10/02/2023
একটি বইয়ের কথা এবং অন্যান্য।
—আবু নাসার
(১)
(সেদিন ফুটপাত ধরে হাঁটছিলুম, হঠাৎ রসুনসদৃশ সাদা ফলের একটি স্তুপের দিকে চোখ আঁটকে গেলো । এগুলো দেখলেই আমার মাথায় কুরআনের একটি আয়াত চলে আসে।
وَ التِّیۡنِ وَ الزَّیۡتُوۡنِ
কসম ‘তীন ও যায়তূন’ এর।
আরশের অধিপতি সাধারণত কসম খান না, সেটার প্রয়োজনও নেই। মহাবিশ্বকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, নিখিল জাহানের সেই প্রভু মহামহিম আল্লাহ মিথ্যা বলেন না। এমনকি তিনি অর্থহীন কোন কথাও বলেন না। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনিই আমাদের রব।
কুদরতের মালিক তার কুদরতি এই ফলের (তীন) কসম খেয়েছেন। আহা.. কত ধন্য এ ফল।
খুব কম জায়গাতেই তিনি কসম খেয়েছন। আর কম সেই জায়গাগুলো গোলামের কাছে মূল্যহীন, আর মালিকের কাছে মূল্যবান। এমনটাই তো হওয়ার কথা! আসলে তো আমরা কিছুই জানি না। আমাদের ভালো কীসে, মন্দ কীসে, এসব কিছুই বুঝি না।
কিন্তু যিনি সৃষ্টি করেন, তার চেয়ে ভালো আর কে জানেন?
যে রুটি আমি বানাই, সে রুটির কি বিশেষত্ব, তার কি ফায়দা, সে তো আমিই জানবো। তাই নয় কী?
রাব্বে কারীম কসম খেয়েছেন ফাজরের। অথচ আমাদের কাছে তাঁর কোন মূল্য নেই। পেয়ারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 'ফজরের দু'রাকাত সুন্নত নামায আসমানে আর যমিনে যা আছে, তারচেয়েও দামি'
বলো হে বন্ধুু, তবে ফরযের কী দাম হতে পারে?
রাব্বে কারীম ঊষালগ্নের শপথ নিয়েছেন, অথচ তখন আমরা বেঘোরে ঘুমোই। সফল মানুষ সূর্যের আগে ঘুম থেকে ওঠে। সূর্য জাগ্রত আর সফল মানুষ নিদ্রায় নাসিকা আন্দোলন করছে! একেই বলে অলসতা! অলসতা মানুষকে বিছানায় নিয়ে যায় বার বার, আর বিছানা ব্যার্থতায় ডুবিয়ে করে দেয় ছারখার।
সময়ের সৃষ্টি যিনি করেছেন, সেই মহাপবিত্র সত্তা শপথ নিয়েছেন সময়ের। কিন্তু গান্দেগীর অতল গহব্বরে ডুবে থাকা গোলাম আমার কাছে সময় যেন পানির মতই সস্তা।
মহাবিশ্বের প্রভুর কথাই সত্য; আবারও প্রমান হলো, বার বার প্রমাণ হবে। প্রমাণিত হবে কায়ামাত তাক।
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ
নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই বেঈমান।
তিনি যা কিছুরই শপথ নিয়েছেন, তার প্রতিটিতেই আমাদের জন্য রয়েছে এমন এমন শিক্ষা, যা লিখতে গেলে হয়তো কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু ফল্গুধারার এ ধারাবাহিকতা কক্ষনও ফুরোবে না।
তীন তো এমনই এক ফল, যার বরকতের সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এর শপথ নিয়ে।
ইচ্ছে হলো ধবধবে সাদা, পবিত্র এই ফলগুলোকে একটু ছুঁয়ে দেখি। ফল তো অবশ্যই পবিত্র। আর এই ফল তো আরও বেশি পবিত্র, মহাপবিত্র আমার আল্লাহ যেই ফলের শপথ নেবেন, সে কী অত সস্তা হবে! এ ফল তো বরকতময়, এর বরকত তুমি বুঝবে তখন, যখন এর স্বাদ তুমি পাবে। এর গন্ধ শুঁকবে। এর ভেতরের লালচে দানাগুলো যখন তোমার চোখে ঝিলিক মারবে।
