25/08/2024
হিফজের পাশাপাশি যারা জেনারেল বাংলা, ইংরেজি, অংক ও আরবি (বোর্ডবই) এর ক্লাস দিচ্ছেন, জানেন আপনি কত বড়ো ভুল করছেন?
----------------------------------শর্ট কোর্স কি আপনি জানেন?
-----------------------------------
কুরআনুল কারিম হিফজ করতে পারা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।আল্লাহ যে কিতাবের ব্যাপারে নিজে যিম্মাদার হয়েছেন সেই দায়িত্বটুকু আপনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আল্লাহ নিজে দুনিয়াতে নাযিল হয়ে কুরআন পড়েন, পড়ান বা সংরক্ষণ করেন তা কিন্তু নয়।হাফেজদের সিনায় সংরক্ষিত হলেই আল্লাহর ওয়াদার বাস্তবায়ন।
আল্লাহ যাকে অতিমাত্রায় পছন্দ করেন তাকে দিয়ে একাজটা সম্পন্ন করেন।
কবিতার দুটো লাইন মুখস্থ করে চারদিন ধারণ করে রাখা যেখানে এত মুশকিল। হাফেজে কুরআনরা বছরের পর বছর কুরআন হিফজ করে চিন্তা- ফিকির ছাড়া আগাগোড়া নামাজে মুখস্থ তিলাওয়াত করেন এটা কি সহজ ব্যাপার?
তাও বুড়া বয়সে!! শিশু ও যুবক,তরুণদের কথা বাদই দিলাম। রমাদান মাসে বহু হাফেজে কুরআনকে দেখবেন তাঁরা বয়সের একটা পর্যায় পৌঁছে গেছেন। তথাপি খতমে তারাবিহর ইমাম হিসেবে পুরো কুরআন মুখস্থ তিলাওয়াত করছেন।কী আজিব-বিস্ময়র ব্যাপার! তাই না?
সারা দুনিয়ায় কোনো বই মুখস্থ করে তা ধরে রাখার উপর জোর দেয়া, সুন্দর কণ্ঠে পড়তে পারার কোনো বিশেষ প্রতিযোগিতা নেই। কিন্তু আল্লাহর কুরআন! শুধু প্রতযোগিতা নয়,বিজয়ীরা বিশ্বসমাদৃত হচ্ছে আজ মধুময় কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত আর মুখস্থ ধরে রাখার মাধ্যমে। মানুষ কুরআন তিলাওয়াত শুনে বিমোহিত হয়ে যায়,হাফেজদের মাথায় বিজয়ের মুকুট তুলে দেয়।উপহারস্বরূপ শত কোটি টাকা তো আছেই।
কুরআন হিফজ করতে নিয়মতান্ত্রিকপন্থায় দিনে তিনটি ব্যাপারের সাথে তাকে পরিচিত থাকতে হয়।
১.সবক- প্রতিদিন হিফজের নতুন পড়া আদায় করা।
মাগরিবের পর থেকে রাতের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে ভোর রাতে ফজর নামাজের আগে ওস্তাদকে না আটকিয়ে শুনানোর মাধ্যমে এ ধাপ শেষ করতে হয়।
২.সাত সবক- সবকের চলমান পারায় সবকসহ বা ছাড়া সবপৃষ্ঠা একসাথে শুনানো।
কুরআনের ৩০ পারার যে কোনো পারায় যে শিক্ষার্থী যে পারায় সবক পরছে, তার সবক শেষ করা পৃষ্ঠাসমূহ প্রতিদিন বাদ ফজর কমপক্ষে তিন পৃষ্ঠা থেকে সর্বোচ্চ ১৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিয়মিত ওস্তাদকে শুনানো।
এবং ২০পৃষ্ঠা বা একপারা শেষ হলে একসাথে ওস্তাদকে শোনানো বাধ্যতামূলক।
উল্লেখ্য, যে সকল প্রতিষ্ঠানে হিফজ শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষকদের তদারকি বা শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নের জন্য আমিনুল হিফজ দায়িত্বপালন করেন, তিনি অবশ্যই শিক্ষার্থীর সবকের পারা নির্ভুলভাবে শুনবেন।
৩.আমুখতা- শিক্ষার্থী ৩০ পারার যে সকল পারা হিফজ শেষ করেছে তার ভেতর থেকে ওস্তাদ কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ পারা সকালে নাস্তার পর প্রস্তুতি নিয়ে দুপুরে ওস্তাদকে নিয়মিত শোনাবে।
১০ পৃষ্ঠা হোক বা তার চেয়ে বেশি। কোনোভাবেই তার ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।
যদি ব্যত্যয় ঘটে হিফজ শেষ করে দাওর বা শুনানিতে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। কোনো কোনো সময় এতবেশী সময় প্রয়োজন হয় দাওর না করে শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ে।
৪.(অতিরিক্ত হলেও প্রয়োজন) পেছনের পারা তিলাওয়াত - সবক,সাতসবক,আমুখতা সঠিকভাবে, সুনিপুণভাবে শোনানোর পর প্রতিদিন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৩ পারা (কমবেশ হতে পারে) মুখস্থ তিলাওয়াত করবে।
এ ৪ টা কাজ একজন হিফজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আবশ্যিক ব্যাপার।এর বাইরে ঘুম,বিশ্রাম,খেলাধুলা তো থাকছেই।
এছাড়া চতুর্থ বা পঞ্চম কাজ হিসেবে আলাদা করে জেনারেল পড়ার প্রেসার যদি শিক্ষার্থীর উপর থাকে তাহলে কোনো একসময় শিক্ষার্থী হিফজ থেকে ঝরে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। অনেকাংশে ঝরেই যায়।
তাই আপনার প্রতি আমার পরামর্শ -
++++++++++++++++++++++++
সন্তান আপনার। হিফজ করে আল্লাহর কুরআন বুকে ধারণ করে নামের আগে 'হাফেজ' শব্দ লাগিয়ে 'হাফেজ সাহেব' বলে ডাক দেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান আপনিই।
√ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকা থেকে আপনার আদরের সন্তানকে রক্ষা করে যদি দক্ষ ও যোগ্য হাফেজ হিসেবে তৈরী করতে চান তাহলে দুই নৌকায় পা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
√হিফজ ও জেনারেল একসাথে নয়।
√নিজস্ব চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন।
√নাজেরা (দেখে দেখে পড়া) তথা কায়দা, আমপারা, কুরআন দেখে দেখে শেষ করা পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষার সমন্বয় রাখলেও হিফজে উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে জেনারেল বন্ধ করুন।
কারণ কোনোপ্রকার প্রেসার ছাড়া একজন শিক্ষার্থী দিনে ২ পৃষ্ঠা সবক দিতে পারলে জেনারেলসহ পড়লে তার সবকের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
তা ছাড়া বছরে ২/৩ বার পরীক্ষা তো থাকছেই।পরীক্ষা মানে, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির আলাদা সময় নষ্ট, অতঃপর পরীক্ষা শেষে প্রায় ১০ দিন করে ছুটি থাকে।
দুই ঈদে ১০ দিন করে ২০ দিন বাধ্যতামূলক ছুটিতো আছেই।
কুরআনের ১টি পারায় পৃষ্ঠার পরিমাণ ২০টি। দিনে ২ পৃষ্ঠা করে সবক দিতে পারলে ২৫ দিনে ৫০পৃষ্ঠা বা ২.৫ বা আড়াই পারা।
নোট- ৩০/৩১ দিনে মাস হিসেব না করে ২৫ দিনে করলাম। ৫ দিন প্রাতিষ্ঠানিক ছুটি ও নানা কারণে অনুপস্থিতি।
দিনে ২ পৃষ্ঠা করে ১০ মাসে ২৫ পারা।
নোট-২ মাস নানাবিধ ছুটি ও অনুপস্থিত হিসেবে ১০ মাসে বছর ধরলাম।
আর জেনারেলসহ যদি ধরি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী হিফজ ও জেনারেল একসাথে লোড নিতে পারে না। ফলে নানা বাহানা খোঁজে পলায়নের।
প্রশ্ন করতে পারেন, হিফজ শেষ করতে শিক্ষার্থীর অনেক বয়স লেগে যায়। ১৪/১৫ বছরের শিক্ষার্থী কি ক্লাস ওয়ানে পড়বে?
এ প্রশ্নের উত্তরসহ আধুনিক বহ চিন্তা করে জেনারেল পড়াশোনা হিফজের পরে করানোর জন্য চিন্তাবিদ উলামায়ে কিরাম নিয়ে আসছে আপনার জন্য শর্ট কোর্স।
তাতে কি আছে?
+++++++++++
সাধারণ শিক্ষার্থীর তুলনায় একজন হাফেজ আনেক বেশি লোড নিতে পারে। অতি তাড়াতাড়ি মুখস্থ করতে পারে।ধারণ করতে পারে অনেককিছু।
তাই বাচাইকৃত কতেক অতিগুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবইয়ের সমন্বয়ে (কওমি ও আলীয়া)
১ বছরে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শেষ করার পরিকল্পনায় আলেম তৈরীর ফাউন্ডেশন ধরে (মিযান মুনশায়ীব) সম্পন্ন করে একটা বিশেষ পদ্ধতি এখন সারা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।
যার সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবয়নে ইতোমধ্যে সুধী মহলে বেশ সাড়া পড়েছে।
আপনিও চাইলে আপনার সন্তানের জন্য দারুল ইরফান মাদানি নিসাব মাদরাসাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এজাতীয় প্রতিষ্ঠান চালু আছে তা দেখে যেতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহরে আমরাসহ সফলতার সাথে অনেকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
আর দেরি নয়, সময় নষ্ট নয়।হিফজের সময় জেনারেল নয়।এ চিন্তা ধারণ করে যদি শিক্ষার্থীদের প্রথমে হিফজ শেষ করে পরে শর্ট কোর্সে অংশগ্রহণ করাতে পারেন আশাকরি তারা আপনার কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আপনাদের দীনি ভাই
এইচ এম আলমগীর ইসলামাবাদী
পরিচালক: দারুল কোরআন আইডিয়াল মাদ্রাসা চট্টগ্রাম।।