Abu Nassar

Abu Nassar An expert Digital creator, Content Writer, digital Marketer.

27/12/2023

book; baitullahr musafir writer; abu taher mesbah

25/08/2023

দুপুরের প্রথম প্রহর। আরবের চকচকে আকাশে আগুনের মত জ্বলছে সূর্য। তাঁর দিকে চোখ রাখা যায় না। পথ ঘাট ফাঁকা। আশেপাশে নেই পাখিদের কিচিরমিচির ছাড়া অন্য কোন যান্ত্রিক আওয়াজ। রাস্তার দু ধারে সবুজ শ্যামল গাছের সারি। গাছগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাতেই আছে একটি বা দুটি করে পাখির বাসা। বনের তৈরী এসব আবাস দেখে তিনি বারংবার মুগ্ধ হোন। গাছগুলোর অধিকাংশই ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। ডাল-পালাগুলো ছড়িয়েছ অপ্রশস্ত রাস্তার অন্য পাশের গাছগুলো পর্যন্ত। ফলে রাস্তা জুড়ে তৈরী হয়েছে ঘন ছায়া। মাঝে মাঝে পাতার ফাকে গড়িয়ে পড়ে রোদ। উত্তরের হালকা হাওয়া প্রায়ই এসে পাতাগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

নিঃশব্দে হেঁটে চলেন তিনি। সামনে কিছুটা ঝুঁকে, দৃষ্টি অবনত রেখে এবং থেমে থেমে। এমনভাবে হাঁটেন তিনি, যেন কোন উঁচু পাহাড়ে বইছেন অথবা একের পর এক সুউচ্চ সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে ওপরে উঠছেন। আশেপাশে সেভাবে তাকান না তবে অন্তরদৃষ্টি দিয়ে প্রতিটি দিকেই ফেলছেন নজর।
তাঁর চেহারা চকচকে যেন তাতে ফুঁটে উঠেছে পৃথিবীর সমস্ত আনন্দের প্রদীপ। প্রস্ফুটিত আখিযুগলে জগৎ পরিমান হিল্লোল। তিনি হাসছেন না, অথচ মনে হয় যেন তিনি হাসছেন।
সৌন্দর্যের প্রতীক তাঁর চেহারায় ঝিলিক দেয়। ঢলঢলে পশমী জামার ওপর জড়ানো কালো চাদর। উত্তপ্ত যমিনের ওপরে এক জোড়া ফিতাওয়ালা স্যাণ্ডেল পড়ে আছেন তিনি।

হঠাৎ আগমন অনুভব করলেন তিনি কোন মানুষের। তাঁর পাশেই কেউ হাঁটছে?
হ্যাঁ, তাই তো। তিনি আগন্তুকের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তারপর মুচকি হাসলেন। যেন, এই অচেনা লোকটাকে তিনি বহুকাল ধরে চেনেন।

তাঁর হাসি দেখে অকপটে হেসে দিলো অচেনা বেদুইন লোকটা। দৃষ্টিতে নেই কোন বিস্ময়। বুঝে গেছে, বাকি পথটায় সঙ্গী হিশেবে এ সুদর্শন মানুষটা মন্দ হবে না। একাকিত্ব ঘুঁচিয়ে তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন, এর আগে ঠিক কবে তিনি এরকম রূপবান কোন পুরুষ দেখেছেন?
চেহারা থেকে যেন আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একটা অপরূপ সুগন্ধির আবেশে রাস্তাটা ম ম.. করছে। নিশ্চয়ই এ লোকটা হবে মাক্কার মর্যাদাশীল কোন ব্যাক্তি।

ধূলোমলিন আগন্তুক চেহারা মোছেন নিজের জামার আস্তিনে। খানিক পর পথিকের দিকে তাকিয়ে আবারও হাসি দিয়ে প্রথম প্রশ্ন করেন— 'আপনি কি এ শহরের স্থানীয়?'

পথিক এক কদম সামনে রেখে সায় দেয়— 'জ্বি। আমি এই শহরেরই বাসিন্দা। '

আবারও কিছুটা সময় নিঃশব্দে পাশাপাশি হাঁটে তাঁরা। আগন্তুক কি প্রশ্ন করবে তা খুঁজে পাচ্ছে না। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আজ অব্দি কারো সাথে কথা বলতে গিয়ে তাঁর এমন অনুভব হয় নি। এবারই প্রথম কারো সাথে কথা বলতে তাঁর ইতস্তত লাগছে।

অনেক ভেবে সে ঠিক করলো সে এই মুহুর্তে মাক্কার সবচেয়ে বিস্ময়কর খবরটা নিয়ে এই লোকটার সাথে আলোচনা করবে। কারণ, এই লোকটাকে দেখেই মনে হচ্ছে তিনি সত্যবাদি।
সে আলতো স্বরে প্রশ্ন করে— 'আপনি কি ঐ লোকটাকে চেনেন, যে নিজেকে নবী দাবি করেছে?'

পথিক তাঁর দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকালো কিন্তু বললো না কিছুই।
আগন্তুক বলে চললো— 'কি যেন নাম শুনেছিলাম লোকটার!' লোকটা স্মরণ করার চেষ্ট করে বললো— 'হ্যা, মনে পড়েছে। তাঁর নাম মুহাম্মাদ। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে। দেখুন কি হাস্যকর কাণ্ড, যে লোকটা এই সেদিন মরুভুমিতে মেষ চড়িয়েছে সে নাকি হয়েছে নবী! সে নাকি আসমান থেকে জিব্রিল নামক ফেরেশতা থেকে ওহী পায়! আর..আর... আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সে নাকি এক রাতে হেরেম থেকে আকসায় সফর করে এসেছে! ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কী? হা..হা...হা....'

পথিক তবুও কিছু বলে না। নিঃশব্দে হেঁটে চলে আগন্তুকের সাথে।
যোগ্য সঙ্গী পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত হয় আগন্তুক। গল্প করার হোশ বেড়ে যায় তাঁর। সে রাগত স্বরে বললো— 'আমি ওই লোকটাকে কখনও দেখি নি। তাঁর বাবাকেও দেখি নি। তবে তাঁর এক চাচাকে দেখেছি। তাঁর নাম আবু লাহাব। সে আমাকে বলেছে যে, আমি যেন কোনভাবেই এই ধাপ্পাবাজ লোকটার ফাঁদে না পড়ি। এই লোকটা নাকি বিশৃঙ্খলা তৈরী করছে আরব পরিবারগুলোতে। পিতা থেকে পুত্রকে কেঁড়ে নিচ্ছে সে। মাক্কায় ছড়িয়ে দিচ্ছে তাঁদের ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ।'

নীরবে বেদুইনের শ্রবন করে পথ চলছে পথিক। তাঁর চেহারায় কোন প্রতিক্রিয়া নেই।

আগন্তুক বলেই চলেছে— ' কেউ কেউ তাকে কবি বলে। কেউ আবার যাদুকর বলে। কেউ বা তাকে গণক বলে। তবে সব শুনে আমার মনে হয়, এই মুহাম্মাদ লোকটা আসলে পাগল। এবং অতি অবশ্যই সে একটা খারাপ লোক। আর আরবের লোকেরা প্রাণপন চেষ্টা করছে এই পাগলের পাগলামি থেকে নিজেদের হেফাযত করতে। নিঃসন্দেহে আরবের লোকগুলো সৎ। খুব ভালো।'

এতক্ষনে সবুজ ছায়া পেড়িয়ে আবার খোলা আকাশের নীচে হাঁটতে লাগলো তাঁরা। পিতৃ গোত্রের প্রশংসা শুনে কিছুটা খুশি হয় পথিক, তাই মুচকি হেসে আগন্তুককে ধন্যবাদ দেয়।

পাল্টা হেসে তাঁর ধন্যবাদ সাদরে গ্রহণ করে বেদুইন। এবার সে পথিকেরই প্রশংসা করতে লাগলো— 'তবে আপনিও খুব ভালো মানুষ। বরং, আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি তাঁদের চেও ভালো। আমি আজ পর্যন্ত আপনার মতো সুদর্শন কাউকে দেখিনি। আপনার আচার-ব্যাবহার সত্যই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার মন বলছে আপনি নিশ্চয়ই কুরাইশ গোত্রের?'