কল্পনা ভেঙে মনে পড়লো, পকেট তেমন ভারি নেই, তবে লোভ সামলানো বেজায় মুশকিল হয়ে উঠলো। কোনভাবেই চোখ সরাতে পারলুম না আদুরে এই ফলগুলো থেকে। অগত্যা দোকানিকে দাম জিজ্ঞাসিলুম। দাম শুনে তো আমার চক্ষুযুগল লাফ দিয়ে চাঁদের দেশে ওঠার জোগাড় হলো। এদিকে হৃৎপিন্ডের নর্তন-কুন্দনও বেড়ে চললো। না... না... এত ঘাবড়াবারও কিছু নেই।
তবে আমার মত স্বল্প আয়ি মানুষ তো একটু ঘাবড়াবেই। দোকানি দাম চাইলো ১৯০০টাকা কেজি।
পকেটে সর্বসাকুল্যে আছে ১২০০ টাকা। সে টাকায় কিনতে হবে মমতাময়ির দাওয়াই, করতে হবে বাজার-সদাই। ঘর একেবারেই ফাঁকা।
বুঝলাম উপায় নেই। দুঃখও লাগলো বটে। বাধ্য হয়ে চোখ সরালুম। বুকের ভেতরটা কেন যেন খা খা করে উঠলো। আমরা ছোট মানুষ, বড় কোন আশা করি নে। তবুও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় একটু বড় কিছু করতে। সেই বড় কিছুটা আবার বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চাওয়ার মত নয়। তীন ফল, আজওয়া খেজুর, আমাদের দেশে প্রথমদিকে স্বাভাবিকত আরও চওড়া দামে বিক্রি হতো। এখন কমতে শুরু করেছে।
যে সময় এটা লিখছি, তখন আজওয়া খেজুরের দাম কমতে কমতে ৬০০টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। একটু মানসম্মত খেজুর হলে ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০টাকা হলেই পাওয়া যায়। তীনের দামও এখন বেশ কমেছে।
তো যাই হোক, বুঝতে পারলুম এ আমার সাধ্যের নয়। ভারাক্রান্ত মন নিয়েই বাজারের পথ ধরলুম। তীনগুলো খুব পছন্দ হয়েছিলো। তারউপর আগে কখনও ফলটা সেভাবে খাওয়া হয় নি। প্রথমবার তীন দেখেছিলুম এক হাজী সাহেবের মাধ্যমে। হাজী সাহেব দু'টো তীন দিয়েছিলেন, সে ছিলো পাকিস্তানি। মূলতানের মানুষটি এসেছিলো উত্তরবঙ্গে তাবলীগ জামাতে। আমাকে তিনি খুব আদর করেতেন। ছোটবেলায় আমি নাকি দেখতে কোন এক রাজপুত্তুরের মতন ছিলুম! যদিও ওসব শুধু তিনিই বলতেন, শিশুদের বড় ভালোবাসতেন শুভ্র কেশী বুড়োটি। ছোটদেরও তিনি আপনি করে বলতেন। ঝরঝরে উর্দূ ভাষায় যখন তিনি কথা বলতেন, মুক্তাসদৃশ ঝকঝকে দাঁতগুলো কখনও কখনও ঝিলিক দিতো। সর্বক্ষণ সুগন্ধিতে মাখামাখি হয়ে থাকতেন তিনি।
হাজী সাহেব বড় জযবাওয়ালা মানুষ ছিলেন। জামাতটি যে ক'কদিন সেখানে ছিলো, আমি ততদিন মাসজিদেই ছিলাম। আমারও তখন থাকার জায়গার অভাব। জীবনের বড় জটিল একটা সময় অতিক্রম করছিলাম তখন। চাল নেই, চুলো নেই, তাই মসজিদ ছাড়া উপায় নেই। আল্লাহর ঘরে ঘুমানো উপায়হীন মুমিনের অবলম্বন।
হাজী সাহেব রোজ রাতে সালাতে দাঁড়াতেন। তাঁর নামায হতো অত্যন্ত সুদীর্ঘ। তিনি নামাযে কাঁদতেন নিঃশব্দে। এখন মনে হয় তাঁর নামাযগুলো ছিলো 'কামা র'আইতানি'ওয়ালা নামায।
লম্বা-সুঠাম দেহি, সাদা দাড়িওয়ালা লোকটি একদিন আমার দিকে ঝুকে আমার হাতে দু'খানা তীন দিয়ে বললেন, 'বিসমিল্লাহ বোলকে খা লিজিয়ে। খুদা কি নবীকে দেশ কি খানা হ্যায়'
আমি প্রথমে একটু ইতস্তত করলাম। ভাবলুম, এ আবার কি ফল! আকারে রসুনের মত অথচ বাহিরটা তুলতুলে! ঝাল-টাল লাগবে নাকি!
তবে মুখে কিছু বললাম না। পরে যদি হাজী সাহেব নারাজ হয়। বিসমিল্লাহ বলে যেই তাতে একটা কামড় বসালাম, অমনি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কি মিষ্টি একটি ফল। ভেতরের অংশটা বালুর মত কিচ কিচ করছে, অথচ অদ্ভুত একটা মজা লাগলো। সেই যে খেয়েছিলুম, তাতেই এর প্রতি ভালবাসা জন্মে গেলো। আজ বহুদিন বাদে আবার সেই তীন চোখে পড়লো। কিন্তু আমার তা খাওয়ার সাধ্যি নেই। মনে পড়তেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো। আমি এমনই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়েও বড় আঘাত পাই। হয়তো সব নিম্নবিত্তেরই রয়েছে এই অনুভূতি।
নিম্নবিত্তরা বিত্তের দরিদ্রতাকে এড়াতে পারে না, তবে চাইলেই যে কেউ চিত্তে ধনাঢ্য হতে পারে।
চিত্ত যদি ধনাঢ্য না হয়, বিত্তের অট্টালিকাও নিষ্কর্মক।
বাজার শেষ করে যাওয়ার সময় কেন জানি না ইচ্ছে হলো আবার একটু ঐ দোকানটা হয়ে ঘুরে যাই।
টাকা নেই, তাই হয়তো কিনতে পারবো না। তবে দেখতে তো পারবো। আল্লাহর দয়ায় চোখ তো আছে। চোখ দিয়েই না হয় স্বাদ নেয়ার বৃথা চেষ্টা করবো।
দোকানের সামনে গিয়ে আবার তাকালাম তীনের স্তুপের দিকে। আফসোসের সাথে তাকিয়ে আছি। স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছি। সেই যে একবার খেয়েছিলাম বিসমিল্লাহ বলে, সেই স্বাদটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম। যদিও এরপর আরও অনেকবার এর স্বাদ চেখেছি, কিন্তু প্রথম প্রেমের মতই সেই স্বাদও জিহ্বার স্বাদকে ছাড়িয়ে হৃদয়ের গভীরে গেঁথে আছে।
চেষ্টাটা ব্যার্থ হলো। এত বছর আগে যখন বয়স মাত্র ৯বছর, সেই সময়ের স্বাদ কি এখনও মনে থাকবে। তবুও অনুভব করার চেষ্টা...। এটাই এখন একমাত্র সান্ত্বনা।
পেছন থেকে একজন বোধহয় ডাকলেন। ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম এক শুভাকাঙ্ক্ষী দাঁড়িয়ে। মুচকি হেসে কুশল বিনিময় করলাম। বুকের ভেতরের আফসোস লুকোবার চেষ্টা করলাম বুকেই। জানি না তাতে ফায়দা কি হলো! তবে যাওয়ার সময় হাতে ৭০০টা টাকা ধরিয়ে দিলেন তিনি। বহুদিন আগে কর্য নিয়েছিলেন টাকাটা। আমিও ভুলে গিয়েছিলাম সে কথা। তখন তার চাকরি ছিলো না। গত সপ্তাহেই তিনি চাকরি পেয়েছেন। প্রথম বেতন পেয়েই খুঁজতে শুরু করেছেন আমাকে। চুকিয়ে দিতে চাইলেন কর্য। জানালেন শুকরিয়া, করলেন দুয়া, চেয়েও গেলেন দু'আ।
জীবনের এই সফরে দু'আর চেয়ে শক্তিশালী কোন পাথেয় কিংবা হাতিয়ার আমাদের কাছে নেই।
আমি একটু অবাক হলাম, সাথে প্রচণ্ড খুশিও হলেম। এতদিন বাদে কেন হঠাৎ এই ব্যাক্তির আগমন! তাও আবার এমন সময়ে, যখন টাকাটা দরকার! অথচ আমি এ টাকার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পুরো ব্যাপারটাই অপ্রত্যাশিত।
জানি গায়েবের ইশারায়ই সবকিছু হয়। তাই আল্লাহর শুকরিয়াই অন্তরে জিকির করলো। তবে না চাইতে যে আল্লাহ দেন, প্রত্যাশার চেয়ে যিনি বেশি দেন, ভিক্ষার চাদর ছোট হলেও তিনি দান করে তা উপচে দেন, তার শুকরিয়া কোন ভাষায় প্রকাশ করলে যথাযথ হবে?
