30/07/2024
স্বাধীনতার নামে আজও চলছে জুলুম (রেমিট্যান্স/হুন্ডি)
ইংরেজদের জুলুম, নির্যাতন, করের হতে অপামর জনতা প্রতিবাদী হয়। ইংরেজরা ছিল অল্পকিছু লোক আর ভারতবর্ষে তাদের বিরোধী অসংখ্য। তারা আমাদের কিছু লোককে শিক্ষিত করে চাকরি দিল। বাবু, সাহেব নাম দিল আর কিছু লোককে ওদের সুরক্ষা ও আমাদের আন্দোলন প্রতিরোধে ব্যবহার করতো। ফলে কখনও সংঘর্ষ হলে শুধু ইংরেজদের সাথে হতো তা নয় বরং স্বজাতীর লোকদের সাথে সংঘর্ষে জড়াতে হতো। রক্তাক্ত অনেক সংগ্রাম হতো, এসব কর্মকর্তা, দেহরক্ষী বাহিনী দালাল ও স্বাধীনতার শত্রু বলে অভিহিত করা হতো।
ইংরেজরা বিদায় নিল, এরপর অন্যায়, জুলুম, নির্যাতনের জন্য আবার বিভক্তি। তাদের রেখে যাওয়া বহু আইন আজও ভারতবর্ষে বিদ্যমান।
আজ দেখুন- আমাদের দেশে একই ফেতনা বিদ্যমান- আমাদের করের টাকায় যাদের বেতন চলে, সরকারের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য, প্রতিবাদ করলে সেসব প্রশাসনের লোকগুলোকে ব্যবহার করা হয় আমাদের বিরুদ্ধে।
রসূল (সা) বলেছেন – ‘(হে কা’ব!) তুমি নির্বোধ আমীর (শাসক) থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় চেও। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: নির্বোধ আমীর কে?
রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (ওরা হল) এমন সব আমীর যারা আমার পরে আসবে। তারা না আমার দেখানো পথে চলবে, আর না আমার আদর্শ মাফিক রীতি-নীতি চালু করবে।
কাজেই যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার -এর সহায়তা করবে, ওরা আমার (কেউ) নয়, আমিও তাদের (কেউ) নই এবং তারা (কেয়ামতের দিন আমার) হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে আসতে পারবে না।
আর যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে না এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার এর সহায়তা করবে না, ওরা আমার, আমিও তার এবং (কেয়ামতের দিন) তারা আমার হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে সহজে আসতে পারবে’ [মুসনাদে আহমদ, ৩/৩২১ ; ; মুসতাদরাকে হাকিম-)
আরও বর্ণিত আছে – হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ‘শেষ জামানায় জালেম ও অন্যায়-অবিচারক শাসকদের আগমন ঘটবে। তাদের মন্ত্রীরা হবে ফাসেক (পাপিষ্ট, পঁচন ধরা), তাদের বিচারকরা হবে খেয়ানতকারী, তাদের (সাথে থাকা) আলেমরা হবে মিথ্যুক। তোমাদের মধ্যে যারা সেই জামানা পাবে, তারা ওদের কর-উসূলকারী, আরেফ এবং সৈন্য হতে যেও না। [ত্বাবরানী, হাদিস ৪১৯০;)
আমাদের করের টাকায় ইংরেজরা মূর্তি তৈরি করতো আজও বহু চেতনা, স্বাধীনতার নামে মূর্তিসহ শিরকের প্রসার আমাদের করের টাকায় হয়। আর প্রতিবাদ করলে আমাদের স্বদেশীয় প্রশাসনের লোককে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবুও আমরা স্বাধীনতার দাবিদার, গর্বিত যদিও আমাদের মতবাদের কোন মূল্য তারা দেয় না।
এবার আসি ইসলাম ও কর নিয়ে আলোচনা করি!
