08/07/2025
-"ডক্টর এ.এ.সিকে, কে কি বলেছে?
খান বাড়ির আর চৌধুরী বাড়ির সকলে চুপ করে আছে দেখে ডক্টর ইরফান আবারো জিজ্ঞেস করল,,
- "আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না তোমরা? আমার উত্তর চাই আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও?
কিছুক্ষণ আগে,,,
ডক্টর এ.এ.সি খান বাড়ির আসাদ খানের হার্ট অপারেশনের জন্য ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসার কথা। সকাল এগারোটায় অপারেশন হওয়ার কথা। তার দশটায় হসপিটালে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এখন দশটা চল্লিশ বেজে গেছে কিন্তু ডক্টর এ.এ.সি এখনো হসপিটালে এসে পৌছায় নি। তাই সবাই টেনশন করছিলো কারন আসাদ খানের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। একটু দেরি হলে যেকোনো কিছু হতে পারে। খান বাড়ির আর চৌধুরী বাড়ির সকলেই এটা নিয়ে টেনশন করছে। তখনি একটা বোরকা পরিহিত মেয়ে মুখে মার্কস চোখে সানগ্লাস পরে হসপিটালে প্রবেশ করলো। চশমার জন্য চোখটা ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে না। খান বাড়ির আর চৌধুরী বাড়ির সকলে জানতে পারলো এটাই ডক্টর এ.এ.সি । ডক্টর এ.এ.সি এসে পৌঁছালেন দশটা পঁয়তাল্লিশ এ ডক্টর আসতেই আয়াজ ইমদাদ খান তার সামনে গিয়ে বলল,,,
-"আপনার কান্ডজ্ঞান নেই এতোক্ষণ লাগে আসতে, আপনার কয়টায় আসার কথা ছিল। আপনার দশটায় হসপিটালে থাকার কথা ছিল। ডক্টর হয়ে এতো ইরেসপন্সিবল কিভাবে হতে পারেন আপনি। আপনার একটু দেরি হওয়ার জন্য আমার বাবার যদি কিছু হয়। তার দায় কি আপনি নিবেন। আপনাকে তো টাকা দেওয়া হবে আমার বাবার অপারেশনের জন্য। তাহলে আপনি লেট করে আসলেন কেন? "
এ কথা শুনে ডক্টর এ.এ.সি একটু রেগে গেলেও কিছু বলল না। চোখে দেওয়া সানগ্লাস আর মুখের মাক্স এর ভেতরে রাগটা হজম করে নিলো। তারপর কঠোর স্বরে বলল,,,
-What time is it now?
এ কথা শুনে আয়াজ সহ ওখানে থাকা সকলেই অবাক হলো। তারপর একটু কঠোর স্বরে বলায় সবাই একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে ডক্টর এ.এ.সি রেগে গেছে। তখন আয়াজ ইমদাদ বলল,,
-"মানে?
-"আপনি আমার কথা বুঝতে পারেন নি আমি জানতে চাচ্ছি কয়টা বাজে এখন !
ইমদাদ বোকা চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,,
-"দশটা পয়তাল্লিশ!
-"অপারেশন শুরু কয়টায়?
-বেলা এগারোটায়!
--"তাহলে, আপনার কি মনে হয় ডক্টরদের আর কোন কাজ থাকে না। এগারোটায় অপারেশন শুরু করতে পারলেই তো হয়। আমি কখন আসলাম না আসলাম সেটা ম্যাটার করে না। ঠিক টাইমে অপারেশন শুরু হয়েছে কিনা সেটাই ম্যাটার করে। ডক্টরদের টাকা দেন বলে তারা সবসময় আপনাদের কথা মতো চলবে। তারা তাদের নিজেদের কাজ করতে পারবে না। আপনার যদি আমাকে সে দলের মানুষ মনে হয় তাহলে আমি দুঃখিত আমি এ অপারেশন করতে পারবো না!
