22/04/2025
ড.আবদুল মঈন খান শুধু নরসিংদীর নয়; বাংলাদেশের নেতা! অথচ ড.মঈন খানের পি এস পরিচয়ে বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টন নামে পলাশের এক বিএনপি নেতাকে নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র।
তাহলে ড.খান'র ক্লিন ইমেজে কি থাবা বসালেন তিনি?
পড়ুন বিস্তারিত.......
ড.মঈন খানের ক্লিন ইমেজে 'মিল্টন'র থাবা!
মো.মাহবুব আলম :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, বর্ষিয়ান রাজনৈতিক, এক সময়ের জনপ্রিয় পার্লামেন্টারিয়ান ও সাবেক মন্ত্রী ড.আবদুল মঈন খান জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতেও তার অবাধ বিচরণ। জনগনের ভালোবাসায় নিরন্তর নিবেদিত বলেই নির্বাচনী এলাকা নরসিংদী -২ পলাশের রাজনীতিতে ড.মঈন খানের বিকল্প তিনি নিজেই।
হয়তো এ কারনেই গেলো ৩০ বছরে নরসিংদীর পলাশে বিএনপির কাণ্ডারি হিসেবে সেকেন্ডম্যান হিসেবে তেমন কেউ তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীদের কেউ কেউ সম্মান করে এমনও বলেন-'মঈন খানের বিকল্প কে হবে? '
সেই ড.আবদুল মঈন খানের গলার কাটা হয়ে উঠেছেন পলাশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) পরিচয়ে ইতোমধ্যেই একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন পলাশ উপজেলায়। আ'লীগের লজ্জানক পতনের পর গেলো ৯ মাসে সিএনজি-ট্যাম্পুস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে পলাশ-ঘোড়াশালের বিভিন্ন বাস-ট্রাকস্ট্যান্ডের দখলসহ মিল-কারখানায় চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠেছে মিল্টন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় নেতাকর্মী জানান, ড. মঈন খান বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে পলাশ-ঘোড়াশালের ‘কুতুব’ বনে গেছেন মিল্টন। উপজেলার ১২৮টি মিল-কারখানা মিল্টন সিন্ডিকেটের দখলে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদাও আদায় করেন তার শিষ্যরা। তার বিরুদ্ধে সোমবার (২১ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগও দায়ের করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একজন।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়-পলাশ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পরই উপজেলা ছাত্রদলের তিন নেতা ও যুবদল নেতা ইয়াবা মনিরকে দিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেন মিল্টন। ঘোড়াশাল সার কারখানা, প্রাণ আরএফএল, হামীম, আকিজ, দেশবন্ধুসহ সরকারি ও বেসরকারি ১২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানই এখন তার নিয়ন্ত্রণে। চাঁদাবাজির শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে নেন ঘোড়াশাল সার কারখানা। সবচেয়ে বেশি টাকা আসে সেখান থেকেই। আর সার কারখানা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন তারই চার ভাই— শামীম, আমিনুল, সাখাওয়াত ও সোহেল।
জানা গেছে, দুটি ফার্মের মাধ্যমে মিল্টন সিন্ডিকেট ঘোড়াশাল সার কারখানার টেন্ডার নিজেদের কব্জায় রাখে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মেসার্স জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজ আওয়ামীপন্থি ফার্ম হিসেবে পরিচিত থাকলেও ক্ষমতার দাপটে মিল্টন ওই ফার্মের সকল কাগজপত্র অ্যাফিডেভিট করে নিজের নামে নিয়ে নেন। যার মাধ্যমে সার কারখানার যাবতীয় টেন্ডার নিয়ে কাজ করছে তার সিন্ডিকেট। ওই ফার্মের অধীনে বর্তমানে ৭০০ শ্রমিক লোড-আনলোডের কাজ করছে। এছাড়া সারকারখানা থেকে দৈনিক ৩০০ ট্রাক মালামাল পরিবহন হয়। প্রতি গাড়ি থেকে ৭০০ টাকা হারে দৈনিক ২ লাখ ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে মিল্টন সিন্ডিকেট।
জেরিন সিকিউরিটি নামের দ্বিতীয় ফার্মটিও আওয়ামীপন্থি। এই ফার্ম রামপাল প্রকল্পের কাজ করতো। মিল্টন এই ফার্মটিও নিজের নামে লিখে নেন। এই ফার্মের মাধ্যমেই সার কারখানায় ৩০০ অদক্ষ শ্রমিক কাজ করছে।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াশাল সার কারখানার পরিত্যক্ত মিলের মালামালও সরিয়ে নিচ্ছে মিল্টন সিন্ডিকেট। যেখানে হাজার কোটি টাকা মূল্যের পরিত্যক্ত মালামাল পড়ে আছে। এর মধ্যে— লোহা, তামা, কপার, কয়েল, ইলেকট্রিক তার অন্যতম। ওই মিল থেকে মাটি, কার্টন বের করতে যে টেন্ডার হয়, ক্ষমতার প্রভাবে সেটিও ভাগিয়ে নেন মিল্টন। পরিত্যক্ত কারখানার নিরাপত্তা জোরদার ও চুরি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও ২০০ আনসার মোতায়েন করে। কিন্তু টেন্ডারের মাল পরিবহনের আড়ালে ট্রাকে করে লোহা ও অন্যান্য মালামাল বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে মিল্টন সিন্ডিকেট।
এমন অভিযোগ'র পাহাড় নিয়ে ড.মঈনের নামের উপর ফেলে তার ক্লিন ইমেজকে মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও এ বিষয়ে ড.আবদুল মঈন খান এখনো মুখ খুলেননি। এ সংবাদ প্রকাশ পর্যন্ত মুখ খুলেননি খোদ মিল্টনও!