02/11/2025
স্ক্যাবিস (Scabies) রোগ পুনরায় ফিরে আসার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে এবং এর প্রতিকারের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এখানে পুনরায় স্ক্যাবিস ফিরে আসার প্রধান কারণসমূহ এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা আলোচনা করা হলো:
🦠 স্ক্যাবিস ফিরে আসার কারণসমূহ
স্ক্যাবিস একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ যা 'সারকোপ্টেস স্ক্যাবিআই' (Sarcoptes scabiei) নামক ক্ষুদ্র মাইট বা পরজীবীর কারণে হয়। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও রোগটি ফিরে আসার প্রধান কারণগুলো হলো:
* ১. সঠিক চিকিৎসার অভাব বা অসম্পূর্ণ চিকিৎসা:
* রোগীকে যে ওষুধ (সাধারণত পারমিথ্রিন ক্রিম বা লোশন) দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার না করা বা নির্দেশিত সময়ের জন্য ব্যবহার না করা।
* ওষুধ লাগানোর সময় ঘাড়ের নিচ থেকে পুরো শরীরে (শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ও মুখমণ্ডলসহ) না লাগানো। মাইটের ডিম থেকে যাওয়া।
* ২. ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা সবার চিকিৎসা না করা:
* রোগীর পরিবারের সকল সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের (যেমন - একই ঘরে বা বিছানায় থাকা) একই সময়ে চিকিৎসা না করা। স্ক্যাবিস ছোঁয়াচে হওয়ায় একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মধ্যে সহজেই এটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
* ৩. জামাকাপড় ও বিছানা জীবাণুমুক্ত না করা:
* চিকিৎসা শুরুর আগের ৩ দিনের মধ্যে ব্যবহৃত সকল কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করা। মাইটগুলো এসব জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে।
* ৪. পুনরায় সংক্রমণ (Reinfection):
* চিকিৎসার পর আক্রান্ত বা অপরিষ্কার কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শে আসা বা দূষিত জিনিসপত্র (কাপড়, তোয়ালে ইত্যাদি) ব্যবহার করা।
* ৫. পরিবেশ পরিষ্কার না রাখা:
* ঘরে থাকা আসবাবপত্র, কার্পেট ইত্যাদি সঠিকভাবে পরিষ্কার বা ভ্যাকুয়াম না করা, বিশেষ করে 'ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস' (Crusted Scabies) এর ক্ষেত্রে।
🛡️ স্ক্যাবিসের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
স্ক্যাবিস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে এবং পুনরায় সংক্রমণ এড়াতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া অত্যাবশ্যক:
১. সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ:
* চিকিৎসা নির্দেশনা অনুসরণ: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী স্ক্যাবিসাইড ক্রিম বা লোশন (যেমন: পারমিথ্রিন) সঠিক নিয়মে ও সঠিক সময়ের জন্য ব্যবহার করুন। সাধারণত, এটি ঘাড়ের নিচ থেকে পুরো শরীরে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর ধুয়ে ফেলতে বলা হয়।
* একই সাথে সবার চিকিৎসা: আপনার পরিবারের সকল সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের, তাদের লক্ষণ থাকুক বা না থাকুক, একই দিনে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এটি রোগের চক্র ভাঙতে সাহায্য করে।
* অতিরিক্ত ঔষধ ব্যবহার (প্রয়োজনে): যদি প্রথমবারে কাজ না হয় বা গুরুতর সংক্রমণ (ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস) থাকে, তবে ডাক্তার আপনাকে মুখে খাবার ওষুধ (যেমন: আইভারমেকটিন) বা অন্য কোনো স্ক্যাবিসাইড ক্রিম দ্বিতীয়বার ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
* চুলকানির উপশম: মাইট মারা যাওয়ার পরও অ্যালার্জিজনিত কারণে চুলকানি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। এর জন্য ডাক্তার অ্যান্টিহিস্টামিন বা স্টেরয়েড ক্রিম দিতে পারেন।
২. পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ:
* গরম জলে ধোয়া: চিকিৎসা শুরুর আগের ৩ দিনের মধ্যে ব্যবহৃত সকল পোশাক, তোয়ালে এবং বিছানার চাদর কমপক্ষে 50^\circ C (বা 122^\circ F) এর বেশি গরম জলে ধুয়ে উচ্চ তাপে শুকাতে হবে।
* জীবাণুমুক্তকরণ (যা ধোয়া সম্ভব নয়): যে জিনিসগুলো ধোয়া সম্ভব নয় (যেমন- পুতুল, বড় বালিশ), সেগুলো একটি বন্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দিন। মানুষের ত্বক ছাড়া মাইটগুলো সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের বেশি বাঁচতে পারে না।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঘর এবং আসবাবপত্র (সোফা, কার্পেট) ভালো করে ভ্যাকুয়াম করুন।
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
⛔যদি ৪ সপ্তাহের মধ্যেও চুলকানি বা ফুসকুড়ির উন্নতি না হয়, তবে বুঝতে হবে মাইট সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়নি বা পুনরায় সংক্রমণ হয়েছে। এই অবস্থায় অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজে নিজে একাধিকবার চিকিৎসা করার চেষ্টা করবেন না।
#চর্মরোগ #স্ক্যাবিস