17/07/2024
'পদত্যাগ' নেয়া রবিন ভাইয়ের ওয়াল থেকে গতরাতের ভয়াবহ চিত্র...!
১৬ জুলাই,২০২৪ দিবাগত রাত ২:৩০ আনুমানিক,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
যখন টিয়ার সেলের ধোঁয়া নাকে ঢুকলো—প্রথমে ভেবেছিলাম পুলিশের রাবার বুলেটের ধোঁয়া হয়তো, পর সেকেন্ডে যখন নাক পুড়তে শুরু করলো, তখন বুঝলাম এটা হয়তো টিয়ার সেল।
তো টিয়ার মানে তো চোখের পানি, টিয়ার সেল মারলে হয়তো অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়বে,,,এ আর তেমন কি!!
তবে না,বিষয়টা এমন না।
৫ সেকেন্ডের মাথায় মনে হলো, আমার শরীরের সমস্ত রক্তে কেউ বিষ মিশিয়ে দিয়েছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। লুকালাম একটা ঝোপের মধ্যে। যখন ১২-১৫ সেকেন্ড গেল, তখন মনে হচ্ছিল এটা তো টিয়ার সেল না, এটা তো বিষ।
সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা করতে শুরু করলো, নাড়ী-ভুরি সব বের হয়ে বমি হওয়ার উপক্রম। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো। মনে হলো, এই কষ্ট সহ্য করার চেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি নিচে। পর মুহূর্তে মনে হলো, না এভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। দৌড়ায়ে একতলা সমান উঁচু দেয়াল টপকে বের হয়ে যাই ভিসির বাসা থেকে। এটা ভাবতে ভাবতেই দেখি মুখ দিয়ে লালা এবং নাক দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে, হাত দিয়ে মুখ ধরবো নাকি পেট ধরবো? প্রাণ বাঁচাতে সেই উঁচু দেয়াল টপকিয়ে বের হয়ে আসি আমরা প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।
না,আমরা কোনো আক্রমণ করতে যায়নি। আমরা কোনো চুরি করতে যায় নি; আমরা গিয়েছিলাম কোটা আন্দোলনে ভিসির বাসায় আটকে পড়া আমাদের শ'দুশো ভাই-বোনদের বাঁচাতে। যখন ফেসবুকে একটা লাইভ পোস্টে দেখলাম এক আপু চিৎকার করে কান্না করছে, আর বলছে—ভাই! আমাদের বাঁচান, তখন আমার নিজের ছোট বোনের কথা মাথায় আসছে।
আমার রুমের বন্ধু চিৎকার করে কান্না করতেছিলো আর বলতেছিলো---রবিন, ওরা কেও ছাত্র*দল, শি*বির নয়। ওরা আমাদের বন্ধু, আমাদের বড় ভাই, আমাদের ছোট ভাই-বোন। ওদের মেরে ফেলছে।
আর কোনো কথা নেই, সব হল থেকে দলে দলে আমরা ভাইয়েরা বের হলাম, আমাদের ভাইদের ছাড়িয়ে আনতে।
~প্রায় কয়েক হাজার ছাত্র যখন ভিসির বাসার সামনে দৌড়ে গেলাম, তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকলাম, প্রথম যে ভাই আমাকে বুকে টেনে নিলো তাকে আমি চিনিও না,,,তবে মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা দাবানলটা কিছুটা বরফের শীতলতা পেল।
~২য় যে পরিচিত ব্যক্তি আমাকে জড়িয়ে ধরলো সে আমাদের হলের ৪৫ ব্যাচের বড় ভাই। রাজনীতির সাথে তার দূর-দূরান্তে কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে বললাম,ভাই। আপনাদের ভাইয়েরা এখনো মরে নাই। ভাই কেঁদে দিলো।