প্রশ্নের জবাবে আবারও মন ভোলানো হাসি দিয়ে পথিক জবাব দেয়— 'জ্বি। আমার গোত্র কুরাইশ।'

লোকটি বললো— তাহলে তো আপনি নিশ্চয়ই ওই ভণ্ড লোকটাকে চিনবেনই। যাহোক, আমি কি আপনার পরিচয়টা জানতে পারি?
হয়তো আমরা বন্ধু হয়ে কোন ব্যাবসা করতে পারবো এর মাধ্যমে!'

আকস্মাৎ পথিক হাঁটা থামিয়ে দেয়। এক পলকে ঘুরে দাঁড়ায় আগন্তুকের দিকে। সরল কণ্ঠে জবাব দেয়— 'আমি মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।'

কোন বিভৎস স্বপ্ন দেখার পর মানুষ যেমন ঘুম থেকে চমকে ওঠে, ঠিক সেভাবেই চমকে উঠলো আগন্তুক বেদুইন। শরীরের ভেতরে রক্তের শীতল স্রোত বয়ে যায়। লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায় মুহূর্তেই। এক মুহুর্তের জন্য সে বিশ্বাস করলো না নিজের কানকে। এটা সে কি শুনেছে!
এটা কি করে হয়?
তার মানে, সে এখন দাঁড়িয়ে আছে, মাক্কার সবচেয়ে খারাপ লোকটার সামনে?
অথচ, এই লোকটাকেই সে এতক্ষন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জেনেছে।
তাঁর চাচা তাকে পাগল বলে প্রচার করে, অথচ সে তাঁর সামনে একজন শ্রেষ্ঠ বোধসম্পন্ন মানুষকে দেখেছে।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে সে আবারও প্রশ্ন করে— 'কে আপনি! নিশ্চয়ই আমি ভুল শুনেছি। আসলেই আপনি কে??'

নির্বিকার স্বরে নবিজি বললেন, 'আশহাদু আন- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ'

ঝকঝকে রোদের নীচে তখনও দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে আগন্তুক লোকটা দেখছে নবিজিকে। তাঁর অন্তর মুহুর্তেই চিনে নিলো সত্যের কাণ্ডারিকে। সে বুঝে গেছে, কোন ঝাণ্ডার তলে সমবেত হলে সেও পান করতে পারবে স্বর্গীয় সুরা।
সে কোন কবির কবিতা শোনে নি।

[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]

আব্দুর রহমান
০২.৪.২০২০

07/03/2023

বাইতুল্লাহর মুসাফির- আবু তাহের মেছবাহ্।
৫ম অংশ।
“দশদিন পাকিস্তানে”

ইসমাঈল আলাইহিসসালাম এর সন্তান 'দুম' বা 'দুমান' এর দিকে যুক্ত করে একটি এলাকার নামকরণ করা হয় 'দুমাতুল জান্দাল' তথ্যসূত্র: ...
26/02/2023

ইসমাঈল আলাইহিসসালাম এর সন্তান 'দুম' বা 'দুমান' এর দিকে যুক্ত করে একটি এলাকার নামকরণ করা হয় 'দুমাতুল জান্দাল'

তথ্যসূত্র: মু'জামুল মা'আলিমিল জুগ্রাফিয়্যাহ ফি আস-সীরাতিন নাবাওয়িয়াহ।

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ভাই হিলারিয়ান হেজি যিনি ছিলেন একজন ক্যাথলিক যাজক। তিনি ইসলাম গ্রহন করেছেন। একটি ব্লগে তিনি নিজের ...
25/02/2023

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ভাই হিলারিয়ান হেজি যিনি ছিলেন একজন ক্যাথলিক যাজক। তিনি ইসলাম গ্রহন করেছেন।

একটি ব্লগে তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণের গল্প বলেছেন।
তিনি নিজের নতুন নাম রেখেছেন, সাঈদ আব্দুল লাতীফ।
আল্লাহ তাকে দ্বীনের উপর অটল রাখুন🤲

24/02/2023

জুমার এই শুভ্র দিনে আসুন সবাই প্রিয়নবির ﷺ ওপর বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করি।

23/02/2023

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) একদিন তারুণ্যের সময়ে মদ পান করলেন। করার সময় হয়তো তাঁর কাছে এটা তেমন বড় অপরাধ মনে হয় নি। কারণ, তাঁর বাবা উমার ইবনুল খত্তাব তখন মুসলিম জাহানের খলিফা। ইসলামি বিশ্বের শাসক।
নেতার ছেলে একটু আধটু ভুল করলে তেমন কিছুই হবে না। এটাই হয়তো ছিলো তাঁর ভাবনা।
মদ খেয়ে মাতাল হয়ে তিনি ধরা পড়লেন মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল আ'সের (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) কাছে।
আমর ইবনুল আ'স (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহ) তাৎক্ষনাৎ আব্দুল্লাহকে শরয়ি শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন।
আব্দুল্লাহর যখন নেশা কেঁটে গেলো, তখন সে তাঁর কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হলো।

খলিফার ছেলে হওয়ার কারণে আব্দুল্লাহকে সাধারণ নাগরিকদের মতো খোলা মাঠে জনসম্মুখে বেত মারাটা আমরের কাছে পছন্দ হলো না। এতে খলিফার ইজ্জতে আঘাত লাগবে। তাই আব্দুল্লাহকে একটি বদ্ধ ঘরে নিয়ে শরয়ি সাজা প্রদান করা হলো।

ইতোমধ্যে এ খবর চলে এলো খলিফার কানে। আমরের এহেন দুঃসাহস দেখে খলিফা থ মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। পরক্ষনে তিনি চিঠি লিখলেন মিসরের গভর্নরের উদ্দেশ্যে। চিঠির একটি অংশে তিনি লিখলেন,
'আমর! তোমার স্পর্ধা দেখে আমি রীতিমত হতবাক হয়ে গেছি। তোমার রাজ্যে উমারের ছেলে আব্দুল্লাহ একজন সাধারন নাগরিকের অন্তর্ভূক্ত। অথচ তুমি তাকে জনগন থেকে আলাদা করে দিলে?
তোমার চেয়ে যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে মিসরের আমির নিযুক্ত করলাম, আর তুমি এই তাঁর প্রতিদান দিলে?
কেন তুমি আব্দুল্লাহকে সাধারন জনগনের মতো খোলা মাঠে বেত্রাঘাত না করে বদ্ধ ঘরে গোপনে করলে?
আব্দুল্লাহ খলিফার ছেলে বলে! কিন্তু ইসলাম তো এসব ভেদাভেদ দেয় নি।'
এই পত্র পাওয়ার সাথে সাথে আব্দুল্লাহকে তুমি আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। তাকে তাঁর কৃত জঘন্য কর্মের শাস্তি পেতেই হবে।'

