17/10/2025
ীনের_প্রেয়সী
পর্ব : 08
নতুন একটি দিনের সূচনা। নতুন সকাল মানে সবাই নতুন ভাবে তাদের পথ চলতে শুরু করে। নতুন একটা ভোর শুরু হওয়া মানেই রবির নরম কিরনের ছোঁয়া লাগিয়ে মানুষের চিন্তা চেনতাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা। যাতে সবাই নতুন ভাবে শিখতে পারে, নতুন ভাবে বাঁ*চতে পারে।
তেমন করেই নিশাতেরও আজ নতুন পথ চলার সূচনা হতে চলেছে। নিশাত সম্পূর্ণ তৈরি হয়েই নিচে নেমেছে। প্রায় সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসে গেছে। কারণ সবাই এখন যার যার কাজে বের হবে।
সবাই খেতে বসার কিছুক্ষণ পরেই রায়ান নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে এক পলক নিশাতের দিকে তাকালো। নিশাতও কারো আসার শব্দ পেয়ে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। নিশাত তৎক্ষনাৎ নিজের চোখ সরিয়ে নিল। এর মাঝে কেটেছে পুরো একটা দিন। কিন্তু নিশাত একবারের জন্যেও রায়ান এর রুম তো দূরে থাক তার সামনেই যায় নি বলতে গেলে। শুধু সকালে আর রাতে খাওয়ার সময় যা একটু চোখের দেখা হয়েছে এই টুকু। তবে মানুষটা তার প্রয়োজনীয় বই পত্র যা দরকার সব কাল কিনে এনে অর্থির রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। নতুন বই পত্রের ঘ্রান পেয়ে নিশাতের যতটুকু অভিমান জমা ছিল তাও ক্ষয়ে গেছে। তবুও লোকটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নিশাতের নেই।
নিশাতকে চোখ সরিয়ে নিতে দেখে রায়ানও চক্ষু হটিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। রিমি বেগম খাবার বেড়ে দিতেই তা মুখে তুললো। খাওয়াতে মনোযোগী থেকেই হঠাৎ বাবার উদ্দেশ্যে জিগ্যেস করল,
❝ আব্বু তোমার ঠিক করা এসিস্ট্যান্ট কে স্যালারি তুমি দিবে নাকি আমাকে দিতে হবে?❞
কথাটি শুনতেই আরহান সাহেব বিষ্ময় চাহনিতে তাকালো নিজ পুত্রের পানে! তিনি আশা রেখেছিলেন ছেলে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিবে। কিন্তু এতো জলদি ভাবেন নি! চোখ সরিয়ে গলা খাকরি দিয়ে প্রতিত্তর করল,
❝ বৌ তোমা. না মানে এসিস্ট্যান্ট তোমার তাহলে আমি কেন স্যালারি দিব? অবশ্যই তোমাকে দিতে হবে!❞
❝ আচ্ছা! তা কত দিলে তোমার কাছে ঠিক মনে হবে?❞
ছেলে যে পিন্স মেরে কথা বলছে তা ঠিকই বুঝতে সক্ষম আরহান সাহেব। নিজেও সুযোগ পেয়ে বলে উঠলো,
❝ আপাতত প্রথম মাসের স্যালারি হিসেবে তাকে একটা ফোন কিনে দিও। পরবর্তীতে তোমার যা ভালো লাগে দিও!❞
টেবিলের সবাই বাবা আর ছেলের কথার দিকে তাকিয়ে তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করল। রিমি বেগম ব্যতীত কেউ ই বুঝতে পারছে না দুজনে কি নিয়ে কথা বলছে। নিশাত নিজেও চোখ ছোট করে তাকিয়ে সব বোঝার চেষ্টা করল। সেদিন রাতে রায়ান তাকে এসিস্ট্যান্ট হওয়ার বিষয় নিয়েই কিছু বলে ছিল। রায়ানের কথা মতো তার নিজের এসিস্ট্যান্ট হওয়ার কথা। তাহলে কি তাকে নিয়েই এখন কথা হচ্ছে? তাহলে সেদিন যে রা*গারাগি করলো এখন আবার রাজি কেন হচ্ছে?
