24/09/2025
একজন গ্রামের হতদরিদ্র কৃষকের জীবন সংগ্রাম, আশা ও প্রেরণার গল্প নিয়ে………
: “মাটির মানুষ: এক হতদরিদ্র কৃষকের জীবনগাথা”
বাংলাদেশের মাটি আর মানুষের গল্প মূলত কৃষকের গল্প। কিন্তু সেই গল্পে সব সময়ই থাকে না সফলতার আলো। অনেক সময়ই সেটা হয়ে ওঠে এক অবর্ণনীয় সংগ্রামের উপাখ্যান। আজকের এই লেখা একজন হতদরিদ্র গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকের জীবনের বাস্তবচিত্র।
জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম আব্দুল । পৈতৃক জমি বলতে ১০ শতক মাত্র। বাবার অকাল মৃত্যুতে মাত্র ১২ বছর বয়সেই হাতে নিতে হয় হালের লাঙল। শিশুমন তখন বুঝে ওঠেনি, বইয়ের পাতার বদলে হাতে উঠে আসা কোদালটা তার ভবিষ্যতের অংশ হয়ে যাবে।
বাড়ির ভাঙা চালের নিচে, এক মায়ের চোখে প্রতিদিন ফুটে উঠত না জানি কত স্বপ্ন—যেগুলো দারিদ্র্যের কাছে হার মানত বারবার। আব্দুল প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই মাঠে যেত, কখনো নিজের জমি চাষ করত, কখনো অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করত। দিনের শেষে ২০০-৩০০ টাকা পেলেই খুশি।
এক সময় ধান-চালের দাম কমে যাওয়ায় সে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধারদেনা করে কিনে আনা বীজ ও সার বিফলে যায় খরার কারণে। সংসারে তখন স্ত্রী ও দুটি সন্তান। পেটে ভাত নেই, তবুও হাল ছাড়েননি মালেক।
আলো আসতে শুরু করে
একদিন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হয় গ্রামে। মালেক প্রথমে দ্বিধা করলেও পরে অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি শিখে নেন আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ, পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন ও ক্ষুদ্র পুকুরে মাছ চাষের পদ্ধতি।
সাহস করে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে বাড়ির পাশে এক টুকরো জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথমে লাউ, ঝিঙে, ঢেঁড়স—তারপর ধীরে ধীরে ফুলকপি ও মুলা। কয়েক মাসের মধ্যেই স্থানীয় বাজারে তার উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ে।
সেই আয়ের টাকায় সে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করায়। স্ত্রীকেও বাড়ির উঠানে হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহিত করে। আব্দুলের বাড়ি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে এক ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক ‘হোমস্টেড’ মডেল, যেটি এখন অন্য কৃষকদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
হ্যাঁ, মালেক এখনও ধনী হয়ে যাননি। তার এখনো ব্যাংকে কোনো বড় হিসাব নেই, নেই শহরে কোনো ফ্ল্যাট। কিন্তু তার চোখে এখন আত্মবিশ্বাস, মুখে হাসি—কারণ তিনি জানেন, তার পরিশ্রম বিফলে যাচ্ছে না।
গ্রামের আব্দুলের মতো হাজারো কৃষক আছেন এই দেশে—যারা অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছেন। প্রয়োজন কেবল একটু দিকনির্দেশনা, সুযোগ, আর সমাজের সহানুভূতি।
এই গল্প কেবল একজন কৃষকের নয়, এটি বাংলাদেশের মাটির মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি।