12/08/2025
রহিম, একটা ছোট শহরের সাধারণ ছেলে, একসময় স্বপ্ন দেখতো ডাক্তার হওয়ার। তার চোখে জ্বলজ্বল করতো আশা, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু কলেজে ওঠার পর সে ভুল পথে পা বাড়ায়। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রথমে সিগারেট, তারপর গাঁজা, আর ক্রমে ইয়াবার নেশায় ডুবে যায়।
প্রথম প্রথম নেশা ছিল মজার খেলা। রাতভর বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, রঙিন দুনিয়ার ভ্রম। কিন্তু ধীরে ধীরে নেশা তার জীবন কেড়ে নিল। পড়াশোনা বন্ধ, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া, ঘর থেকে টাকা চুরি—রহিমের জীবন যেন অন্ধকার গলির মতো হয়ে গেল। বাবা-মা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু তার কানে কিছুই গেল না। নেশার টাকা জোগাড় করতে সে পথে নামল, চুরি করল, এমনকি একবার পাড়ার এক দোকানদারকে মারধরও করল।
এক রাতে, ইয়াবার নেশায় টলতে টলতে রাস্তায় পড়ে গেল রহিম। শীতের রাত, কুয়াশায় ঢাকা রাস্তা। একটা কুকুর এসে তার পাশে শুয়ে পড়ল, যেন সঙ্গ দিতে। সেই মুহূর্তে রহিমের মনে পড়ল তার ছোটবেলার কথা—মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প শোনা, বাবার সঙ্গে সাইকেল চালানো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। সে বুঝল, নেশা তার সব কেড়ে নিয়েছে—পরিবার, স্বপ্ন, সম্মান।
পরদিন সকালে রহিম বাড়ি ফিরল। মা তাকে জড়িয়ে কাঁদলেন, বাবা চুপচাপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। সে সিদ্ধান্ত নিল, নেশা ছাড়বে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি হলো। পথটা সহজ ছিল না—শরীরের যন্ত্রণা, মনের অস্থিরতা তাকে বারবার ভাঙতে চাইল। কিন্তু প্রতিবার মায়ের কান্না আর বাবার নীরব সমর্থন তাকে শক্তি দিল।
আজ দুই বছর পর রহিম নেশামুক্ত। একটা ছোট দোকান চালায়, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটায়। তার জীবন এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি, কিন্তু সে লড়ছে। প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠার মতো, রহিমও নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে।
এই গল্প শুধু রহিমের নয়, অনেক তরুণের, যারা নেশার অন্ধকারে হারিয়ে যায়, কিন্তু আশার আলোয় ফিরে আসতে চায়।