আয়ান থাকতে না পেরে রায়ানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,
❝ ভাইয়া তুমি নতুন এসিস্ট্যান্ট রেখছ বুঝি? তোমার তো এসিস্ট্যান্ট একজন ছিল। তাহলে নতুন জন কে?❞
প্রতিত্তোরে রায়ানের শান্ত গম্ভীর স্বর ভেসে এলো,
❝ তোর বড় আব্বুকে জিগ্যেস করে নে কে সে?❞
সবাই আরহান সাহেবের দিকে তাকালেও রিমি বেগম আওয়াজ তুলে বললো,
❝ আমি বলছি! তোমার বড় আব্বু তোমার ভাবিকে তোমার ভাইয়ের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে ঠিক করেছে। বুঝেছো!❞
উত্তর শুনেই আয়ান খুশি হয়ে বলতে চাইলো,
❝ বাহ তাহলে তো ভালোই। ভাবি আর ভাইয়া সব সময় পাশাপাশি, কাছাকাছি থাকত...❞
কিন্তু শেষ করার আগেই রায়ানকে কঠোর চোখে তাকাতে দেখে থেমে গেল। নিশাতের কাছে সব যেন এবার স্পষ্ট হলো। যে বিষয় নিয়ে এতো ঝা*মেলা হলো সেই কাজ নিশাত করবে না। আর এই লোকের সাথে তো নাই। শশুরের উদ্দেশ্যে আওয়াজ নিচু করে বললো,
❝ আব্বু আমি এই কাজটা করতে চাইনা!❞
আরহান সাহেব চোখ তুলে বৌমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ কেন? কোনো সমস্যা তোমার?❞
নিশাত ইতিউতি করে বলল,
❝আমি সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি। এখন তো আমার পড়াশোনায় ফোকাস করা দরকার তাই না? আমি কিভাবে..?❞
আরহান সাহেব বাঁ*ধা দিয়ে পুত্রবধূর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
❝ তোমার ক্লাস তোমার পড়াশোনা সবই ঠিক থাকবে। ক্লাস শেষ করার পর থেকে সন্ধ্যা অবধি তুমি কাজ করবে।এই কাজ তোমার জন্যই ভালো। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একমাস করে দেখ। এর মাঝে যদি তোমার কাজ বা নিজের বসকে পছন্দ নাহয় তখন তুমি জবটা ছেড়ে দিও কেমন!❞
নিশাত জবাব দেওয়ার জন্য আর কোনো বাক্য খুঁজে পেল না। এই লোকের সাথে থাকা মানে তো সারাদিন চুপচাপ থাকতে হবে আর ধমকের উপর ধমক খেতে হবে। কি করবে সে এখন? ভেবেও যেন কান্না আসলো নিশাতের। তার শশুরমশাই কেন এসব করছে?
তার ভাবনার মাঝেই রায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ালো। সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বাবার উদ্দেশ্যে বলে গেল,
❝ তোমার ঠিক করা এসিস্ট্যান্ট কে দ্রুত আসতে বলো।❞
ছেলের কথার মানে বুঝতে পেরে আরহান সাহেব নিশাতকে ডেকে পুনরায় বললো,
❝ নিশাত আম্মু রায়ান তোমার অপেক্ষায়। যাও রায়ানই তোমাকে নিয়ে যাবে?❞
নিশাতের চক্ষু বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। তার শশুর মশাই তো বলেছিল উনিই তাকে মেডিকেলে রেখে আসবে। তাহলে এখন এই লোক কেন? যাওয়া আসাটাও এখন এই লোকের সাথে করতে হবে? ও গড! কিন্তু উপায় না পেয়ে উঠে পরলো নিশাত। নিশাতকে উঠতে দেখে অর্থিও উঠে ভাবির সাথে হাটা ধরলো। ভাবির একটা হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে হাসি মুখে আওড়ালো,
❝ অল দ্যা বেস্ট ভাবি! দুটোর জন্যই!❞
নিশাত অর্ধেক বুঝতে পেরে বললো,
❝ ধন্যবাদ! কিন্তু দুটো মানে?❞
❝ এক তোমার মেডিকেলে প্রথম দিন আর দুই তোমার জবের জন্য!❞
শুনতেই নিশাতের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। কে চেয়েছিল এই জব করতে? এর থেকে তো ভালো হতো সে সারাদিন বাড়িতেই পরে থাকতো! দুজনে এগিয়ে যেতেই দেখলো রায়ান দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির কাছে। অর্থি অন্য একটা গাড়িতে চড়ে বসতেই নিশাত ধীর পায়ে রায়ানের গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। ব্যাক সীটে বসতে নিতেই রায়ানের গম্ভীর স্বর শ্রবণ হলো।
❝ সামনে বসো!❞
নিশাত একটা হতাশ শ্বাস ফেলে সামনের সীটে গিয়ে বসে পরলো। নিশাতকে বসতে দেখে রায়ানও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল!
___________________
গাড়িতে উঠেছে সবে মাত্র দশ মিনিট হবে হয়তো। কিন্তু নিশাতের কাছে মনে হচ্ছে সেই কখন গাড়িতে উঠেছে কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতেই পারছে না। এর মাঝেই আবার জ্যামের সৃষ্টি হলো। গাড়ি থামতেই নিশাত বিরক্ত হয়ে বাইরে দৃষ্টি দিল। শহরের এই জ্যাম, শোরগোল, কোলাহল তার কাছে নতুন কিছু নয়। সেও একটা সময় এই শহরেই কাটিয়েছে। শহরের ধুলো মেখেই তার বড় হওয়া। ছোট বড় অনেক স্মৃতিই তার মস্তিষ্কে গেথে আছে। তবে অনেকদিন এসব থেকে দূরে থাকায় এখন কিছুটা নতুনই মনে হচ্ছে। জ্যামের ভিতরই কেটে গেল প্রায় বিশটা মিনিট। জ্যাম ছাড়তেই পরবর্তী দশ মিনিটের মধ্যেই রায়ানের গাড়ি এসে থামল এক বিশাল মেডিকেল ক্যাম্পের সামনে। স্বপ্নের পথে এক ধাপ অগ্রসর হতে পেরে নিশাতের যেন খুশির অন্ত নেই। গাড়ি থামতেই প্রশন্ন চিত্তে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই রায়ান পিছু ডেকে উঠলো,
❝ শোন?❞
নিশাত থেমে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো নিজ স্বামীর পানে। নিশাতকে তাকাতে দেখে রায়ান গম্ভীর স্বরে আওড়াল,
❝ ক্যাম্পাসের কাউকে বিয়ের বিষয়ে বলার দরকার নেই বুঝেছো!❞
নিশাত একটু অবাকই হলো। এই লোককে নিশ্চয়ই এখানের কেউ চিনেনা। আর তাকেও কেউ চিনেনা। তাহলে কেউ বিয়ের কথা কেন জিগ্যেস করবে? আর করলেও বললে কি সমস্যা বুঝলো না নিশাত। তাই প্রশ্ন করল,
❝ কেন?❞
রায়ান আবারও একই স্বরে জবাব দিল,
❝ কারণ আমি বলেছি তা!❞
এটা কোনো কারণ হলো। এমনিতেই জবের বিষয়টি নিয়ে নিশাত ভিষণ বিরক্ত হয়ে আছে। এখন আবার এই লোকের অর্ধেক কথা শুনে রেগে ত্যাড়া স্বরে জবাবে বললো,
❝ আর আপনার কথা আমি কেন শুনবো?❞
❝ কারণ তুমি আমার...❞
এইটুকু বলেই থেমে গেল রায়ান। নিশাত উৎসুক চিত্তে জানতে চাইলো,
❝ বলুন!❞
❝কিছুনা! এখান থেকে যাও ষ্টুপিড!❞
রায়ানের গম্ভীর ধমক শুনে নিশাত একটা ভেঙচি মে*রে গাড়ি থেকে নেমে পরলো। সে তো কখনই নেমে পরতো। তুই কেন পিছু ডাকলি ব্যাটা? আবার এখন ধমক দিচ্ছে। অ*সহ্য লোক একটা। একটু নেমে তাকে ক্লাস অবধিও দিয়ে আসলো না। সে কি এখানের কিছু চিনে? তার ভাবনার মাঝেই পুনরায় রায়ানের কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
❝ তোমার ক্লাসরুম পঞ্চম ফ্লোরের 302 নম্বর রুমে। আশা করি খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না!❞
বাহ এই লোক তার মনের কথা বুঝে গেল! নিশাত কথা না বাড়িয়ে হেটে গিয়ে গেইটের সামনে দাড়ালো। চোখ তুলে একবার স্বগর্বে স্থীর দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিং গুলোর দিকে তাকালো। সে এখানে পড়তে চেয়েছিল এমন নয়। তবে ডাক্তারিটা খুব করে পড়তে চেয়েছিল। তার মনে পড়ে ছোট বেলার কাহিনি। সে ছোট বেলায় ডাক্তার সেজে খেলে বেড়াতো। ডাক্তারি পেশার প্রতি ছোট থেকেই একটা দূর্বলতা ছিল। একদিন তার বাবা চোট পেয়ে হাসপাতালে এসেছিল। নোমান সাহেব সেদিন ভালোই চোট পেয়েছিল। বাবাকে চোট পেয়ে ব্যা*থায় কাতরাতে দেখে নিশাত কেঁদে কেঁদে বলেছিল,
❝ আব্বু দেখ আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। তখন তুমি চোট পেলে আমি তোমার চিকিৎসা করবো। তোমাকে তখন আমি একটুও ব্যা*থা দিব না।❞