এ কথা শুনে সবাই একটু ভয় পেল। সত্যিই যদি এখন উনি অপারেশন না করে তাহলে কি হবে। আয়াজ কিছু বলবে তার আগেই একটা পিচ্চি মেয়ে এসে ডক্টর এ.এ.সি এর হাত ধরে টান দিলো। ডক্টর তাকিয়ে দেখলো একটা পিচ্চি তাই ও হাঁটু তার সামনে বসলো। তখন মেয়েটা বলল,,
--" আন্টি তুমি এ অপারেশন টা করো প্লিজ । যদি ঠিক সময়ে দাদুর অপারেশন না হয়। তাহলে নাকি দাদুকে বাঁচানো যাবে না। তুমি জানো আমাকে কেউ দাদুর কাছে আনতেই চাইছিল না। আমি জোর করে এখানে এসেছি।
তখন ডক্টর এ.এ.সি বলল,,
-"তোমাকে এসব কে বলেছে মামনি। তোমার দাদুর কিছু হবে না। তোমার দাদু একদম ঠিক হয়ে যাবে।
- "কেউ বলে নি আমি শুনেছি । তুমি জানো দাদু আমাকে অনেক ভালোবাসে আমার জন্য রোজ চকলেট আনে। আমার সাথে খেলা করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। যদি দাদু না থাকে তাহলে দাদুর মতো আমাকে ভালোবাসবে কে চকলেট আনবে কে আমাকে নিয়ে খেলবে কে। তুমি প্লিজ আমার দাদুকে ঠিক করে দাও ।
বলেই পিচ্চি মেয়েটা কেঁদে দিল। ওর কান্না দেখে বাড়ির সকলেই কাঁদতে লাগলো। ডক্টরের ও খারাপ লাগলো। তাই বলল,,
-তুমি একদম কান্না করো না পিচ্চি। তুমি না স্ট্রং গাল । আমার দাদুভাই বলে স্ট্রং গার্লরা কখনো কাঁদে না। তোমার দাদুর কিছু হবে না। তোমার দাদুকে আমি জাদু দিয়ে ঠিক করে দেব। দেখবে কয়েক দিন পরেই তোমার সাথে খেলবে।
- "সত্যিই!
- "একদম সত্যি!
- "আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর কাঁদবো না। আর আমি এখন থেকে স্ট্রং গার্ল হয়ে থাকবো।
--"ভেরি গুড, এখন আমি যাই আমাকে রেডি হতে হবে তারপর তোমার দাদুর অপারেশন করতে হবে তো।
বলেই মেয়েটার দু গাল ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
- "আপনাদের সকলের লাক ভালো। তাই এখন আমি অপারেশন টা করতে রাজি হলাম। আর এখন যেটুকু সময় নষ্ট হয়েছে সেটুকুর জন্য আপনি দায়ী মিস্টার।
বলেই ডক্টর এ.এ.সি হনহন করে চেঞ্জিং রুমে গিয়ে চেন্জ করে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পরলো। মুখে মার্কস আর চোখে চশমা বিদ্যমান। তাই ওর চেহারা কেউই দেখতে পেল না। আগে থেকেই ওর টিম এখানে এসে পরেছিল তারা ওর জন্য ওয়েট করছিল। কারন ও যেখানেই যায় ওর টিম নিয়ে যায়। আর তাদের কে আগে পাঠিয়ে দেয়। ডক্টর ইরফান তার সাথে থাকার কথা। ইরফান খান আসাদ খানের বড়ো ছেলে। ডক্টর এ.এ.সি ঢুকেই ইরফান কে বলল,,
-ডক্টর ইরফান আপনি আমাদের সাথে এখানে থাকতে পারবেন না। আপনি এখান থেকে গেলে আমরা অপারেশন শুরু করবো। এখন দশটা আটান্ন বাজে আপনাকে দুই মিনিট টাইম দিলাম তার মধ্যে এখান থেকে চলে যাবেন।
-কিন্তু কেন ডক্টর এ.এ.সি?