নির্দেশ মত আব্দুল্লাহকে তখনই মাদিনায় পাঠিয়ে দিলেন আমর ইবনুল আ'স (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু)।
মাদিনায় দ্বিতীয়বার আব্দুল্লাহকে মদপানের শাস্তি জনসম্মুখে ভোগ করতে হলো।

(আব্দুর রহমান)

20/02/2023

جزر
বা (Island) শব্দ দ্বারা বুঝানো হয় একটি শুষ্ক ভূখণ্ড, যার চারিদিকে পানি আছে। যেমন: সাইপ্রাস, সিসিলি, কিউবা দ্বীপ।
شبه الجزير
বা (Peninsula) বলা হয় এমন ভূখন্ডকে যার তিনদিকে জ্বল এবং একদিকে স্থল থাকে। যেমন, আরব অঞ্চল। এর পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ তিনদিকেই সাগর।

19/02/2023

আরবরা তাদের বাইরের দুনিয়াকে عظم (আযম) বলে। এর অর্থ হলো বোবা বা জড়তার অধিকারী।

নিজেদের তারা عرب(আরব) বলে। শব্দমূল إعراب (ই'রাব)। এর অর্থ হলো নিজের কথা বাগ্মিতার সাথে অন্যদের কাছে পৌঁছানো।

17/02/2023

নেয়ামতের ভাণ্ডারে থাকি বলেই হয়তো তার গণনা করতে পারি না। চারিদিকে এত এত নেয়ামত থাকা সত্ত্বেও স্বভাবগতভাবে আমরা বেইমান।
গফুর ও রাজ্জাক যেমন বলেন,

إِنَّ ٱلْإِنسَٰنَ لِرَبِّهِۦ لَكَنُودٌ
নিশ্চয়ই মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।

সেদিন এক ভাইয়ের পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে একটি গ্রুপে। সেখানে তিনি প্রকাশ করেছেন তার হৃদয়ে জমে থাকা আফসোসের আর্তনাদ। সেই আর্তনাদ যেন আমার হৃদয়েও এমন কিছু ভাবনা রেখে গেলো, ইচ্ছে হলো হাজার সিজদাহ দেই দয়াময়ের পায়ে। কিন্তু অশান্ত মনেও উঁকি দিলো সেই চিরন্তন বাক্যটি— কোন শুকরিয়াই আমার রবের কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য বা তার দয়ার মহত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ঠ নয়। তিনি আমাকে এত দিয়েছেন যে, আমি তা ভাবিও না, জানিও না, জানতে চেষ্টাও করি না।
তবুও বেলাশেষে অভিযোগটি করে ফেলি— কী পেয়েছি জীবনে? কী দিয়েছো তুমি আমাকে?

সত্যিই আমরা বেইমান।

সেই ভাইটি জীবিকার তাগিদে গিয়েছেন ডেনমার্কে। চাকরি পেয়েছেন সম্ভবত রেষ্টুরেন্ট সেকশনে। বিদেশের (বিশেষ করে কাফিরদের ভূমিতে) রেষ্টুরেন্টের পরিবেশ বোধকরি এখানে বর্ণনা করে দিতে হবে না। কাজের খাতিরেই তাকে বিয়ার কিংবা হুইস্কি পরিবেশন করতে হয়।

ভাইটির কিন্তু সেটা নিয়ে বহু আফসোস ও দুঃখ গোচর হলো। আসলে আমরা চাইলে এখান থেকে হাজার কথা বলে ফেলতে পারবো। কিন্তু জীবন যে কত জটিল আর কত কঠিন, তা পরিস্থিতির মুখোমুখি না হলে কেউই বুঝবে না।
ভাইটি একটি হালাল চাকরি তালাশ করছে তারপরও।

ভাইটি জানালেন, বুঝ হওয়ার পর কোনদিনও তার পরপর ২জুমুআর নামায মিস হয় নি। কিন্তু ডেনমার্কে যাওয়ার পর থেকে তার জুমুআর নামায মিস হতে থাকে। মসজিদ পাওয়া মুশকিল, সময় পাওয়া যায় না, অমুসলিমদের পরিবেশ তাকে অনেকটা বেধে ফেলছে।

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বললেন, 'দিন দিন যেন আমি আমার রব হতে যোজন যোজন দূরে সরে আসছি। আমি যেন আমার শিকড় থেকে আল্লাহর সাথে সংযোগের সবগুলো শিকড় কেঁটে ফেলছি'
হায়, কি করুন আফসোস! হায়, কি বেদনা বিধুর নীরব ক্রন্দন!
পিতা-মাতাহীন যে হয়েছে, তাকে না হয় বললাম এতীম। রবহীন যে হয়েছে, তাকে কোন শব্দের সাহায্যে চিহ্নিত করবো।
যার রব নেই, তার আর কী আছে?
তাকে কী সর্বহারা বলা যায়!

আফসোসের ওপরে আরও আফসোসের কথা এই, যখন তিনি বললেন— 'ডেনমার্কে আাসার পর থেকে মাসের পর মাস ধরে এখানে এমনকি আযানও শুনতে পাই না।'
'আযান শুনতে পাই না' কথাটুকু পড়তেই এমনকি লিখতে গিয়ে দেহটা কেঁপে উঠলো।
৫ওয়াক্তের আযান তো আমরা ঠিকই শুনি।
অথচ কোনদিনই মনে হয় নি যে, হঠাৎ কোন একদিন পরিস্থিতির এমন উপহাসের মুহূর্তে যদি আমরাও পড়ে যাই! যদি আমার কানেও ভেসে না আসে মসজিদের আল্লাহু আকবার ধ্বনি, তখন কেমন লাগবে? কেমন হবে সেই দিনটি! আমার সেই দিনটিও কি আজকের দিনগুলোর মতই হেলা-অবহেলায় কিংবা খেলা-ধুলোয় গুজরান হবে?
ভাবতেই শিউরে উঠলো শরীর।
(অথচ যারা জীবিকার তাগিদে প্রবাসে যাচ্ছে, তারা প্রতিনিয়ত এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।)

জবাব পেলাম না। যেন হৃদয় মরে গেছে। জীবনে সামান্য কিছু চাওয়া পূর্ণ না হওয়ায় হতাশার কালো মেঘের ছায়া হৃদয়ের আশার বাগানকে ধূসর প্রান্তরে পরিণত করে দিয়েছে।

সত্যিই আমরা অকৃতজ্ঞ।

কোন একদিন নূরুদ্দীন জিনকী (রহিমাহুল্লাহ) রবের দরবারে বলেছিলেন, 'আমি তোমার কুকুর'

আমিও কতবার চাইলাম তার মত করে বলতে, কিন্তু পারি নি।
কুকুর তো প্রভুর অবাধ্য হয় না, আমি তো হই।
এর মানে হলো, আমি কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট।

তবুও ভেতরের অপবিত্রতাকে ঢেকে সুগন্ধির প্রলেপ লাগিয়ে আমি বলি, আলহামদুলিল্লাহ।
আমার তো আর যাওয়ার যায়গা নাই...!

