19/10/2024
রাজশাহীতে থাকার সময় রুয়েটের এক বড় ভাইয়ের সাথে আমার বেশ খাতির ছিল। উনিও বইপত্র পড়তেন সেই সূত্রে
আলাপ। পরবর্তীতে উনি আমার পাশের ফ্ল্যাটে ভাড়া নেন।
উনার একজন প্রেমিকা ছিলেন। উনার সাথেও আমার বেশ
ভালো পরিচয় ছিল৷
আপু যে বাসায় থাকতেন সেই বাসায় খাবার পানির সরাসরি সংযোগ ছিল না। বাসার পাশে একটা বড় রাস্তা ছিল। রাস্তার ডান দিকে মসজিদ আর তার একটু পরে পানির কল।
ঐ এলাকায় বেশিরভাগ বাড়ির খাবার পানি সেই কল থেকেই
সংগ্রহ করা হতো।
এরকমই এক অক্টোবর মাসের কথা। ভাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
হলেন৷ দুই দিন হাসপাতালে থাকতে হলো।
একদিন সন্ধ্যাবেলা হাসপাতালে গেলাম উনার সাথে দেখা
করতে। উনি বললেন, ভাই একটা উপকার করে দিবি?
বললাম, অবশ্যই ভাই।
উনি বললেন, তোর আপুর বাসার নিচে যা৷ গিয়ে ফোন করে
বল বোতল নিয়ে আসতে। তারপর মসজিদের পাশের কল থেকে পানি ভরে ওর বাসার নিচে দিয়ে আয়।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো আপুও অসুস্থ তাই পানি আনতে
যেতে পারছেন না। কিন্তু পরে বুঝলাম যে উনি দিব্যি সুস্থ ও
ভালো আছেন।
সেই সন্ধ্যায় উনাকে পানি এনে দিলাম৷ উনি ভাইয়ের খোঁজ
খবর নিলেন এবং বললেন, পরশুদিন থেকে উনার পরীক্ষা
তাই হাসপাতালে যেতে পারছেন না। আমরা যেন ভাইয়াকে
একটু দেখে শুনে রাখি৷
হাসপাতালে ফিরে এলাম। জিজ্ঞেস করলাম, উনি তো বেশ
ভালোই আছেন। তবে আমাকে দিয়ে পানি আনালেন কেন?
উনি বললেন, তোর আপু ৫ লিটারের দুইটা বোতল ধরে নিয়ে
রাস্তা পার হয়ে পানি ভরে আবার তিন তলায় উঠবে সেই দৃশ্য
কল্পনা করলেও আমার কলিজা ছিঁড়ে যায়৷ সেজন্য একদিন পর পর সন্ধ্যাবেলা ওকে পানি এনে দিই।
সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলাম, আপনি মাসে ১৫ দিন ৪ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে এসে উনাকে পানি ভরে বাসা পর্যন্ত এনে দিয়ে যান?
উনি তৃপ্তি নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন, হ্যাঁ। এইতো দুই বছর যাবৎ তো তাই করছি।
…
এরপর বেশ অনেকদিন কেটে গিয়েছে। রাজশাহী ছেড়েছি।
প্রায় সবার ব্যক্তিগত কারণে সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছি।
ফোন নাম্বার চেঞ্জ করেছি। ফেসবুক বেশিরভাগ সময় বন্ধ
রাখি। কে কোথায় কেমন আছেন কিছুই জানি না।
আজ বিকেলে হঠাৎ আপুর প্রোফাইলে দেখলাম লেখা, Got
Married.
গতকাল উনার বিয়ে হয়েছে। বর সরকারি কর্মকর্তা। বিয়ের
ছবিগুলোতে উনাকে বেশ হাসিখুশি দেখালো। সকলের মতো
আমিও খুশি।
ভাইয়ের ফেসবুক দেখলাম ডিএক্টিভ। ফোন দিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, এরকম কেন হলো?
উনি বললেন, It doesn’t matter how much effort you gave. If there is a better option, you will be replaced.
উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার এখন কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে না?
উনি হেসে বললেন, পৃথিবীতে দুইজন মানুষের খুশির জন্য
কখনো কখনো তৃতীয় কাউকে দুঃখী হতে হয়।
..