- আমি এমনিতেও আমার টিম ছাড়া বাইরের কাউকে এলাউ করি না। তবুও আমি আপনাকে এলাউ করেছিলাম। আমি আপনাকে কেন রাখবো না সেটা আপনার পরিবার কে জিজ্ঞেস করুন। আপনি তখন জেদ করছিলেন বলে আমি রাজি হয়েছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনি না থাকাটাই বেটার। আপনি আপনার পরিবারের কাছে থাকুন এখন তাদের আপনাকে দরকার। আর একটা কথা আমি আপনার কথায় এখানে এসেছি আপনাদের টাকার জন্য নয়। এখন আপনি এখান থেকে আসতে পারেন।
ইরফান বুঝতে পারল বাইরে কিছু একটা হয়েছে। নাহলে ডক্টর এ.এ.সি এভাবে বলতো না। যতোটুকু তার ব্যাপারে শুনেছে। সে খুব স্ট্রিক্ট আর রাগী। ইরফান খুব খুশি ছিল এতো বড়ো একটা হার্ট সার্জন এর সাথে থাকতে পারবে বলে। তার ওপর তার বাবার অপারেশন। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। তিনি একটু হলেও এ.এ.সির ব্যাপারে অবগত। তাই তিনি বিনা বাক্যে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে গেলেন। তারপর বাইরে গিয়ে পরিবারের কাছে। উক্ত প্রশ্নটি করলো।
বর্তমান,,,,
-কি হলো বলো তোমরা কি বলেছো তাকে?
তখন আয়াজ ইমদাদ এগিয়ে এসে বলল,,,
-আসলে ভাইয়া!
-আসলে নকলে বাদ দিয়ে সোজাসুজি বল!
আয়াজ ইমদাদ সবকিছু খুলে বলল। তা শুনে ইরফান রেগে বলল,,,
--"তোর সাহস হলো কিভাবে ওনাকে এভাবে বলার। তুই ওনাকে কতোটুকু চিনিস কতোটুকু জানিস ওনার সম্পর্কে। আর ডক্টর রা টাকার জন্য কাজ করে না। আমি কি টাকার জন্য ডক্টর হয়েছি। আমি ডক্টর হয়েছি মানুষের সেবা করবো বলে। তারা ডক্টর হয় তারা মানুষের সেবার জন্য কাজ করে। আমার কথায় শুধু তিনি এই অপারেশনটা করতে রাজি হয়েছিল। তার দাদুভাই অসুস্থ তিনি আসতে ই রাজি ছিলেন না। তাও আমি ওনাকে জোর করে এখানে এনেছি। আজ সত্যিই যদি পাখির কথায় রাজি না হয়ে উনি অপারেশন টা না করতেন। তাহলে কি করতি তুই কি করে বাচাতাম আমরা বাবাকে । কতোটা রিস্কি এই অপারেশন টা সেটা শুধু আমি জানি। এটার জন্য বেস্ট হচ্ছে ডক্টর এ.এ.সি। টপ সার্জন দের মধ্যে উনি একজন। তাকে তুই টাকার দেমাগ দেখাস। তোর সাহস হলো কি করে ওনাকে ওভাবে বলার।
-ভাইয়া তুই ঐ সামান্য ডক্টরের জন্য আমাকে কথা শোনাচ্ছিস।
-তুই কাকে সামান্য ডক্টর বলছিস। তুই ওনাকে কতোটুকু চিনিস , কতোটুকু ধারনা আছে ওনার সম্পর্কে। তুই যে বয়সে বাবার টাকায় ফুটানি দেখাচ্ছিস। সেই বয়সে উনি সেরা হার্ট সার্জনদের মধ্যে নিজের নাম উঠিয়ে নিয়েছে। তার সাথে ইতালিতে ওনাদের নিজেদের বিজনেস সামলায়। তোর মতো হাজার আয়াজ ইমদাদকে উনি মিনিটে কিনতে পারে। তোর বাবার কয়টাকা আছে তার থেকে দশগুণ ওনার আছে। তাকে তুই টাকার গরম দেখাস।
তখন আয়াজের বড় মামি আয়েশা চৌধুরী বললেন,,
-"তোরা দুই ভাই কি করছিস। এটা একটা হসপিটাল আর এখানে অপারেশন চলছে। তাও সেটা তোদের বাবার। ভেতরে কি হচ্ছে তোদের তা নিয়ে চিন্তা নেই। দুজনে মিলে ঝগড়া করে যাচ্ছিস। তোদের এরকম দেখে তোর মায়ের কেমন লাগছে ওনার স্বামী ভেতরে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সুয়ে আছে আর বাইরে ওনার দুই ছেলে একটা ডক্টর কে নিয়ে ঝগড়া করছে।
-"সরি মামি আর তোমরা টেনশন করো না বাবার কিচ্ছু হবে না। ডক্টর এ.এ.সির আজ পর্যন্ত কোনো অপারেশন আনসাকসেসফুল হয় নি। আর এটাও হবে না ইনশাআল্লাহ। যতো কঠিন অপারেশন ই হোক না কেন সবগুলো অপারেশন ই তিনি সাকসেসফুল করেছেন। তার জন্যই সিনিয়রদের কে দিয়ে কথা বলিয়ে আর আমি নিজে কথা বলে তাকে রাজি করিয়েছি। ইনশাআল্লাহ বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
-"তাই যেনো হয় বাবা!
আয়াজ ওর ভাইয়ের বকা খেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাবার জন্য চিন্তা করতে লাগল। আর এটাও ভাবলো সত্যি তখন ঐ ডক্টরের সাথে ওভাবে ব্যবহার করা উচিৎ হয়নি। সুযোগ পেলে ক্ষমা চেয়ে নিবে তার কাছ থেকে। আর আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে লাগল যাতে তার বাবার যেনো কিছু না হয়। অপারেশন টা যেনো সাকসেসফুল হয়।
অতঃপর তিন ঘণ্টা পর ডক্টর এ.এ.সি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো। সবাই তার দিকে এগিয়ে গেল। ইরফান একটু উত্তেজিত হয়েই জিজ্ঞেস করল,,,
-আমার বাবা এখন কেমন আছে। বাবা ঠিক আছে তো?
তা শুনে ডক্টর এ.এ.সি বলল,,,
- "রিল্যাক্স ডক্টর ইরফান আপনার বাবার অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। ইনশাআল্লাহ তিনি খুব তাড়াতাড়ি আগের লাইফ লিড করতে পারবে।
- "থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ডক্টর কিভাবে যে আপনার শুকরিয়া আদায় করবো।
- "থ্যাঙ্ক ইউ বলতে হবে না। ইটস্ মাই ডিউটি। আর শুকরিয়া জানানোর হলে আল্লাহ কে জানান আমাকে নয়। যা করার আল্লাহ ই করিয়েছে আমি তো উপলক্ষ মাত্র। এক্সকিউজ মি,,,
বলেই ডক্টর এ.এ.সি ওখান থেকে চলে গেল। তারপর চেঞ্জিং রুমে গিয়ে চেন্জ হয়ে ওর জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে গিয়ে দেখল ইরফান বসে আছে। ইরফানের সাথে আসাদ খানের ব্যাপারে সকল কথা বলল। কিভাবে কি করতে হবে । সব শেষে ইরফান বলল,,,
- "আই এম সরি ডক্টর আমি বুঝতে পারি নি আমার ভাই এরকম একটা কাজ করবে। আপনি আমার কথায় এখানে এসেছেন আর এরকম একটা কাজ হলো আমি সত্যিই লজ্জিত।
-"আরে ডক্টর ইরফান আপনি কেন লজ্জিত হচ্ছেন। আপনার এখানে কোন দোষ নেই। এখানে সম্পূর্ণ বিষয় টা আপনার ভাই করেছে তাই তার লজ্জিত হওয়া উচিত আপনার না । বাই দা ওয়ে সেই পিচ্চি টার জন্যই আমি অপারেশন টা করতে রাজি হলাম। সি ইজ ভেরি কিউট এন্ড ইন্টিলিজেন্ট গার্ল।
- "হ্যা সে ইন্টিলিজেন্ট গার্ল ই বটে। সি ইজ মাই ডটার ইনাত খান আমরা সবাই ভালোবাসে পাখি বলে ডাকি।
- "ওকে তাহলে আজ উঠি আমাকে এখনি ইতালি ব্যাক করতে হবে!
