
04/08/2025
আগস্ট ২০২৫ইং; প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হলো?
___ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী
আগস্টের ৪, ২০২৫ইং। আর একদিন পরই ফ্যা-সি/বাদ পতনের বর্ষপূর্তি হতে চলছে। একদল দেশপ্রেমিক, সমাজ সচেতন, দামাল যুবকদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যা-সি/বাদের জগদ্দল পাথর থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে।
৫ই আগস্ট ফ্যা-সি/বাদের পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং ও সেমিনারের কর্মসূচি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে ফেলেছে। সহস্রাধিক মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় এ জাতি অর্জন করেছে, সে বিজয় অর্জনের পর একটি বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু এদেশের তরুণ ও যুবকরা যে ধরণের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে এসেছিল, তা পূরণ হয়েছে কিনা হিসাব-নিকাশ করার এখনই সময়।
এ দেশের প্রতিটি সমাজ সচেতন, মুসলিম ও দেশপ্রেমিক নাগরিকের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল এটাই যে, এমন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে, একদিকে তা যেমন ভা-র/তীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত থাকবে, ঠিক তেমনই প-শ্চি/মা আ-গ্রা/সন থেকেও মুক্ত থাকবে। যে দেশের অর্থনীতি হবে টেকসই। শিক্ষা ব্যবস্থা হবে একদিকে আখিরাতমুখী, আরেকদিকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদনমুখী। যে দেশের থাকবে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। যে আশা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা নিয়ে এ দেশের তরুণ, যুবক ও ছাত্র-জনতা মাঠে নেমেছিল, তার দশ ভাগের এক ভাগও বর্তমান সরকার পূরণ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।
এখন দেশবাসী অপেক্ষার প্রহর গুনছে ৫ তারিখ 'জুলাই সনদে' কি ঘোষণা আসে? তবে যাই ঘোষণা আসুক, যে ধরণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, রক্ত দিয়েছে, তার সিকিভাগ পূরণ হবে বলেও মনে হচ্ছে না।
বর্তমানে যেকোনো রাষ্ট্র গড়ে ওঠে, হয় আদর্শবাদী রাষ্ট্র হিসেবে কিংবা (Behavioralism) চেতনাবাদের ধারণাকে লালন করে। কিন্তু বর্তমান সরকার মাসের পর মাস চেষ্টা করেও রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন করার মতো কোনো সংস্কার আনতে পারেনি। তাদের ভাষায় কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি এবং স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাও তারা দিতে পারেনি যে, দেশটি কি আদর্শবাদী রাষ্ট্র হবে নাকি চেতনাবাদের ধারণার উপর বাংলাদেশকে গড়ে তোলা হবে।
যদি আদর্শবাদী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়, আর সেটা যদি হয় প-শ্চি/মা কথিত মডার্ন আদর্শ, গণতন্ত্রের নিউ ভার্সন; তার দ্বারা তো আসলে কখনোই একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ, নিরাপদ জনপদ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। যে জনপদে সকল মানুষ তাদের অধিকার পাবে, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হবে, আইনের শাসন থাকবে। কারণ খোদ প/শ্চি-মা/দের পক্ষেও তা করে দেখানো সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয় হচ্ছে “চেতনাবাদ” বা “Behavioralism”। এই মতবাদের উপর রাষ্ট্রকে গড়ে তোলা হলে, মূলত তা বাংলাদেশের ঐতিহ্য, পরিবেশ ও সভ্যতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী হবে। তাই সে ধরণের চেতনাবাদের ধারণার উপরও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি গড়ে উঠতে পারে না।
তাহলে একথা সুস্পষ্ট ভাবেই বলা যায় যে, শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্ব লাভ করেছে। আর যেহেতু এ দেশের অধিক সংখ্যক মুসলমান তাদের জীবনের চাইতেও বেশি ইসলামকে ভালোবাসে, অতএব ইসলামের সুমহান রাজনৈতিক আদর্শের উপর যদি আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারি, সেরকম একটি বাংলাদেশেই মানবাধিকার সংরক্ষিত হবে, আইনের শাসন অস্তিত্ব লাভ করবে, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হবে এবং সেরকম বাংলাদেশই ভা-র/তীয় আধিপত্যবাদ ও প/শ্চি-মা আ-গ্রাসন থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশে তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের কাছে আমাদের এ কথাগুলো গ্রহণ করার মতো ধৈর্য এখনো তৈরি হয়নি; তবে এই দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক ও তরুণ এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, যে দেশটি ইসলামের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সেই স্বপ্ন পূর্ণ করুন।
পাশাপাশি দেশের প্রতিটি সচেতন মুসলিম ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের কাছে আহ্বান থাকবে, আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে ফ্যা-সি/বাদ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। হি-ন্দু/ত্ব-বাদী ভা/র-তীয় আধিপত্য থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যারা গভীর সচেতন, তাদের দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের দিকে প-শ্চি/মা ঝড় ধেয়ে আসছে। অতএব, তা মোকাবিলা করার জন্যেও দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান এবং দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন।