Rubel

Rubel লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:)

রহস্যময় গল্প পড়তে আমার ফেসবুক আইডি ফলো করুন 👉 Rubel Khandakar 💐

17/10/2025

আমার জীবনে, আমি কী কী করি নাই —

১. প্রেম করি নাই
২. বিয়ে করি নাই
৩. বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করি নাই
৪. বাজারের টাকা মেরে খাই নাই
৫. ধূমপান করি নাই
৬. নেশা করি নাই
৭. মদ খাই নাই
৮. চুরি করি নাই
৯. ডাকাতি করি নাই
১০. ছিনতাই করি নাই
১১. মেয়েদের ইভটিজিং করি নাই
১২. S*ক্স করি নাই
১৩. মারামারি করি নাই
১৪. কারো পিছনে বাঁশ দেই নাই
১৫. জুয়া খেলি নাই
১৬. নকল করি নাই
১৭. ঘুষ খাই নাই
১৮. মিথ্যা কথা বলি নাই
১৯. কারো মন কষ্ট দেই নাই
২০. কারো পিছে বদনাম করি নাই
২১. বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি নাই
২২. কাউকে ঠকাই নাই
২৩. কারো টাকা মেরে খাই নাই
২৪. পরের জিনিস কে নিজের মনে করি নাই
২৫. ফেসবুকে ফেক আইডি খুলি নাই
২৬. কারো ছবি বা নাম দিয়ে ট্রল করি নাই
27. রাস্তা ঘাটে অশ্লীল আচরণ করি নাই
28. স্কুল পালাই নাই
29. কারো প্রেমে ভাঙন ধরাই নাই
30. অন্যের কাজের কৃতিত্ব নিই নাই
31. কারো উপকারে বাধা দিই নাই
32. নামাজের সময় গান চালাই নাই
33. কারো মা-বোনকে খারাপ চোখে দেখি নাই
34. শিক্ষককে অসম্মান করি নাই
35. বাবা-মাকে কষ্ট দেই নাই
36. ছোটদের মারি নাই
37. বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করি নাই
38. গরিব মানুষকে হেয় করি নাই
39. কুকুর/বিড়ালকে মারি নাই
40. রাস্তার ময়লা ফালি নাই
41. প্রতারণা করি নাই
42. ভুয়া প্রেম দেখাই নাই
43. পরনিন্দা করি নাই
44. কারো সুখে হিংসা করি নাই
45. মিথ্যা কসম খাই নাই
46. কারো সামনে ভালো, পিছে খারাপ বলি নাই
47. ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা করি নাই
48. মেয়েদের ইনবক্সে বাজে কথা পাঠাই নাই
49. মেয়ে সাজি নাই 😄
50. নিজের কথা রাখি নাই — এমন হয়নি
51.রাজনীতি করি নাই
52.রাজনীতি নিয়ে কখনো ফেসবুকে পোস্ট করি নাই

অফিস শেষ করে প্রতিদিন বাসায় ফিরতে আমার একটু রাত হয়ে যেতো। তখন বউ আমার সামনে এসে হাত ভরা কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ তুলে...
17/10/2025

অফিস শেষ করে প্রতিদিন বাসায় ফিরতে আমার একটু রাত হয়ে যেতো। তখন বউ আমার সামনে এসে হাত ভরা কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ তুলে বলতো,
"সুন্দর লাগছে না আমাকে? বলেন?"

আমি ভ্রুক্ষেপ করি না তার কথায়। ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত মন নিয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসতাম। বউ আমার পাতে এটা ওটা তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করতো,

"রেসিপিটা কেমন হয়েছে? মজা হয়েছে না? আরেকটু দিবো?"

আমি কিছু বলি না। বিরক্তি নিয়ে খেয়ে উঠে যাই।

শুক্রবারে এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো। বউ নতুন শাড়ি পরে আমার কাছে জানতে চাইলো,

"এই শাড়িতে মানাচ্ছে? না-কি চেঞ্জ করবো?"
আমি তাকে পাশ কাটিয়ে অন্যরুমে গিয়ে বসি।

খোঁপায় একগুচ্ছ বেলীফুল গুঁজে দিয়ে আমাকে বলতো,
"বেলীফুলে খোঁপার সৌন্দর্য দিগুণ হয়ে গিয়েছে। নাহ?"

আমি তাও নিরুত্তর! না শোনার ভান করি।

ড্রেসিং টেবিলের সাজসজ্জা,শোকেসের কাঁচের জিনিস,ড্রয়িংরুমের কাঁচের কর্ণারটা নতুন করে গুছিয়ে নিতো। পরে আমাকে জিজ্ঞেস করতো,

"দেখুন না,স্থান বদলে দেওয়াতে নতুনত্ব এসেছে ফার্নিচারগুলোর ভিতরে। কী নান্দনিক লাগছে! তাই না?"

আমি মনে মনে ক্ষেপে যাই। কিন্তু তাকে কিছু বলি না। এভাবে সে সবসময় আমার কাছ থেকে প্রশংসা কুড়াতো চাইতো। খুউব চাইতো।

তার কোনকিছুই আমার খারাপ লাগতো না। কিন্তু কেন জানি মুখ ফুটে তার সামনে বলতে পারতাম না। বা আমার কাছে এসব বলা গুরুত্ব পেতো না। তার এসব আমার কাছে বাড়াবাড়ি আর বাচ্চামো মনে হতো।

একদিন সে কয়েক রকমের ভর্তা তৈরি করলো। আমার মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। বললো,

"ভর্তা কোনটা বেশী টেস্টি হয়েছে? শুটকির? লাউপাতার? কুঁচো চিংড়ির? আমার কাছে তো তিনটাই সেরা। জাস্ট ইয়াম্মি! ভর্তা হলে আমার আর কিছুই চাই না ভাই।"

আমি মনে মনে তার উপর রা* গ হই। ভার মুখে ভাত খেয়ে উঠি। সে আমার পিছু পিছু বেডরুমে এলো। অভিমান অনুযোগ মিশিয়ে আহ্লাদী ঢংয়ে বলল,

"আপনার জন্য আর অতিরিক্ত কিছুই করব না। নিজ থেকে তো কোনদিন ভুলেও আমার কোন প্রশংসা করেন নি। না সাজের,না কাজের, না রান্নার। যেচে জানতে চাই,তাও কিছু বলেন না। আপনি একটা ইম্পসিবল ম্যান!"

তখন আমার মেজাজ চড়ে যায়। আমি হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা সজোরে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলি। ক্ষিপ্ত গলায় তাকে বলি,

"এই, তুমি কি কচি খুকী? নতুন বিয়ে হয়েছে? কিসের প্রশংসা করবো? করতেই হবে না কেন? রান্না করা,আসবাবপত্র গুছিয়ে রাখা,বাইরে যেতে নতুন শাড়ি পরা,চুলে ফুল দেওয়া এগুলো নরমাল এবং কমন বিষয়। এসবের জন্য বাড়তি প্রশংসা করতে হবে কেন?"

বউ স্তম্ভিত হয়ে জমে যায় বরফখণ্ডের মতো। মনে হয় তখন সে একটি নিঃশ্বাসও ফেলেনি আমার সামনে। অন্যরুমে চলে গিয়েছে। সেদিনের পর হতে সে আর কোনদিন আমার কাছে তার রান্নার বা অন্যকিছুর প্রশংসা শুনতে চায় নি। ভুলে গিয়েছে হাতভরে চুড়ি পরতে। চুলে ফুল দিতে। নতুন শাড়ি পরতে। ঘুরতে যেতে। হরেক রকমের ভর্তা তৈরি করতে।

যেন বউ আমার শান্ত দীঘির জল। পৃথিবীর সব নৈঃশব্দতা তাকে আঁকড়ে ধরেছে। বউয়ের সমস্ত চঞ্চলতা মিইয়ে গিয়েছে। বিষয়গুলো আমার নজরে যখন পড়লো বা আমি বুঝতে পারলাম,তখন আর অবশিষ্ট বলে কিছু নেই। সবই শেষ।

এক দুপুরে সে হঠাৎ করে চারতলার সিঁড়ি গড়িয়ে নিচতলায় পড়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি করলাম। পরিক্ষা শেষে জানা গেলো বউ আমার ব্রেন স্ট্রোক করেছে। হাসপাতালের শয্যা আর নিরবতাই হলো তার সঙ্গী! ক্রমশ বউ আমার বাকশক্তি হারিয়ে ফেললো। আমি তার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,

"অভিমানীনি তোমার রান্না হেবি স্বাদ! ভর্তা হয় লোভনীয়! ফার্নিচার গোছানো তোমার মতো করে কেউ পারে না। ফুল দিলে তোমাকে দেবীর মতো লাগে। আর শাড়িতে লাগে মোহনীয়! তোমার সবই সুন্দর! সবই অনুপম! অনিন্দ্য! তাই আলাদা করে বলতে পারিনি।"

বউ শুনতো কিনা জানি না। কেবল বোকা বোকা চোখে ফ্যালফ্যালিয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকতো। আমার সেই অভিমানীনি বউ আমাকে ছেড়ে চলে যেতে খুব বেশী সময় নেয়নি।

আমি এখন রোজ ওর কবরের কাছে যাই। তার শিয়রের কাছে বসে চিৎকার করে ধরা গলায় বলি,

"আজকের রেসিপিটা বেশী স্বাদ হয়েছে। ভর্তাটা বেশী মুখরোচক! বেলীতে তোমায় চাপা ডাঙার বউয়ের মতো লাগছে। শাড়িতে,চুড়িতে তুমি লাস্যময়ী!"

আমার অভিমানী বউ শুনতে পায় না। এবং শুনতে চায়ও না। তাইতো সে নিরবে প্রস্থান নিয়েছে।

সংগ্রহ :

 ীনের_প্রেয়সী পর্ব : 08নতুন একটি দিনের সূচনা। নতুন সকাল মানে সবাই নতুন ভাবে তাদের পথ চলতে শুরু করে। নতুন একটা ভোর শুরু হ...
17/10/2025

ীনের_প্রেয়সী
পর্ব : 08

নতুন একটি দিনের সূচনা। নতুন সকাল মানে সবাই নতুন ভাবে তাদের পথ চলতে শুরু করে। নতুন একটা ভোর শুরু হওয়া মানেই রবির নরম কিরনের ছোঁয়া লাগিয়ে মানুষের চিন্তা চেনতাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা। যাতে সবাই নতুন ভাবে শিখতে পারে, নতুন ভাবে বাঁ*চতে পারে।
তেমন করেই নিশাতেরও আজ নতুন পথ চলার সূচনা হতে চলেছে। নিশাত সম্পূর্ণ তৈরি হয়েই নিচে নেমেছে। প্রায় সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসে গেছে। কারণ সবাই এখন যার যার কাজে বের হবে।

সবাই খেতে বসার কিছুক্ষণ পরেই রায়ান নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে এক পলক নিশাতের দিকে তাকালো। নিশাতও কারো আসার শব্দ পেয়ে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। নিশাত তৎক্ষনাৎ নিজের চোখ সরিয়ে নিল। এর মাঝে কেটেছে পুরো একটা দিন। কিন্তু নিশাত একবারের জন্যেও রায়ান এর রুম তো দূরে থাক তার সামনেই যায় নি বলতে গেলে। শুধু সকালে আর রাতে খাওয়ার সময় যা একটু চোখের দেখা হয়েছে এই টুকু। তবে মানুষটা তার প্রয়োজনীয় বই পত্র যা দরকার সব কাল কিনে এনে অর্থির রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। নতুন বই পত্রের ঘ্রান পেয়ে নিশাতের যতটুকু অভিমান জমা ছিল তাও ক্ষয়ে গেছে। তবুও লোকটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নিশাতের নেই।

নিশাতকে চোখ সরিয়ে নিতে দেখে রায়ানও চক্ষু হটিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। রিমি বেগম খাবার বেড়ে দিতেই তা মুখে তুললো। খাওয়াতে মনোযোগী থেকেই হঠাৎ বাবার উদ্দেশ্যে জিগ্যেস করল,
❝ আব্বু তোমার ঠিক করা এসিস্ট্যান্ট কে স্যালারি তুমি দিবে নাকি আমাকে দিতে হবে?❞

কথাটি শুনতেই আরহান সাহেব বিষ্ময় চাহনিতে তাকালো নিজ পুত্রের পানে! তিনি আশা রেখেছিলেন ছেলে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিবে। কিন্তু এতো জলদি ভাবেন নি! চোখ সরিয়ে গলা খাকরি দিয়ে প্রতিত্তর করল,
❝ বৌ তোমা. না মানে এসিস্ট্যান্ট তোমার তাহলে আমি কেন স্যালারি দিব? অবশ্যই তোমাকে দিতে হবে!❞

❝ আচ্ছা! তা কত দিলে তোমার কাছে ঠিক মনে হবে?❞

ছেলে যে পিন্স মেরে কথা বলছে তা ঠিকই বুঝতে সক্ষম আরহান সাহেব। নিজেও সুযোগ পেয়ে বলে উঠলো,
❝ আপাতত প্রথম মাসের স্যালারি হিসেবে তাকে একটা ফোন কিনে দিও। পরবর্তীতে তোমার যা ভালো লাগে দিও!❞

টেবিলের সবাই বাবা আর ছেলের কথার দিকে তাকিয়ে তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করল। রিমি বেগম ব্যতীত কেউ ই বুঝতে পারছে না দুজনে কি নিয়ে কথা বলছে। নিশাত নিজেও চোখ ছোট করে তাকিয়ে সব বোঝার চেষ্টা করল। সেদিন রাতে রায়ান তাকে এসিস্ট্যান্ট হওয়ার বিষয় নিয়েই কিছু বলে ছিল। রায়ানের কথা মতো তার নিজের এসিস্ট্যান্ট হওয়ার কথা। তাহলে কি তাকে নিয়েই এখন কথা হচ্ছে? তাহলে সেদিন যে রা*গারাগি করলো এখন আবার রাজি কেন হচ্ছে?

আয়ান থাকতে না পেরে রায়ানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,
❝ ভাইয়া তুমি নতুন এসিস্ট্যান্ট রেখছ বুঝি? তোমার তো এসিস্ট্যান্ট একজন ছিল। তাহলে নতুন জন কে?❞

প্রতিত্তোরে রায়ানের শান্ত গম্ভীর স্বর ভেসে এলো,
❝ তোর বড় আব্বুকে জিগ্যেস করে নে কে সে?❞

সবাই আরহান সাহেবের দিকে তাকালেও রিমি বেগম আওয়াজ তুলে বললো,
❝ আমি বলছি! তোমার বড় আব্বু তোমার ভাবিকে তোমার ভাইয়ের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে ঠিক করেছে। বুঝেছো!❞

উত্তর শুনেই আয়ান খুশি হয়ে বলতে চাইলো,
❝ বাহ তাহলে তো ভালোই। ভাবি আর ভাইয়া সব সময় পাশাপাশি, কাছাকাছি থাকত...❞

কিন্তু শেষ করার আগেই রায়ানকে কঠোর চোখে তাকাতে দেখে থেমে গেল। নিশাতের কাছে সব যেন এবার স্পষ্ট হলো। যে বিষয় নিয়ে এতো ঝা*মেলা হলো সেই কাজ নিশাত করবে না। আর এই লোকের সাথে তো নাই। শশুরের উদ্দেশ্যে আওয়াজ নিচু করে বললো,
❝ আব্বু আমি এই কাজটা করতে চাইনা!❞

আরহান সাহেব চোখ তুলে বৌমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ কেন? কোনো সমস্যা তোমার?❞

নিশাত ইতিউতি করে বলল,
❝আমি সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি। এখন তো আমার পড়াশোনায় ফোকাস করা দরকার তাই না? আমি কিভাবে..?❞

আরহান সাহেব বাঁ*ধা দিয়ে পুত্রবধূর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
❝ তোমার ক্লাস তোমার পড়াশোনা সবই ঠিক থাকবে। ক্লাস শেষ করার পর থেকে সন্ধ্যা অবধি তুমি কাজ করবে।এই কাজ তোমার জন্যই ভালো। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একমাস করে দেখ। এর মাঝে যদি তোমার কাজ বা নিজের বসকে পছন্দ নাহয় তখন তুমি জবটা ছেড়ে দিও কেমন!❞

নিশাত জবাব দেওয়ার জন্য আর কোনো বাক্য খুঁজে পেল না। এই লোকের সাথে থাকা মানে তো সারাদিন চুপচাপ থাকতে হবে আর ধমকের উপর ধমক খেতে হবে। কি করবে সে এখন? ভেবেও যেন কান্না আসলো নিশাতের। তার শশুরমশাই কেন এসব করছে?

তার ভাবনার মাঝেই রায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ালো। সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বাবার উদ্দেশ্যে বলে গেল,
❝ তোমার ঠিক করা এসিস্ট্যান্ট কে দ্রুত আসতে বলো।❞

ছেলের কথার মানে বুঝতে পেরে আরহান সাহেব নিশাতকে ডেকে পুনরায় বললো,
❝ নিশাত আম্মু রায়ান তোমার অপেক্ষায়। যাও রায়ানই তোমাকে নিয়ে যাবে?❞

নিশাতের চক্ষু বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। তার শশুর মশাই তো বলেছিল উনিই তাকে মেডিকেলে রেখে আসবে। তাহলে এখন এই লোক কেন? যাওয়া আসাটাও এখন এই লোকের সাথে করতে হবে? ও গড! কিন্তু উপায় না পেয়ে উঠে পরলো নিশাত। নিশাতকে উঠতে দেখে অর্থিও উঠে ভাবির সাথে হাটা ধরলো। ভাবির একটা হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে হাসি মুখে আওড়ালো,

❝ অল দ্যা বেস্ট ভাবি! দুটোর জন্যই!❞

নিশাত অর্ধেক বুঝতে পেরে বললো,
❝ ধন্যবাদ! কিন্তু দুটো মানে?❞

❝ এক তোমার মেডিকেলে প্রথম দিন আর দুই তোমার জবের জন্য!❞

শুনতেই নিশাতের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। কে চেয়েছিল এই জব করতে? এর থেকে তো ভালো হতো সে সারাদিন বাড়িতেই পরে থাকতো! দুজনে এগিয়ে যেতেই দেখলো রায়ান দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির কাছে। অর্থি অন্য একটা গাড়িতে চড়ে বসতেই নিশাত ধীর পায়ে রায়ানের গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। ব্যাক সীটে বসতে নিতেই রায়ানের গম্ভীর স্বর শ্রবণ হলো।

❝ সামনে বসো!❞

নিশাত একটা হতাশ শ্বাস ফেলে সামনের সীটে গিয়ে বসে পরলো। নিশাতকে বসতে দেখে রায়ানও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল!

___________________

গাড়িতে উঠেছে সবে মাত্র দশ মিনিট হবে হয়তো। কিন্তু নিশাতের কাছে মনে হচ্ছে সেই কখন গাড়িতে উঠেছে কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতেই পারছে না। এর মাঝেই আবার জ্যামের সৃষ্টি হলো। গাড়ি থামতেই নিশাত বিরক্ত হয়ে বাইরে দৃষ্টি দিল। শহরের এই জ্যাম, শোরগোল, কোলাহল তার কাছে নতুন কিছু নয়। সেও একটা সময় এই শহরেই কাটিয়েছে। শহরের ধুলো মেখেই তার বড় হওয়া। ছোট বড় অনেক স্মৃতিই তার মস্তিষ্কে গেথে আছে। তবে অনেকদিন এসব থেকে দূরে থাকায় এখন কিছুটা নতুনই মনে হচ্ছে। জ্যামের ভিতরই কেটে গেল প্রায় বিশটা মিনিট। জ্যাম ছাড়তেই পরবর্তী দশ মিনিটের মধ্যেই রায়ানের গাড়ি এসে থামল এক বিশাল মেডিকেল ক্যাম্পের সামনে। স্বপ্নের পথে এক ধাপ অগ্রসর হতে পেরে নিশাতের যেন খুশির অন্ত নেই। গাড়ি থামতেই প্রশন্ন চিত্তে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই রায়ান পিছু ডেকে উঠলো,
❝ শোন?❞

নিশাত থেমে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো নিজ স্বামীর পানে। নিশাতকে তাকাতে দেখে রায়ান গম্ভীর স্বরে আওড়াল,
❝ ক্যাম্পাসের কাউকে বিয়ের বিষয়ে বলার দরকার নেই বুঝেছো!❞

