং একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন কি করবেন। কারণ, ওই মুহূর্তটা আপনার স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সোর্সঃ গুগল এবং ChatGPT ❤️❤️❤️