বান্দা, আবু নাসার।
১৬ফেব্রুয়ারী ২০২৩ঈসায়ী।
২৫রজব ১৪৪৪হিজরী।

একটি বইয়ের কথা এবং অন্যান্য।—আবু নাসার(১)(সেদিন ফুটপাত ধরে হাঁটছিলুম, হঠাৎ রসুনসদৃশ সাদা ফলের একটি স্তুপের দিকে চোখ আঁটক...
10/02/2023

একটি বইয়ের কথা এবং অন্যান্য।
—আবু নাসার

(১)
(সেদিন ফুটপাত ধরে হাঁটছিলুম, হঠাৎ রসুনসদৃশ সাদা ফলের একটি স্তুপের দিকে চোখ আঁটকে গেলো । এগুলো দেখলেই আমার মাথায় কুরআনের একটি আয়াত চলে আসে।
وَ التِّیۡنِ وَ الزَّیۡتُوۡنِ
কসম ‘তীন ও যায়তূন’ এর।

আরশের অধিপতি সাধারণত কসম খান না, সেটার প্রয়োজনও নেই। মহাবিশ্বকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, নিখিল জাহানের সেই প্রভু মহামহিম আল্লাহ মিথ্যা বলেন না। এমনকি তিনি অর্থহীন কোন কথাও বলেন না। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনিই আমাদের রব।


কুদরতের মালিক তার কুদরতি এই ফলের (তীন) কসম খেয়েছেন। আহা.. কত ধন্য এ ফল।
খুব কম জায়গাতেই তিনি কসম খেয়েছন। আর কম সেই জায়গাগুলো গোলামের কাছে মূল্যহীন, আর মালিকের কাছে মূল্যবান। এমনটাই তো হওয়ার কথা! আসলে তো আমরা কিছুই জানি না। আমাদের ভালো কীসে, মন্দ কীসে, এসব কিছুই বুঝি না।
কিন্তু যিনি সৃষ্টি করেন, তার চেয়ে ভালো আর কে জানেন?
যে রুটি আমি বানাই, সে রুটির কি বিশেষত্ব, তার কি ফায়দা, সে তো আমিই জানবো। তাই নয় কী?

রাব্বে কারীম কসম খেয়েছেন ফাজরের। অথচ আমাদের কাছে তাঁর কোন মূল্য নেই। পেয়ারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 'ফজরের দু'রাকাত সুন্নত নামায আসমানে আর যমিনে যা আছে, তারচেয়েও দামি'
বলো হে বন্ধুু, তবে ফরযের কী দাম হতে পারে?

রাব্বে কারীম ঊষালগ্নের শপথ নিয়েছেন, অথচ তখন আমরা বেঘোরে ঘুমোই। সফল মানুষ সূর্যের আগে ঘুম থেকে ওঠে। সূর্য জাগ্রত আর সফল মানুষ নিদ্রায় নাসিকা আন্দোলন করছে! একেই বলে অলসতা! অলসতা মানুষকে বিছানায় নিয়ে যায় বার বার, আর বিছানা ব্যার্থতায় ডুবিয়ে করে দেয় ছারখার।

সময়ের সৃষ্টি যিনি করেছেন, সেই মহাপবিত্র সত্তা শপথ নিয়েছেন সময়ের। কিন্তু গান্দেগীর অতল গহব্বরে ডুবে থাকা গোলাম আমার কাছে সময় যেন পানির মতই সস্তা।
মহাবিশ্বের প্রভুর কথাই সত্য; আবারও প্রমান হলো, বার বার প্রমাণ হবে। প্রমাণিত হবে কায়ামাত তাক।

اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ
নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই বেঈমান।
তিনি যা কিছুরই শপথ নিয়েছেন, তার প্রতিটিতেই আমাদের জন্য রয়েছে এমন এমন শিক্ষা, যা লিখতে গেলে হয়তো কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু ফল্গুধারার এ ধারাবাহিকতা কক্ষনও ফুরোবে না।

তীন তো এমনই এক ফল, যার বরকতের সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এর শপথ নিয়ে।
ইচ্ছে হলো ধবধবে সাদা, পবিত্র এই ফলগুলোকে একটু ছুঁয়ে দেখি। ফল তো অবশ্যই পবিত্র। আর এই ফল তো আরও বেশি পবিত্র, মহাপবিত্র আমার আল্লাহ যেই ফলের শপথ নেবেন, সে কী অত সস্তা হবে! এ ফল তো বরকতময়, এর বরকত তুমি বুঝবে তখন, যখন এর স্বাদ তুমি পাবে। এর গন্ধ শুঁকবে। এর ভেতরের লালচে দানাগুলো যখন তোমার চোখে ঝিলিক মারবে।

কল্পনা ভেঙে মনে পড়লো, পকেট তেমন ভারি নেই, তবে লোভ সামলানো বেজায় মুশকিল হয়ে উঠলো। কোনভাবেই চোখ সরাতে পারলুম না আদুরে এই ফলগুলো থেকে। অগত্যা দোকানিকে দাম জিজ্ঞাসিলুম। দাম শুনে তো আমার চক্ষুযুগল লাফ দিয়ে চাঁদের দেশে ওঠার জোগাড় হলো। এদিকে হৃৎপিন্ডের নর্তন-কুন্দনও বেড়ে চললো। না... না... এত ঘাবড়াবারও কিছু নেই।
তবে আমার মত স্বল্প আয়ি মানুষ তো একটু ঘাবড়াবেই। দোকানি দাম চাইলো ১৯০০টাকা কেজি।
পকেটে সর্বসাকুল্যে আছে ১২০০ টাকা। সে টাকায় কিনতে হবে মমতাময়ির দাওয়াই, করতে হবে বাজার-সদাই। ঘর একেবারেই ফাঁকা।
বুঝলাম উপায় নেই। দুঃখও লাগলো বটে। বাধ্য হয়ে চোখ সরালুম। বুকের ভেতরটা কেন যেন খা খা করে উঠলো। আমরা ছোট মানুষ, বড় কোন আশা করি নে। তবুও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় একটু বড় কিছু করতে। সেই বড় কিছুটা আবার বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চাওয়ার মত নয়। তীন ফল, আজওয়া খেজুর, আমাদের দেশে প্রথমদিকে স্বাভাবিকত আরও চওড়া দামে বিক্রি হতো। এখন কমতে শুরু করেছে।
যে সময় এটা লিখছি, তখন আজওয়া খেজুরের দাম কমতে কমতে ৬০০টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। একটু মানসম্মত খেজুর হলে ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০টাকা হলেই পাওয়া যায়। তীনের দামও এখন বেশ কমেছে।

তো যাই হোক, বুঝতে পারলুম এ আমার সাধ্যের নয়। ভারাক্রান্ত মন নিয়েই বাজারের পথ ধরলুম। তীনগুলো খুব পছন্দ হয়েছিলো। তারউপর আগে কখনও ফলটা সেভাবে খাওয়া হয় নি। প্রথমবার তীন দেখেছিলুম এক হাজী সাহেবের মাধ্যমে। হাজী সাহেব দু'টো তীন দিয়েছিলেন, সে ছিলো পাকিস্তানি। মূলতানের মানুষটি এসেছিলো উত্তরবঙ্গে তাবলীগ জামাতে। আমাকে তিনি খুব আদর করেতেন। ছোটবেলায় আমি নাকি দেখতে কোন এক রাজপুত্তুরের মতন ছিলুম! যদিও ওসব শুধু তিনিই বলতেন, শিশুদের বড় ভালোবাসতেন শুভ্র কেশী বুড়োটি। ছোটদেরও তিনি আপনি করে বলতেন। ঝরঝরে উর্দূ ভাষায় যখন তিনি কথা বলতেন, মুক্তাসদৃশ ঝকঝকে দাঁতগুলো কখনও কখনও ঝিলিক দিতো। সর্বক্ষণ সুগন্ধিতে মাখামাখি হয়ে থাকতেন তিনি।
হাজী সাহেব বড় জযবাওয়ালা মানুষ ছিলেন। জামাতটি যে ক'কদিন সেখানে ছিলো, আমি ততদিন মাসজিদেই ছিলাম। আমারও তখন থাকার জায়গার অভাব। জীবনের বড় জটিল একটা সময় অতিক্রম করছিলাম তখন। চাল নেই, চুলো নেই, তাই মসজিদ ছাড়া উপায় নেই। আল্লাহর ঘরে ঘুমানো উপায়হীন মুমিনের অবলম্বন।
হাজী সাহেব রোজ রাতে সালাতে দাঁড়াতেন। তাঁর নামায হতো অত্যন্ত সুদীর্ঘ। তিনি নামাযে কাঁদতেন নিঃশব্দে। এখন মনে হয় তাঁর নামাযগুলো ছিলো 'কামা র'আইতানি'ওয়ালা নামায।