নিশাত একটু অবাকই হলো। এই লোককে নিশ্চয়ই এখানের কেউ চিনেনা। আর তাকেও কেউ চিনেনা। তাহলে কেউ বিয়ের কথা কেন জিগ্যেস করবে? আর করলেও বললে কি সমস্যা বুঝলো না নিশাত। তাই প্রশ্ন করল,
❝ কেন?❞

রায়ান আবারও একই স্বরে জবাব দিল,
❝ কারণ আমি বলেছি তা!❞

এটা কোনো কারণ হলো। এমনিতেই জবের বিষয়টি নিয়ে নিশাত ভিষণ বিরক্ত হয়ে আছে। এখন আবার এই লোকের অর্ধেক কথা শুনে রেগে ত্যাড়া স্বরে জবাবে বললো,
❝ আর আপনার কথা আমি কেন শুনবো?❞

❝ কারণ তুমি আমার...❞

এইটুকু বলেই থেমে গেল রায়ান। নিশাত উৎসুক চিত্তে জানতে চাইলো,
❝ বলুন!❞

❝কিছুনা! এখান থেকে যাও ষ্টুপিড!❞

রায়ানের গম্ভীর ধমক শুনে নিশাত একটা ভেঙচি মে*রে গাড়ি থেকে নেমে পরলো। সে তো কখনই নেমে পরতো। তুই কেন পিছু ডাকলি ব্যাটা? আবার এখন ধমক দিচ্ছে। অ*সহ্য লোক একটা। একটু নেমে তাকে ক্লাস অবধিও দিয়ে আসলো না। সে কি এখানের কিছু চিনে? তার ভাবনার মাঝেই পুনরায় রায়ানের কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
❝ তোমার ক্লাসরুম পঞ্চম ফ্লোরের 302 নম্বর রুমে। আশা করি খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না!❞

বাহ এই লোক তার মনের কথা বুঝে গেল! নিশাত কথা না বাড়িয়ে হেটে গিয়ে গেইটের সামনে দাড়ালো। চোখ তুলে একবার স্বগর্বে স্থীর দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিং গুলোর দিকে তাকালো। সে এখানে পড়তে চেয়েছিল এমন নয়। তবে ডাক্তারিটা খুব করে পড়তে চেয়েছিল। তার মনে পড়ে ছোট বেলার কাহিনি। সে ছোট বেলায় ডাক্তার সেজে খেলে বেড়াতো। ডাক্তারি পেশার প্রতি ছোট থেকেই একটা দূর্বলতা ছিল। একদিন তার বাবা চোট পেয়ে হাসপাতালে এসেছিল। নোমান সাহেব সেদিন ভালোই চোট পেয়েছিল। বাবাকে চোট পেয়ে ব্যা*থায় কাতরাতে দেখে নিশাত কেঁদে কেঁদে বলেছিল,

❝ আব্বু দেখ আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। তখন তুমি চোট পেলে আমি তোমার চিকিৎসা করবো। তোমাকে তখন আমি একটুও ব্যা*থা দিব না।❞

সেদিনের পর থেকে আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। বড় হওয়ার সাথে সাথে তা আরও তীব্রতর হয়েছিল। তখন তো সে জানতো না তার ডাক্তার হওয়ার আগেই তার বাবা অনেক বড় একটা চোট পেয়ে পরে থাকবে আর তার স্বপ্নে ভাটা পরবে। তবুও এইচএসসি এর পর নিজ তাগিদে মেডিকেলের পরিক্ষায় বসেছিল। বাবা অনেকবার অনুরোধ করলেও কোনো কোচিং সে করেনি। কারণ তার বাবা যদি তার পিছেই এতো খরচ করে তাহলে তাদের পরিবার কি করে চলবে। তবুও নিজে যতটুকু পেরেছিল নির্ভারের সহায়তায় সব এক করে পড়ে পরিক্ষায় বসেছিল। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। সামান্য কিছু মার্কের জন্য সে পিছিয়েই ছিল। সরকারিতে পরাতেই যেখানে তার বাবার সামর্থ্য ছিল না বলতে গেলে সেখানে এতো বড় প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার কথা নিশাত কল্পনাতেও আনেনি। আজ এখানে দাড়াতে পারবে এমন আশাও সে করেনি।

বাবার কথা আর স্বপ্নের কথা ভাবতে গিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো কপোল বেয়ে। বা হাতের সাহায্য তা মুছে নিল। হয়তো নতুন করে ভাগ্য তার সহায় হয়েছে তাই সে আজ এখানে। তবে একটু খারাপও লাগে এটা ভেবে যে অন্যের দয়াতে সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো স্বামী মেনে নিলে এমনটা মনে হতো না। তবে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এসব ভেবে মন খারাপ করতে চাইলো না নিশাত। সুযোগ যখন পেয়েছে তখন নিজের স্বপকে বাস্তবে পরিনত করবেই সে। সে পথ ধরে সামনে এগিয়ে গেল। রায়ানের বলে দেওয়াতে ক্লাসরুম খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হলো না। ক্লাসরুমে প্রবেশ করে নিশাত নিভৃতে বসে রইলো।

_______________

অর্থি গাড়ি থেকে নেমে গেইট পেরিয়ে ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে দাড়ালো অর্থির পাশে। মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
❝ ওই এতো সময় লাগে আসতে? আমি সেই কখন থেকে তোর অপেক্ষা করছি!❞

অর্থি মেয়েটার মাথায় একটা চাপড় মেরে বললো,
❝ চুপ কর মিথ্যুক। সব সময় বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা। এখন ওই দিকে চল!❞

বলে অর্থি তার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড শিপুকে সাথে নিয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে কাউকে খুঁজলো কিন্তু পেল না। পরবর্তীতে ক্যান্টিন, প্লে গ্রাউন্ড আরও বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত মানুষটার কোনো হদিস পেল না। অর্থির মুখের অবস্থাটা ভোতা হয়ে গেল। অর্থির ভোতা মুখ দেখে শিপু বিরক্ত হয়ে বললো,
❝ তুই নিশ্চয়ই সেই সিনিয়র ভাইয়াকে খুঁজছিস?❞

অর্থি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই শিপু আবার বলল,
❝ তুই আসলেই পা*গল। ভাইয়ার অলরেডি মাস্টার্স শেষ। এখন সে নিশ্চয়ই জবের পড়া বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকবে! তোর জন্য নিশ্চয়ই সে এখানে এসে বসে থাকবে না!❞

অর্থি ভোঁতা মুখ করেই বলে উঠলো,
❝ জানি সে আমার জন্য এসে বসে থাকবে না। তবুও তো একটু আসতে পারে। সেদিন বলেও আসলাম ভার্সিটিতে আইসেন কেউ আপনার অপেক্ষায় থাকবে। তবুও এলো না?❞

অর্থির কথা শুনে শিপু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ তাকে বলে এসেছিলি মানে? তার সাথে তোর কোথায় দেখে হয়েছিল?❞

❝ আরে তোকে তো বলাই হয়নি সিনিয়র ভাইয়া এখন আমার বিয়াই লাগে। আমার ভাবির ফুপুর ছেলে সে।❞

শিপুর বিষ্ময়ের মাত্রা যেন আরও বেড়ে গেল। জোর করতেই অর্থি সব বললো। কথা শেষ করে শিপুর হাত ধরে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে উচ্চারণ করল,
❝ চল ক্লাসে যাই। পরে না হয় আবার খুঁজবো!❞

শিপু সহমত পোষণ করতেই দুজন এগিয়ে গেল। অর্থির মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠলো। বৃহস্পতিবার দিনও ভার্সিটিতে এসে লোকটাকে খুঁজেছিল। ভেবেছিল গ্রাম থেকে চলে এসেছে। নির্ভারের মাস্টার্সের পরিক্ষা প্রায় মাস ছয়েক আগে শেষ হলেও এখানে প্রায়ই আসে। অর্থি মনে করেছিল লোকটা আসবে কিন্তু সে ভুল ছিল। আজও সেই আশা নিয়ে খুঁজলো কিন্তু ফলাফল শূন্যের কোঠায়। অর্থি ক্লাসরুমে ঢুকে জানালার পাশে বসে চোখ দিল বাইরে দূরে দাড়িয়ে থাকা একটা কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। সেদিকে বিষন্ন দৃষ্টি ফেলে মনে করার চেষ্টা করলো তার আর নির্ভারের প্রথম দেখা হওয়ার কথা।

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দুদিন বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথেই এসেছিল। তৃতীয় দিন যখন অর্থি ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পা রাখলো একা একা সেদিন তার সাথে একটা ল*জ্জাকর ঘটনা ঘটলো। গেইট পেরিয়ে মাঠের ভিতর আসতেই হটাৎ কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে পরে গেল। মাঠ জুড়ে থাকা অসংখ্য মানুষ তা দেখে অট্টহাসিতে মত্ত হলেও একটা ছেলে এসে অর্থির সামনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। হাতের মালিককে দেখার জন্য চোখ তুলে তাকাতেই অর্থির প্রথম একটা হার্টবিট মিস হয়েছিল। ওই মানবটির চক্ষুপটেই যেন নিজের স*র্বনাশ দেখতে পেয়েছিল। মানবটি যখন তার হাত ধরে উঠালো সেই প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়াতে নিজের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি টের পেয়েছিল। অর্থির মনে হয়েছিল মানবটি তাকে টেনে তুলছে না বরং তাকে আরও অথৈ সাগরে নিমজ্জিত করে দিচ্ছে। এতো মানুষের ভিরে সেই মানবটি না হেসে তাকে টেনে তুলে চিন্তিত কন্ঠে জিগ্যেস করেছিল,

❝ তুমি ঠিক আছো? কোথাও লাগেনি তো?❞

অর্থি জবাবে মাথা নেড়ে না বুঝিয়েছিল। কারণ তার মুখ থেকে যেন কোন কথাই বের হচ্ছিল না। অর্থির প্রথমে বিষয়টি কে শুধুমাত্র আকর্ষণ মনে হলেও দিন যেতেই তার মনে হলো এটা আকর্ষণের থেকেও বেশি কিছু। অর্থি কখনো কারো প্রেমে পরেনি। এটাই তার প্রথম অনুভূতি। তাই তো নিজ তাগিদে ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল ছেলেটার নাম নির্ভার আর এবার সে মাস্টার্সের ছাত্র। পরবর্তীতে অর্থি নিজে থেকেই নির্ভারের সাথে কথা বলেছে। দেখা হলেই সিনিয়র ভাইয়া ডেকে নির্ভারকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আবার মাঝে মাঝে মছার ছলেও হাসিয়েছেও। নির্ভার শুরুতে অর্থির সাথে হেসে হেসে কথা বললেও দিন পেরুতেই কেমন ইগনোর করতে শুরু করে। তবে সম্পুর্ন এড়িয়েও যায় না কখনো। তারপর থেকে এভাবেই চলছে পুরো একটা বছর। নির্ভারের পরিক্ষা শেষ হওয়াতে আজকাল তাকে বেশি চোখের দেখাও দেখতে পায় না অর্থি। তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগও নেই। তবুও অর্থি মনের মাঝে আশা বুনে যাচ্ছে। হয়তো কোনো একদিন সে তার প্রথম প্রেমকে পেলেও পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু আদোও নির্ভার তাকে একটা সুযোগ দিবে তো?

