06/07/2025
গল্প : রোমান্টিক জ্বিন বর
পর্ব : ০২
লেখক__মোঃ__নিশাদ
এই কথাটা বলে জ্বিনটা সেখান থেকে চলে গেলো,, খুশি ও দেরি না করে সোজা চলে গেলেন বাড়িতে।
বাড়িতে জাবার পর, সেই রাতে খুশি মা বাবার সাথে খাবার খাচ্ছিলেন, খাবারের এক ফাঁকে খুশি ওর মা-কে বললেন।
খুশি: আচ্ছা মা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
খুশির মা: কি কথা বল?
খুশি: বলছিলাম, তোমার সাথে যে খা*রাপ জ্বিনটা থাকে, সেই জ্বিনটা কতদিন ধরে তোমার সাথে আছে, আর জ্বিনটা তোমাকে ছেড়ে যায়না কেনো।
খুশির মা: এতকিছু শুনে তুই কি করবি, এসব শুনতে হবেনা, খেয়ে ঘুমিয়ে পড় যা।
খুশি: না না আমি শুনবো, বলোনা মা।
খুশির বাবা: খুশি যখন এত করে বলছো বলো স*মস্যা নেই।
খুশির মা: আমি যখন যু*বতী, তখন থেকে সেই খা*রাপ জ্বিনটা আমার পিছনে লাগে,, সেই জ্বিনটা আমার শ*রীলে ভর করতো, আমি পা*গলীর মত হয়ে যেতাম, অনেক সময় আমাকে খুঁজে পাওয়া যেতনা, আমাকে নাকি অনেক সময় জ্ঞান হাড়ানো অবস্থায় পাওয়া যেতো, কোন উচু গাছের ডালে, কখনও বা পাওয়া যেতো বাঁশঝাড়ের পাশে।
খুশি: তা তখন কি কবিরাজ দেখাওনি।
খুশির মা: দেখাইছি তো, আমার এমন অবস্থা দেখে তোর মামা কবিরাজ নিয়ে আসসেন, কবিরাজ আসার পর, আমার উপর সেই জ্বিনটাকে হাজির করিয়ে জিজ্ঞেস করাতেই সেই জ্বিনটা কবিরাজকে বলেন, কোন এক ভর দুপুরে আমি পুকুরে গিয়েছিলাম গোসল করতে, তখন নাকি আমাকে দেখে পছন্দ করছিলো সেই জ্বিনটা।
খুশি: তারপর কি হলো, কবিরাজ কি করলো।
খুশির মা: কি আর করবে, কবিরাজ জ্বিনটাকে তাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলোনা, জ্বিনটা যায় ঠিকি কিন্তু কিছুদিন পর বা কয়েকমাস পর আবার আসে।
খুশি: ওহ বুঝলাম, আচ্ছা মা তুমি কখনও ওই জ্বিনটার সাথে কথা বলোনি।
খুশির মা : হ্যাঁ বলেছিলাম, আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম, কেনো আমার পিছনে পরে আছো, আমাকে ছেড়ে চলে যাও। অনেক বলেছি কিন্তু সে যেতে রাজি হয়নি, একবার রাজি হইছিলো, একটা সর্ত দিয়েছিলো, কিন্তু আমি মানতে পারিনি আর কখনও মানতে পারবোনা।
খুশি: কিহ সর্ত।
মা: তুই যখন জন্ম নিলি, তখন সেই খা*রাপ জ্বিনটা আমাকে বলছিলো তোকে যদি, ওকে দিয়ে দেই তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে জাবে। ওর এই সর্ত আমি কখনও মানিনি, তুই আমার একমাত্র মেয়ে তোকে আমি কিভাবে জ্বিনকে দিয়ে দেই বল,, তোকে দিতে রাজি হইনি তাই, সেই জ্বিনটা আমাকে ছেড়ে যায়নি, আজ এতবছর পর সে আমাকে কি বলে জানিস৷
খুশি: কি বলে।
মা: সে বলে, তার একটা ছেলে আছে, ওর সাথে তোকে বিয়ে দিতে,, কিন্তু আমি রাজি না, তোকে একটা খা*রাপ জ্বিনের সাথে বিয়ে দিবো কিভাবে বল, তাই ইদানীং সে আমাদের পিছনে লেগেছে ভয়ং*কর ভাবে, তোর বাবা আর আমি ঠিক করছি কাল তোর মেজো খালার বাড়ি জাবো ওখানে নাকি ভালো একজন হুজুর আছে দেখি ওনার কাছে গিয়ে ওনি কোন সমাধান দিতে পারে কিনা।
