13/08/2025
প্রশ্ন-৮৮: কেউ কেউ ব্যাখ্যা করছেন, এই খ্রিস্টীয় সভ্যতাটাই হল মূলত দাজ্জাল। বিষয়টি যদি একটু খুলে বলতেন?
উত্তর: ‘খ্রিস্টান সভ্যতা’ কথাটি মূলত ঠিক নয়। আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতা কিংবা ওয়েস্টান সিভিলাইজেশন বলতে পারি। খ্রিস্টধর্ম যতদিন ধর্মীয়ভাবে পাশ্চাত্য জগতকে ডমিনেট করেছে ততদিন সভ্যতা গড়ে ওঠেনি। বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, ভিন্নমত- এগুলোর সবই চার্চ নিয়ন্ত্রিত খ্রিস্টধর্ম প্রচন্ড রোধ করেছে। যতদিন ধর্ম ইউরোপের ডমিনেন্ট ছিল- ভিন্নমত, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্যচর্চা কোনোক্রমেই উন্নতি পায়নি। যখন তারা ধর্মকে পাশে ফেলে দিয়ে ধর্মমুক্ত সভ্যতা গড়তে গেলেন, তখন তারা সভ্য হয়েছেন। এ সভ্যতার ভেতরে ধর্ম নেই। এমনকি ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্মীয় মূল্যবোধও নেই। তবে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্ম অনুসরণ করেন বলে মনে করা হয়। যদিও বাস্তবে তারা না বাইবেলের ধর্ম অনুসরণ করেন, না চার্চের ধর্ম অনুসরণ করেন। এজন্য এটা পাশ্চাত্য সভ্যতা।
পাশ্চাত্য সভ্যতাকে দাজ্জাল বলার প্রবণতা ঠিক নয়। কারণ ভবিষ্যদ্বাণীতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বলেছেন ওইভাবে বিশ্বাসে রাখা উচিত। এটা তো বাস্তব বয়ান। বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতাকে দাজ্জাল বললে আমাদের কী লাভ? আর না বললেই বা আমাদের কী ক্ষতি? আর এটা দাজ্জাল হলেই বা আমাদের সমস্যা কী? না হলেই বা আমাদের সমস্যা কী? আবার হয়তো হাজার বছর পরে আরেকটা সভ্যতা আসবে, তখন আবার কিছু বুযুর্গ গবেষণা করে বলবে, এটাই দাজ্জাল। এজন্য এজাতীয় ব্যাখ্যা, অপব্যাখ্যা করা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই না। ঠিক ইমাম মাহদির নিয়ে গবেষণা, কাতরতা একটা অন্যায়। দাজ্জাল কে? দাজ্জাল যখন আসবে- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে দাজ্জালের বিবরণ দিয়েছেন, আমরা যেটা আগে বলেছি- একটা অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে আসবে। নিজেকে ঈশ্বরের অবতার দাবি করবে, যে আমিই ঈশ্বরের অবতার। প্রমাণ হিসেবে বলবে, এই দেখো, আমি মৃতকে জীবিত করে দিচ্ছি, আমি বৃষ্টি নামিয়ে দিচ্ছি, আমি গোপন-ভান্ডার বের করে দিচ্ছি, আমাকে ঈশ্বর মেনে নাও, আমাকে আল্লাহ, বাবা, দয়াল বাবা মেনে নাও। এতে লক্ষকোটি মানুষ ঈমান হারাবে। ঈমানের একটা পরীক্ষা এই যে, ঈমান আল্লাহর কিতাব সুন্নাহর উপর হবে? না কারামত দেখে, অলৌকিকতা দেখে হবে। এর একটা পরীক্ষা হবে। এর পাশাপাশি কিছু হয়তো চলবে। দাজ্জালের বাহিনী বেড়ে যাবে। এক পর্যায়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে দাজ্জালের অনুসারীদের ভেতরে ইয়াহুদিরা থাকবেন বলে কোনোকোনো হাদীসে এসেছে। খুরাসান থেকে সত্তর হাজার ইয়াহুদি দাজ্জালের পেছনে আসবে। কোনোকোনো গবেষক বলেন যে, ইয়াহুদিগণ যে মাসীহের অপেক্ষা করছেন, সে ওই দাজ্জাল হবে। এটা গবেষকদের কথা। প্রত্যেক ধর্মের মানুষের অধিকার আছে, তার ধর্মের ব্যাখ্যা দেওয়া। ইয়াহুদি ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না। সব থেকে বড়কথা, পাশ্চাত্যের সভ্যতা দাজ্জাল এটা আমাদের কল্পনামাত্র। এটাকে দাজ্জাল বলার ভেতরে দিয়ে কাগজের পর কাগজ নষ্ট হবে, ছবির পর ছবি নষ্ট হবে, মুমিনের জীবনের প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হবে, ঈমান বাড়বেও না কমবেও না, আমল বাড়বেও না কমবেও না।