লম্বা-সুঠাম দেহি, সাদা দাড়িওয়ালা লোকটি একদিন আমার দিকে ঝুকে আমার হাতে দু'খানা তীন দিয়ে বললেন, 'বিসমিল্লাহ বোলকে খা লিজিয়ে। খুদা কি নবীকে দেশ কি খানা হ্যায়'
আমি প্রথমে একটু ইতস্তত করলাম। ভাবলুম, এ আবার কি ফল! আকারে রসুনের মত অথচ বাহিরটা তুলতুলে! ঝাল-টাল লাগবে নাকি!
তবে মুখে কিছু বললাম না। পরে যদি হাজী সাহেব নারাজ হয়। বিসমিল্লাহ বলে যেই তাতে একটা কামড় বসালাম, অমনি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কি মিষ্টি একটি ফল। ভেতরের অংশটা বালুর মত কিচ কিচ করছে, অথচ অদ্ভুত একটা মজা লাগলো। সেই যে খেয়েছিলুম, তাতেই এর প্রতি ভালবাসা জন্মে গেলো। আজ বহুদিন বাদে আবার সেই তীন চোখে পড়লো। কিন্তু আমার তা খাওয়ার সাধ্যি নেই। মনে পড়তেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো। আমি এমনই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়েও বড় আঘাত পাই। হয়তো সব নিম্নবিত্তেরই রয়েছে এই অনুভূতি।
নিম্নবিত্তরা বিত্তের দরিদ্রতাকে এড়াতে পারে না, তবে চাইলেই যে কেউ চিত্তে ধনাঢ্য হতে পারে।
চিত্ত যদি ধনাঢ্য না হয়, বিত্তের অট্টালিকাও নিষ্কর্মক।

বাজার শেষ করে যাওয়ার সময় কেন জানি না ইচ্ছে হলো আবার একটু ঐ দোকানটা হয়ে ঘুরে যাই।
টাকা নেই, তাই হয়তো কিনতে পারবো না। তবে দেখতে তো পারবো। আল্লাহর দয়ায় চোখ তো আছে। চোখ দিয়েই না হয় স্বাদ নেয়ার বৃথা চেষ্টা করবো।
দোকানের সামনে গিয়ে আবার তাকালাম তীনের স্তুপের দিকে। আফসোসের সাথে তাকিয়ে আছি। স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছি। সেই যে একবার খেয়েছিলাম বিসমিল্লাহ বলে, সেই স্বাদটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম। যদিও এরপর আরও অনেকবার এর স্বাদ চেখেছি, কিন্তু প্রথম প্রেমের মতই সেই স্বাদও জিহ্বার স্বাদকে ছাড়িয়ে হৃদয়ের গভীরে গেঁথে আছে।
চেষ্টাটা ব্যার্থ হলো। এত বছর আগে যখন বয়স মাত্র ৯বছর, সেই সময়ের স্বাদ কি এখনও মনে থাকবে। তবুও অনুভব করার চেষ্টা...। এটাই এখন একমাত্র সান্ত্বনা।
পেছন থেকে একজন বোধহয় ডাকলেন। ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম এক শুভাকাঙ্ক্ষী দাঁড়িয়ে। মুচকি হেসে কুশল বিনিময় করলাম। বুকের ভেতরের আফসোস লুকোবার চেষ্টা করলাম বুকেই। জানি না তাতে ফায়দা কি হলো! তবে যাওয়ার সময় হাতে ৭০০টা টাকা ধরিয়ে দিলেন তিনি। বহুদিন আগে কর্য নিয়েছিলেন টাকাটা। আমিও ভুলে গিয়েছিলাম সে কথা। তখন তার চাকরি ছিলো না। গত সপ্তাহেই তিনি চাকরি পেয়েছেন। প্রথম বেতন পেয়েই খুঁজতে শুরু করেছেন আমাকে। চুকিয়ে দিতে চাইলেন কর্য। জানালেন শুকরিয়া, করলেন দুয়া, চেয়েও গেলেন দু'আ।
জীবনের এই সফরে দু'আর চেয়ে শক্তিশালী কোন পাথেয় কিংবা হাতিয়ার আমাদের কাছে নেই।

আমি একটু অবাক হলাম, সাথে প্রচণ্ড খুশিও হলেম। এতদিন বাদে কেন হঠাৎ এই ব্যাক্তির আগমন! তাও আবার এমন সময়ে, যখন টাকাটা দরকার! অথচ আমি এ টাকার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পুরো ব্যাপারটাই অপ্রত্যাশিত।
জানি গায়েবের ইশারায়ই সবকিছু হয়। তাই আল্লাহর শুকরিয়াই অন্তরে জিকির করলো। তবে না চাইতে যে আল্লাহ দেন, প্রত্যাশার চেয়ে যিনি বেশি দেন, ভিক্ষার চাদর ছোট হলেও তিনি দান করে তা উপচে দেন, তার শুকরিয়া কোন ভাষায় প্রকাশ করলে যথাযথ হবে?
সেদিন আধা কেজি তীন কিনেছিলুম ৮৯৫টাকায়।দোকানি ৯৫০টাকার কমে কিছুতেই দেবে না, আমার টাকার ঝুলি চকচকে দেখেই বুঝি তার মায়া হলো। শেষে ৩৬গ্রাম অতিরিক্তও দিয়ে দিলেন।
তাকে প্রাণ খুলে একবার جذاك الله বলে আবার পূরনো পথে বাড়ির পথ ধরলাম।

(২)
তীন দেখলে বা তীনের কথা শুনলে সূরা 'তীন'টার কথাই মনে পড়ে।
আট আয়াতের ছোট্ট একটি সূরা। কত সুন্দর তার গঠন। কত সুন্দর তার ব্যাখ্যা। শুনতে কতই শ্রুতিমধুর লাগে। আফাসির কন্ঠে শুনি, আহা... কি সুন্দর। সুদাইসির কন্ঠে শুনি, আহা... কত মধুর। শায়খ হানির কন্ঠে শুনি, আহা... কি মায়াময়। আবার শুনি, বারবার শুনি। কুরআন খুলি, বারবার পড়ি।
পড়ি তূর ও সিনাই পর্বতের কথা। পড়ি নিরাপত্তার চাদরে জড়ানো পবিত্র নগরীর কথা। কত পবিত্র এ নগরী। কত পবিত্র নগরীর শোভা ও সম্মান বর্ধিত করা সেই ঘর। বাইতুল্লাহ, আল-কা'বা। আল-বাক্কাহ, আল-মাক্কাহ, মাক্কাতুল-মুকাররমা।
টিভিতে 'আল-কুরআনুল কারিম ' চ্যানেলটা যখনই সামনে পড়ে, অদ্ভুত এক আবেগ নিয়ে তাকিয়ে থাকি নূরের গেলাফে জড়ানো বাইতুল্লাহর দিকে। বড় ইচ্ছে হয় কালো পাথরে চুমু দিতে, যেখানে চুমু দিয়েছেন আল্লাহর হাবিব। জানি, গান্দেগীর সাগরে ডুবে থাকা গোলামের নাপাক ঠোঁট এই সৌভাগ্যের যোগ্য নয়। তবে রহমানের রহমত যে সীমাহীন, সেও জানি।
তাই কপাল ঠুকি তাঁর কাছে। আমি তো আমার নিজের গোনাহর গন্ধ ছাড়া কিছুই পাই না। জান্নাতের কারিগর যদি একটু খুশবু ভিক্ষা দেন, তবেই তো আমি ধন্য হয়ে যাই। যিনি জান্নাতকে সৃষ্টি করেছে, যিনি শ্রেষ্ঠ সুগন্ধির কারিগর, তার জন্য এ আর তেমন কঠিন কী?