সেদিন আধা কেজি তীন কিনেছিলুম ৮৯৫টাকায়।দোকানি ৯৫০টাকার কমে কিছুতেই দেবে না, আমার টাকার ঝুলি চকচকে দেখেই বুঝি তার মায়া হলো। শেষে ৩৬গ্রাম অতিরিক্তও দিয়ে দিলেন।
তাকে প্রাণ খুলে একবার جذاك الله বলে আবার পূরনো পথে বাড়ির পথ ধরলাম।
(২)
তীন দেখলে বা তীনের কথা শুনলে সূরা 'তীন'টার কথাই মনে পড়ে।
আট আয়াতের ছোট্ট একটি সূরা। কত সুন্দর তার গঠন। কত সুন্দর তার ব্যাখ্যা। শুনতে কতই শ্রুতিমধুর লাগে। আফাসির কন্ঠে শুনি, আহা... কি সুন্দর। সুদাইসির কন্ঠে শুনি, আহা... কত মধুর। শায়খ হানির কন্ঠে শুনি, আহা... কি মায়াময়। আবার শুনি, বারবার শুনি। কুরআন খুলি, বারবার পড়ি।
পড়ি তূর ও সিনাই পর্বতের কথা। পড়ি নিরাপত্তার চাদরে জড়ানো পবিত্র নগরীর কথা। কত পবিত্র এ নগরী। কত পবিত্র নগরীর শোভা ও সম্মান বর্ধিত করা সেই ঘর। বাইতুল্লাহ, আল-কা'বা। আল-বাক্কাহ, আল-মাক্কাহ, মাক্কাতুল-মুকাররমা।
টিভিতে 'আল-কুরআনুল কারিম ' চ্যানেলটা যখনই সামনে পড়ে, অদ্ভুত এক আবেগ নিয়ে তাকিয়ে থাকি নূরের গেলাফে জড়ানো বাইতুল্লাহর দিকে। বড় ইচ্ছে হয় কালো পাথরে চুমু দিতে, যেখানে চুমু দিয়েছেন আল্লাহর হাবিব। জানি, গান্দেগীর সাগরে ডুবে থাকা গোলামের নাপাক ঠোঁট এই সৌভাগ্যের যোগ্য নয়। তবে রহমানের রহমত যে সীমাহীন, সেও জানি।
তাই কপাল ঠুকি তাঁর কাছে। আমি তো আমার নিজের গোনাহর গন্ধ ছাড়া কিছুই পাই না। জান্নাতের কারিগর যদি একটু খুশবু ভিক্ষা দেন, তবেই তো আমি ধন্য হয়ে যাই। যিনি জান্নাতকে সৃষ্টি করেছে, যিনি শ্রেষ্ঠ সুগন্ধির কারিগর, তার জন্য এ আর তেমন কঠিন কী?
বাইতুল্লাহর প্রতি এ ভালবাসা প্রতিটি মুমিনের বিশ্বাসের বৈশিষ্ট। ভালবাসার বৈশিষ্ট। শ্রদ্ধার বৈশিষ্ট। আল্লাহর নবির জন্মভূমি বাইতুল্লাহর শহর।
হয়তো বাইতুল্লাহয় যেতে পারবো, অথবা পারবো না। হই না যতই গোনাহগার। রহমান যদি রহমতই না করেন, তবে আর তিনি কীসের রহমান বলো!
রহমান তো বলেই দিয়েছেন, তাঁর রহমতের সামনে গোলামের আকাশ পরিমান গোনাহের পাহাড়ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আর এ তো বড় সামান্য আবদার।
তবে দাসের যাওয়া না যাওয়া, দুটোই আল্লাহর হাতে। যেটা হবে সেটাই ভালো।
এই এক অদ্ভুত খিচুড়ি-খেলা।
মুমিনের যা হবে, সবই ভালো। ভালোও ভালো, খারাপও ভালো।
ফুলও ভালো, কাঁটাও ভালো।
প্রাচুর্যও ভালো আবার ছেঁড়া কাঁথাও ভালো। সবই ভালো। এই ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক।
তবে যাই বা না যাই, ভাবতে তো ক্ষতি নাই।
চলো আজ বাইতুল্লাহর মেহমানদের নিয়ে টুক-টাক গপ্প-সপ্প করি। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই।
কে জানে, ঘোলেই না আবার নেশা পেয়ে যায়!
তবে আশিকের পিপাসা মিটবে না কোন ঘোলেই কিংবা দুধে,
ম্যাহবুব যদি তার শরাব পান না করান আশিককে।
মাওলা চাহে তো আজ সুরা 'তীনে' উল্লেখিত সেই নিরাপদ নগরির মুসাফিরদের নিয়ে একটু গপ্প করবো।
(৩)
জানো নিশ্চয়ই সদ্যই আমার বুকশেলফ হয়েছে। হাজার ১২শ বই আছে ওতে। অনেক পড়া বই হাদিয়া দিয়ে আর বিক্রি করে কমেছে। অভাবি মানুষ কিনা! তাই পড়া বই বেঁচে দিয়ে পেট চালিয়েছিলুম। এছাড়া তখন করবোই কী! পাঠক কি কখনও বই বেঁচতে চায়? বেঁচতে বাধ্য হয়৷ অভাব কখনও পরনের লুঙ্গি বেঁচতেও বাধ্য করে। তবে এখন আর ও কাজ করি না। এখন যেকোন উপায়ে সে পথ এড়িয়ে যাই।
[ফেসবুকে পাঠশালা নামে একটি গ্রুপ আছে। সেখানে শাহাদাত হোসেন নামে একজন সম্মানীত মানুষ আছেন। মহোদয় একদিন জানতে পারলেন আমি পড়া বই বিক্রি করে দিই। শুনে তিনি মনোক্ষুণ্ণ হলেন। আমাকে বই বিক্রি না করতে নসিহত করলেন। মানুষটি বড় জ্ঞানপিপাসু। জ্ঞানকে ভালবাসেন। জ্ঞানীকে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন বলেই অচেনা আমাকে এমন মোতিমূল্য উপদেশ দিলেন। আমার তা বড়ই ভালো লেগেছিলো]
সফর বিষয়ক বইয়ের লাইনে বেশ জ্বলজ্বল করছে 'মক্কার পথ'। আসাদ আহমেদের লেখা বই। সেই আসাদ আহমেদ। বিপ্লবী নাম সেই আসাদ আহমেদ। আত্মজীবনী হলেও এটা সফরের বইয়ের লাইনে রাখা হয়েছে। জীবনও একটা সফরই, তাই নয় কি?