- "এখনি চলে যাবেন।
- "আপাতত বিডিতে আমার কাজ নেই। আর দাদুভাই একটু অসুস্থ আমাকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাদুভাইয়ের কাছে যেতে হবে। শুধু আপনার আর দাদুভাইয়ের কথা রাখতে এখানে এসেছি।
- "মানে?
- "আমি আসতে চাইছিলাম না দেখে দাদুভাই ই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।
-"তাহলে তো আপনার দাদুভাই আমার থেকে একটা ধন্যবাদ পায়।
- "কোনদিন দেখা হলে দিয়ে দিয়েন।আসছি,,,,
বলেই উঠে দাঁড়ালো ডক্টর এ.এ.সি। তখন ইরফান আমতা আমতা করে বলল,,
-"আপনার অপারেশনের টাকাটা!
- "আপনার কি মনে হয় আমি টাকাটা নেব। আপনি বরং ঐ টাকা দিয়ে আপনার মেয়ে পাখি কে কিছু গিফট কিনে দিয়েন। আল্লাহ হাফেজ।
বলেই ডক্টর এ.এ.সি হনহন করে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই কারো দিকে না তাকিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্টের দিকে গেল। এখানে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছিল। এখানে সবাই তার আপনজন কিন্তু কারো সাথে সে কথা বলতে পারলো না জরিয়ে ধরতে পারলো না। কাউকে বলতে পারলো না চিন্তা করো না আমি আসি তো। ডক্টর এ.এ.সির চোখটা পানিতে ভরে উঠলো। কিন্তু পানি পরার আগেই সে মুছে ফেলল কারন স্টং গার্লরা কখনো কাঁদে না। আর সে তো স্ট্রং গার্ল ই নাহলে কি পরিবার ছেড়ে এতো বছর দূরে থাকা যায়। সে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো।
"একটা মেয়ে একটা ছোট দুধের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছে একটু সাহায্যের আশায়। পেছনে কেউ নেই তবুও মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ আসছে। হঠাৎ করে সে একটা আলো দেখতে পেল।"
ডক্টর এ.এ.সি তাড়াতাড়ি চোখটা খুলে ফেলল। হয়তো সে আর ভাবতে চাইলো না। সে বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে লাগলো।
_____________________
ইরফান কেবিন থেকে বাইরে বের হয়ে। ওর পরিবারের কাছে গেল। তখন সবাই জিজ্ঞেস করল ডক্টর কি বলেছে আসাদ খানের ব্যাপারে। তার উত্তরে ইরফান বলল,,,
- "বাবার কয়েক ঘণ্টা পরেই জ্ঞান ফিরবে। বাবাকে প্রপার বেড রেস্টে থাকতে হবে একমাস। সবসময় হেলদি খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। নিয়মমাফিক চললে বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
তখন আয়াজের মা রোজিনা খান বললেন,,,,
- "যে মেয়েটা তোর বাবার অপারেশন করলো তার সাথে একবার দেখা করাবি বাবা ধন্যবাদ দেব।
- "সে তো চলে গেছে মা। তাকে আর পাবে না।
- "কি চলে গেছে !ইস মেয়েটাকে একটা ধন্যবাদ ও জানানো হলো না।
- "মেয়েটা তো আর বসে থাকে না । তার অনেক কাজ আছে। তাই সে ইতালি তে আবার ব্যাক করেছে এখনি। আসলে তার দাদু অসুস্থ। তাই রেখে এসেছে শুধু আমার কথা রাখতে । আর হ্যা তোমার ছোট ছেলেকে বলে দিও সে একটা টাকাও নেয় নি। তার টাকা দিয়ে পাখিকে গিফট কিনে দিতে বলেছে তার ফিসের টাকা দিয়ে পাখিকে এক আলমারি গিফট কিনে দেয়া যাবে। আর আগে যেয়ে কারো সাথে কথা বললে সে যেনো বুঝে সুনে কথা বলে। তার উচিত ছিল ডক্টরের কাছে থেকে ক্ষমা চাওয়া।
তখন আয়াজ ইমদাদ ইরফানের কাছে এসে বলল,,,
- "সে থাকলে আমি অবশ্যই তার কাছে থেকে ক্ষমা চাইতাম। সত্যিই তখন আমার ওভাবে বলা উচিৎ হয় নি। আসলে তখন টেনশনে ছিলাম তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি বুঝতে পারিনি ভাইয়া। এবারের মতো ক্ষমা করে দে। কথা দিচ্ছি সামনে থেকে সবার সাথে বুঝে সুনে কথা বলব। তার সাথে কোনদিন দেখা হলে আমি নিশ্চয়ই ক্ষমা চেয়ে নেব।
- "এবার ই লাস্ট কিন্তু এরপর থেকে এমন হলে কিন্তু আমি সত্যিই তোকে আর ক্ষমা করবো না। অবশ্য আমি আমার ভাইকে চিনি সে যখন বলেছে ক্ষমা চাইবে মানে সে চাইবে।
- আচ্ছা ভাইয়া এই ডক্টর কি সবসময় ই এরকম বোরকা মাক্স আর চশমা পরে প্যাকেট হয়ে থাকে। ওনার চেহারাই তো দেখা হলো না।
- "আজ পর্যন্ত ওনার চেহারা কেউই দেখতে পারেনি। যতোটুকু উনার ব্যাপারে জানতে পেরেছি উনি সবসময় পর্দা মেনটেন করে চলে। এতো টাকার মালিক কিন্তু কখনো টাকা নিয়ে অহংকার করে না। ওনার ব্যাকগ্ৰাউন্ড সম্পর্কে তেমন কেউ কিছু জানে না। এমন কি ওনার এ.এ.সির পূর্ণ নাম কি এটাও কেউ জানে না আমাদের এখানে। একজন হার্ট সার্জন ডক্টর হিসেবে সি ইজ দ্য বেস্ট। আজ পর্যন্ত কোন অপারেশন আনসাকসেসফুল হয় নি। অনেক ক্রিটিক্যাল অপারেশন ও উনি করেছেন। মাত্র দু'বছর হয়েছে উনি ডক্টর হয়েছে তাতেই অনেক উন্নতি করে ফেলেছে। উনার সম্পর্কে যতোটুকু জানি উনি খুব স্ট্রিক্ট আর রাগী কারো সাথে বাড়তি কথা বলেন না। খুব এটিটিউড নিয়ে থাকে।
-"বাহ খুব ইন্টারেস্টিং তো উনি।
- "তা তো বটেই ওনার সম্পর্কে যারা জানে। তাদের ওনার সম্পর্কে সবকিছু জানার কৌতুহল অনেক। সত্যিই বলতে আমি নিজেও আগ্রহী।
-"ক্যারেক্টার টাই সেরকম।
"সবার কাছে সবকিছু নরমাল মনে হলেও একজনের মনে হচ্ছে তার কাছের কেউ তার কাছে এসেছিলো। কিন্তু সে ধরতে পারলো না কে সে এটা হসপিটাল অনেক লোকের যাওয়া আসা। সে নিজেকে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিজের কাজ করতে লাগল।"
_________________
এক মাস পর,,,,,
আজকে আয়াতের প্রথম ক্লাস ভার্সিটিতে। সে কিছুদিন আগে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভর্তি হয়েছে।আজ থেকে ক্লাস শুরু । এখানে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। সে একাই থাকে। আয়াত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে একটা নরমাল বোরকা পরে মাথায় হিজাব পরে নিল। চোখে একটা চশমা পরলো। স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে । ভার্সিটিতে ঢুকে স্কুটিটাকে পার্ক করে আসতেই একটা কিছু দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গেল। ও দেখতে পেল একটা ছেলে একটা মেয়েকে টিজ করছে। মেয়েটার হাত ও ধরেছে মেয়েটা কাঁদছে। বাকি সবাই মজা দেখছে কেউ কিছু বলছে না। তা দেখে ও আরো রেগে গেল। ও সেখানে গেল আর বলল,,,
-"এখানে হচ্ছে টা কি?
তা দেখে মেয়েটার হাত ধরা ছেলেটা বলল,,,
-"কেন বেবি দেখতে পারছো না। এখন এখান থেকে মানে মানে কেটে পড়ো নাহলে তোমার সাথেও এমনটা হবে বেবি। দেখতে তো তুমি একটা বোম তোমাকেই তো ধরতে ইচ্ছে করছে।
- "তাই নাকি?