_________________

নিশাত বসে আছে নিশ্চুপ। কিন্তু তার পাশেই বসে আছে দুই আজব প্রানী। আজব প্রানীই বটে। সে ক্লাসে ঢুকে বসে থাকার কিছুক্ষণ পরেই দুটো ছেলে মেয়ে একসাথে সামনে এসে দাড়ালো। মেয়েটি প্রানবন্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
❝ হেই মিস অর মিসেস, আ'ম নিধি বিশ্বাস এন্ড দিস ইজ মাই পার্সোনাল কু*ত্তা সায়ন্ত সাহা! এন্ড ইউ?❞

মেয়েটি থামতে না থামতেই ছেলেটা বলে উঠলো,
❝ আরে ও ভুল বলেছে। ও আমার পার্সোনাল কু*ত্তি। এখন তোর পরিচয় বল। স্যরি মনে হলো সেম এজ আবার ক্লাসমেটও তাই তুই বললাম। ডোন্ট মাইন্ড হুম!❞

নিশাত বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাদের কথা শুনে বুঝলো ছেলে মেয়ে দুটো হয়তো ভিন্ন ধর্মের আর দুজন পরস্পরের বন্ধু। আর একটা কথা স্পষ্ট বুঝলো দুটোই বাঁ*চাল আর ঝ*গড়ুটে। নিশাতের মনে হলো ভালোই জমবে এদের সাথে। নিশাত আলতো হেসে বললো,
❝ আমি নিশাত নে..নেওয়াজ! আর তুই বলাতে কিছু মনে করিনি।❞

নেওয়াজ কথাটা বলতে গিয়ে নিশাতের যেন গলাটা হালকা কাঁপলো। শেষের কথাটা সায়ন্তের দিকে তাকিয়ে বলতেই নিশাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাশে বসে পরলো সায়ন্ত। নিশাতের নাম শুনে নিধি নিশাতের অন্যপাশে বসতে বসতে সেই একই স্বরে বললো,
❝ আরে তোমার নামও ন দিয়ে! এই জন্যই আমরা এতো জলদি বন্ধু হয়ে গেছি বুঝেছো! আর বন্ধু যখন হয়েছি তখন আর তুমি নয়। তুই শুরু ওকে!❞

নিশাত আশ্চর্য হতেও ভুলে গেল। তারা বন্ধু কখন হলো। এই ছেলে মেয়ে এতো এডভ্যান্স? নিশাতের মনে হলো এই ছেলে মেয়ের কাছে কথা বলায় সে নস্যি! তবে নিজেও সম্মতি জানিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। এর মাঝে কেটেছে একটা ক্লাস। দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু পাশের দুটো স্যার যেতেই পুনরায় লড়াই শুরু করে দিয়েছে।

নিশাতের ভাবনা চিন্তার মাঝেই স্যার ক্লাসে প্রবেশ করতেই সবাই শান্ত হয়ে গেল। সবার সাথে নিশাত ও দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল সামনে রায়ানকে দেখে। এই লোক এখানের শিক্ষক বুঝি? কই সে তো জানেনা। সে শুনেছে তার শশুরের অনেক বড় হাসপাতাল আছে। তাহলে রায়ানের সেখানে ডাক্তারি করার কথা। তাহলে এখানে জব কেন করছে? আসার সময় লোকটাও একবার বললো না সে এখানে কাজ করে। এই জন্যই বুঝি বলেছিল বিয়ের বিষয়ে কাউকে না বলতে। বিয়ের কথা বললেই নিশ্চয়ই লোকটার ইমেজ খা*রাপ হবে সবার কাছে? যে এমন একটা সনামধন্য ডাক্তার সাথে টিচার তার মতো একটা কালো বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছে? কথাটা ভাবতেই নিশাতের মন বি*ষিয়ে উঠলো। নিজের জায়গায় বসে চোখ রাখলো স্বামীর পানে। রায়ান নির্বিঘ্নে লেকচার দিতে শুরু করল। ভুলেও চোখ নিশাতের দিকে পরলো না। নিশাতের যেন এতে আরও খারাপ লাগলো। লোকটা নিশ্চয়ই জানে সে এখানে। তাহলে একটি বার তাকিয়ে দেখবে না সে কোথায় আছে? এতেও বুঝি লোকটার সমস্যা? নিশাত আজগুবি সব ভেবে ক্লাসটা রায়ানের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিল। রায়ানের কোন লেকচার তার মগজে আদোও ঢুকেছে কি না উপরওয়ালাই ভালো জানেন!

__________________

রায়ান নিজের মতো ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে এলো। রাগে যেন মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। মেয়েটা ক্লাসের সবার মধ্যে কেমন হা করে তাকিয়েছিল। ষ্টুপিড একটা। কাল ক্লাসের পড়া না পারলে তখন বুঝাবে তাকিয়ে থাকার মজা! রায়ানের ভাবনার ইতি ঘটাতে মুশকান সামনে এসে দাড়ালো। রাগত্ব স্বরে বলে উঠলো,
❝ তুই কি পণ করে নিয়েছিস রায়ান যে আমার ফোন রিসিভ করবি না? নাকি নতুন বৌ পেয়ে সব ভুলে গেছিস?❞

রায়ান আশেপাশে দেখে নিল। দু একজন লোক এখনো উপস্থিত আছে। মুশকানের দিকে দৃষ্টি ফেলে বিরক্তিকর স্বরে আদেশ সরূপ বললো,
❝ আস্তে কথা বল। আশেপাশে লোকজন আছে?❞

মুশকান মানলো না সেসব কথা। বরং চোখের জল ছেড়ে দিয়ে একই স্বরে আওড়াল,
❝ চুপ করবো না আমি। কেন চুপ করবো? আমার কথা একবারও ভাবছিস না তুই? আমার ঠিক কি অবস্থা হয়েছে বুঝতে পারছিস? ফোনটা পর্যন্ত রিসিভ করিস না তুই? কেন এমন করছিস তুই আমার সাথে?❞

মুশকানকে কাঁদতে দেখে রায়ান নিজেকে দমালো। শান্ত স্বরে বোঝানোর জন্য বললো,
❝আচ্ছা শান্ত হ! আমার এখন আর একটা ক্লাস আছে। তারপর বাইরে কোনো ক্যাফেতে বসে কথা বলি প্লিজ!❞

মুশকানও এবার একটু শান্ত হলো। রায়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,
❝ তুই সত্যি আসবি তো কফিশপে। আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো কিন্তু। ❞

প্রতিত্তোরে রায়ানের শান্ত স্বর ভেসে এলো,
❝ হুম আসবো।❞

বলেই রায়ান পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তার এখন অন্য একটা ক্লাস আছে যাতে অ্যাটেন্ড করা খুব জরুরি। নয়তো এখনই মুশকানের সাথে কথা বলতো। তাদের কথা বলাটা জরুরীও। কতদিনই বা এভাবে ইগনোর করে যাবে মেয়েটাকে সে? দ্রুত তাদের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। মুশকান রায়ানের যাওয়ার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা আজকাল তাকে বেশিই এড়িয়ে চলছে। যা তার একদমই সহ্য সীমার বাহিরে!

_________________

নিশাত ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে এলো। পিছনে পিছনে তার নতুন দুই বন্ধুও বেড়িয়ে এসেছে। নিশাত সামনে তাকাতেই দেখলো আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। নিশাত হেটে গিয়ে সামনে দাড়িয়ে হাস্যমুখে জিগ্যেস করল,
❝ ভাইয়া আপনি এখানে? তারমানে আপনিও এখানে জব করেন তাই না?❞

নিশাতের পাশের দুটো মানুষকে দেখে নিয়ে শুধু মাথা নেড়ে সংক্ষেপে হ্যা বুঝালো আবিদ। মনে মনে বিরবির করে উঠলো,
❝ আমি একা নই। এখানে আরও একজনও জব করে!মুসিবত একটা!❞

নিধি নিশাতকে একটু পাশে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ ওই এটা কে রে? চিনিস তুই?❞

নিধির স্বরটাই বোধহয় এমন যে আস্তে বললেও তা জোরে ফুটে উঠে। তাইতো প্রশ্নটা আবিদের কানেও গেল। সে এক পা এগিয়ে এসে নিশাতের হয়ে প্রতিত্তর করল,
❝ আমিই বলছি। আমি এখানের একজন টিচার। পাশাপাশি টুকটাক রুগিও দেখি। তাই ডাক্তারও বলতে পারেন। যদিও নিশাতের ভাই লাগি আমি কিন্তু আপনাদের সবার স্যার হই বুঝছেন?❞

স্যার শব্দটা শুনতেই নিধি আর সায়ন্ত ভদ্র হয়ে দাড়ালো। আবিদ নিশাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ ভাব.. না মানে নিশাত এই দুটো কি তোমার ফ্রেন্ড?❞

নিশাত সম্মতি জানাতেই আবিদ পুনরায় বলে উঠলো,
❝ বা প্রথম দিন এসেই দু দুটো বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছো? খুব ভালো। কিন্তু এখন তাদের ছেড়ে আমার সাথে চলো।"

কোথায় যাবে বুঝতে না পেরে নিশাত শুধালো,
❝ কোথায় যাব ভাইয়া?❞

আবিদ আরও একবার নিধি আর সায়ন্তের দিকে তাকিয়ে নিশাতের উদ্দেশ্যে বললো,
❝ তোমার বস তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তার অবদি। আই থিংক নিজের বসকে চিনতে পারছো!❞

নিশাত একটু ভাবতেই সকালের কথা মনে পরলো। তারমানে রায়ান তাকে ডাকছে। আজ থেকেই কাজ করতে হবে বুঝি? প্রথম দিন ক্লাস করে এমনিতেই টায়ার্ড লাগছে এখন আবার ওই ত্যাড়া লোকের সাথে থাকতে হবে। ভাবতেই নিশাতের মুখটা নিকষ কালো আ*ধারে ঢেকে পরলো। নিধি আর সায়ন্তকে বাই বলে আবিদের পিছন পিছন ছুটলো নিশাত। আবিদ নিশাতকে নিয়ে সরাসরি রায়ানের কেবিনে প্রবেশ করল। নিশাত ভালো করে তাকিয়ে কেবিনটাকে দেখলো। একটা টেবিল আর তার দুই পাশে চেয়ার রাখা দুটো। একটা দেওয়াল ঘড়ি ঝুলে আছে দেওয়ালের সাথে। রায়ানের বসার চেয়ারের পিছে একটা র‍্যাক রাখা যেখানে বিভিন্ন ফাইলপত্রে ভরপুর। কেবিনের সাথেই একটা ছোট রেস্টরুম আছে বোধহয় যা পর্দার আড়ালে রয়েছে বিধায় বোঝা গেল না। টুকটাক জিনিস রাখা পাশে। আর তেমন কিছুই নেই বলতে গেলে। শুধু পাশে বসার জন্য ছোট একটা সোফা রাখা আছে। ক্লান্ত থাকায় নিশাত টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো। কোথাও রায়ানকে দেখতে না পেয়ে আবিদের উদ্দেশ্যে শুধালো,

❝ ভাইয়া আপনার বন্ধু কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না?❞

আবিদ ফোন স্ক্রল করায় ব্যস্ত ছিল। নিশাতের প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে একটু আড়ষ্টতার সহিত উত্তর দিল,
❝ ওই আছে আশে পাশেই। কোনো রুগি দেখছে হয়তো। চলে আসবে এখনি!❞

সামান্য প্রশ্নের উত্তর করতে এতো আড়ষ্টতার কি আছে বুঝলো না। ক্লান্ত শরীরে মাথাটা এলিয়ে দিল টেবিলের উপর। আবিদ ফোন পকেটে পুরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে নিশাতকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,

❝ এখান থেকে কোথাও যেও না তুমি! রায়ান এসে পড়বে জলদি। অপেক্ষা করো কেমন!❞

_________________

একটা ক্যাফের অন্দরে মুখোমুখি বসে আছে রায়ান আর মুশকান। রায়ান ক্যাফেতে আশায় মুশকান খুশিতে আত্নহারা। এতোদিন রায়ানের ইগনোরেন্স দেখে সে একটু শঙ্কিত ছিল আসবে কি আসবে না ভেবে। রায়ান একটা হট কফিতে মুখ লাগিয়ে হালকা চুমুক দিতে ব্যস্ত। আর মুশকান ব্যস্ত রায়ানকে দেখতে। রায়ানের এতো নির্লিপ্ত চিত্তে কফি পান করাটা বোদহয় মুশকানের সহ্য হলো না। তাই তো হটাৎই চোখের জল ছেড়ে দিয়ে স্বরে অসংখ্য ব্যাথার মিশ্রণ ঘটিয়ে অভিযোগ জানালো,
❝ আমার কষ্টটা কি তুই ফিল করতে পারছিস না রায়ান? এই বিয়ে তুই কেন করলি তুই? ফিরে আয় আমার কাছে। তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা! বল ভালোবাসিস কি না?❞

মুশকানের এতো অভিযোগ শুনে শান্ত মস্তিষ্কে গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করল রায়ান,

❝আমি তোকে ভালোবাসি মুশকান!❞

চলবে?

( এক পাঠিকা বলেছে আমি নাকি রায়ানের বেরসিক আম্মা । তাই ছেলে আর পুত্রবধূকে পার্মানেন্টলি আলাদা করার পায়তারা করতেছি। ঠিক আছে না এবার?)

_ এই মুহূর্তে অবিবাহিতদের দরকার, শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দেওয়া, _ স্বর্ণের দাম না কমালে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
17/10/2025

_ এই মুহূর্তে অবিবাহিতদের দরকার, শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দেওয়া,
_ স্বর্ণের দাম না কমালে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।

আমার রুমের ঠিক পাশেই একটা সুপারশপ আছে। প্রতিদিন ডিউটিতে যাওয়ার আগে ওই শপ থেকে একটা  কফি নিই — দিনটা শুরু করার একধরনের অ...
16/10/2025

আমার রুমের ঠিক পাশেই একটা সুপারশপ আছে। প্রতিদিন ডিউটিতে যাওয়ার আগে ওই শপ থেকে একটা কফি নিই — দিনটা শুরু করার একধরনের অভ্যাস হয়ে গেছে।
ওই শপে “ভালো ব্র্যান্ডের পারফিউমও বিক্রি হয়। প্রতিটা পারফিউমেরই একটা করে স্যাম্পল রাখা থাকে, যেন ক্রেতারা গন্ধটা পছন্দ করে নিতে পারে।

আমি প্রতিদিন কফি কিনতে গিয়ে, পারফিউম কিনব এমন ভাব ধরে আলতো করে প্রতিটা স্যাম্পল পারফিউম শরীরে স্প্রে করি। তারপর একটা কফি কিনে হাসিমুখে বেরিয়ে আসি — পারফিউমের বোতলটা কখনও কেনা হয় না।😁

এভাবেই গত ১২ বছর ধরে চলছে আমার এই সকালবেলার ছোট্ট রুটিন।
পারফিউমের দাম না দিয়েও প্রতিদিন নতুন গন্ধে ভরে যায় দিনটা — একরকম মিষ্টি ফাঁকিবাজির আনন্দে। ☕💨✨

 ীনের_প্রেয়সী পর্ব : 07নিশাতের সারাদিনটিই কেটেছে একা একা। বিকেলে অর্থি  আপুর সাথে একটু সময় কাটিয়েছে। রান্নায় দুই শাশুড়ী ...
16/10/2025

ীনের_প্রেয়সী
পর্ব : 07

নিশাতের সারাদিনটিই কেটেছে একা একা। বিকেলে অর্থি আপুর সাথে একটু সময় কাটিয়েছে। রান্নায় দুই শাশুড়ী কে একটু হেল্প করেছে। এই ভাবেই কেটেছে তার। রাতে ডিনারের পর একা ভালো লাগছিল না। ঘুমও আসছিল না তাই অর্থির থেকে একটা বই নিয়ে এসে পড়ছিল। বইয়ের মাঝে এতোই ডুবে ছিল যে রায়ান কখন রুমে এসেছে সে টেরই পায়নি। এর মাঝেই হটাৎ তার হাত থেকে বইটা কেড়ে নেওয়ায় চোখ তুলে তাকাতেই রায়ান কে দেখতে পেল। নিজে কিছু বুঝতে পারলো আর নাতো রায়ানকে কিছু বলার সুযোগ দিল তার আগেই রায়ান তাকে টেনে উঠিয়ে টানতে টানতে দড়জার দিকে নিয়ে যেতে যেতে উচ্চারণ করল,

❝ বের হও এই রুম থেকে। আজ থেকে এই রুমে তোমার কোনো জায়গা নেই। আমার মনে তো নয়ই! কোথাও জায়গা নেই তোমার!❞

হাতের ব্যা*থার থেকেও মনের ব্যা*থাটা বেশি উপলব্ধি হলো নিশাতের কাছে! সব তো ঠিকই ছিল তাহলে হটাৎ এমন ব্যবহার করছে কেন রায়ান? সে কি কোনো ভুল করেছে? ভুল করলেও প্রথমে তার ভুলটা তো ধরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন! নিশাতের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। নিজের হাতের কব্জিতে ধরা রায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে পুনরায় রায়ানের মুখের দিকে চাইলো। রায়ান নিশাতকে রুম থেকে বের করে দিয়ে পুনরায় বলে উঠলো,
❝ এই মেয়ে বাপের বাড়িতে তো দেখলাম এতো এতো কথা বলো! তা নিজের শশুর মশাইকে বলতে পারো না আমি এই রুমে থাকতে চাইনা। আমি কারো এসিস্ট্যান্ট হতে চাইনা! নাকি নিজেই এসব বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছো? ষ্টুপিড! সবাই মিলে আমাকে পা*গল করে দিচ্ছে!❞

বলেই নিশাতের মুখের উপর দড়জাটা বন্ধ করে দিল রায়ান! নিশাত অবাক হয়ে সেই দড়জার দিকে চক্ষু নিবিষ্ট করে রইলো। কি সব বলে গেল রায়ান! সে কার এসিস্ট্যান্ট হতে চেয়েছে? তবে রুম থেকে এভাবে বের করে দেওয়ায় আত্মসম্মানে লাগলো নিশাতের। সে জানে রায়ান তার সাথে থাকতে চায়না। মুখে ভালো ভাবে বললেই হতো! নিশাতের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো। থাকবে না সে আর এই রুমে। দরকার হলে স্টোর রুমে থাকবে তবুও এই রুমে নয়। নিশাত দড়জার পান থেকে চক্ষু হটিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই দেখলো তার শশুর মশাই দাঁড়িয়ে আছে করিডরে তার থেকে একটু দূরে। শশুরকে দেখতেই আড়ালে চোখের জল মুছে নিল। ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল আরহান সাহেবের দিকে। নিকটে আসতেই মাথা নত করে ধীর স্বরে জানতে চাইলো,
❝ আমি কি থাকার জন্য একটা রুম পেতে পারি আব্বু?❞

আরহান সাহেবের চোখে মুখে হতাশার ছাপ বিদ্যমান। ছেলের প্রতি তিনি প্রচন্ড অসন্তুষ্ট। যে মেয়েটাকে তিনি বাড়ির লক্ষ্মী করে নিয়ে এসেছিল আজ তার ছেলেটার জন্য সেই মেয়েটা একটা আশ্রিতার মতো থাকার জন্য রুম চাইছে! এটা যে ওনার জন্য কতটা কষ্টের আর লজ্জার বিষয় তা কি ছেলেটা বুঝতে পারছে? আরহান সাহেব ব্যথিত হলেন তিনি তো শুধু চেয়েছিলেন ছেলে মেয়ে দুটো কাছাকাছি থাকুক। কিন্তু ছেলেটা যে মেয়েটা বের করে দিবে রুম থেকে তা ভাবেননি!