পেয়ারা নবিও নিজেকে দুনিয়ার মুসাফির বলেছিলেন, জানো তো ভাই?
এ সম্পর্কে একটা হাদিস পড়লে মন্দ হয় না।
আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন —নবী ﷺ একটি খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তাঁর দেহের চামড়ায় (মাদুরের) দাগ বসে গেলো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিলে আমরা আপনার জন্য মাদুরের উপর কিছু বিছিয়ে দিতাম। তাহলে তা আপনাকে দাগ লাগা থেকে বাঁচিয়ে রাখতো।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক কী? আমি দুনিয়াতে এমন এক মুসাফির বৈ তো কিছু নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর তা ত্যাগ করে গন্তব্যের পানে চলে গেলো।[১]
এমন আরেকটি ঘটনা আছে আমিরুল মু'মীনিন উমর ইবনুল খাত্তাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সাথে। রেফারেন্সটা এখন মনে পড়ছে না। তোমরা একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবে। ছোট-বড় প্রায় সব সীরাতে সে কাহিনী আছে। বড় শিক্ষাজনক সেই হাদিসখানা।
হ্যা, জীবন আসলেই একটা সফর। কেউ এই সফরের মানযিল বানিয়েছে দুনিয়ার সফলতাকে, আর কেউ আখিরাতকে। এই তো জীবন।
মুহাম্মাদ আসাদের এ বই অনুবাদ করেছেন শাহেদ আলী। বহুদিন আগে তাঁর একখানা বই পড়েছিলুম। বড় ভালো লেখেন তিনি। তাঁর লেখায় অসাধারণ সাহিত্যমালা থাকে। 'মক্কার পথ' বঙ্গ মুলুকে বেশ পাঠকপ্রিয় বই। গ্রামের কয়েকটি মসজিদে আমি বইটি দেখেছিলাম। নতুন কোন বই দেখলে হাতানোর বাতিক আছে আমার। সে কারণেই চোখ বুলিয়েছিলাম কয়েকটি পাতায়। মন বললো এটা পড়ো, হয়তো তোমার দিল-দরিয়ায় তরঙ্গের উচ্ছাস হবে। হয়তো তুমি শিখবে নতুন কিছু।
আমি শিখেছিও অনেক কিছু। জেনেছিও অনেক কিছু। এমন আত্মজীবনী খুব কমই পড়েছি। আত্মজীবনি এমনিতেও আমার খুব পছন্দের বিষয়।
বুকশেলফের পরের গপ্পটি হয়তো আত্মজীবনী নিয়েই হবে। সেখানে তোমার দাওয়াত রইলো।
এসো কিন্তু। ভালো না লাগলে প্রশংসার বদলে না হয় একটু বকা-ঝকাই করে গেলে। তাতেও হয়তো শিখবো কিছু অথবা তুমি শেখাবে কিছু।
'মক্কার পথ' বইটিতেও রয়েছে বাইতুল্লাহ সফরের এক অসাধারণ গল্প। মুহাম্মাদ আসাদকে যারা চেনো, তারা তো সেসব জানোই। এ নিয়ে আর আলোচনা করবো না। তবে অন্য একদিন অবশ্যই হবে সেসব কথা।
(৪)
মূলত আলোচনা করতে চাই দুটো বই নিয়ে।
প্রথমটি হলো 'বাইতুল্লাহর মুসাফির'। লিখেছেন প্রিয়তম লেখক আবু তাহের মেসবাহ। ছাত্ররা ভালবেসে তাকে আদীব হুজুর বলে থাকে। তিনি জেনারেল-নন জেনারেল দুই অঙ্গনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দু'ভাবেই হাজার হাজার ছাত্রের উস্তায। তাঁর লেখা 'এসো আরবী শিখি' এদেশের কওমী অঙ্গনে বহুল প্রচলিত। বেশিরভাগ জেনারেলরাও আরবী শিখতে এই বইয়ের ক্লাসই করে থাকে। তিনি এই বই এমন এক সময়ে প্রকাশ করেছেন, যখন এদেশে আরবি ভাষার এত চর্চা হতো না এবং এর উপর উপকারী বইয়ের সংখ্যা ছিলো একেবারেই হাতেগোনা।