এ কথা শুনে ছেলেটা মেয়েটার হাত ছেড়ে দিয়ে আয়াতের হাত ধরতে এলো। ছেলেটা হাত ধরবে এমন সময় আয়াত ছেলেটার গালে একটা চড় মেরে দিল। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে রেগে আয়াতের দিকে আবারো আসতে লাগলো তা দেখে আয়াত আরেকটা চড় দিল। আর এই চড়টা এতোই জোরে ছিল যে ছেলেটা নিচে পরে গেল। তারপর আয়াত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
-"এই চরটা আমার নয় তোমার মারা উচিৎ ছিল। তোমরা মেয়েরা নরম হলে তো ছেলেরা এরকমই তোমাদের ওপর জুলুম করবে। আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে কেউ কাউকে হেল্প করবে না।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নেবে তবুও তোমাকে সাহায্য করবে না। যেমনটা তোমার চারপাশের ছেলেমেয়েরা নিচ্ছে। অথচ তোমাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে এলো না।
এ কথা শুনে ওখানেই থাকা সকলেই মাথা নিচু করে ফেলল। আসলে যে ছেলেটা মেয়েটার হাত ধরে ছিল ও ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিল। ওকে কিছু বলার সাহস কারো নেই শুধু একজন আর ওর বন্ধুরা ছাড়া কিন্তু সে তো একমাস ধরে ভার্সিটি আসছে না। তার জন্যই তো এতো সাহস পেয়েছে। তার বোনকেই আজ অপমান করছে। সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়াত মেয়েটাকে আবার বলল,,,
-"অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারো না আবার এসোছো ভার্সিটি পরতে। এখনো ছোট আছো যে ছোট বাচ্চাদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছো! এতোটুকুতেই যখন এতো কান্না আসছে তাহলে ভার্সিটি আসার কি দরকার, বাসায় মায়ের আঁচলের তলায় আর বাবার পাপা কি পারি হয়ে থাকলেই তো পারো। কান্না থামাও স্টুপিড!
মেয়েটি সব শুনে আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।নিচে পরে থাকা ছেলেটা ওঠে কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটা গেটের দিকে কিছু একটা দেখে সেখান থেকে দৌড়ে পালালো।
__________________
আয়াজ ইমদাদ আজ একমাস পর ভার্সিটিতে এসেছে। কিন্তু নিজের প্রানপ্রিয় বোনকে কাঁদতে দেখে ওর কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো। ও দেখলো কোন একটা মেয়ে ওর বোনকে কিছু একটা বলছে আর ওর বোন কাঁদছে। ও ভেবে নিল মেয়েটাই নিশ্চয়ই ওর বোনের সাথে কিছু করেছে।
ও গিয়েই আয়াতের বাহু ধরে টান দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল,,,
-"তোমার সাহস হলো কি করে আমার বোনকে কাঁদানোর। এই আয়াজ ইমদাদ খানের বোনকে তুমি কথা শোনাচ্ছো। তুমি জানো না আমি কি করতে পারি ,,,,,
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই,,আয়াতের বাহু ধরার জন্য আয়াত খুব রেগে গিয়ে আয়াজ কে একটা ধাক্কা মারলো। আয়াজ আকশ্মিক ধাক্কায় কিছুটা পিছিয়ে গেল। আর অবাক চোখে আয়াতের দিকে তাকালো। তখনি আয়াজের বন্ধু আফিয়া আয়াতকে চড় মারতে আসলে আয়াত আফিয়ার হাত ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে ধরে বলল,,,
-"অকারণে গায়ে হাত দেওয়া একদম পছন্দ করে না আয়াত!!,,,,,
-চলবে,,,,, ইনশাআল্লাহ!
#আলগোছে_ভালোবাসি
#পর্ব_১
গল্প ভালো লাগলে একটি লাইক দিবেন তাহলে পরবর্তী পর্ব লেখার উৎসাহ পাব
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের মাঝে। প্রথম পর্ব টা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। জাযাকাল্লাহ খইরান।