22/06/2025
নিয়ামতপুরের গোবিন্দপুর পাকা সড়কবিহীন গ্রামে, জনদুর্ভোগ চরমে।।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে যাওয়ার দুটি সড়ক। একটি চন্দননগর লক্ষ্মীডাঙা মোড় এবং অপরটি বুধুরিয়া পাকা সড়কের সঙ্গে যুক্ত। দুটিই কাঁচা। দুই কিলোমিটার দূরত্বের সড়ক দুটি পাকা না হওয়ায় গ্রামটির বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার মানুষের গ্রামটি উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছাতড়া বাজার থেকে উত্তর দিকে চার কিলোমিটার দূরে এবং বেনীপুর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। শীতকালে সড়ক দুটি দিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় পায়ে হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। বৃষ্টিতে রাস্তা দুটির কোথাও হাঁটুকাদার কারণে গ্রামটি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। কয়েক শ বিঘা জমির ফসল আনা-নেওয়া, বাগানের শত শত মণ আম-পেয়ারা ও পুকুরের মাছ পরিবহনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে।
বর্ষায় ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে-পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়। সড়কটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বয়ে আনে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গ্রামটিতে গিয়ে জানা যায়, গ্রামের পূর্বপাড়া মসজিদ মোড় থেকে লক্ষ্মীডাঙা পাকা সড়ক পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং গ্রামের পশ্চিমপাড়া আনারুলের মোড় থেকে বুধুরিয়া পাকা সড়ক পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার দূরত্ব। সড়ক দুটি পাকা না হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনে উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি বলে জানান গ্রামবাসী।
চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাইনুল ইসলাম, গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান, ফিরোজ হোসেন, সেকেন্দার আলী ও সেলিম রেজা বলেন,সড়ক দুটির দুই দিক দিয়ে বর্ষায় ধান, সবজি, আম, পেয়ারা, পুকুরের মাছসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য পরিবহনে মণ প্রতি ২০ টাকা বেশি ভাড়া গুণতে হয়। অনেক সময় রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়ে যায়। তখন ভ্যানচালকরা ভাড়ায় ফসল বাজারে নিতে চান না। শুকনো মৌসুমে ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চললেও বর্ষায় সড়ক দুটি দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৭০) বলেন, শুকনো মৌসুমে গ্রামের সড়ক দুটিতে কোনো মতো গাড়ি চলে।
তবে বর্ষায় কষ্টের শেষ থাকে না। ফসল বেচার জন্য বাজারে নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। ভ্যানচালকদের অনেকটা হাতে-পায়ে ধরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়।
সেলিম রেজা নামের গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, পাকা রাস্তা না হওয়ায় আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরাও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে। বর্ষাকালে পরীক্ষার দিন পড়লে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সময়মতো তারা পৌঁছাতে পারবে কি না। দুর্ভোগেও পড়তে হয়।
চন্দননগর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘পরিষদ থেকে গোবিন্দপুর গ্রামের সড়ক দুটি পাকা করার জন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার তদবির করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। শুনেছি সড়ক দুটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। কিন্তু কাজ তো হয় না।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক দুটি সম্পর্কে খোঁজ না নিয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। উন্নয়নের জন্য সড়কগুলো তালিকাভুক্ত আছে কি না, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে। তবে সুযোগ থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক দুটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ~kalerkantho