সেদিনের পর থেকে আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। বড় হওয়ার সাথে সাথে তা আরও তীব্রতর হয়েছিল। তখন তো সে জানতো না তার ডাক্তার হওয়ার আগেই তার বাবা অনেক বড় একটা চোট পেয়ে পরে থাকবে আর তার স্বপ্নে ভাটা পরবে। তবুও এইচএসসি এর পর নিজ তাগিদে মেডিকেলের পরিক্ষায় বসেছিল। বাবা অনেকবার অনুরোধ করলেও কোনো কোচিং সে করেনি। কারণ তার বাবা যদি তার পিছেই এতো খরচ করে তাহলে তাদের পরিবার কি করে চলবে। তবুও নিজে যতটুকু পেরেছিল নির্ভারের সহায়তায় সব এক করে পড়ে পরিক্ষায় বসেছিল। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। সামান্য কিছু মার্কের জন্য সে পিছিয়েই ছিল। সরকারিতে পরাতেই যেখানে তার বাবার সামর্থ্য ছিল না বলতে গেলে সেখানে এতো বড় প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার কথা নিশাত কল্পনাতেও আনেনি। আজ এখানে দাড়াতে পারবে এমন আশাও সে করেনি।
বাবার কথা আর স্বপ্নের কথা ভাবতে গিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো কপোল বেয়ে। বা হাতের সাহায্য তা মুছে নিল। হয়তো নতুন করে ভাগ্য তার সহায় হয়েছে তাই সে আজ এখানে। তবে একটু খারাপও লাগে এটা ভেবে যে অন্যের দয়াতে সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো স্বামী মেনে নিলে এমনটা মনে হতো না। তবে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এসব ভেবে মন খারাপ করতে চাইলো না নিশাত। সুযোগ যখন পেয়েছে তখন নিজের স্বপকে বাস্তবে পরিনত করবেই সে। সে পথ ধরে সামনে এগিয়ে গেল। রায়ানের বলে দেওয়াতে ক্লাসরুম খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হলো না। ক্লাসরুমে প্রবেশ করে নিশাত নিভৃতে বসে রইলো।
_______________
অর্থি গাড়ি থেকে নেমে গেইট পেরিয়ে ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করতেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে দাড়ালো অর্থির পাশে। মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
❝ ওই এতো সময় লাগে আসতে? আমি সেই কখন থেকে তোর অপেক্ষা করছি!❞
অর্থি মেয়েটার মাথায় একটা চাপড় মেরে বললো,
❝ চুপ কর মিথ্যুক। সব সময় বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা। এখন ওই দিকে চল!❞
বলে অর্থি তার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড শিপুকে সাথে নিয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে কাউকে খুঁজলো কিন্তু পেল না। পরবর্তীতে ক্যান্টিন, প্লে গ্রাউন্ড আরও বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত মানুষটার কোনো হদিস পেল না। অর্থির মুখের অবস্থাটা ভোতা হয়ে গেল। অর্থির ভোতা মুখ দেখে শিপু বিরক্ত হয়ে বললো,
❝ তুই নিশ্চয়ই সেই সিনিয়র ভাইয়াকে খুঁজছিস?❞
অর্থি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই শিপু আবার বলল,
❝ তুই আসলেই পা*গল। ভাইয়ার অলরেডি মাস্টার্স শেষ। এখন সে নিশ্চয়ই জবের পড়া বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকবে! তোর জন্য নিশ্চয়ই সে এখানে এসে বসে থাকবে না!❞
অর্থি ভোঁতা মুখ করেই বলে উঠলো,
❝ জানি সে আমার জন্য এসে বসে থাকবে না। তবুও তো একটু আসতে পারে। সেদিন বলেও আসলাম ভার্সিটিতে আইসেন কেউ আপনার অপেক্ষায় থাকবে। তবুও এলো না?❞
অর্থির কথা শুনে শিপু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ তাকে বলে এসেছিলি মানে? তার সাথে তোর কোথায় দেখে হয়েছিল?❞
❝ আরে তোকে তো বলাই হয়নি সিনিয়র ভাইয়া এখন আমার বিয়াই লাগে। আমার ভাবির ফুপুর ছেলে সে।❞