খুশি: মা তুমি ঠিকি বলছো, জানো কালকে সন্ধায় ইয়াসমিনের বিয়ে খেতে ওর বাড়ি জাবার পথে, সেই খা*রাপ জ্বিনটা আমার উপর আ*ক্রমণ করে বসে। ভাগ্য ভালো বেঁ*চে ফিরছি।
খুশির বাবা: তাই নাকি, না না আর দেরি করা ঠিক হবেনা। কালকেই তোর খালার বাড়িতে চলে জাবো, নে এখন খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
খুশির বাবার কথায়, খুশি খাবার শেষে, রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
____খুশির যখন ঘুম আসবে, এমন সময় সে তার রুমে খুব সুন্দর একটা সুঘ্রাণ পান, খুশির অনুভব হয় তার রুমে কেউ আছে। খুশি আস্তে করে একটা সালাম দেন, আর বলেন রুমে কি কেউ আছেন, থাকলে কথা বলুন।
খুশির কথার জবাবে, মুসকি একটা হাসি দিয়ে সেই জ্বিনটা বলেন আমি।
খুশি: ওহ আপনি, আচ্ছা আমি উঠে রুমের লাইটটা দেই।
জ্বিন : না, এতে আমার পবলেম হবে।
খুশি: কিন্তু আমারতো আপনাকে দেখতে অনেক মন চায়। একটু দেখি।
জ্বিন : বলছিনা সময় হলে দেখা দিবো তখন দেখে নিও, এখন বলো কালকে কি তোমরা কোথাও যাচ্ছ।
খুশি: হ্যাঁ, আমার মেজো খালার বাড়ি জাবো, ওখানে মাকে, হুজুর দেখাবো।
জ্বিন : ঠিক আছে বুঝলাম, তোমাকে কিছু কথাবলি শোনো। কালকে দিনের বেলা জাবে, তোমার খালার বাড়িতে,, তোমার খালার বাড়িতে আশপাশ কিন্তু নদী এলাকা, জায়গাটা বেশি সুবিধার না সাবধানে থেকো।
খুশি: ওকে ঠিক আছে, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
জ্বিন : কি কথা বলো।
খুশি: আপনার নাম কি।
জ্বিন : নামটা জানা কি খুব জরুরি।
খুশি: হ্যাঁ। আপনাকে দেখিনি, নামটা তো দয়া করে বলুন।
জ্বিন : আমার নাম, হামজা। আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করোনা জানতে চেয়েওনা সময় হলে আমি সব বলবো।
জ্বিনটার কথা শুনে খুশি কিছু একটা বলবে, ঠিক তখনি তার ফোনে একটা কল আসে।
কল আসতেই হামজা জ্বিন সেখান থেকে চলে জান, এদিকে কলটা রিসিভ করতেই বান্ধবী ইয়াসমিন বলে উঠেন৷
ইয়াসমিন: কিরে খুশি কেমন আছিস কি খবর বল৷
খুশি: আমার খবর বাদদে, তোর কি খবর কোথায় তুই, কিহহ নতুন সংসার জিবন কেমন কাঁ*টছে।
ইয়াসমিন: খুব ভালো, আচ্ছা তোকে একটা কথা বলার জন্য ফোন করলাম, একটা ছেলে তোর কথা জানতে চাইলো, শেহজাদ, ওকে কি চিনিস তুই।
খুশি: হ্যাঁ চিনি, তোর বি*য়েতে ওই ছেলেটা আমাকে বলছিলো আমাকে নাকি ওর ভালোলাগে রি*লেশন করতে চায় পা*গল একটা।
ইয়াসমিন: রিলে*শন করতে চায় তো কর৷ ছেলেটাতো সুন্দর আছে।
খুশি: তুই ও না কি যে বলিস, আচ্ছা শোন কাল খালার বাড়ি যেতে হবে এখন রাখছি কেমন।
এই বলে ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো খুশি।
____কথামত পরেরদিন সকালে খুশি ও তার মা বাবা চলে গেলেন তার মেজো খালার বাড়িতে। সেখানে যাবার পর খুশি আশপাশ জায়গাটা ঘুরে দেখছিলেন, নদী এলাকা জায়গাটা খুবি সুন্দর, খুশি এক জায়গায় বসে চারিদিকের মনোরম সুন্দর দৃশ্য দেখছিলেন, হঠাৎ সেখানে খুশির খালাতো বোন চলে আসেন এসে খুশিকে বলেন।
আরে খুশি এখানে বসে আছো কেনো, চলো আমার সাথে চলো ওইদিকে যাই ওইদিকে বিলের মধ্যে কত সুন্দর শাপলা ফুল ফুটছে চলো গেলে দেখতে পাবে।
খালাতো বোনের কথায় খুশি ওর সাথে চলে গেলো সেই বিলের দিকে। বিলের কাছে যেতেই খুশি দেখলো আসলেই বিলের মাঝে অনেক সুন্দর সুন্দর শাপলা ফুল ফুটেছে, এই দৃশ্য দেখে খুশির খুবি ভালোলাগে, সে এরকম তাজা সুন্দর ফুল কখনও দেখেনি, এদিকে হঠাৎ খুশির খালাতো বোন বলেন, খুশি শাপলা ফুল কি ভালোলাগে,, যাও নিচে নেমে ফুল ছিড়ে নিয়ে আসো।
খুশি: না না, পানিতে নামতে ভ*য় লাগে।
খালাতো বোন : আরে না এখানে তেমন পানি নেই তো। অল্প একটু পানি, চিন্তা করোনা যাওতো পানিতে নেমে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে আসো যাও আমি এখানেই আছি।
খালাতো বোনের কথায়, খুশি এক পা দু পা করে নেমে পড়েন পানিতে, পানিতে নেমে সে একটা একটা করে ফুল ছিঁড়তে থাকে ঠিক তখনি হঠাৎ কেউ একজন খুশির হাত টেনে ধরে।
____হাতটা ধরার সাথে সাথে খুশি পিছনে ঘুরে তাকান আর অদ্ভুত ভাবে মহূর্তে সবকিছু পাল্টে জান, খুশি দেখেন সে অল্প পানিতে না সে কমর পানিতে নেমে আছে, তার সামনে কোন ফুল নেই, আর সবচেয়ে বড় ভয়ের ব্যাপার হলো তখন সন্ধা হয়ে গেছে।
এসব দেখে খুশি, কিছুই বুঝতে পারেনা, এদিকে খুশির হাত টেনে ধরা ছেলেটি আর কেউনা, এটা শেহজাদ। শেহজাদ খুশির হাত ধরে এক টানে পানি থেকে উপরে নিয়ে আসেন, আর বলেন।
শেহজাদ: এই কি করছি, তুমি এখানে কেনো, পানিতে নামছো এই সন্ধা বেলা।
শেহজাদের কথা শুনে খুশি ভ*য়ে কাঁপতে কাঁপতে চারিদকে ঘুরে তাকায় আর বলে।
খুশি: আমি কিছু জানিনা, এখানে তো আমার খালাতো বোন আমাকে নিয়ে আসসে, শাপলা ফুল তোলার জন্য, একটু আগেও তো দিন ছিলো এখন রাত হলো কি করে।
শেহজাদ: কোথায় শাপলা ফুল, আর কোথায় তোমার খালাতো বোন, আমার মনে হয় তুমি কোন ঘোরের মধ্যে ছিলে, তোমার সাথে নিশ্চয়ই খা*রাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছিলো, তা যাইহোক এখানে আর থাকা ঠিক হবেনা চলো আমার সাথে চলো আমি তোমার খালার বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি ||
এই বলে শেহজাদ খুশির হাত ধরে, পিছনে ঘুরতেই দুজনে দেখতে পেলো, তাদের থেকে দশ পনেরো হাত দূরে একটা ভয়ং*কর কালো অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে, অন্ধকারের সেই অবয়বটার চোখ জলজল করছে।
এটা দেখে খুশি ভ*য়ে শেহজাদের হাত শ*ক্ত করে ধরে। এদিকে সামনে থাকা সেই ভয়ং*কর অবয়বটি শেহজাদ ও খুশিকে উদ্দেশ্য করে বলেন।
