04/07/2025
তথ্য বলছে, প্লে-মেকিংয়ে জিদান নিখুঁত, গোলসংখ্যায় রোনালদো রাজা, ট্রফির গামলা নিয়ে আছেন মেসি।পেলের ঝুলিতে তিনটি বিশ্বকাপ শিরোপা সাথে ৭০০+ গোল, গোল, অ্যাসিস্ট — সব ডেটা যদি খাতা খুলে মিলাতে বসা হয়, তবে ম্যারাডোনা নামটা কোথাও সবার উপরে দেখা যায় না। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে যে গ্রেটনেস বিচার করা যায় না এটা প্রমাণ করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
এই গ্রেটনেসের গল্প তো সংখ্যা নয় — গল্প হলো সময়। সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন মানুষ কী ছিলেন, তার প্রভাব কতখানি ছড়িয়েছিলো, সেটা দিয়েই লেখা হয় কিংবদন্তি। আর সেই প্রভাবেই, ম্যারাডোনা ছিলেন এক যুগের প্রতিচ্ছবি ,যার শরীরে ছিল ঈশ্বরের ছোঁয়া।
রোনালদিনহোর ৩৫৫টি গোল, কাকার ব্যালন ডি’অর, রিভালদোর গোল্ডেন বুট — সব মিলে এক পরিসংখ্যানিক গৌরব। কিন্তু এইসব ‘লিজেন্ডস’-এর মতো
ফুল-প্রুফ ডাটা না থাকলেও, ম্যারাডোনা ছিলেন প্রুফ-অব-ফেইথ।
কোনো ডিফেন্সকে একার হাতে বিধ্বস্ত করার নজির আছে? হ্যাঁ — ম্যারাডোনা। কোনো খেলোয়াড় একাই কি একটা মিড-টেবিল ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে? হ্যাঁ — ম্যারাডোনা।
একজন মানুষ যার বিরুদ্ধে খেলা মানে ছিল, “ওকে থামাও না হলে হেরে যাবে” — সেই একক ভয়, পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যায় না।
১৯৮৪ সালের এক ভরদুপুরে, ইতালির নীচু টেবিলের ক্লাব নাপোলি একটা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করলো এক ২৩ বছর বয়সী লাতিনো যুবককে। মাইক্রোফোনে তার প্রথম কথা ছিলো:
"আমি এসেছি এখানে ইতিহাস লিখতে।"
সেই ইতিহাস — ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মত সিরি আ চ্যাম্পিয়ন নাপোলি, ১৯৮৯ তে ইউরোপা কাপ জয়, ১৯৯০ এ আবারও সিরি আ — সবকিছু একাই বয়ে নিয়ে এসেছেন ম্যারাডোনা।
এই জয় ছিল শুধুই ফুটবল নয়, এটি ছিল উত্তর বনাম দক্ষিণের রাজনৈতিক, সামাজিক, শ্রেণিগত সংঘর্ষে এক বিপ্লবের জয়ের গল্প।
উত্তরের ইতালীয়রা নাপোলিবাসীকে শুধু বিদ্রুপ করতো না — তারা বর্জিত করে রেখেছিলো অর্থনীতি, চাকরি, সম্মান সব কিছু থেকে। নাপোলির মানুষেরা নিজেদের কুকুরের মতো ভাবতো — আর সেই হীনমন্যতায় যখন ঈশ্বর এসে হাত রাখলেন কাঁধে, তখন তারা প্রথমবার নিজেদের মানুষ ভাবতে শিখলো।
১৯৮৬ সালে যখন ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতছিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে, তখন নাপোলি প্রস্তুত হচ্ছিল এক অঘটনের জন্য।
১৯৮৭ — ম্যারাডোনা নিয়ে এলো স্কুদেত্তো।
একটা ট্রফি — যার অর্থ ছিল শতাব্দীর অবমাননার জবাব।
উত্তরের ক্লাবগুলো — জুভেন্টাস, মিলান, ইন্টার — ধন-সম্পদ, মিডিয়া, রাজনীতি দিয়ে পূর্ণ। আর দক্ষিণের গরিব শহর একা লড়েছে এক আর্জেন্টিনার সঙ্গে, যার হাতে ছিল স্বপ্ন, আর পায়ে ছিল ঈশ্বরতুল্য ছোঁয়া।
স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে লেখা ছিল:
"তোমরা জানো না, কী হারিয়েছ!"