শিপুর বিষ্ময়ের মাত্রা যেন আরও বেড়ে গেল। জোর করতেই অর্থি সব বললো। কথা শেষ করে শিপুর হাত ধরে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে উচ্চারণ করল,
❝ চল ক্লাসে যাই। পরে না হয় আবার খুঁজবো!❞
শিপু সহমত পোষণ করতেই দুজন এগিয়ে গেল। অর্থির মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠলো। বৃহস্পতিবার দিনও ভার্সিটিতে এসে লোকটাকে খুঁজেছিল। ভেবেছিল গ্রাম থেকে চলে এসেছে। নির্ভারের মাস্টার্সের পরিক্ষা প্রায় মাস ছয়েক আগে শেষ হলেও এখানে প্রায়ই আসে। অর্থি মনে করেছিল লোকটা আসবে কিন্তু সে ভুল ছিল। আজও সেই আশা নিয়ে খুঁজলো কিন্তু ফলাফল শূন্যের কোঠায়। অর্থি ক্লাসরুমে ঢুকে জানালার পাশে বসে চোখ দিল বাইরে দূরে দাড়িয়ে থাকা একটা কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। সেদিকে বিষন্ন দৃষ্টি ফেলে মনে করার চেষ্টা করলো তার আর নির্ভারের প্রথম দেখা হওয়ার কথা।
ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দুদিন বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথেই এসেছিল। তৃতীয় দিন যখন অর্থি ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পা রাখলো একা একা সেদিন তার সাথে একটা ল*জ্জাকর ঘটনা ঘটলো। গেইট পেরিয়ে মাঠের ভিতর আসতেই হটাৎ কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে পরে গেল। মাঠ জুড়ে থাকা অসংখ্য মানুষ তা দেখে অট্টহাসিতে মত্ত হলেও একটা ছেলে এসে অর্থির সামনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। হাতের মালিককে দেখার জন্য চোখ তুলে তাকাতেই অর্থির প্রথম একটা হার্টবিট মিস হয়েছিল। ওই মানবটির চক্ষুপটেই যেন নিজের স*র্বনাশ দেখতে পেয়েছিল। মানবটি যখন তার হাত ধরে উঠালো সেই প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়াতে নিজের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি টের পেয়েছিল। অর্থির মনে হয়েছিল মানবটি তাকে টেনে তুলছে না বরং তাকে আরও অথৈ সাগরে নিমজ্জিত করে দিচ্ছে। এতো মানুষের ভিরে সেই মানবটি না হেসে তাকে টেনে তুলে চিন্তিত কন্ঠে জিগ্যেস করেছিল,
❝ তুমি ঠিক আছো? কোথাও লাগেনি তো?❞
অর্থি জবাবে মাথা নেড়ে না বুঝিয়েছিল। কারণ তার মুখ থেকে যেন কোন কথাই বের হচ্ছিল না। অর্থির প্রথমে বিষয়টি কে শুধুমাত্র আকর্ষণ মনে হলেও দিন যেতেই তার মনে হলো এটা আকর্ষণের থেকেও বেশি কিছু। অর্থি কখনো কারো প্রেমে পরেনি। এটাই তার প্রথম অনুভূতি। তাই তো নিজ তাগিদে ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল ছেলেটার নাম নির্ভার আর এবার সে মাস্টার্সের ছাত্র। পরবর্তীতে অর্থি নিজে থেকেই নির্ভারের সাথে কথা বলেছে। দেখা হলেই সিনিয়র ভাইয়া ডেকে নির্ভারকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আবার মাঝে মাঝে মছার ছলেও হাসিয়েছেও। নির্ভার শুরুতে অর্থির সাথে হেসে হেসে কথা বললেও দিন পেরুতেই কেমন ইগনোর করতে শুরু করে। তবে সম্পুর্ন এড়িয়েও যায় না কখনো। তারপর থেকে এভাবেই চলছে পুরো একটা বছর। নির্ভারের পরিক্ষা শেষ হওয়াতে আজকাল তাকে বেশি চোখের দেখাও দেখতে পায় না অর্থি। তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগও নেই। তবুও অর্থি মনের মাঝে আশা বুনে যাচ্ছে। হয়তো কোনো একদিন সে তার প্রথম প্রেমকে পেলেও পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু আদোও নির্ভার তাকে একটা সুযোগ দিবে তো?