বাইতুল্লাহর প্রতি এ ভালবাসা প্রতিটি মুমিনের বিশ্বাসের বৈশিষ্ট। ভালবাসার বৈশিষ্ট। শ্রদ্ধার বৈশিষ্ট। আল্লাহর নবির জন্মভূমি বাইতুল্লাহর শহর।
হয়তো বাইতুল্লাহয় যেতে পারবো, অথবা পারবো না। হই না যতই গোনাহগার। রহমান যদি রহমতই না করেন, তবে আর তিনি কীসের রহমান বলো!
রহমান তো বলেই দিয়েছেন, তাঁর রহমতের সামনে গোলামের আকাশ পরিমান গোনাহের পাহাড়ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আর এ তো বড় সামান্য আবদার।

তবে দাসের যাওয়া না যাওয়া, দুটোই আল্লাহর হাতে। যেটা হবে সেটাই ভালো।
এই এক অদ্ভুত খিচুড়ি-খেলা।
মুমিনের যা হবে, সবই ভালো। ভালোও ভালো, খারাপও ভালো।
ফুলও ভালো, কাঁটাও ভালো।
প্রাচুর্যও ভালো আবার ছেঁড়া কাঁথাও ভালো। সবই ভালো। এই ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক।
তবে যাই বা না যাই, ভাবতে তো ক্ষতি নাই।
চলো আজ বাইতুল্লাহর মেহমানদের নিয়ে টুক-টাক গপ্প-সপ্প করি। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই।
কে জানে, ঘোলেই না আবার নেশা পেয়ে যায়!
তবে আশিকের পিপাসা মিটবে না কোন ঘোলেই কিংবা দুধে,
ম্যাহবুব যদি তার শরাব পান না করান আশিককে।

মাওলা চাহে তো আজ সুরা 'তীনে' উল্লেখিত সেই নিরাপদ নগরির মুসাফিরদের নিয়ে একটু গপ্প করবো।

(৩)
জানো নিশ্চয়ই সদ্যই আমার বুকশেলফ হয়েছে। হাজার ১২শ বই আছে ওতে। অনেক পড়া বই হাদিয়া দিয়ে আর বিক্রি করে কমেছে। অভাবি মানুষ কিনা! তাই পড়া বই বেঁচে দিয়ে পেট চালিয়েছিলুম। এছাড়া তখন করবোই কী! পাঠক কি কখনও বই বেঁচতে চায়? বেঁচতে বাধ্য হয়৷ অভাব কখনও পরনের লুঙ্গি বেঁচতেও বাধ্য করে। তবে এখন আর ও কাজ করি না। এখন যেকোন উপায়ে সে পথ এড়িয়ে যাই।

[ফেসবুকে পাঠশালা নামে একটি গ্রুপ আছে। সেখানে শাহাদাত হোসেন নামে একজন সম্মানীত মানুষ আছেন। মহোদয় একদিন জানতে পারলেন আমি পড়া বই বিক্রি করে দিই। শুনে তিনি মনোক্ষুণ্ণ হলেন। আমাকে বই বিক্রি না করতে নসিহত করলেন। মানুষটি বড় জ্ঞানপিপাসু। জ্ঞানকে ভালবাসেন। জ্ঞানীকে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন বলেই অচেনা আমাকে এমন মোতিমূল্য উপদেশ দিলেন। আমার তা বড়ই ভালো লেগেছিলো]

সফর বিষয়ক বইয়ের লাইনে বেশ জ্বলজ্বল করছে 'মক্কার পথ'। আসাদ আহমেদের লেখা বই। সেই আসাদ আহমেদ। বিপ্লবী নাম সেই আসাদ আহমেদ। আত্মজীবনী হলেও এটা সফরের বইয়ের লাইনে রাখা হয়েছে। জীবনও একটা সফরই, তাই নয় কি?
পেয়ারা নবিও নিজেকে দুনিয়ার মুসাফির বলেছিলেন, জানো তো ভাই?
এ সম্পর্কে একটা হাদিস পড়লে মন্দ হয় না।
আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন —নবী ﷺ একটি খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তাঁর দেহের চামড়ায় (মাদুরের) দাগ বসে গেলো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিলে আমরা আপনার জন্য মাদুরের উপর কিছু বিছিয়ে দিতাম। তাহলে তা আপনাকে দাগ লাগা থেকে বাঁচিয়ে রাখতো।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক কী? আমি দুনিয়াতে এমন এক মুসাফির বৈ তো কিছু নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর তা ত্যাগ করে গন্তব্যের পানে চলে গেলো।[১]

এমন আরেকটি ঘটনা আছে আমিরুল মু'মীনিন উমর ইবনুল খাত্তাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সাথে। রেফারেন্সটা এখন মনে পড়ছে না। তোমরা একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবে। ছোট-বড় প্রায় সব সীরাতে সে কাহিনী আছে। বড় শিক্ষাজনক সেই হাদিসখানা।

হ্যা, জীবন আসলেই একটা সফর। কেউ এই সফরের মানযিল বানিয়েছে দুনিয়ার সফলতাকে, আর কেউ আখিরাতকে। এই তো জীবন।
মুহাম্মাদ আসাদের এ বই অনুবাদ করেছেন শাহেদ আলী। বহুদিন আগে তাঁর একখানা বই পড়েছিলুম। বড় ভালো লেখেন তিনি। তাঁর লেখায় অসাধারণ সাহিত্যমালা থাকে। 'মক্কার পথ' বঙ্গ মুলুকে বেশ পাঠকপ্রিয় বই। গ্রামের কয়েকটি মসজিদে আমি বইটি দেখেছিলাম। নতুন কোন বই দেখলে হাতানোর বাতিক আছে আমার। সে কারণেই চোখ বুলিয়েছিলাম কয়েকটি পাতায়। মন বললো এটা পড়ো, হয়তো তোমার দিল-দরিয়ায় তরঙ্গের উচ্ছাস হবে। হয়তো তুমি শিখবে নতুন কিছু।
আমি শিখেছিও অনেক কিছু। জেনেছিও অনেক কিছু। এমন আত্মজীবনী খুব কমই পড়েছি। আত্মজীবনি এমনিতেও আমার খুব পছন্দের বিষয়।
বুকশেলফের পরের গপ্পটি হয়তো আত্মজীবনী নিয়েই হবে। সেখানে তোমার দাওয়াত রইলো।
এসো কিন্তু। ভালো না লাগলে প্রশংসার বদলে না হয় একটু বকা-ঝকাই করে গেলে। তাতেও হয়তো শিখবো কিছু অথবা তুমি শেখাবে কিছু।
'মক্কার পথ' বইটিতেও রয়েছে বাইতুল্লাহ সফরের এক অসাধারণ গল্প। মুহাম্মাদ আসাদকে যারা চেনো, তারা তো সেসব জানোই। এ নিয়ে আর আলোচনা করবো না। তবে অন্য একদিন অবশ্যই হবে সেসব কথা।

