18/10/2024
PR সিষ্টেম দেশের অখন্ডতার জন্য হুমকি স্বরূপ
===========================
প্রপোশনাল রিপ্রেজেনটেটিভ (PR) পার্লান্টারিয়ান সিষ্টেম কি?
আমি খুটিনাটিতে না গিয়ে মোটাদাগে এর সংজ্ঞা দেই, এই সিষ্টেমে নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের এলাকা ভিত্তিক একক নির্বাচন হয়না। মানে আলাদা আলাদা আসনে নির্বাচন হয় না। নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলের প্রতীকের ওপর। সারা দেশের জনগন ভোট দেবে রাজনৈতিক দল গুলোর নির্বাচন প্রতীক ধানের শীষ, নৌকা, লাঙ্গল, মশাল এবং অন্যান্য মার্কায় এবং নির্বাচন শেষে সমস্ত ভোটকে আনুপাতিক হারে (শতকরা) ভাগ করা হবে। উদাহরণ দিলে বুজতে সুবিধা হবেঃ
ধরুন সারা দেশের ভোটার সংখ্যা ৭ কোটি। এর মাঝে৷ ভোট দিল ৪ কোটি। এর মাঝে বিএনপি পেল দেড় কোটি, আওয়ামী লীগ এক কোটি, জামাত পঞ্চাশ লাখ, ইসলামিক জোট পঞ্চাশ লাখ, জাতীয় পার্টি গুলো ত্রিশ লাখ, বাম দল ২০ লাখ। আনুপাতিক হিসাবে বিএনপি তখন ৩০০ আসনের মাঝে পাবে ৩৭.৫% সীট মানে ১১১ টি, আওয়ামী লীগ ২৫% মানে ৭৬ টি, জামাত ১২.৫% মানে ৩৮, ইসলামিক জোট ১২.৫% মানে ৩৮, জাতীয় পার্টি ৭.৫% মানে ২৩ টি এবং বাম দল ৫% মানে ১৫ টি।
এখন এই হল সামনের নির্বাচনের PR নির্বাচনের একটি উদাহরন। এখানে কোন দল যদি ৫% এর নীচে ভোট পায় তবে তারা কোন সীট পাবে না, তাদের ভোট আনুপাতিক হারে যারা ৫% এর ওপর ভোট পেয়েছে তাদের মাঝে বিতরন করা হবে।
আবার PR নির্বাচনে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর অপশান থাকছে না। যার কারনে কেউ স্বাতন্ত্র্য প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এটাও কি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে?
এই নির্বাচনে গাল ভরা কিছু সুন্দর কথা আছে যা এই মুহুর্তে আমাদের ইন্টেরিম সরকার এবং বাকী সব দল প্রচার করে যাচ্ছে যেন PR সিষ্টেমে নির্বাচন হয়, তাতে তাদের লাভ কি তা তো বুজতেই পারছেন, যে জামাত একক নির্বাচন করে কোন বার ৩ টার বেশি সীট পায়নি তারা তাদের সর্বোচ্চ ভোট কালেক্ট করে ৪০ বা ততোধিক সীট পাবে। ওদিকে আওয়ামী লীগের মত গনহত্যাকারী দল আবার ক্ষমতায় ও আসতে পারে নিদেনপক্ষে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আসবে যদি না তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
এবার আসুন খুব সংক্ষেপে এই সিষ্টেমের অপকারিতা দেখিঃ
১। ধরি কিছু ছোট দলের সাথে কোয়ালিশন করে বিএনপি ক্ষমতায় গেল, সেক্ষেত্রে কি বিএনপি পারবে তড়িৎ কোন ডিসিশন নিয়ে জনগনের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে?
২। ছোট ছোট দল গুলো সরকারে গিয়ে তাদের মনমতো আইন বা ডিসিশন না হলে বড় দল টিকে এক রকম জিম্মি করে ফেলতে পারে, যেটা ইজরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে ঘটে। এখানে চরমপন্থী ধর্মীয় দল গুলোর মতামত প্রায়ই মেনে নিতে হয়।
৩। এক্ষেত্রে মৌলবাদী জামাত অথবা হিন্দু ধর্মীয় দল করে তারা তাদের সর্বোচ্চ ভোট কাউন্ট করে খুব সহজেই সব সময় সরকারের অংশীদার হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে জার্মানির Free Democratic Party ( FDP) নাম টানা যায়, যারা কোন দিন ১২% এর বেশি ভোট না পেয়েও ১৯৪৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কোয়ালিশন করে সরকারে থেকে গেছে।
৪। স্বৈরশাসক প্রতিহত করার দোহাই দিয়ে ( পড়ুন BNP ঠেকানোর জন্য) PR সিস্টেমের গুন গান গেয়ে ইসলামিক মৌলবাদী, হিন্দুত্ববাদ অথবা এথনিক গোষ্টিগুলো কে একট্টা হয়ে ক্ষমতায় যেতে উৎসাহিত করা, কারন এদের পক্ষে সব ভোট কাউন্ট করা রাজনৈতিক আদর্শিক দল গুলোর থেকে অনেক সহজ। উদাহরণ হিসাবে জামাত সমর্থকদের ৮০%+ ভোট পড়ে বিপরীতে বিএনপির অর্ধেক ও পরে না।
৫। PR সিষ্টেম চালু করার জন্য যে পরিমান গন সচেতনতার দরকার আমাদের মত অনুন্নত দেশে তার ১০% নেই।
৬। একটা ছোট দল কে যাদের সারা দেশে প্রচলিত নিয়মে ৩০০ আসন তো দূরে থাক ১০০ আসনেও প্রার্থী দেবার ক্ষমতা নেই, শুধুমাত্র সিষ্টেমের কারনে তারা সরকারে গিয়ে তারা যে ক্ষমতা হাতে পাবে তাতে জাতীয় ঐক্য যে কোন সময় ভুলুন্ঠিত হতে পারে।
এমন অসংখ্য পয়েন্ট তুলে ধরা যাবে PR সিস্টেমের বিরুদ্ধে যা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে দেবে। শুধু মাত্র BNP ঠেকানোর জন্য এতদিনের প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশ কে হুমকির মুখে ফেলে দেবার অধিকার কারো নেই।
এর থেকে বিএনপি প্রস্তাবিত দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সরকার এই মুহুর্তে জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়।