_________________
নিশাত বসে আছে নিশ্চুপ। কিন্তু তার পাশেই বসে আছে দুই আজব প্রানী। আজব প্রানীই বটে। সে ক্লাসে ঢুকে বসে থাকার কিছুক্ষণ পরেই দুটো ছেলে মেয়ে একসাথে সামনে এসে দাড়ালো। মেয়েটি প্রানবন্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
❝ হেই মিস অর মিসেস, আ'ম নিধি বিশ্বাস এন্ড দিস ইজ মাই পার্সোনাল কু*ত্তা সায়ন্ত সাহা! এন্ড ইউ?❞
মেয়েটি থামতে না থামতেই ছেলেটা বলে উঠলো,
❝ আরে ও ভুল বলেছে। ও আমার পার্সোনাল কু*ত্তি। এখন তোর পরিচয় বল। স্যরি মনে হলো সেম এজ আবার ক্লাসমেটও তাই তুই বললাম। ডোন্ট মাইন্ড হুম!❞
নিশাত বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাদের কথা শুনে বুঝলো ছেলে মেয়ে দুটো হয়তো ভিন্ন ধর্মের আর দুজন পরস্পরের বন্ধু। আর একটা কথা স্পষ্ট বুঝলো দুটোই বাঁ*চাল আর ঝ*গড়ুটে। নিশাতের মনে হলো ভালোই জমবে এদের সাথে। নিশাত আলতো হেসে বললো,
❝ আমি নিশাত নে..নেওয়াজ! আর তুই বলাতে কিছু মনে করিনি।❞
নেওয়াজ কথাটা বলতে গিয়ে নিশাতের যেন গলাটা হালকা কাঁপলো। শেষের কথাটা সায়ন্তের দিকে তাকিয়ে বলতেই নিশাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাশে বসে পরলো সায়ন্ত। নিশাতের নাম শুনে নিধি নিশাতের অন্যপাশে বসতে বসতে সেই একই স্বরে বললো,
❝ আরে তোমার নামও ন দিয়ে! এই জন্যই আমরা এতো জলদি বন্ধু হয়ে গেছি বুঝেছো! আর বন্ধু যখন হয়েছি তখন আর তুমি নয়। তুই শুরু ওকে!❞
নিশাত আশ্চর্য হতেও ভুলে গেল। তারা বন্ধু কখন হলো। এই ছেলে মেয়ে এতো এডভ্যান্স? নিশাতের মনে হলো এই ছেলে মেয়ের কাছে কথা বলায় সে নস্যি! তবে নিজেও সম্মতি জানিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। এর মাঝে কেটেছে একটা ক্লাস। দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু পাশের দুটো স্যার যেতেই পুনরায় লড়াই শুরু করে দিয়েছে।
নিশাতের ভাবনা চিন্তার মাঝেই স্যার ক্লাসে প্রবেশ করতেই সবাই শান্ত হয়ে গেল। সবার সাথে নিশাত ও দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল সামনে রায়ানকে দেখে। এই লোক এখানের শিক্ষক বুঝি? কই সে তো জানেনা। সে শুনেছে তার শশুরের অনেক বড় হাসপাতাল আছে। তাহলে রায়ানের সেখানে ডাক্তারি করার কথা। তাহলে এখানে জব কেন করছে? আসার সময় লোকটাও একবার বললো না সে এখানে কাজ করে। এই জন্যই বুঝি বলেছিল বিয়ের বিষয়ে কাউকে না বলতে। বিয়ের কথা বললেই নিশ্চয়ই লোকটার ইমেজ খা*রাপ হবে সবার কাছে? যে এমন একটা সনামধন্য ডাক্তার সাথে টিচার তার মতো একটা কালো বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছে? কথাটা ভাবতেই নিশাতের মন বি*ষিয়ে উঠলো। নিজের জায়গায় বসে চোখ রাখলো স্বামীর পানে। রায়ান নির্বিঘ্নে লেকচার দিতে শুরু করল। ভুলেও চোখ নিশাতের দিকে পরলো না। নিশাতের যেন এতে আরও খারাপ লাগলো। লোকটা নিশ্চয়ই জানে সে এখানে। তাহলে একটি বার তাকিয়ে দেখবে না সে কোথায় আছে? এতেও বুঝি লোকটার সমস্যা? নিশাত আজগুবি সব ভেবে ক্লাসটা রায়ানের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিল। রায়ানের কোন লেকচার তার মগজে আদোও ঢুকেছে কি না উপরওয়ালাই ভালো জানেন!
