14/09/2025
আমি প্রথমবার বিদেশ গিয়েছি ২০২২ সালে। আমার প্রথম উমরাহ সফরে৷ সেই সফরটা যেমন ছিল স্বপ্নময়, তেমনই স্মৃতিবহুল।
একজন আরব ভদ্রলোক, যিনি আরবের একটি সুবিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিস পড়ান, ইতিকাফে তিনি বসেছিলেন আমার পাশে। একদিন যোহর সালাতের পর হঠাৎ আমার হাত ধরে তিনি বললেন—‘তুমি দেখতে আবু বাকারের মতো...।’
আমাকে কেন তার আবু বাকার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো মনে হয়েছে সেই ব্যাখ্যা আমি তার কাছে জানতে চাইনি। তবে তার বলা সেই কথাটি, ‘তুমি দেখতে আবু বাকারের মতো’—আমার পুরো সফরটাকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল৷ রাব্বে কারীমের দরবারে আমি কতোবার কেঁদেকুটে বলেছি—তিনি যেন তাঁর এই আরব বান্দার কথাটাকে বাস্তব বানিয়ে দেন৷ আমার জীবনটাকে যেন তিনি প্রিয় আবু বাকার রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনের মতো সুন্দর আর শুভ্রতায় ভরে দেন।
মক্কার অলিগলি পথ ঘুরতে গিয়ে দেখা হয়েছিল সুবিখ্যাত হাশেমি বংশের একজন বাবার সাথে। তিনি আমাকে তার গাড়িতে করে ঘুরে দেখিয়েছেন জাবালে হেরা থেকে মিনা, মুযদালিফা, আরাফাহ, জাবালে রাহমাহ থেকে জামারাহ পর্যন্ত। যখন আমাকে বাইতুল্লাহর নিকটে নামিয়ে দিতে আসলেন, গাড়ি থেকে নেমে যেই না বাইরে আসলাম, তিনি কাতর চোখে বললেন—‘আমার বাচ্চাটার হার্টে একটি ফুঁটো পাওয়া গেছে৷ ওর জন্য একটু দুয়া করো, কেমন?’
তার এই অনুনয় আবদার আমাকে এতোটাই আবেগতাড়িত করে গেল যে, চোখজোড়া আমার ছলছল করে উঠেছিল।
আমি দেখা পেয়েছিলাম এক থুরথুরে বৃদ্ধের, যিনি প্রতি ওয়াক্তের ইফতারে হাত বোঝাই করে খাবার আনতেন আর মেহমানদারি করতেন।
আমি সাক্ষাৎ লাভ করেছি এক যুবকের, যিনি সুদূর ফ্রান্স থেকে এসেছিলেন৷ কতো করসত করে যে তিনি আরবি পড়তেন! আমি দেখতাম আর বিস্মিত হতাম।
এক তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে আমি এমন একজনের পেছনে সালাত আদায় করেছি, যার তিলাওয়াতের সুর লহরি আজও আমার কানে বাজে।
আর মুহাম্মাদ, আমার সেই আরবের অন্তরঙ্গ বন্ধু, যে আমাকে তার আপন ভাইয়ের মতোই ভালোবাসেন, তার গল্প তো অনেকবারই করেছি।
এমন অসংখ্য স্মৃতি, অসংখ্য অবিস্মরণীয় মুহূর্ত দিয়ে ঠাসা ছিল আমার জীবনের সেই পবিত্র সফর।
আমার সেই সফরের স্মৃতি নিয়ে লেখা বই ‘উমরাহ সফরের গল্প’। এই সফর যেমন আমার জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা, আমার বিশ্বাস, এই সফরনামা আমার পাঠকদের কাছেও তাদের পড়া সেরা একটি সফরনামা হয়ে উঠবে, ইন শা আল্লাহ।
Sukun Publishing থেকে প্রকাশিত এই বইটি রেখেছেন তো আপনার সংগ্রহে?