(৪)
মূলত আলোচনা করতে চাই দুটো বই নিয়ে।
প্রথমটি হলো 'বাইতুল্লাহর মুসাফির'। লিখেছেন প্রিয়তম লেখক আবু তাহের মেসবাহ। ছাত্ররা ভালবেসে তাকে আদীব হুজুর বলে থাকে। তিনি জেনারেল-নন জেনারেল দুই অঙ্গনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দু'ভাবেই হাজার হাজার ছাত্রের উস্তায। তাঁর লেখা 'এসো আরবী শিখি' এদেশের কওমী অঙ্গনে বহুল প্রচলিত। বেশিরভাগ জেনারেলরাও আরবী শিখতে এই বইয়ের ক্লাসই করে থাকে। তিনি এই বই এমন এক সময়ে প্রকাশ করেছেন, যখন এদেশে আরবি ভাষার এত চর্চা হতো না এবং এর উপর উপকারী বইয়ের সংখ্যা ছিলো একেবারেই হাতেগোনা।
বাংলাদেশে আরবী ভাষার মহান খাদেম তিনি। এছাড়া ইসলামি সাহিত্যাঙ্গনে তিনি একটি শক্তিমান নাম। সাহিত্যপ্রেমীরা নিশ্চয়ই তাকে চিনবেন।

তার লেখা বাইতুল্লাহর সফরনামা দুই ভাগে ২টো বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। একটির নাম 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' অপরটি 'বাইতুল্লাহর ছায়ায়'। এই দুটো বইকে বই না বলে যদি তোমরা সাহিত্যভাণ্ডার বলো, আমি বলবো, অতিউত্তম বলেছো। আরবি ভাষার পাশাপাশি আদীব হুজুরকে সাহিত্যের ওস্তাদ বলে মানতেও আমার ভালো লাগে।
তার লেখা আরো একখানা মুফিদ পুস্তক আছে, 'এসো কলম মেরামত করি' ওটিও বড় মূল্যবান একখানা বই। নবীন ও প্রবিন লেখকদের অনুশীলনের বই।
তিনি এতটাই ভিন্নমাপের লেখক, যে তার বিশ্লেষণাত্মক বই পড়তে গেলেও পাঠক সাহিত্যসাগরের দর্শন পাবে, একটা অন্যরকম আকর্ষণ পাবে। 'মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?'(অনুবাদ) 'ইসলামকে জানতে হলে'(মৌলিক) পুস্তক দুটিই এর প্রমান।

তো যা বলছি, 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' হলো লেখকের হজ্বের সফরনামার প্রথম বই। এরপরে 'বাইতুল্লাহর ছায়ায়'। প্রথমে আলোচনা করা যাক প্রথম সফরনামা নিয়েই।

(৫)
তোমরা ইবনে বতুতার নাম শুনেছো! আজিব কেন এমন প্রশ্ন করলাম? ইবনে বতুতাকে কে চেনে না?
এমন জগদ্বিখ্যাত পর্যটককে কে চিনবে না?
ইবনে বতুতার সফরনামা 'রিহলাহ ইবনে বতুতা' ভ্রমননামায় বিশ্বসেরা। (সম্প্রতি এটি বাংলায় অনূদিত হয়েছে মর্মে অবগত হয়েছি। আগ্রহীগন বুকস ক্লাবে বইটি পাবেন)

ইবনে বতুতার রিহলাহ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা নয়৷ আমাদের আলোচনা হজ্বের সফরনামা নিয়ে।
কিন্তু ভ্রমন বা ভ্রমন গল্পের আলোচনা আসলেই কেন যেন ইবনে বতুতার নামটা হৃদয় তটে এসে যায়।
মনে হয় যেন ভ্রমন মানেই ইবনে বতুতা আর ইবনে বতুতা মানেই ভ্রমন।

আমাদের আলোচনা আদীব হুজুরের 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' নিয়ে। এটি এমন এক সফরনামা যার শুরু থেকে শেষ হয়েছে ভাবসাগরের ঢেউকে আন্দোলিত করতে করতে।
হৃদয়মহলের আবেগ, অন্তরের অন্তরঙ্গতা, চিত্তের একনিষ্ঠতা ও অনুভূতীর সকল অনুভবকে মিশিয়ে কলমের সর্বোচ্চ শক্তিকে ব্যাবহার করে লেখা এ বই 'বাইতুল্লাহর মুসাফির'। তুমি যদি এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে বলো, তাহলে কালো কালির কয়েকটি শব্দে তা খুবই সম্ভব। তবে তুমি যদি বলো এটার পাঠ্যানুভূতি বর্ণনা করতে, আমি জানি না সেই অনুভূতির ভাষা বর্ণনা করতে জানে এমন কোন কলম আছে কি না।
কোন সুখানুভূতিরই কি কোন ভাষা হয়?
হয় হয়তো। ভাষা তো কেবলই কিছু শব্দ। কয়েকটি শব্দ দিয়ে অনুভূতির কতটুকুই বা প্রকাশ করা যায়?

হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যে বন্ধন, সেটা একজন লেখক ও পাঠকের মাঝে কীভাবে তৈরী হয়, তা বুঝতে হলে তোমাকে এই বইটিই পড়তে হবে।

আবুল হাসান আলী নদবি ও আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদিও (রহিমাহুমুল্লাহ) লিখে গেছেন হজ্বের সফরনামা। সেসবের আলোচনা ভিন্ন। সেগুলোর শ্রেষ্ঠত্বও ভিন্ন। কিন্তু বাংলা ভাষায় একটি মৌলিক সফরনামা যে কতটা হৃদয়স্পর্শী হতে পারে, সেটা জানতে হলেই পড়তে হবে এ বই।

এ সফরনামার সূচনা হয়েছে মুসাফিরের দিলের আকাঙ্খার উদয়ন থেকে। কীসের আকাঙ্খা?
দিদারে বাইতুল্লাহ ও যিয়ারাতে মাদীনার আকাঙ্খা। কালো গিলাফ ও সবুজ গম্বুজের আকাঙ্খা।
আল্লাহর ঘর ও নবীর ﷺ মাসজিদের আকাঙ্খা।
অবশ্যি সূচনারও সূচনায় মাওলানা আব্দুল মালিক ছাহেবের জ্ঞানগর্ভ কিছু কথা আছে।
পিয়াসা কলবের জন্য তাতেও রয়েছে শরাবে সাকীনাহ।

(৫)
কেন এটি এতটা আবেদনময়?
কেন এটি এমন করে হৃদয়কে স্পর্শ করলো। কী এমন আছে দুই মলাটের মাঝে থাকা কয়েকটি সাদা কাগজে যা কলবের নহরে, ভাবের সাগরে এমন তরঙ্গের উচ্ছাস সৃষ্টি করলো?

প্রথমে যেটার কথা বলবো সেটা হলো বাইতুল্লাহ। আল্লাহর ঘর। এর প্রতি কার আবেগ নেই?
আর বাইতুল্লাহর এক মেহমানের কলমেই যখন উঠে আসে বাইতুল্লাহর মেহমানের কলমে, তখন এর লাযযত তো তুলনাহীন হবেই!