বাংলাদেশে আরবী ভাষার মহান খাদেম তিনি। এছাড়া ইসলামি সাহিত্যাঙ্গনে তিনি একটি শক্তিমান নাম। সাহিত্যপ্রেমীরা নিশ্চয়ই তাকে চিনবেন।
তার লেখা বাইতুল্লাহর সফরনামা দুই ভাগে ২টো বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। একটির নাম 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' অপরটি 'বাইতুল্লাহর ছায়ায়'। এই দুটো বইকে বই না বলে যদি তোমরা সাহিত্যভাণ্ডার বলো, আমি বলবো, অতিউত্তম বলেছো। আরবি ভাষার পাশাপাশি আদীব হুজুরকে সাহিত্যের ওস্তাদ বলে মানতেও আমার ভালো লাগে।
তার লেখা আরো একখানা মুফিদ পুস্তক আছে, 'এসো কলম মেরামত করি' ওটিও বড় মূল্যবান একখানা বই। নবীন ও প্রবিন লেখকদের অনুশীলনের বই।
তিনি এতটাই ভিন্নমাপের লেখক, যে তার বিশ্লেষণাত্মক বই পড়তে গেলেও পাঠক সাহিত্যসাগরের দর্শন পাবে, একটা অন্যরকম আকর্ষণ পাবে। 'মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?'(অনুবাদ) 'ইসলামকে জানতে হলে'(মৌলিক) পুস্তক দুটিই এর প্রমান।
তো যা বলছি, 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' হলো লেখকের হজ্বের সফরনামার প্রথম বই। এরপরে 'বাইতুল্লাহর ছায়ায়'। প্রথমে আলোচনা করা যাক প্রথম সফরনামা নিয়েই।
(৫)
তোমরা ইবনে বতুতার নাম শুনেছো! আজিব কেন এমন প্রশ্ন করলাম? ইবনে বতুতাকে কে চেনে না?
এমন জগদ্বিখ্যাত পর্যটককে কে চিনবে না?
ইবনে বতুতার সফরনামা 'রিহলাহ ইবনে বতুতা' ভ্রমননামায় বিশ্বসেরা। (সম্প্রতি এটি বাংলায় অনূদিত হয়েছে মর্মে অবগত হয়েছি। আগ্রহীগন বুকস ক্লাবে বইটি পাবেন)
ইবনে বতুতার রিহলাহ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা নয়৷ আমাদের আলোচনা হজ্বের সফরনামা নিয়ে।
কিন্তু ভ্রমন বা ভ্রমন গল্পের আলোচনা আসলেই কেন যেন ইবনে বতুতার নামটা হৃদয় তটে এসে যায়।
মনে হয় যেন ভ্রমন মানেই ইবনে বতুতা আর ইবনে বতুতা মানেই ভ্রমন।
আমাদের আলোচনা আদীব হুজুরের 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' নিয়ে। এটি এমন এক সফরনামা যার শুরু থেকে শেষ হয়েছে ভাবসাগরের ঢেউকে আন্দোলিত করতে করতে।
হৃদয়মহলের আবেগ, অন্তরের অন্তরঙ্গতা, চিত্তের একনিষ্ঠতা ও অনুভূতীর সকল অনুভবকে মিশিয়ে কলমের সর্বোচ্চ শক্তিকে ব্যাবহার করে লেখা এ বই 'বাইতুল্লাহর মুসাফির'। তুমি যদি এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে বলো, তাহলে কালো কালির কয়েকটি শব্দে তা খুবই সম্ভব। তবে তুমি যদি বলো এটার পাঠ্যানুভূতি বর্ণনা করতে, আমি জানি না সেই অনুভূতির ভাষা বর্ণনা করতে জানে এমন কোন কলম আছে কি না।
কোন সুখানুভূতিরই কি কোন ভাষা হয়?
হয় হয়তো। ভাষা তো কেবলই কিছু শব্দ। কয়েকটি শব্দ দিয়ে অনুভূতির কতটুকুই বা প্রকাশ করা যায়?
হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যে বন্ধন, সেটা একজন লেখক ও পাঠকের মাঝে কীভাবে তৈরী হয়, তা বুঝতে হলে তোমাকে এই বইটিই পড়তে হবে।
আবুল হাসান আলী নদবি ও আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদিও (রহিমাহুমুল্লাহ) লিখে গেছেন হজ্বের সফরনামা। সেসবের আলোচনা ভিন্ন। সেগুলোর শ্রেষ্ঠত্বও ভিন্ন। কিন্তু বাংলা ভাষায় একটি মৌলিক সফরনামা যে কতটা হৃদয়স্পর্শী হতে পারে, সেটা জানতে হলেই পড়তে হবে এ বই।
এ সফরনামার সূচনা হয়েছে মুসাফিরের দিলের আকাঙ্খার উদয়ন থেকে। কীসের আকাঙ্খা?
দিদারে বাইতুল্লাহ ও যিয়ারাতে মাদীনার আকাঙ্খা। কালো গিলাফ ও সবুজ গম্বুজের আকাঙ্খা।
আল্লাহর ঘর ও নবীর ﷺ মাসজিদের আকাঙ্খা।
অবশ্যি সূচনারও সূচনায় মাওলানা আব্দুল মালিক ছাহেবের জ্ঞানগর্ভ কিছু কথা আছে।
পিয়াসা কলবের জন্য তাতেও রয়েছে শরাবে সাকীনাহ।
(৫)
কেন এটি এতটা আবেদনময়?
কেন এটি এমন করে হৃদয়কে স্পর্শ করলো। কী এমন আছে দুই মলাটের মাঝে থাকা কয়েকটি সাদা কাগজে যা কলবের নহরে, ভাবের সাগরে এমন তরঙ্গের উচ্ছাস সৃষ্টি করলো?
প্রথমে যেটার কথা বলবো সেটা হলো বাইতুল্লাহ। আল্লাহর ঘর। এর প্রতি কার আবেগ নেই?
আর বাইতুল্লাহর এক মেহমানের কলমেই যখন উঠে আসে বাইতুল্লাহর মেহমানের কলমে, তখন এর লাযযত তো তুলনাহীন হবেই!
হারামাইন পেজে গত কয়েকদিন ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ এসেছে।
একটি ছোট্ট বাবুকে দেখা গেল তালবিয়া পাঠ করতে। ও যে কি মিষ্টি করে তালবিয়া পড়ছিলো! দেখে নিজের অজানতেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি চলে এলো।
ক্বলবের ভেতর একটা কথাই বারবার গুঞ্জরিত হতে লাগলো; এই পুচকির জিবন তো কামিয়াব। ওতো সফল হয়ে গেলো।
শিশুরা পবিত্র। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা দয়াময় আল্লাহও মহাপবিত্র। রব্বে কারিমের ঘরও পবিত্র।
আহা... এ যেন পবিত্রতার এক বিশুদ্ধ বাগান।
মনে পড়ে 'বাইতুল্লাহর মুসাফির' বই পড়ার সেই মধুময় অনুভূতির কথা।
উস্তায আবু তাহের মেসবাহ লিখেছেন তাঁর হজ্বকথন।
কা'বার প্রতি হযরতের যে আবেগ প্রকাশ পেয়েছিলো তাঁর কলমের কালিতে কাগজের জমিনে, অন্তরকে আন্দোলিত করেছিলো সেই ভাষা, অশ্রু ঝড়িয়েছিলো নয়নে।
আহ... কা'বা। আহা বাইতুলল্লাহ। তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে আমার মন যে ব্যাকুল হয়ে আছে।
ইয়েমেনের 'কিসওয়া'কে জড়িয়ে অকুল আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তোমাকে একবার সামনাসামনি দেখতে হৃদয় যে উতলা হয়ে উঠছে।
নজিব যেমন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ঈমানি জযবায়, ভালবাসা, প্রেমে, শ্রদ্ধায় কেঁদেছিলো, আমিও তোমার দর্শনে দু' ফোঁটা অশ্রু ঝড়াতে চাই।
যখনই কা'বার একটা প্রতিকৃতি দেখি, মনে হয় যেন ভেতরে একটা হাহাকার চলছে। কেন যেন তখন অদ্ভুত একটা পিপাসা লাগে।
কোন পানিই পারে না সেই পিপাসা মেটাতে।
ইসমাঈল বিন ইবরাহিমের পদাঘাতে উদয় হওয়া সেই পবিত্র কূপের পবিত্র পানির স্বাদই পারে এ পিপাসা মেটাতে।
আহ... প্রিয় কা'বা। আহ...... বাইতুলাহ।