__________________
রায়ান নিজের মতো ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে এলো। রাগে যেন মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। মেয়েটা ক্লাসের সবার মধ্যে কেমন হা করে তাকিয়েছিল। ষ্টুপিড একটা। কাল ক্লাসের পড়া না পারলে তখন বুঝাবে তাকিয়ে থাকার মজা! রায়ানের ভাবনার ইতি ঘটাতে মুশকান সামনে এসে দাড়ালো। রাগত্ব স্বরে বলে উঠলো,
❝ তুই কি পণ করে নিয়েছিস রায়ান যে আমার ফোন রিসিভ করবি না? নাকি নতুন বৌ পেয়ে সব ভুলে গেছিস?❞
রায়ান আশেপাশে দেখে নিল। দু একজন লোক এখনো উপস্থিত আছে। মুশকানের দিকে দৃষ্টি ফেলে বিরক্তিকর স্বরে আদেশ সরূপ বললো,
❝ আস্তে কথা বল। আশেপাশে লোকজন আছে?❞
মুশকান মানলো না সেসব কথা। বরং চোখের জল ছেড়ে দিয়ে একই স্বরে আওড়াল,
❝ চুপ করবো না আমি। কেন চুপ করবো? আমার কথা একবারও ভাবছিস না তুই? আমার ঠিক কি অবস্থা হয়েছে বুঝতে পারছিস? ফোনটা পর্যন্ত রিসিভ করিস না তুই? কেন এমন করছিস তুই আমার সাথে?❞
মুশকানকে কাঁদতে দেখে রায়ান নিজেকে দমালো। শান্ত স্বরে বোঝানোর জন্য বললো,
❝আচ্ছা শান্ত হ! আমার এখন আর একটা ক্লাস আছে। তারপর বাইরে কোনো ক্যাফেতে বসে কথা বলি প্লিজ!❞
মুশকানও এবার একটু শান্ত হলো। রায়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,
❝ তুই সত্যি আসবি তো কফিশপে। আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো কিন্তু। ❞
প্রতিত্তোরে রায়ানের শান্ত স্বর ভেসে এলো,
❝ হুম আসবো।❞
বলেই রায়ান পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তার এখন অন্য একটা ক্লাস আছে যাতে অ্যাটেন্ড করা খুব জরুরি। নয়তো এখনই মুশকানের সাথে কথা বলতো। তাদের কথা বলাটা জরুরীও। কতদিনই বা এভাবে ইগনোর করে যাবে মেয়েটাকে সে? দ্রুত তাদের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। মুশকান রায়ানের যাওয়ার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা আজকাল তাকে বেশিই এড়িয়ে চলছে। যা তার একদমই সহ্য সীমার বাহিরে!
_________________
নিশাত ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে এলো। পিছনে পিছনে তার নতুন দুই বন্ধুও বেড়িয়ে এসেছে। নিশাত সামনে তাকাতেই দেখলো আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। নিশাত হেটে গিয়ে সামনে দাড়িয়ে হাস্যমুখে জিগ্যেস করল,
❝ ভাইয়া আপনি এখানে? তারমানে আপনিও এখানে জব করেন তাই না?❞
নিশাতের পাশের দুটো মানুষকে দেখে নিয়ে শুধু মাথা নেড়ে সংক্ষেপে হ্যা বুঝালো আবিদ। মনে মনে বিরবির করে উঠলো,
❝ আমি একা নই। এখানে আরও একজনও জব করে!মুসিবত একটা!❞
নিধি নিশাতকে একটু পাশে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ ওই এটা কে রে? চিনিস তুই?❞
নিধির স্বরটাই বোধহয় এমন যে আস্তে বললেও তা জোরে ফুটে উঠে। তাইতো প্রশ্নটা আবিদের কানেও গেল। সে এক পা এগিয়ে এসে নিশাতের হয়ে প্রতিত্তর করল,
❝ আমিই বলছি। আমি এখানের একজন টিচার। পাশাপাশি টুকটাক রুগিও দেখি। তাই ডাক্তারও বলতে পারেন। যদিও নিশাতের ভাই লাগি আমি কিন্তু আপনাদের সবার স্যার হই বুঝছেন?❞
স্যার শব্দটা শুনতেই নিধি আর সায়ন্ত ভদ্র হয়ে দাড়ালো। আবিদ নিশাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
❝ ভাব.. না মানে নিশাত এই দুটো কি তোমার ফ্রেন্ড?❞