গান বাজছিল রাস্তার মোড়ে, এক মাস চলেছিল উন্মাদনা।
তার প্রতিটি গোল মানে ছিল — একটা নতুন উৎসব, প্রতিটি ড্রিবল — এক নীরব প্রতিরোধ।
ছোট দোকানের নাম ছিল ‘ডিয়েগোর পানিনি’, গির্জায় প্রার্থনার ভাষা ছিল এমন:
“আমাদের ম্যারাডোনা, যিনি মাঠে নামেন, তোমার রাজ্য হোক নাপোলি, শিরোপা আমাদের দাও।”
এইভাবে তিনি শুধু একজন খেলোয়াড় হয়ে ওঠেননি, হয়ে উঠেছিলেন একটা শহরের জীবন্ত প্রাণ।
নেপলসের অলিগলি ঘুরলে দেখা যাবে, সেন্ট মাইকেলের মূর্তির পাশে একটা ছোট ছবি — যেখানে দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন ম্যারাডোনা। কেউ পবিত্র জল ছুঁয়ে কপালে ছোঁয়ায়, কেউ ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করে তার নাম ধরে।
কারণ ম্যারাডোনা শুধু গোল দেননি, তিনি একটানা অসম্মানের বিরুদ্ধে সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
উত্তর ইতালির বর্ণবাদী বিদ্বেষ, ক্লাস বিভাজনের দুঃখ, সব কিছুর বিরুদ্ধে নেপলসবাসীর হৃদয়ে জন্ম নিয়েছিল এক বিপ্লবী ঈশ্বর — যার নাম ডিয়েগো।
-একবার এক বৃদ্ধ নাপোলিতানো বলেছিলো —
“আমরা গরিব ছিলাম, অপমানিত ছিলাম। কেউ আমাদের নিয়ে খবর করতো না, কেউ আমাদের স্বপ্নে রাখতো না। ডিয়েগো এলেন — আর বললেন, 'তোমরাও জিততে পারো।' সেদিন থেকে আমরা শুধু ফুটবল দেখিনি — আমরা বেঁচে থাকার সাহস পেয়ে গেছি।”
এটাই ম্যারাডোনার আসল উত্তরাধিকার। পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো বোঝা যাবে না, কিন্তু তার প্রতিটা পাস, ড্রিবল, গোল — ছিল একটি নিপীড়িত জাতির কান্না মুছে দেওয়ার অস্ত্র।
তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন— ফুটবল শুধু ট্রফি না, এটা আত্মসম্মানের যুদ্ধ।
বিশ্বকাপ ট্রফি তো ১৯৭৮ তেই পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেটা ছিলো ঘরের মাঠে, সামরিক শাসনের চাপে জন্ম নেয়া এক বিতর্কিত সাফল্য। জাতির মন ভরেনি।
আর ১৯৮৬ – যে বছর ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জয় করলো বিশ্বকাপ — সেটা ছিলো একজন মানুষের সৃজনশীলতা দিয়ে এক টিমকে ঈশ্বর বানানোর গল্প।
১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ফকল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দুই দেশের রাজনীতির ভিত নড়ে গিয়েছিল। হাজারো আর্জেন্টাইন যুবক প্রাণ হারিয়েছিল ব্রিটিশ গুলিতে। যুদ্ধ শেষ হলেও ক্ষত রয়ে গিয়েছিল প্রতিটি ঘরে।
সেই ক্ষত নিয়েই ম্যারাডোনা মাঠে নেমেছিলেন ১৯৮৬ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে — প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