হারামাইন পেজে গত কয়েকদিন ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ এসেছে।
একটি ছোট্ট বাবুকে দেখা গেল তালবিয়া পাঠ করতে। ও যে কি মিষ্টি করে তালবিয়া পড়ছিলো! দেখে নিজের অজানতেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি চলে এলো।
ক্বলবের ভেতর একটা কথাই বারবার গুঞ্জরিত হতে লাগলো; এই পুচকির জিবন তো কামিয়াব। ওতো সফল হয়ে গেলো।
শিশুরা পবিত্র। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা দয়াময় আল্লাহও মহাপবিত্র। রব্বে কারিমের ঘরও পবিত্র।
আহা... এ যেন পবিত্রতার এক বিশুদ্ধ বাগান।

মনে পড়ে 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' বই পড়ার সেই মধুময় অনুভূতির কথা।
উস্তায আবু তাহের মেসবাহ লিখেছেন তাঁর হজ্বকথন।
কা'বার প্রতি হযরতের যে আবেগ প্রকাশ পেয়েছিলো তাঁর কলমের কালিতে কাগজের জমিনে, অন্তরকে আন্দোলিত করেছিলো সেই ভাষা, অশ্রু ঝড়িয়েছিলো নয়নে।

আহ... কা'বা। আহা বাইতুলল্লাহ। তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে আমার মন যে ব্যাকুল হয়ে আছে।
ইয়েমেনের 'কিসওয়া'কে জড়িয়ে অকুল আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমাকে একবার সামনাসামনি দেখতে হৃদয় যে উতলা হয়ে উঠছে।
নজিব যেমন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ঈমানি জযবায়, ভালবাসা, প্রেমে, শ্রদ্ধায় কেঁদেছিলো, আমিও তোমার দর্শনে দু' ফোঁটা অশ্রু ঝড়াতে চাই।

যখনই কা'বার একটা প্রতিকৃতি দেখি, মনে হয় যেন ভেতরে একটা হাহাকার চলছে। কেন যেন তখন অদ্ভুত একটা পিপাসা লাগে।
কোন পানিই পারে না সেই পিপাসা মেটাতে।
ইসমাঈল বিন ইবরাহিমের পদাঘাতে উদয় হওয়া সেই পবিত্র কূপের পবিত্র পানির স্বাদই পারে এ পিপাসা মেটাতে।
আহ... প্রিয় কা'বা। আহ...... বাইতুলাহ।

এরপর যেটা বলবো তা হলো; গল্পের সমাহার। বর্ণনার বিচিত্র বিচিত্র তরিকা। বহু শত শব্দের সমাবেশ যা প্রতিনিয়ত মুক্তোর মত ঝকঝক করেছে৷
শব্দের এমন বিচিত্র খেলা প্রতি সাহিত্যপ্রেমীর হৃদয়মহলে দোলা দেবে।

সোহবত বা সাহচর্যের দীর্ঘ গল্প রয়েছে এই কিতাবে।
সোহবতের গুরুত্ব যে কত বেশি, তা বোঝাতে দু'টো লাইন বই থেকে তুলে ধরতেই হয়,
"কিতাবের হাজার পাতার চেয়ে আল্লাহর কোন নেক বান্দার ক্ষণিকের ছোহবত অনেক বেশী উপকারী। কিতাব হয়তো জ্ঞান দান করে, কিন্তু ছোহবত দান করে অন্তর্জ্ঞান। অধ্যয়ন যদি হয় প্রদীপ, সান্নিধ্য হলো হৃদয়ে সেই প্রদীপের প্রজ্বলন।"

আবু তাহের ছাহেব সংগ্রামী আলেম হযরত হাফেজ্জি হুযুর রহিমাহুল্লাহ এর নাত-জামাই। একইসাথে সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রও বটে।
হাফেজ্জি হুযুরের সোহবতে থেকে লেখকের বর্ণিত বহু ঘটনা তোমাকে মুগ্ধ করবেই।

এটি একটি মধুময় সফরনামা। যার প্রতিটি পাতায় পাতায় তুমি পাবে বাস্তবমুখী বহু শিক্ষা, বেঁচে থাকার জন্য বহু অনুপ্রেরণা, লেখকের সাথে ভ্রমনের অনুভূতি আর সাহিত্যের বহু উপাদান।

সর্বোপরি এটিকে শুধুই একটি সফরনামা বললে হয়তো অন্যায়ই হবে।

এই আলোচনাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে। এখন শেষ করা প্রয়োজন। তাই আর কোন কিছুই বলতে চাই না।
বই থেকে আরও এক চিমটি উল্লেখ করে শেষ করতে চাই।

(৭)
করাচীর নাযিমাবাদে যেখানে আমরা মেহমান ছিলাম, সেটা ছিলো হযরত হাফেজ্জী হুযুরের খাছ মুহাব্বাতের মানুষ হাজী হাবীব ছাহেবের বাড়ী। তিনি ঢাকায় থাকতেন। তাঁর কন্যা ও জামাতা পরম যত্নের সঙ্গে আমাদের মেহমানদারি করেছেন। তাদের আন্তরিকতা ভোলার মত নয়। অকৃতজ্ঞ বান্দা ভুলে যেতেও পারে, কিন্তু 'কৃতজ্ঞ' মনিব ভোলেন না, ভুলতে পারেন না।

বিদায়ের আগের দিন তাদের ছোট ছেলে— নাম মনে নেই, আমার সঙ্গে তার বেশ ভাব হয়েছিলো— সে চুপি চুপি আমার কাছে এলো; ভাবখানা, কেউ যেন দেখে না ফেলে। আমি কিছুটা অবাক, সে আমাকে আরো অবাক করে দু'টো চকলেট হাতে দিয়ে বললো, 'আল্লাহ মিয়াঁকো দে দেনা।'

আমি তার হাদিয়া নিয়ে গিয়েছিলাম আল্লাহ মিয়াঁর কাছে। সে যদি বেঁচে থাকে, এখন নিশ্চয় বেশ জোয়ান হয়েছে। আমার বড় জানতে ইচ্ছা করে, তার কি মনে পড়ে আল্লাহ মিয়াঁর কাছে পাঠানো হাদিয়ার কথা?
আল্লাহ যেন তার হাদিয়া কবুল করেন, আল্লাহ যেন তার দিলের তামান্না পূর্ণ করেন।
জীবনের অনেক বড় একটি সৌভাগ্য যে, এক অবুঝ শিশুর অবুঝ হাদিয়া আল্লাহ মিয়াঁর কাছে আমি বহন করে নিয়েছিলাম।

“বাইতুল্লাহর মুসাফির” নিয়ে আলোচনা এখন শেষ করছি। আরেকদিন “বাইতুল্লাহর ছায়ায়” নিয়ে গপ্প করবো ইনশাআল্লাহ। ততদিন আমাকে রেখো তোমার দু‘আয়।

আলোচ্য বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে একটি বুকশপে অর্ডার করতে পারেন৷ সেখানে অতিরিক্ত ছাড় পাবেন ইনশাআল্লাহ।
(বুকশপ লিংক কমেন্টে)

আলোচ্য বইটির অডিও ভার্শন পাবেন ইউটিউবে।
(ইউটিউব লিংক কমেন্টে)

কৃতজ্ঞতা।

[১] সুনানু ইবনে মাজাহ৩৪৪১
তিরমিযী ২৩৭৭। সহীহাহ ৪৩৯,৪৪০, তাখরীজু ফিকহুস সায়রাহ ৪৭৮।

আবু নাসার
২৮রজব ১৪৪৪হিজরী
১০ফেব্রুয়ারি ২০২৩ঈসায়ী।

Address

Bhulta, Rupgonj, Narayanganj
Narayanganj
1370

Telephone

+8801763818284

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Abu Nassar posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Abu Nassar:

Share