আরহান সাহেব নিশাতের মাথায় ডান হাতটা রেখে প্রচন্ড লজ্জিত হয়ে বললো,
❝ এমন করে বলো না আম্মু! এই বাড়ি তোমার! তুমি যেখানে ইচ্ছে থাকতে পারো। তুমি চাইলে রায়ানকেই ওই রুম থেকে বের করে দিব!❞

নিশাত তা*চ্ছিল্য করে হাসলো সামান্য। তবে মাথা নিচু থাকায় আরহান সাহেবের তা চক্ষুগোচর হলো না। । রায়ান কে বের করে দিলে কি হবে? সে কি পূর্ণ মর্যাদা পাবে? না তো! তাহলে! নিশাত মাথা নত রেখেই একই স্বরে উচ্চারণ করল,
❝ কাউকে আমার জন্য রুম থেকে বের করে দিতে হবে না আব্বু! শুধু আমাকে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে দিন!❞

আরহান সাহেব পুনরায় লজ্জিত স্বরে আওড়াল,
❝ আমাকে ক্ষমা করো আম্মু! তোমাকে তোমার অধিকার দিতে পারছি না। তবে কথা দিচ্ছি একদিন আমার ছেলেই তোমাকে তোমার পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে তার রুমে জায়গা দিবে।❞

কথা শেষ করেই নিশাতের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিল। নিশাত টু শব্দ করলো না। আরহান সাহেব একটা রুমের সামনে দাড়িয়ে দড়জায় ঠকঠক আওয়াজ করতেই দড়জা খুলে অর্থি বেড়িয়ে এলো। আরহান সাহেব মেয়ের উদ্দেশ্যে একটা কথাই জিজ্ঞেস করল,
❝ তোমার ভাবি কিছু দিনের জন্য কি তোমার রুমে তোমার সাথে থাকতে পারে?❞

অর্থি কোনো ঘটনা বুঝতে না পারলেও সম্মতিতে মাথা নাড়ালো। নিশাতকে অর্থির কাছে রেখে চলে গেল আরহান নেওয়াজ। এই বাড়িতে আরও রুম থাকলেও নিশাতকে অর্থির রুমে রাখার একটাই কারণ যাতে মেয়েটা কষ্ট না পায়।একাকি বোধ না করে!

শশুর মশাই চলে যেতেই নিশাত অর্থির রুমে ঢুকে বিছানায় বসে পরলো! অর্থি ভাবির দিকে এগিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করল,
❝ কি হয়েছে ভাবি? ভাইয়া কি রেগে গিয়ে তোমাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে?❞

❝হুম!❞

ছোট এক বাক্যের উত্তর শুনে অর্থি চুপ করে গেল। ভাবির মন যে ভালো নেই তা ঠিক বুঝলো। সে নাহয় পরে জেনে নিবে কি হয়েছিল! ভাবিকে শুয়ে পরতে বলে সে লাইটটা অফ করে দিল। নিশাত একপাশে শুয়ে পরতেই অর্থি বিপরীত পাশে শুয়ে পরলো। অর্থিরও তার বড় ভাইয়ের কাজটা পছন্দ হলো না। কিন্তু বড় ভাইকে কিছু বলার মতো সাহসও তার নেই। সে নিশাতের দিকে আর একটু এগিয়ে ব্যথিত স্বরে জানতে চাইলো,
❝ তোমার খুব খারাপ লাগছে তাই না ভাবি?❞

নিশাত একপেশে হাসলো। তাতে মিশে আছে অব্যক্ত কষ্ট আর বেদনার মিশ্রণ! প্রতিত্তর সরূপ নিশাত কেমন করে বলে উঠলো,
❝ যাদের অপূর্ণতার খাতা অনেক বড় থাকে তাদের কষ্টের পরিমাণটা কমে যায়। কষ্ট পেলেও তা কেউ দেখার বা উপলব্ধি করার থাকে না!❞

অর্থি কি বুঝলো কে জানে তবে পিছন থেকে ভাবিকে একহাতে জড়িয়ে ধরলো। ছোট করে বলে উঠলো,

❝ ঘুমাও এখন ভাবি!❞

______________

প্রায় ঘন্টা পেরিয়ে বাথরুম থেকে স্নান সেরে বের হলো রায়ান। শরীর ঠান্ডা হলেও মস্তিষ্ক যেন এখনো বারুদের মতো হয়ে আছে। যেন একটু ছোঁয়া পেতেই ফেটে পরবে।শুধু একটা ট্রাউজার পরে ভেজা শরীরে বের হয়ে এসেছে সে। মাথাটাও ঠিক মতো পোছেনি। চুল থেকে জল চুইয়ে এসে শক্তপোক্ত শরীর বেয়ে তা নিচে গড়িয়ে পরছে। বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে দেহের বিভিন্ন অংশ জুড়ে। রুমে এসে একটা টাওয়াল নিয়ে মাথা ভালো করে পুছে নিল। হঠাৎ চোখ পরলো তার ছুড়ে ফেলা সেই বইটার দিকে। কঠোর মুখাবয়বে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বইটা তুললো। এটা তারই বই। কিন্তু তার ভালো করেই মনে আছে এই বইটা অর্থি নিয়ে গিয়েছিল। তারমানে ওই মেয়েটা তার লাইব্রেরি রুমে ঢুকেনি আজ।

রায়ান হাতের ভেজা টাওয়াল টা খাটের উপর ছুড়ে ফেলে নিজের সেই লাইব্রেরি সমতুল্য রুমটাতে প্রবেশ করল। এই রুমটা তার ভিষণ শখের। সেও ভিষণ বই পরতে ভালোবাসতো। তাই তো নিজের স্বপ্ন পুরন করতে এতো বড় একটা রুমের অর্ধেক অংশ জুড়ে বিভিন্ন বই দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে। এমন নয় যে সে এই রুমে কাউকেই আসতে দেয় না। অর্থি আয়ান ওদের যখন যে বইয়ের প্রয়োজন হয় নিয়ে যায়। তবে কেউ পারমিশন ছাড়া বা বাইরের মানুষ এই রুমে প্রবেশ করুক তা রায়ানের পছন্দ নয়।

সেদিনও সে রেগে ছিল। আর মেয়েটা বিনা পারমিশনে তার বইয়ে হাত দিয়েছিল বিধায় রেগে ওসব বলে ফেলেছিল। তবে আজ তার কোনো ইচ্ছে ছিল না রাগারাগি করার। আর নাতো বই পরতে দেখলে সে কিছু বলতো। মুশকানকে বিয়ের খবরটা জানানোর পর থেকে সে ভিষণ চিন্তিত হয়ে আছে। তার উপর বাবার রোজ রোজ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তার উপরে চাপিয়ে দেওয়াটা তার ভালো লাগছে না। সব কিছু মিলিয়ে সে এতোই রেগে গিয়েছিল যে কি বলতে কি বলেছে আর কি করেছে নিজেই বুঝছে না। মেয়েটাকে তার রুম থেকে বের করে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ক্রো*ধ যেন তার মতিভ্রম সৃষ্টি করেছিল। সে তার রাগটাকে আজও কাবু করতে পারলো না!

রায়ান গিয়ে লাইব্রেরী রুমে রাখা সোফাটাতে গিয়ে বসে পরলো। মনের ভিতর কোথাও যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছে! মেয়েটার উপর বিনা কারণে এভাবে রাগ দেখানোটা বোধহয় ঠিক হয়নি! একবার গিয়ে স্যরি বলে আসবে?এই রুমে এসে থাকতে বলবে কি! না থাক! মেয়েটা দুরেই থাকুক। এতেই তার জন্য ভালো। নয়তো বারবার সব রাগ ওই মেয়েটার উপরে গিয়েই বর্তাবে!

নিজের মতো ভাবনা ভেবে ওই সোফাতেই টানটান হয়ে শুয়ে পরলো। বইটাকে তার নির্দিষ্ট স্থানে না রেখে যায়গা দিল তার বুকের উপর। মাথাটায় য*ন্ত্রণা হচ্ছে। এককাপ কফি হলে ভালো হয়। কিন্তু নিচে যেতে আর ইচ্ছে হলো না। কপালে একটা হাত রেখে সেখানেই চোখ বুঝলো। সেভাবেই পরে রইলো সারাটা রাত। ঘুম বাবাজী তার চোখে আদোও ধরা দিয়েছে কিনা তা ঠাওর করা গেল না।

_______________

আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সবাই এই দিনটাতে বাড়িতে বসে আপনজন দের সাথে সময় কাটিয়ে থাকে। নেওয়াজ বাড়ির সবাই বাড়িতেই আছে। নিশাত সকাল সকাল উঠেই হাসি মুখে সবার সাথে কথা বললো। শাশুড়ীদের সাথে টুকটাক সাহায্য করলো। এমন ভাবমূর্তি যেন কাল রাতে কিছুই হয়নি। তিনটা প্রানী ছাড়া কেউ জানেনা রায়ান নিশাতকে রেগে তার রুম থেকে বের করে দিয়েছিল।সকালের অর্ধেক রান্নাটা নিশাতই করলো। সবাই বাড়িতে আছে বিধায়ই তার শাশুড়ীই বলেছে আজ রান্না করতে।

ব্রেকফাস্টে প্রতিদিনকার মতো শহুরে খাবারের পরিবর্তে গ্রামের সার বিহীন টাটকা শাখ সবজির আইটেম খেয়ে সবাই নিশাতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে এসবে নিশাতের মন নেই। তার মন পরে আছে রায়ানে। বাড়িতে সবাই থাকলেও রায়ানের নাম গন্ধ নেই। সে কি তার রুমে আছে নাকি বাড়িতেই নেই। ব্রেকফাস্ট করবে না? যে লোকটা তাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে তাকে নিয়ে ভাবা বোধহয় বোকামি। তবুও নিশাত তার কথা ভাবতেই ব্যস্ত। যতই হোক সে তো তার স্বামী। সে শুনেছে তার স্বামীর অনেক রাগ। তাই হয়তো কোনো কারণ বশত তার সাথে কাল অমন ব্যবহার করে ফেলেছে। রুম থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারটা নিশাত সেই কখন ভুলে গেছে কারণ এতে তারই ভালো হয়েছে। এক রুমের মধ্যে অ*স্বস্তি নিয়ে দুজন ওইভাবে থাকার চেয়ে আলাদা থাকাই ভালো। তার তো খারাপ লেগেছিল শুধু বিনা দোষে তাকে অতগুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিল বলে। তাও এখন ভুলতে বসেছে নিশাত।