কোথায় যাচ্ছিস,, এই কে তুই তোর জন্য আজকে খুশিকে কিছু করতে পারলাম না,, ওদের সাহস কমনা, ওরা আমাকে তাড়ানোর জন্য কবিরাজের বাড়িতে আসসে, ওর ভাগ্য ভালো তুই সময় মত আসছিস নইলে খুশিকে পানিতে নামিয়ে চুবাইতাম, ওকে শাস্তি দিতাম।
ভয়ং*কর জ্বিনটার মুখে এসব কথা শুনে শেহজাদ বলেন। তুই শাস্তি দেবার কে, খুশিকে আমি পছন্দ করি ভালোবাসি তাই আমি থাকতে ওর কোন ক্ষ*তি আমি হতে দিবোনা।
শেহজাদের মুখে এসব কথা শুনে, সেই ভয়ং*কর খা*রাপ জ্বিনটা বলেন, তাই নাকি দেখি কিভাবে আটকাতে পারিস, এই বলে সেই ভয়ং*কর জ্বিনটা খুশির দিকে তেরে আস্তে শুরু করে, ঠিক তখনি খুশিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ান শেহজাদ।
____শেহজাদ সামনে আসাতেই সেই ভয়ং*কর অবয়বের আ*ঘাতে ছিঁটকে গিয়ে পড়েন কিছুটা দূরে।
এদিকে ঠিক সেই সময়, লাইট হাতে খুশির বাবা ও খালু ওদিকে এসে খুশিকে ডাকতে থাকে।
খুশির খালু ও বাবার ডাকে, সেখানে থাকা ভয়ং*কর জ্বিনটা খুশিকে বলেন, আজকে বেঁ*চে গেলি।
এই বলে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় সেই ভয়ং*কর জ্বিনটা,, এদিকে শেহজাদ খুশিকে বলেন।
শেহজাদ: খুশি, তোমার বাবা তোমাকে খুঁজছে, চিৎকার দাও আর ওদের সাথে চলে যাও, ওরা তোমার সাথে আমাকে দেখলে খা*রাপ ভাববে, যাও।
খুশি: কিন্তু আপনি তো ব্যাথা পেয়েছেন, আপনার চিকিৎসার দরকার৷
শেহজাদ: আমাকে নিয়ে ভেবোনা, আমি তেমন ব্যাথা পাইনি৷ আর আমার বাড়ি ও পাশে আমি চলে জাবো,, এখন যাও কাল তোমার সাথে দেখা করবো তখন কথা হবে যাও।
শেহজাদের কথায়, খুশি সেখান থেকে চিৎকার করতে করতে এক দৌড়ে তার বাবা ও খালুর দিকে যেতে লাগলেন।
এদিকে খুশির চিৎকার শুনে ওর বাবা ও খালু খুশির দিকে এগিয়ে আসলেন, আর সেখানে দেরি না করে তারাতারি করে বাড়িতে চলে গেলেন৷
বাড়িতে জাবার পর খুশি সবাইকে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুঁলে বললেন।
খুশির মুখে এসব ঘটনা শুনে সবাই অবাক, এদিকে খুশির মুখে এসব শুনে ওর মা বলে।
খুশির মা: জানিস, তোকে বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, তোর বাবা আর খালু অনেক খোঁজার পর তোকে নদীর পারে পাওয়া গেলো৷
খুশি: মা, আমিতো কিছুই জানিনা, আমি নদীর পারে একটা সুন্দর জায়গায় বসে ছিলাম, জানিনা, কোথা থেকে কি হলো, সবি ওই খা*রাপ ভয়ং*কর জ্বিনটার কাজ।
খুশির বাবা: ঠিকি বলছিস, তোর মা আর আমি কবিরাজ কাছে গিয়েছিলাম কবিরাজ বললো, সেই জ্বিনটাকে তাড়ানো এতটা সহজ না, তবুও ওনি চেষ্টা করবে, আর আমাদের বাড়িটা বন্ধ করে দিবে। এছাড়াও হুজুর একটা কথা বললো.....
খুশি: কি কথা বাবা।
খুশির মা: হুজুর বললো। খা*রাপ ভয়ং*কর জ্বিন তো আছেই তাছাড়া, তোর সাথে নাকি একটা ভালো জ্বিন আছে, সেই জ্বিনটা নাকি তোর কাছে আসে কথা বলে এটা কি সত্যি।
খুশির মায়ের মুখে কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলেন, ইয়ে মানে মা না এটা সত্যি নয় আমিতো কিছু জানিনা।
তারপর.....
Next.....