14/11/2023
14.11.2023
আমাদের বাড়িঘরের ৫টি স্থানে শয়তান অনেক সময় ‘বসত’ গাড়ে। এসব স্থান সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরী। ঘরে ঘরে নানাবিধ সমস্যা এবং বিশেষ করে ঘরে ছোট সন্তান থাকলে তাদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব দূর করতে সতর্ক থাকা আরো জরুরী।
১) দীর্ঘদিন যাবত যে বিছানায় কেউ শোয়নি।
শয়তান এমন বিছানা দখল করে বসে। নবীজি (ﷺ) বলেছেন, পুরুষের জন্য একখানা চাদর, তার স্ত্রীর জন্য একখানা চাদর এবং তৃতীয়টি অতিথির জন্য। আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য (মুসলিমঃ ২০৮৪)।
▪️বাসীরাহঃ এজন্য অব্যবহৃত বিছানা ভাঁজ করে রাখা নিরাপদ। ভাঁজ না করতে পারলে নিয়মিত বিছানা ঝাড়া উচিত। অথবা আয়াতুল কুরসি ও রুকইয়ার আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া পানি ছিটানো উচিত। দুই বা তিনদিন পরপরই এমনটি করা উচিত।(লম্বা সময়ের জন্য বাড়ি বন্ধ রেখে সফরে গেলে উপরের চাদর ভাঁজ করে বা গুটিয়ে রেখে যাওয়া উচিৎ)
২) হাম্মাম (বাথরুম)।
এটা সবার জানা আছে। হাম্মামে সবচেয়ে দুষ্ট আর খবিস প্রকৃতির শয়তানরাই থাকে। জ্বিন শয়তানও থাকে। এজন্য হাম্মামে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা ভীষণ জরুরী। নবীজি (ﷺ) বলেছেন, এসব পায়খানার স্থান হচ্ছে (জ্বিন ও শয়তানের) উপস্থিতির স্থান। সুতরাং যারা পায়খানায় যাবে তারা যেন এ দোয়া পড়েঃ
أعوذُ باللهِ مِن الخُبُثِ والخبائثِ
অর্থাৎ- আমি নাপাক নর-নারী শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই (আবু দাউদঃ ০২)।
▪️বাসীরাহ: বের হওয়ার পরে "গুফরানাক" পড়ুন। যাদের এটাষ্ট বাথরুম তারা সদা দরজা বন্ধ রাখার অভ্যাস করুন। সন্ধ্যার আগে টয়লেটের ছোট জানালা পারলে বন্ধ করুন। প্রয়োজনে সন্ধ্যার পরে আবার খুলুন।
৩) দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা অব্যবহৃত, অধোয়া জামাকাপড়।
আলমারি ওয়ার্ড্রবে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা পোশাকাশাকও এই ঝুঁকির আওতামুক্ত নয়। নবীজি (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখো। কারণ, এসব জামাকাপড়ের কাছে দুষ্টজ্বিনেরা ফিরে ফিরে আসে। আর শয়তান ভাঁজ করা জামাকাপড় পড়েনা। মেলে দেয়া পোশাক পেলে পড়ে। (সিলসিলাহ যয়ীফাঃ ২৮০১)।
▪️বসীরাহঃ আমরা অনেকেই জামাকাপড় ঝুলিয়ে রাখি। হাতের নাগালে রেখে, যখন ইচ্ছা পরার সুবিধার্থে আমরা সাধারণত জামাকাপড় লটকে রাখি। দীর্ঘ সময় ব্যাপি ঝুলে থাকা কাপড় পড়ার সময় যে কোনো ক্ষতি-অনিষ্ট থেকে বাঁচতে হলে, এসব পোশাকে কুরআন পড়া /ফাতিহা পড়া পানি ছিটিয়ে দেয়া নিরাপদ। মাঝেমধ্যে আলমারি, ওয়ার্ড্রব খুলে জামাকাপড়ে সূরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসি পড়ে ফুঁ দিতে পারি। পোশাক পরিধানের দূয়া আমাদের জন্য নিরাপত্তা কবচ। মাগরিবের আগেই বাহিরে মেলে দেয়া কাপড় শুকিয়ে গেলে উঠিয়ে নেয়া উত্তম।
৪) প্রাণী বা মানুষের মূর্তি ও পুতুল।
এসব পুতুল-মূর্তি ঘরে থাকলে, ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশের জন্য বাধা স্বরুপ। ফেরেশতার আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, এসব পুতুল-মূর্তির আড়ালে শয়তান (দুষ্ট জ্বিন) আশ্রয় গ্রহণ করে। নবীজি (ﷺ) বলেছেন, যে ঘরে কুকুর ও মূর্তি-ভাস্কর্য থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না (মুসলিমঃ ২১০৬)।
▪️বসীরাহঃ আরেক বর্ণনায় আছে, ঘরে অংকিত বা লটকানো ‘ছবি’ থাকলেও ফেরেশতা প্রবেশ করে না। বাথরুমের শ্যাম্পু, টুথপেষ্ট এর গায়ে বিজ্ঞাপনের মডেলের ছবি মুছে ফেলা, দেয়ালের ক্যালেন্ডারে কি আছে খেয়াল করা জরুরী।
৫) আগুন জ্বালানোর স্থান।
উনুন-চুলা।এসব স্থান জ্বিন-শয়তানের খুবই প্রিয় জায়গা। কারণ তারা আগুনেরই সৃষ্টি। এজন্য যখনই আগুনের কাছে যাবো, রান্নাবান্নার কাজে চুলার কাছে যাবো, মুখে মনে আল্লাহর যিকির করার অভ্যেস গড়ে তুলব। ইন শা আল্লাহ।
▪️বাসীরাহ: চুলা জালাবার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা এবং মাঝে মাঝে সূরা ফাতিহা লবন মিশ্রিত পানিতে ফুঁকে ঘর-দোর মোছা উত্তম অভ্যাস।
নাউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম। ইয়া আল্লাহ, আমাদেরকে ও আমাদের সন্তান-সন্ততিকে জ্বিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
মূল লিখা- শায়েখ আতিকুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ।
Saiful