02/05/2025
আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَتَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَتُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ ؕ وَلَوۡ اٰمَنَ اَہۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ مِنۡہُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَاَکۡثَرُہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
(হে মুসলিমগণ!) তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করে থাক ও অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাক এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। কিতাবীগণ যদি ঈমান আনত, তবে তাদের পক্ষে তা কতই না ভালো হত। তাদের মধ্যে কতক তো ঈমানদার, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান। (আলে ইমরান ৩/১১০)।
অত্র আয়াতে শ্রেষ্ঠ জাতির প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে।
যথাঃ এক. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।
দুই. আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা।
আলোচ্য আয়াতে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর পরেই ঈমান-এর কথা বলার মাধ্যমে ইহুদী-নাছারা ও মুনাফিকদের স্বার্থদুষ্ট চরিত্রের বাইরে এসে প্রকৃত ঈমানের সাথে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ‘আমর বিল মা‘রূফ’-এর দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমেই কেবল ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ হওয়া সম্ভব, সেকথা বলে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের বানোয়াট সংস্কার বা তাদের রচিত বিধান আমর বিল মা‘রূফ হিসাবে নির্ধারিত হবে না। বরং এর সঠিক মানদন্ড হবে ‘ঈমান’। অর্থাৎ আল্লাহ প্রেরিত সত্য বিধানই হ’ল মা‘রূফ ও মুনকারের প্রকৃত মানদন্ড। কেননা বান্দার প্রকৃত কল্যাণকামী হলেন আল্লাহ এবং তাঁর বিধানই বান্দার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কল্যাণের চাবিকাঠি। তাঁর আদেশ-নিষেধই হল প্রকৃত অর্থে মা‘রূফ ও মুনকার। ফলে শরী‘আত অনুমোদিত বিধানই হ’ল মা‘রূফ বা সৎকাজ এবং সেখানে নিষিদ্ধ বিষয় হ’ল মুনকার বা অসৎকাজ।
ইসলামের উপরোক্ত শান্তিময় আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য শয়তান সর্বদা চেষ্টিত থাকে। সে সর্বদা মানুষকে অন্যায় কাজে উস্কে দেয়। আর সেজন্য আমর বিল মা‘রূফের সাথে নাহী ‘আনিল মুনকারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্ত্ততঃ নাহী ‘আনিল মুনকার ব্যতীত আমর বিল মা‘রূফ প্রতিষ্ঠা লাভ করে না। যেমন ত্বাগূতকে অস্বীকার করা ব্যতীত তাওহীদ হাছিল করা যায় না। ‘লা ইলাহা’ না বলা ব্যতীত ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা যায় না। পাপের শাস্তি তাই সমাজে পুণ্যের পথ খুলে দেয়। পাপীর শাস্তি পাওয়াটা পাপীর জন্য যেমন ইহকালে ও পরকালে কল্যাণকর, তেমনি সমাজের জন্য মঙ্গলময়। একারণেই ইসলামী শরী‘আতে বিভিন্ন অপরাধের জন্য বিভিন্ন দন্ডবিধি নির্ধারিত হয়েছে। যা প্রকৃত অর্থে সমাজের জন্য রহমত স্বরূপ। যে সমাজে ইসলামী দন্ডবিধি যথাযথভাবে চালু থাকে, সে সমাজে শান্তি ও অগ্রগতি অব্যাহত ও ক্রমবর্ধমান থাকে।
আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর গুরুদায়িত্ব সকল মুসলিমের উপর ন্যস্ত। যা তারা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে দূরদর্শিতার সাথে পালন করবেন। যার সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হল মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। যারা ইসলামের দন্ডবিধি সমূহ বাস্তবায়ন করবে। না করলে তারা কবীরা গোনাহগার হবে এবং ইহকালে ও পরকালে আল্লাহর কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!