নিশাত সম্মতি জানাতেই আবিদ পুনরায় বলে উঠলো,
❝ বা প্রথম দিন এসেই দু দুটো বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছো? খুব ভালো। কিন্তু এখন তাদের ছেড়ে আমার সাথে চলো।"
কোথায় যাবে বুঝতে না পেরে নিশাত শুধালো,
❝ কোথায় যাব ভাইয়া?❞
আবিদ আরও একবার নিধি আর সায়ন্তের দিকে তাকিয়ে নিশাতের উদ্দেশ্যে বললো,
❝ তোমার বস তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তার অবদি। আই থিংক নিজের বসকে চিনতে পারছো!❞
নিশাত একটু ভাবতেই সকালের কথা মনে পরলো। তারমানে রায়ান তাকে ডাকছে। আজ থেকেই কাজ করতে হবে বুঝি? প্রথম দিন ক্লাস করে এমনিতেই টায়ার্ড লাগছে এখন আবার ওই ত্যাড়া লোকের সাথে থাকতে হবে। ভাবতেই নিশাতের মুখটা নিকষ কালো আ*ধারে ঢেকে পরলো। নিধি আর সায়ন্তকে বাই বলে আবিদের পিছন পিছন ছুটলো নিশাত। আবিদ নিশাতকে নিয়ে সরাসরি রায়ানের কেবিনে প্রবেশ করল। নিশাত ভালো করে তাকিয়ে কেবিনটাকে দেখলো। একটা টেবিল আর তার দুই পাশে চেয়ার রাখা দুটো। একটা দেওয়াল ঘড়ি ঝুলে আছে দেওয়ালের সাথে। রায়ানের বসার চেয়ারের পিছে একটা র্যাক রাখা যেখানে বিভিন্ন ফাইলপত্রে ভরপুর। কেবিনের সাথেই একটা ছোট রেস্টরুম আছে বোধহয় যা পর্দার আড়ালে রয়েছে বিধায় বোঝা গেল না। টুকটাক জিনিস রাখা পাশে। আর তেমন কিছুই নেই বলতে গেলে। শুধু পাশে বসার জন্য ছোট একটা সোফা রাখা আছে। ক্লান্ত থাকায় নিশাত টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো। কোথাও রায়ানকে দেখতে না পেয়ে আবিদের উদ্দেশ্যে শুধালো,
❝ ভাইয়া আপনার বন্ধু কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না?❞
আবিদ ফোন স্ক্রল করায় ব্যস্ত ছিল। নিশাতের প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে একটু আড়ষ্টতার সহিত উত্তর দিল,
❝ ওই আছে আশে পাশেই। কোনো রুগি দেখছে হয়তো। চলে আসবে এখনি!❞
সামান্য প্রশ্নের উত্তর করতে এতো আড়ষ্টতার কি আছে বুঝলো না। ক্লান্ত শরীরে মাথাটা এলিয়ে দিল টেবিলের উপর। আবিদ ফোন পকেটে পুরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে নিশাতকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,
❝ এখান থেকে কোথাও যেও না তুমি! রায়ান এসে পড়বে জলদি। অপেক্ষা করো কেমন!❞
_________________
একটা ক্যাফের অন্দরে মুখোমুখি বসে আছে রায়ান আর মুশকান। রায়ান ক্যাফেতে আশায় মুশকান খুশিতে আত্নহারা। এতোদিন রায়ানের ইগনোরেন্স দেখে সে একটু শঙ্কিত ছিল আসবে কি আসবে না ভেবে। রায়ান একটা হট কফিতে মুখ লাগিয়ে হালকা চুমুক দিতে ব্যস্ত। আর মুশকান ব্যস্ত রায়ানকে দেখতে। রায়ানের এতো নির্লিপ্ত চিত্তে কফি পান করাটা বোদহয় মুশকানের সহ্য হলো না। তাই তো হটাৎই চোখের জল ছেড়ে দিয়ে স্বরে অসংখ্য ব্যাথার মিশ্রণ ঘটিয়ে অভিযোগ জানালো,
❝ আমার কষ্টটা কি তুই ফিল করতে পারছিস না রায়ান? এই বিয়ে তুই কেন করলি তুই? ফিরে আয় আমার কাছে। তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা! বল ভালোবাসিস কি না?❞
মুশকানের এতো অভিযোগ শুনে শান্ত মস্তিষ্কে গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করল রায়ান,
❝আমি তোকে ভালোবাসি মুশকান!❞
চলবে?
( এক পাঠিকা বলেছে আমি নাকি রায়ানের বেরসিক আম্মা । তাই ছেলে আর পুত্রবধূকে পার্মানেন্টলি আলাদা করার পায়তারা করতেছি। ঠিক আছে না এবার?)