এরপর যেটা বলবো তা হলো; গল্পের সমাহার। বর্ণনার বিচিত্র বিচিত্র তরিকা। বহু শত শব্দের সমাবেশ যা প্রতিনিয়ত মুক্তোর মত ঝকঝক করেছে৷
শব্দের এমন বিচিত্র খেলা প্রতি সাহিত্যপ্রেমীর হৃদয়মহলে দোলা দেবে।
সোহবত বা সাহচর্যের দীর্ঘ গল্প রয়েছে এই কিতাবে।
সোহবতের গুরুত্ব যে কত বেশি, তা বোঝাতে দু'টো লাইন বই থেকে তুলে ধরতেই হয়,
"কিতাবের হাজার পাতার চেয়ে আল্লাহর কোন নেক বান্দার ক্ষণিকের ছোহবত অনেক বেশী উপকারী। কিতাব হয়তো জ্ঞান দান করে, কিন্তু ছোহবত দান করে অন্তর্জ্ঞান। অধ্যয়ন যদি হয় প্রদীপ, সান্নিধ্য হলো হৃদয়ে সেই প্রদীপের প্রজ্বলন।"
আবু তাহের ছাহেব সংগ্রামী আলেম হযরত হাফেজ্জি হুযুর রহিমাহুল্লাহ এর নাত-জামাই। একইসাথে সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রও বটে।
হাফেজ্জি হুযুরের সোহবতে থেকে লেখকের বর্ণিত বহু ঘটনা তোমাকে মুগ্ধ করবেই।
এটি একটি মধুময় সফরনামা। যার প্রতিটি পাতায় পাতায় তুমি পাবে বাস্তবমুখী বহু শিক্ষা, বেঁচে থাকার জন্য বহু অনুপ্রেরণা, লেখকের সাথে ভ্রমনের অনুভূতি আর সাহিত্যের বহু উপাদান।
সর্বোপরি এটিকে শুধুই একটি সফরনামা বললে হয়তো অন্যায়ই হবে।
এই আলোচনাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে। এখন শেষ করা প্রয়োজন। তাই আর কোন কিছুই বলতে চাই না।
বই থেকে আরও এক চিমটি উল্লেখ করে শেষ করতে চাই।
(৭)
করাচীর নাযিমাবাদে যেখানে আমরা মেহমান ছিলাম, সেটা ছিলো হযরত হাফেজ্জী হুযুরের খাছ মুহাব্বাতের মানুষ হাজী হাবীব ছাহেবের বাড়ী। তিনি ঢাকায় থাকতেন। তাঁর কন্যা ও জামাতা পরম যত্নের সঙ্গে আমাদের মেহমানদারি করেছেন। তাদের আন্তরিকতা ভোলার মত নয়। অকৃতজ্ঞ বান্দা ভুলে যেতেও পারে, কিন্তু 'কৃতজ্ঞ' মনিব ভোলেন না, ভুলতে পারেন না।
বিদায়ের আগের দিন তাদের ছোট ছেলে— নাম মনে নেই, আমার সঙ্গে তার বেশ ভাব হয়েছিলো— সে চুপি চুপি আমার কাছে এলো; ভাবখানা, কেউ যেন দেখে না ফেলে। আমি কিছুটা অবাক, সে আমাকে আরো অবাক করে দু'টো চকলেট হাতে দিয়ে বললো, 'আল্লাহ মিয়াঁকো দে দেনা।'
আমি তার হাদিয়া নিয়ে গিয়েছিলাম আল্লাহ মিয়াঁর কাছে। সে যদি বেঁচে থাকে, এখন নিশ্চয় বেশ জোয়ান হয়েছে। আমার বড় জানতে ইচ্ছা করে, তার কি মনে পড়ে আল্লাহ মিয়াঁর কাছে পাঠানো হাদিয়ার কথা?
আল্লাহ যেন তার হাদিয়া কবুল করেন, আল্লাহ যেন তার দিলের তামান্না পূর্ণ করেন।
জীবনের অনেক বড় একটি সৌভাগ্য যে, এক অবুঝ শিশুর অবুঝ হাদিয়া আল্লাহ মিয়াঁর কাছে আমি বহন করে নিয়েছিলাম।
“বাইতুল্লাহর মুসাফির” নিয়ে আলোচনা এখন শেষ করছি। আরেকদিন “বাইতুল্লাহর ছায়ায়” নিয়ে গপ্প করবো ইনশাআল্লাহ। ততদিন আমাকে রেখো তোমার দু‘আয়।
আলোচ্য বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে একটি বুকশপে অর্ডার করতে পারেন৷ সেখানে অতিরিক্ত ছাড় পাবেন ইনশাআল্লাহ।
(বুকশপ লিংক কমেন্টে)
আলোচ্য বইটির অডিও ভার্শন পাবেন ইউটিউবে।
(ইউটিউব লিংক কমেন্টে)
কৃতজ্ঞতা।
[১] সুনানু ইবনে মাজাহ৩৪৪১
তিরমিযী ২৩৭৭। সহীহাহ ৪৩৯,৪৪০, তাখরীজু ফিকহুস সায়রাহ ৪৭৮।
আবু নাসার
২৮রজব ১৪৪৪হিজরী
১০ফেব্রুয়ারি ২০২৩ঈসায়ী।