27/09/2025
ইরানের একটা ছোট্ট গ্রাম। ওখানে সুরাইয়ার সংসার। স্বামী, দুই কন্যা আর দুই পুত্র সন্তান। স্বামীর হঠাৎ নজর পড়ে চৌদ্দ বৎসর বয়সী এক কিশোরীর ওপর। এবং তাকে বিয়ে করার আকাঙ্খা মাথায় চাপে।
কিশোরীকে বিয়ে করার বিনিময়ে কিশোরীর অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খচর বহন করতে রাজি হয়ে যায় সুরাইয়ার স্বামী। কিন্তু এদিকে ঘরে স্ত্রী থাকতে আরেকটা বিয়ে করা ঝামেলা। আবার সব মিনিয়ে খরচাপাতিও বেশী। তখন সুরাইয়ার স্বামী ফন্দি আঁটে। গ্রামের সর্দারের সাথে বোঝাপড়া করে। এবং নিজের স্ত্রীর নামে গুজব রটিয়ে দেয়। গুজব হলো, "তার স্ত্রীর একটা অ'বৈ'ধ সম্পর্ক আছে।"
আর এই গুজবকে শক্তিশালী করার জন্য হুমকি ধমকি দিয়ে তারা মিথ্যা সাক্ষীও জোগাড় করে। ফলে অল্পতেই সুরাইয়ার অপরাধ প্রমাণিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী সুরাইয়াকে মৃ'ত্যু'দ'ণ্ড দেওয়া হয়।
মৃ'ত্যু'দ'ণ্ডটা খুব ভয়ানক ছিল। প্রকাশ্যে রাস্তায় গ'র্ত খোঁড়া হয়। সুরাইয়ার হাত-পা বাঁ ধা হয়। গর্তে কোমর পর্যন্ত পোঁতা হয় তাকে। মাটি দিয়ে ভরাট করা হয় তার চারপাশ। তারপর দূর থেকে পাথর ছোঁ'ড়া হয় সুরাইয়ার শরীর উদ্দেশ্য করে। প্রথম পাথর ছুঁ'ড়'তে হয় সুরাইয়ার পিতাকেই। তারপর সুরাইয়ার দুই পুত্রকেও জোর করে পাথর ছুঁ'ড়'তে বাধ্য করা হয় মায়ের দিকে। এরপর একেক করে অন্য সবাই পাথর ছু'ড়ে মা'রে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে অনর্গল পাথর ছোঁ'ড়ার পর সুরাইয়ার চারপাশের মাটি লাল হয়ে আসে, ছিঁটে ছিঁটে র'ক্ত পড়ে। শরীরের নাড়াচাড়া বন্ধ হয়। তখন স্বামী উপুড় হয়ে পড়ে থাকা সুরাইয়ার র'ক্তা'ক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে পরীক্ষা করে, সে বেঁচে আছে কিনা। সুরাইয়া বেঁচে ছিল অমন ক্ষত বিক্ষত হওয়ার পরও। সে চোখ খুলেছিল। তখনও ম'রে'নি বুঝতে পেরে স্বামী সহ গ্রামের সবাই সুরাইয়ার আশপাশে পড়ে থাকা র'ক্তা'ক্ত পাথর কুড়িয়ে নিয়ে পুনরায় পাথর ছুঁ'ড়'তে শুরু করে। সুরাইয়ার মৃ'ত্যু হয় অতঃপর।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি লিখেন একজন ইরানি লেখক। নাম, ফ্রিদৌনি সাহেবজাম। সময় ১৯৯০ সাল। বইটি ইরান ব্যান করে দেয়। বাস্তবিক একটা ঘটনার আদলে লেখা এই বই ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার হয়। দুই হাজার আট সালে এই বইটি স্ক্রিনে আনা হয় প্রথমবার। একটা সিনেমা বানানো হয়। নাম, "দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম"।
এদিকে সুরাইয়ার মৃ'ত্যু'র পরদিন তার স্বামীর পছন্দ করা সেই চৌদ্দ বছরের কিশোরীর অসুস্থ বাবাও মা'রা যায়। ফলে তার চিকিৎসার খরচ দেওয়ার বিনিময়ে ওই কিশোরীকে যে বিয়ে করার কথা ছিল, তা আর হয়ে ওঠে না। (সৃষ্টিকর্তা যদি রিজিকে না লিখে, তাহলে আপনি তা কোনো দিনও গ্রহণ করতে পারবেন না। এটাই তার একটা উদাহরণ।)
[সুরাইয়ার মলিন চোখজোড়া দেখে তুরস্কের একজন কবি'র কিছু উদ্ধৃতি......
{ 'আমি তোমাকে গোপন ক'রে রাখব, বিশ্বাস করো...
আমি যা লিখি, যা আঁকি তার মধ্যে,
আমি যা গাই, যা বলি তার মধ্যে।
তুমি থাকবে অথচ কেউ জানবে না,
এবং কেউ তোমাকে দেখতে পাবে না,
শুধু আমার চোখে তুমি বেঁচে থাকবে।' }]
(কপি পোস্ট।)