আরহান সাহেব নিজের বৌমার দৃষ্টি আর মন দুটোই বোধহয় বুঝতে সক্ষম হলো। তিনি তো ভালোই চিনে মেয়েটাকে। অনেকে প্রায় খেয়ে উঠে পরেছে। নিশাতকে খেতে বসতে বলতেই সে আমতা আমতা করলো। আরহান সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে শান্ত স্বাভাবিক স্বরে বললো,
❝ রায়ানের হঠাৎই একটা সার্জারী পরে গেছে তাই অনেক সকালেই বেড়িয়ে গেছে বাড়ি থেকে। তুমি খেয়ে নাও আম্মু!❞

নিশাতের মনটা একটু শান্ত হলো। কথাটি সাথী বেগমের কর্ণগোচর হতেই কিছুটা সন্দেহ হলো তার। নিশাতের দৃষ্টি তিনিও লক্ষ্য করেছেন।মনে হয়েছে মেয়েটা কাউকে খুঁজতে ব্যস্ত। সন্দেহ দূর করতে জিগ্যেস করল,
❝ এই নিশাত রায়ান কি তোমাকে তার রুম থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে? নয়তো এক রুমে থেকেও তার খবর কেন জানোনা!❞

নিশাত ল*জ্জিত বোধ করলো। এখন সে কি বলবে? আরহান সাহেব ভাইয়ের বৌয়ের প্রশ্ন শুনে অপ্রশন্ন স্বরে জবাব দিল,
❝ ওই খা*টাশ ছেলেটা আমার বৌমাকে বের করে দেয়নি! আমার বৌমাই ওটাকে ছেড়ে চলে এসেছে! বুঝেছো!❞

সাথী বেগম মুখ ভে*ঙালো ভাসুর কে পুত্রবধূর হয়ে জবাব দিতে দেখে। রিমি বেগম স্বামীর পানে কঠোর চাহনি দিল ছেলেকে খা*টাশ বলায়। স্ত্রীর ওমন তাকানো দেখতেই খাবার ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে কেটে পরলো। নিশাতের এসব দেখে হাসি পেল। খানিকটা মুচকি হেসেও ফেললো। রিমি বেগম তা দেখতেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
❝ না হেসে চুপচাপ খেতে বসো। নিজের স্বামীকে খাটাশ বলেছে তাও মেয়ে হাসছে কেমন দেখ!❞

শেষ কথাটা একটু বিরবির করে বললেও নিশাত ঠিকই তা শুনতে পেল। আড়ালে আর একটু হেসে চুপচাপ খেতে বসে গেল! নয়তো দেখা যাবে শাশুড়ী আম্মাও সব রাগ তার উপর দেখানো শুরু করবে!

______________

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রায়ানের বন্ধুমহল এসে উদয় হলো নেওয়াজ মঞ্জিলে! তবে শুধু ছেলেরা। আকাশ সাথে করে নিজের স্ত্রী আর ছেলেকেও এনেছে। সবাই পরিকল্পনা করেছে বিকেলটা নেওয়াজ মঞ্জিলে কাটিয়ে রাতে ডিনার সেরে তারপর ফিরে যাবে তারা। এসেই সবাই বড়দের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আকাশের স্ত্রীর নামও রিমি। তাইতো তাকে দেখতেই রিমি বেগম মুচকি হেসে জিগ্যেস করল,
❝ কেমন আছো ছোট রিমি?❞

রিমি ছুটে এসে রিমি বেগমকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে উৎফুল্ল হয়ে জবাব দিল,
❝ ভালো আছি আন্টি! আপনি কেমন আছেন?❞

❝ ভালো!❞

উত্তর দিয়ে রিমির ছেলেটাকে আদর দিয়ে চলে গেল রিমি বেগম। রায়ান দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরেছিল। বন্ধুদের আসার খবর পেয়ে নিচে নামলো। তার পিছু পিছু আরহান বাবুও এলো। দুজনেই সবার সাথে টুকটাক কথা বলে সবাইকে বসতে বললো। আকাশের কোলে তার দের বছরের ছেলেটাকে দেখে নিজের কোলে নিয়ে নিল আরহান সাহেব। দুই গালে দুটো চুমু খেয়ে রায়ান কে শুনিয়ে শুনিয়ে একটু উচ্চস্বরেই বলে উঠলো,

❝ তোমাদের মধ্যে আকাশই একটা ভালো কাজ করেছে। আহ কি সুন্দর একটা বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে। আর আমার গা*ধাটাকে দেখ! বাচ্চা তো দূর এই বয়সে বৌটাকেই মানছে না! তোমরা সময় থাকতে কেউ ভালো জিনিসের কদর করতে পারো না বুঝেছো!❞

রায়ান বাবার দিকে কপাল কুচকে তাকালো। বাকি সবাই মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো। রিমি বেগম সবার জন্য শরবত নিয়ে সবার সামনে ছোট টি-টেবিলের উপর রাখলো। সবার আগে আবিদই একটা গ্লাস নিয়ে তাতে চুমুক বসিয়ে বলে উঠলো,
❝ আন্টি এসব খাওয়া দাওয়া পরে হবে। অনেক সময় আছি আমরা! কিন্তু যার জন্য এখানে আসা তাকে আগে ডেকে আনুন প্লিজ!❞

রিমি বেগম হেটে এগিয়ে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো,
❝ অর্থি শুনতে পাচ্ছিস? নিজের ভাবিকে নিয়ে নিচে আয়! আবিদরা এসেছে!❞

সবাই মিলে গল্পে মেতে উঠার দু মিনিটের মাঝেই নিশাতকে সাথে নিয়ে অর্থিকে নিচে নামতে দেখা গেল! সবাই সেদিকে তাকিয়ে রইলো। এমনকি রায়ানের চোখটাও সেখানেই নিবিষ্ট হলো। নিশাত একটা দামী থ্রিপিস পরা যার ওড়নাটা মাথায় তুলে রাখা। নিশাত না চাইলেও বাড়িতে মেহমান তাকে দেখতে আসবে বলে অর্থি তাকে হালকা সাজিয়ে দিয়েছে। মুখে সামান্য ক্রিম আর ঠোঁটে হালকা লিপগ্লোস! আর চোখের নিচে কাজল। নিশাত তো কাজল পরতে রাজিই ছিল না। বার বার বলেছে,

❝ আপু আমি কাজল পরবো না। কাজল পরলে আমাকে আরও কালো লাগে! প্লিজ দিও না!❞

কিন্তু অর্থি মেয়েটা কোনো কথা কানে তোলেনি! কে বলেছে কালো বা শ্যামলা মেয়েদের ভালো লাগে না? শ্যামলা মেয়েরাই যে বেশি সৌন্দর্যের অধিকারীনি হয় তা এখানে উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষের চাহনিতে স্পষ্ট। সবার মনেই হয়তো জেগেছে এই মেয়েটা যদি ফর্সাই হতো তবে সে পলকেই বোধহয় অন্যতম সুন্দরী হওয়ার সার্টিফিকেট পেয়ে যেত।

নিশাত এসে সবাইকে সালাম জানাতেই সবাই তার থেকে চোখ সরিয়ে সালামের উত্তর দিল। রিমি উঠে এসে নিশাতের হাত ধরে তার পাশে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে সে নিজেও বসে পরলো। নিশাতের থুতনিতে হাত রেখে প্রশন্ন হেসে বললো,
❝ বাহ তুমি তো ভারি মিষ্টি! রায়ান ভাইয়া তো জিতে গেছে!❞

প্রশংসা শুনে একটু লজ্জা পেল নিশাত। রিমিকে একপলক তাকিয়ে দেখলো। মেয়েটা ভারি সুন্দরী। গাঁয়ের রঙটাও সাদা। আর তার থেকে লম্বাও অনেক। এমন সুন্দরের অধিকারীনী হয়েও তাকে মিষ্টি বলছে এটা বোধহয় বড় মন না হলে বলতে পারতো না। এটাই মনে হলো নিশাতের কাছে। ছোট বাচ্চাটা নিশাতকে দেখতেই ফোকলা হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। নিশাত মিষ্টি হেসে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল। রিমি আওয়াজ তুলে পুনরায় বললো,
❝ দেখলে আমার ছেলের ও তোমাকে পছন্দ হয়েছে! তাই তো নিজে থেকে হাত বাড়িয়ে দিল।❞

বাচ্চাটা ভারী গলুমলু। নিশাতের ভিষণ পছন্দ হলো। এমনিতে তার সব বাচ্চাকেই ভালো লাগে। তবে এটা একটু বেশিই কিউট। এতোগুলো মানুষের মাঝে থাকতে যা অ*স্বস্তি হচ্ছিল তা এই বাচ্চাটাকে পেয়ে কেটে গেল। বাচ্চাটাকে আগলে নিয়ে জিগ্যেস করল,
❝ বাবুর নাম কি আপু?❞

❝ আহাদ!❞

নিশাত বাচ্চাটাকে ঘনঘন কয়েকটি চুমু খেল। বাচ্চাটার নাকের সাথে নাক ঘষে কাতুকুতু দিল। ফলস্বরূপ বাচ্চাটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। রায়ান সেদিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে রাতের পর থেকে আর দেখেনি। এমনকি দুপুরে বাড়ি ফেরার পর থেকেও চোখের দেখা দেখতে পায়নি। বাচ্চাটার সাথে কত সহজে মিশে গেছে। বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে নাকি?

রায়ানের ধ্যান ভা*ঙতে আরহান সাহেব আবিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
❝ আবিদ বেটা তুমি আমার সাথে এসো তো। তুমি আমি আলাদা গল্প করি!❞

বলে তিনি উপরে চলে গেল। আবিদ আকাশ আর প্রান্ত কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
❝ তোরা থাক, আমি আঙ্কেলের সাথে দেখা করে আসি। দেখেছিস আঙ্কেল আমাকে কত ভরষা করে! তোরা থাকতেও শুধু আমাকেই ডাকলো! এটাই এচিভমেন্ট বুঝলি!❞

বলে ভাব দেখিয়ে চলে গেল। আবিদের কথায় ওদের কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেল না। যেন পা*গল তার নিজের মতো বকবক করে চলে গেছে!