তার প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ড অফ গড।
একটি চোরাই ছোঁয়া, কিন্তু সেই ছোঁয়া যেন উচ্চতর কোনো শক্তির বিচার। একটি জাতির নিঃশব্দ প্রতিশোধ।
দ্বিতীয় গোলটির কথা তো না বললেই নয় ঠিক ওই একই ম্যাচে গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি দিয়ে ফেলেন তিনি।
মাঠের মাঝখান থেকে শুরু করে পাঁচজনকে কাটিয়ে, শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষককেও ফেলে দিয়ে যে গোল — সেটা শুধুই ফুটবল ছিল না।
সেটা ছিল ফকল্যান্ডের প্রতিটি কবরের ওপর দাঁড়িয়ে এক বিজয়ীর প্রার্থনা।
ম্যারাডোনা নিজেই পরে বলেছিলেন,
"আমরা শুধু ইংল্যান্ডের দলকে হারাইনি। আমরা পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে একবারের জন্য কাঁদিয়েছিলাম।"
হ্যান্ড অফ গড? হ্যাঁ, তিনি চুরি করেছিলেন — কিন্তু পরের ৪০ গজের ড্রিবল করে করা গোলেই প্রমাণ করলেন, চুরি নয়, সেটা ছিলো ঈশ্বরের বিচার।
আর কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ইংল্যান্ড ম্যাচ — রাজনৈতিক দুঃখ, ফকল্যান্ড যুদ্ধের প্রতিশোধ — সব একসাথে মিশে গেলো ম্যারাডোনার দুই পায়ে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ও তার গোলটা ছিল দেখার মত, এবং সর্বশেষ একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতার তিনি, ইন্ডিভিজুয়াল পারফরম্যান্সে ম্যারাডোনার ৮৬ বিশ্বকাপ সর্বকালের ক্যাম্পেইন হিসেবে বিবেচিত হয়। এইজন্যই এই কথাটি প্রচলিত—"ম্যারাডোনাকে থামাও, থেমে যাবে আর্জেন্টিনা।"
মেসি, নেইমার কিংবা এমবাপ্পে যেই যুগে খেলছে, সেখানে সামান্যতম ট্যাকলে কার্ড, পেনাল্টি, VAR এসে যাচ্ছে।
আর ম্যারাডোনার সময়? প্রতিদিন ছিলো যুদ্ধ। স্টুডস-আপ ট্যাকল, পিছন থেকে স্লাইড, কনুই — তবুও
ম্যারাডোনা দৌড়েছেন, চমকে দিয়েছেন, হার মানেননি।
আজকের দিনে যারা বলছেন — "তিনি তো ফিটনেস রক্ষা করতেন না, গোল কম, অ্যাসিস্ট কম" — তাদের বোঝা উচিত,
ম্যারাডোনা খেলতেন এমন এক যুগে, যেখানে প্রতি ম্যাচে ৫ বার খুনের চেষ্টা হতো, কিন্তু ঈশ্বর কখনও মাটিতে পড়েননি।
ম্যারাডোনা নিখুঁত ছিলেন না। কোকেইন, নিষিদ্ধ ওষুধ, বেপরোয়া জীবন — সবই ছিলো।
কিন্তু পবিত্রতার সংজ্ঞা কি শুধুই নিখুঁত জীবন? না — পবিত্রতা আসে ভুলের পরেও উত্থান থেকে।
ম্যারাডোনা ছিলেন একজন রক্তমাংসের মানুষ, যিনি ঈশ্বরের মতো খেলতেন। তার ব্যর্থতা তাকে আরো মানবিক করেছে, এবং তার সাফল্য তাকে তুলনাহীন।
মেসিকে তার উত্তরসূরী বিবেচনা করা হলেও মেসি ছিলেন জেনারেটেড জিনিয়াস — কাতালান ক্লাবের ল্যাবরেটরিতে বেড়ে ওঠা নিখুঁত প্যাকেজ।
