24/12/2023
গীবত সম্পর্কে বর্তমান সময়ে প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি বিষয়ে'র উপরে আলোচনাঃ
★(১) খাবারে'র গীবত :
নিকৃষ্টতম গীবত হল খাবারে'র গীবত করা ।
একজন মানুষ কষ্ট করে রান্না করে, আর সবাই মিলে রান্না'র বদনাম করতে থাকে ।
খাবারে'র গীবত বেশি হয় বিয়ে বাড়িতে ।
যেমন বলা, খাবার'টা মজা হয় নাই, লবণ কম হইছে, এত লবণ দিয়েছে যে তিতা লাগছে ইত্যাদি ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখন'ই খাবারে'র দোষ ধরতেন না ।
ভালো না লাগলে এক পাশে সরিয়ে রাখতেন । কখন'ই বলতেন না, কী খাবার রান্না করেছে মুখে'ই দেয়া যাচ্ছে না !
★(২) দৈহিক কাঠামো'র গীবত :
কারো কাছে কোন ব্যক্তি'র দৈহিক ত্রুটি উল্লেখ করা'ও গীবত ।
যেমন বলা, অমুক ব্যক্তি খুব মোটা, তার নাক বোঁচা, চোখ খুবি ছোট, চোখে দেখে না, মাথা'য় তো চুল নাই, পেটে ভূড়ি আছে, সে তো খুবি খাট ইত্যাদি ।
তো কোন ব্যক্তি'র আড়ালে অন্য কারো সাথে যদি আপনি ঐ ব্যক্তি'র দৈহিক কাঠামো নিয়ে এরকম আলোচনা করেন তাহলে তা গীবত হয়ে যাবে ।
"একবার আয়েশা (রা:) বলেন, হে আল্লাহ্'র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী সাফিয়া'র বেঁটে হওয়া'টা অপছন্দ করেন না ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা ! তুমি এমন একটি কথা বললে যা নদী'র পানি'র সাথে মিশিয়ে দিলে তার উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে ।" (আবু দাউদ )
★(৩) পোশাকে'র গীবত :
এভাবে বলা, অমুকের পোশাক খাট, কেমন কালারে'র জামা-কাপড় পরে দেখতে বিশ্রি লাগে, ঐ মেয়ে এত ফিটিং ওয়ালা পোশাক পরে, অমুক তো পাতলা ড্রেস পরে ইত্যাদি ।
" একবার আয়েশা (রা:) বলেন, অমুক স্ত্রীলোকে'র আচল খুব লম্বা । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা শুনে বললেন, হে আয়েশা ! তোমার থুথু ফেলা কর্তব্য । আয়েশা (রা:) বলেন, আমি থুথু ফেললে মুখ থেকে গোশতে'র একটি টুকরা বের হয়ে আসে ।"
(আত তারগীব ওয়াত তারহীব)
★(৪) অভ্যাস বা আচার-আচারণে'র গীবত :
কোন ব্যক্তি'র আচার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করা । যেমন, সে মানুষ'কে কষ্ট দিয়ে কথা বলে, ব্যবহার খারাপ, অভদ্র, পেটুক, অলস, সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমায় ইত্যাদি ।
একবার সালমান ফারসী (রা:) আহার করে শুয়ে পড়লেন । দুই (০২) ব্যক্তি তার খাওয়া ও শোয়ার ধরণ নিয়ে সমালোচনা করলে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
"তোমরা পরস্পরে'র গীবত কর না । "
(সুরা হুজরাত : ১১)
(ইবনে জুরাইহ এর সূত্রে দুররুল মানছুরে)★
(৫) বংশে'র গীবত ; তুচ্ছ করা'র জন্য কাউকে বলা , অমুকের বংশ নিচু , অমুকের পূর্ব পুরুষে'রা ছিল মজুর বা চোর ডাকাত ইত্যাদি , অমুকের তাে কোন বংশই নেই ইত্যাদি বলা " নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , দীনদ্বার ও সৎকর্ম ব্যতীত কোন ব্যক্তি'র অপর কোন ব্যক্তি'র উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই । "
( আব্দুর রহমান আশ - শারানী )
★ ( ৬ ) ইবাদতে'র গীবত : ইবাদতে'র ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে সমালােচনা করা । যেমন , কাউকে গিয়ে বলা অমুকতাে ঠিকমত নামায পরতে পারে না , মাকরুহ ওয়াক্তে নামায় পরে , রমযানে'র রােজা রাখে না , এত বড় হইছে কিন্তু এখনাে নামায পড়ে না , এত বড় মেয়ে কুরআন পড়তে জানে না ইত্যাদি । " তাহাজ্জুদে'র ওয়াক্তে কতক লােক ঘুমিয়ে থাকলে শেখ সাদী ( রহ:) তাদের সমালােচনা করেন এবং বলেন , এই লােকগুলাে যদি তাহাজ্জুদ পড়তাে তবে কত'ই না ভালাে হত । সাদীর পিতা একথা শুনে বলেন , কত'ই না ভালাে হত যদি তুমি তাহাজ্জুদ না পড়ে এদের মত ঘুমিয়ে থাকতে । তাহলে এদের গীবত করার পাপ তােমার ঘাড়ে চাপত না ।
" ( ইহয়া উলুমিদ - দীন)
★ ( ৭ ) কানে'র গীবত নিজে না বললে'ও কারাে গীবত শােনা এবং শােনা'র সময় কোনরুপ বাধা না দেয়া কানে'র গীবত । গীবত দুই ( ০২ ) ভাবে হয় -
( ০১ ) মুখে বলা (০২ ) কানে শােনে
গীবত বলা ও শােনা সমান পাপ ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"গীবত শ্রবণকারীও গীবতকারীদে'র একজন" ।
" ( তাবরানী ) আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই গীবত চর্চা থেকে হেফাজত করুন । আমিন ।