_______________

❝ আঙ্কেল আই অ্যাম কামিং! জলে, জঙ্গলে যেখানে যখনই দুশ্চিন্তার দেখা পাবেন আমাকে স্মরণ করিবেন। দেখবেন আমি চোখের পলকে হাজির আপনার সামনে দুশ্চিন্তাকে আমার করে নিতে!❞

কথাটা বলতে বলতে আরহান বাবুর রুমে প্রবেশ করল। কথাটা শুনে আরহান বাবু একটু দুঃখ প্রকাশ করে বললো,
❝ দুশ্চিন্তার দেখা পাওয়ার জন্য আমাকে জলে বা জঙ্গলে যেতে হয় না বাবা। বাড়িতেই আস্ত একটা তৈরি করেছি।❞

❝ আর সেইটা নিশ্চয়ই আপনার একমাত্র ছেলে তাই না আঙ্কেল?❞

আবিদের উৎসুক সুর শুনে আরহান বাবুও গর্বিত হয়ে বললো,
❝ তুমি খুব বুদ্ধিমান বাবা। খুব সহজেই সব বুঝে যাও। এই জন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে!❞

আবিদ প্রশংসা শুনে যেন গর্বে গর্ভবতীদের মতো ফুলে উঠলো। লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলল,
❝ এমন করে বলবেন না আঙ্কেল! বাচ্চা ছেলেটা লজ্জা পায় তো!❞

আবিদের লজ্জা ভে*ঙে দিতে আরহান সাহেব কটাক্ষ করে আওড়াল,
❝ লজ্জা কম পেয়ে আমার একটা কাজ করে দাও বাপ। কাজে সফল হলে আমি আরও বেশি প্রশংসা করবো তোমার। তখন না হয় লজ্জা পেও!❞

আবিদ এবার সত্যি লজ্জা পেয়ে গলা খাকরি দিয়ে বললো,
❝ কি কাজ বলুন আঙ্কেল! আমি এখনই করে দিচ্ছি!❞

❝ আরে আমার হা*দারাম ছেলেটাকে একটা অফার দিয়েছিলাম। কিন্তু অফার শুনে রেগে গিয়ে বৌকেই ঘর থেকে বের করে দিল!❞

আরহান সাহেবের হালকা বিষন্ন স্বরের জবাব শুনে আবিদও স্বরে দুঃখ মিশিয়ে বলল,
❝ ঠিকই বলেছেন আঙ্কেল ও একটা হা*দারামই। নয়তো এতো সুন্দর একটা মিষ্টি মেয়েকে কেউ প্রত্যাখ্যান করে! আচ্ছা বলুন তো কি হয়েছে?❞

আরহান বাবু সংক্ষেপে আবিদকে সব জানালো। তারপর কিছু ভেবে বললো,
❝ ও কাল এতো রিয়েক্ট কেন করলো জানিনা। কিন্তু আমার ছেলেকে আমি চিনি তো তাই আমি শিওর ও নিশাতকে কাজে রাখতে রাজি হবে! তুমি তো ওর কাছেই থাকো তাই তুমি খেয়াল রাখবে দুটোতে যেন সবসময় কাছাকাছি থাকতে পারে। আর আমার মেয়েটাকে যেন বেশি বকাবকি না করে বুঝেছে?❞

আবিদ হালকা হেসে মজা করে বলল,
❝ সেসব ঠিক দেখে নিব আঙ্কেল। কিন্তু আপনি বাবা হয়ে ছেলের জন্য এসব করতে লজ্জা করছে না। না মানে বাবা হয়ে বলছেন আপনার ছেলে বৌমা যেন চিপকে চিপকে থাকে?❞

আরহান বাবু বিব্রতবোধ করলো। কতবড় ফাজিল ছেলে তাকে নিয়েই মজা নিচ্ছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে গলা খাকরি দিয়ে হালকা রাগত্ব স্বরে বললো,
❝ চুপ করো ব্যা*য়াদপ ছেলে। আমি মোটেও ওভাবে বলিনি। আর ছেলে যদি বেরসিক হয় তাহলে বাবাকে এসবের দ্বায়িত্ব নিতে হয় বুঝেছো!❞

আরহান বাবু রেগেছে বুঝতে পেরে আহাদ শ*য়তানি হেসে রুম থেকে কেটে পরলো। শুধু যেতে যেতে উচ্চারণ করল,
❝ বুঝেছি আঙ্কেল! আর চিন্তা করবেন না আপনার কাজ হয়ে যাবে! আপনার ছেলে বৌমার প্রেম আমিই ঘটাবো। ভরষা রাখতে পারেন!

_______________

গল্পে মেতে থাকায় কেউ বুঝতেই পারলো না যে কখন গোধুলীর আলো নিভে গিয়ে তিমিরের দেখা মিলেছে ধরায়। হাসি, মজা, আড্ডায় সময়টা চোখের পলকে পেরিয়ে গিয়েছে। সবাই ডিনারের জন্য বসেছে টেবিলে। বিয়েতে কোনো আয়োজনই হয়নি। আয়োজন তো দূরে থাক কাউকে জানায়নি পর্যন্ত। তাই আজ রায়ানের বন্ধুরা আসায় বিভিন্ন ম্যানু দিয়ে টেবিলটা ভরিয়ে তুলেছে নেওয়াজ গিন্নিরা। বাড়ির চার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যতীত বাকি সবাই খেতে বসেছে। রিমি নিশাতকেও তার পাশে বসিয়েছে খাওয়ার জন্য। বাচ্চাটা অধিক সময় নিশাতের কাছেই ছিল। তারা দুজন এমন ভাবে মিশেছে যেন দুজন খুপ আপন! খেতে বসেছে বিধায় বাচ্চাটাকে রেখে এসেছে শশুর মশাইয়ের কাছে। খাওয়ার ফাঁকে আকাশ আয়ানের উদ্দেশ্যে জিগ্যেস করে উঠলো,

❝ তা আয়ান বাবু আপনার দিন কাল কেমন যাচ্ছে! আর ডাক্তারি কেমন চলছে!❞

আয়ান ভাই সমতুল্য আকাশের পানে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো,
❝ ভালোই ভাইয়া। ইর্টানি চলছে। এটা নিয়েই ব্যস্ত। শেষ হলেই নিজেদের হাসপাতালে জয়েন হয়ে যাব!❞

❝ তা তোমার কি খবর অর্থি বোন আমার? পড়াশোনা কেমন চলছে?❞

আয়ানের উত্তর পেয়ে অর্থির দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো আকাশ। অর্থি খাওয়া বাদ দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রতিত্তোরে হেসে বললো,
❝ আমি আর পড়াশোনা দুটোই ভালো চলছে ভাইয়া!❞

প্রান্ত খেতে খেতে পাল্টা প্রশ্ন করল,
❝ তোমাদের পরিবারে তো এতগুলো ডাক্তার। তা তুমি কেন ডাক্তারি পরলে না? তুমিও তো খারাপ স্টুডেন্ট নও!❞

আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে প্রান্তের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল অর্থি,
❝ আমার ইংলিশ সাহিত্য খুব ভালো লাগে। ভাগ্যক্রমে তা পেয়েও গিয়েছি তাই এটাই করছি! আর পরিবারে শুধু ডাক্তার থাকলেই হয় না ভাইয়া। অন্য পেশারও দরকার আছে!❞

❝ তা ঠিক!❞

উত্তর পেয়ে সবাই এক মুহুর্তের জন্য চুপ হয়ে গেল। এই শান্ত পরিবেশটা হয়তো রিমির পছন্দ হলো না তাইতো নিশাতকে ডেকে শুধালো,
❝ এই নিশাত তুমি আমাদের বাসায় কবে যাচ্ছো বলো? ভাইয়া আর তোমাকে জলদি আমাদের বাসায় দেখতে চাই!বুঝেছ!❞

নিশাত কি জবাব দিবে বুঝলো না! সে কি চিনে যে যাবে? আর রায়ান তাকে নিয়ে যাবে এই আশা করাও ভুল। একবার চোখ তুলে রায়ানের পানে তাকালো। যে এখন নির্লিপ্ত অভিব্যক্তিতে খেতে ব্যস্ত। যেন এসবে তার কোনো পরোয়াই নেই। নিশাত চোখ সরিয়ে আমতাআমতা করে বলল,
❝ যাব কোনো একদিন আপু!❞

❝ কোনো একদিন আবার কি! খুব জলদিই যাবে। ভাইয়া আপনি একদিন সময় বের করে নিশাতকে সাথে করে কিন্তু আমাদের বাসায় যাবেন। অপেক্ষায় থাকবো আমরা।❞

শেষের কথাগুলো রায়ানের দিকে তাকিয়ে বললেও রায়ানের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হলো না। শুধু শান্ত কন্ঠে একটা শব্দ উচ্চারণ করল,
❝ আচ্ছা!❞

জবাব শুনে নিশাত আর পলক চাইলো স্বামী নামক ব্যক্তিটার দিকে। লোকটা আচ্ছা বললো তার মানে তাকে নিয়ে যাবে বলছে? যাক বা না যাক নিয়ে যাবে বলেছে এটাই অনেক নিশাতের জন্য।

সবাই হালকা হাসি আড্ডায় খাওয়াটা শেষ করলো। খাওয়া শেষে অনেকক্ষণ রেস্ট নিল সবাই। যাওয়ার সময় হতেই সবাই উঠে দাড়ালো। বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিল একে একে। রিমি নিশাতকে এটা ওটা বলে পুনরায় তাদের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বিদায় নিল। সবাই বেড়িয়ে গেলেও নিশাত তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তার স্বামীর বন্ধুগুলো কত ভালো। কত হাসিখুশি সবাই আর কি সুন্দর করে কথা বলে। কিন্তু তার স্বামীকে দেখ গো*মড়ামুখো একটা। সব সময় কেমন গম্ভীর থাকে। আচ্ছা লোকটাকে হাসলে কেমন লাগবে দেখতে? নিশাতের হঠাৎ ইচ্ছে জাগলো নিজের স্বামীকে হাসতে দেখার। সে মনে মনে একটু কল্পনাও করে নিল। মনে মনে ভাবলো লোকটা হাসলে নিশ্চয়ই তার কল্পনার চাইতেও বেশি সুন্দর লাগবে! কিন্তু সেই চিত্রখানা দেখার মতো সৌভাগ্য কি আদোও তার হবে? কল্পিত ছবিটাকে আদোও বাস্তব রূপে আস্বাদন করতে পারবে তো? কে জানে! ভেবেই যেন মনটা আনচান করে উঠলো!

চলবে?

Address

Narsingdi

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Rubel posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share