আর ম্যারাডোনা ছিলেন রোড-সাইড রেভল্যুশন — তেমনই এক শিশু, যিনি বুয়েনস আইরেসের বস্তিতে খালি পায়ে ফুটবল শিখেছিলেন।
মেসির গোল বেশি, অ্যাসিস্ট বেশি, ট্রফি বেশি — তথ্যরূপে তিনিই সম্ভবত G.O.A.T।
কিন্তু ম্যারাডোনা ছিলেন GOD — এবং ঈশ্বরের সাথে তুলনা চলে না।
তাছাড়া তিনি উপাধি পেয়েছিলেন God of Naples।নাপোলিতে ম্যারাডোনার প্রভাব শুধু ফুটবল মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
তিনি ছিলেন দক্ষিণ ইতালির আত্মসম্মান, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রেরণা, ধনী উত্তর ইতালির চোখে চোখ রাখার সাহস।
তিনি ছিলেন সেই যোদ্ধা, যে বলে দিলো —
“তোমার স্ট্যাটাস, ক্লাব, অর্থ কিছুই না — আমি একা এসেছি, জিতিয়ে যাব।”
এবং তিনি পেরেছিলেন।
আজকের আমরা যে আর্জেন্টিনা ফ্যান বেজের পাগলামিটা দেখি তার মূল নায়ক ও ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার আগেও ফুটবলের তারকা ছিল। পেলেকে নিয়ে ব্রাজিল গর্ব করতো, বেকেনবাওয়ার ছিলেন জার্মানির সিংহাসন। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের জন্য শুধু জয় নয়, জীবন বাজি রাখা — এই আবেগ ম্যারাডোনা এনেছিলেন।
তিনি ছিলেন প্রথম ফুটবলার, যিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন ফ্যান কালচারের কেন্দ্রবিন্দু।
কোনো কর্পোরেট মার্কেটিং নয়, কোনো মিডিয়া প্রপাগান্ডা নয় — কেবলমাত্র তার শরীরী ভাষা, মাঠের বিদ্রোহ, মাঠের বাইরে রগচটা স্পর্ধা দিয়েই তিনি গড়েছিলেন এক অনন্ত ফ্যানবেস।
আজকে আমরা দেখি প্লেয়ারদের জন্য অগণিত ফ্যানপেজ, মুরাল, ট্যাটু, গানের লাইন, রাজনৈতিক ব্যানার — এর শুরুটা কোথা থেকে?
ডিয়েগো।
তিনি ছিলেন সেই মুখ, যাকে দেখে ফুটবলের সংজ্ঞা বদলেছে।
আগে ফুটবল ছিল সাফল্যের খেলা — এখন ফুটবল এক মুক্তির ভাষা।
যার পায়ের ছোঁয়ায় মানুষ সমাজবিরোধী না হয়ে উঠেও বিদ্রোহ করতে শিখেছে।
তিনি দেখিয়েছেন, “তোমার জন্ম যদি ভুল জায়গায় হয়, তাও তুমি ইতিহাস লিখতে পারো।”
এটাই ম্যারাডোনার প্রভাব —
তিনি প্রতিটা গরিব ঘরের ছেলেকে বলেছিলেন, 'তোমার স্বপ্নও বৈধ।’
এটা কোনো গোলসংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।
আজকের ফুটবলে যা ট্রেন্ড — গোল সংখ্যা, অ্যাসিস্ট, ট্রফি ক্যাবিনেট — সেগুলো success বোঝায়, greatness নয়।
ম্যারাডোনা সেটা নিজেই প্রমাণ করেছেন।
মাত্র দুই বড় ক্লাবে খেলেছেন, ক্যারিয়ারে অনেক কম ট্রফি, ইনজুরি ও ব্যাক্তিগত কেলেঙ্কারিতে ডামাডোল —
তবুও তার নাম উচ্চারিত হয় মেসি-পেলে-রোনালদোর পাশে, এমনকি ওপরে। কেন?
কারণ তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন —
“গ্রেটনেস মানে শুধু তুমি কী পেলা না, গ্রেটনেস মানে তুমি কী বদলালে।”
তাই ‘সর্বকালের সেরা’ বিতর্কে ম্যারাডোনা থাকবেন — কারণ তিনি শুধুই প্লেয়ার ছিলেন না।
তিনি ছিলেন এমন একজন,যিনি একটি শহরকে বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন,একটি জাতিকে বিশ্বমঞ্চে মর্যাদা দিয়েছেন,এবং পুরো পৃথিবীকে দেখিয়েছেন — ফুটবল শুধু খেলা নয়, ফুটবল এক ‘আত্মপরিচয়’।
তাকে মেসির সাথে তুলনা করা, রোনালদোর সাথে সংখ্যার দড়ি টানা ভুল।
কারণ, ম্যারাডোনা কোনো ব্যালন ডি’অর না পাওয়া প্লেয়ার না — তিনি নিজেই একটা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা।
একটা শহর আজও তার নামে গির্জা বানায়, তার কথা বলে চোখ ভিজিয়ে ফেলে। আর তুমি তাকে শুধু গোল দিয়ে মাপতে চাও?
ফুটবলের মানে যদি শুধু পরিসংখ্যান হয়, তবে ম্যারাডোনার গল্পই শেষ হতো না।
কারণ তার গল্প পরিসংখ্যানে শেষ হয় না — তার গল্প শুরু হয় যখন একটা পুরো জাতি বিশ্বাস করে নেয়,
"ঈশ্বর ফুটবল খেলতে পারেন, আর তার নাম ডিয়েগো।"
অনেক স্ট্যাটস, ইনফোগ্রাফ, ট্রফির হিসাব থাকতে পারে।
কিন্তু আর্জেন্টাইন এবং ন্যাপোলির কাছে ছিল এক ফুটবলার, যার জন্য বিশ্বাস জন্মায়, চোখে জল আসে, দেয়ালের ছবিতে মোমবাতি জ্বলে।
তিনি গ্রেটদের একজন নন —
তিনি সেই একজন, যার জন্য গ্রেটনেস শব্দটাই তৈরি করা হয়েছিল।
২৫ নভেম্বর, ২০২০ এ নিঃশব্দে চলে গেলেন ম্যারাডোনা। কোনো “বিদায়ী ম্যাচ” নেই, ট্রফির খালি ক্যাবিনেট নেই, শুদ্ধ জীবন নেই — কিন্তু থেকে গেলেন একটি আদর্শ।
তিনি শিখিয়েছিলেন,ফুটবল শুধু খেলা না — ফুটবল এক প্রতিরোধ, এক বিশ্বাস, এক ধর্ম।
তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার রক্ত, নাপোলির ঈশ্বর, ফুটবল বিশ্বের প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু পবিত্রতম চরিত্র।
নেপলস আজও প্রার্থনা করে তার নামে।ডিয়েগোর মৃত্যুদিনেও নেপলস শহরে আলো নিভে যায়। ছোট দোকানে বন্ধ থাকে বেচাকেনা, গির্জায় বাজে ঘন্টা।
এক শিশু স্কুলের দেয়ালে লিখে:
“আমরা এখনো বিশ্বাস করি, তুমি একদিন ফিরে আসবে।”
সান জেনারোর শহরে আজও একটাই দ্বিতীয় ঈশ্বর — ডিয়েগো।
নাপোলি শহরের চিৎকার থেমে গেলেও, দেয়ালের গাঢ় নীল রঙ আর সেই একজোড়া চোখ চিরকাল বলে যাবে —
"তোমাদের জন্য আমি খেলেছিলাম। খেলিনি শুধুই ট্রফির জন্য, খেলেছিলাম আত্মমর্যাদার জন্য।"
(Collated)