ইসলামী রাষ্ট্র কার্যক্রম ও উন্নয়ন চালানোর খাত হল- যাকাত, গনিমত, উসুর, জিজিয়া ও বহিঃবিশ্বের লোকেরা ব্যবসা করতে এলে কর দিত। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পরে আলোচনা হবে। ভোগ্যপন্যের করের নামে নির্যাতন, দাসত্ব ছিল না। যাকাত সমর্থ্যবানরা দিত সবাই নয়। ধরুন- একজন হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা, ফকির বাজার হতে ৫০০ টাকার জামা, পন্য কিনতে যে পরিমান কর দেয়। সেই একই পরিমান কর মিলিনিয়ার ব্যবাসায়ী দেয় অথচ সেই বাধ্যতামূলক যাকাত তার হতে নেওয়া হয় না। (ইনকাম tax ভিন্ন হিসাব আর বেশিরভাগ লোকই প্রকৃত ইনকাম tax দেয় না)। একই এলাকায় বস্তিবাসী, ডুপ্লেক্সের বাসিন্দার বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের করের পরিমাণ একই। তাই গরিবের ছেলে অভুক্ত থাকে আর তাদের দেওয়া করের টাকায় আমলা, মন্ত্রীর ছেলে দামী গাড়ি, বাড়ীর বিলাসীতা করে। অথচ খেলাফায়ে রাশেদীনের যুগে- খলিফার পোষাক, আহার সাধারণ জনগণের মত বা অনেকক্ষেত্রে (তাকওয়ার কারনে) আরও নিম্ন পর্যায়ের ছিল। সামান্যই তারা ভাতা নিতেন।
এর বিপরীতে বর্তমান অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক ও জুলুমের। আমরা যা পুরাপুরি পরিত্যাগ করতে পারি না অনেক কিছু মানতে প্রায় বাধ্য। তাই সুদ ও জুলুমভিত্তিক অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স দিয়ে জালেমকে মুসলিম মারায় সাহায্য করার চেয়ে অন্যভাবে টাকা পাঠানো উত্তম।
আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার ধারনার মূল কারিগর হল নাইট টেম্পলাররা। নাইট টেম্পলাররা ছিল সন্ন্যাসী যোদ্ধা। যাদের মিশন ছিল ধর্মীয় আদেশ, নীতিমালা ও অন্যান্য কার্যাবলী সাধন করা এবং নিজ ধর্ম ও মানুষদের রক্ষার্থে জীবন দেওয়া।
টেম্পলাররা জেরুজালেমে খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের প্রতিরক্ষার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিল। শহরটি ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের দখলে চলে যায় এবং তীর্থযাত্রীরা ইউরোপ জুড়ে হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করে সেখানে যেতে শুরু করেছিল।
এই তীর্থযাত্রীদের কোনো না কোনোভাবে মাসের পর মাস খাদ্য, পরিবহন এবং বাসস্থানের জন্য তহবিল আবশ্যক ছিল যাতে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা বহন করা এড়াতে পারে। কারণ এটি তাদের ডাকাতদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।
টেম্পলাররা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। একজন তীর্থযাত্রী লন্ডনের টেম্পল চার্চে তার নগদ অর্থ রেখে যেতে পারতেন এবং জেরুজালেমে গিয়ে তা তুলে নিতে পারতেন। টাকা বহনের পরিবর্তে তিনি ক্রেডিট চিঠি বহন করতেন। চিঠি বক্তব্য সোজা বাংলায় এই- ‘চাহিবা মাত্র প্রাপককে তার সম্পদ দিতে হবে’ অনেকটা আধুনিক চেকের মতো। নাইট টেম্পলারার ছিল বর্তমানের টাকা পাঠানোর কোম্পানিদের মত।
যদিও টেম্পলাররা এই ধরনের পরিসেবা প্রদানকারী বিশ্বের প্রথম সংস্থা ছিল না। কয়েক শতাব্দী আগে, চীনের ট্যাং রাজবংশ “ফেইকুয়ান” – উড়ন্ত অর্থ – ব্যাবহার করত। এটি ছিল দুই-অংশের একটি নথি যা ব্যবসায়ীরা আঞ্চলিক অফিসে জমা দিত এবং রাজধানীতে তাদের নগদ টাকা ফেরত পেত।
কিন্তু সে ব্যবস্থা সরকার পরিচালনা করত। টেম্পলাররা একটি প্রাইভেট ব্যাংকের অনেক কাছাকাছি ছিল – যদিও এটি পোপেদের মালিকানাধীন ছিল। ইউরোপ জুড়ে রাজা ও রাজকুমারদের সাথে মিত্রতা এবং দারিদ্র্যের শপথ নেওয়া সন্ন্যাসীদের অংশীদারিত্ব দ্বারা পরিচালিত হত এই সিস্টেম।
নাইটস টেম্পলাররা দীর্ঘ দূরত্বে অর্থ স্থানান্তরের চেয়েও অনেক বেশি কাজ করেছিল। ইউরোপ হতে জেরুজালেম পৌছতে দীর্ঘসময় লাগতো তীর্থযাত্রীদের। পক্ষান্তরে টেম্পলরা ঘোড়া দিয়ে পরস্পর যোগাযোগ করে সহজে পৌঁছে যেতে পারতো। তাই তারা এমন করত – তীর্থযাত্রীদের রেখে যাওয়া আমানত সম্পদ বা মুদ্রা সুদের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধার দিত। এভাবে তারা সম্পদশালী হয়ে গিয়েছিল। আর জেরুজালেম পৌছে তীর্থযাত্রী সম্পদ নেওয়ার আগে তা পোছে দিত। অনেক সময় অনেক তীর্থযাত্রী নিরাপত্তার জন্য সম্পদ দেরিতে তুলতেন। এভাবে তারা অন্যের টাকা, সম্পদ দ্বারা নিজেরা সমৃদ্ধ হতো। আবার অনেক তীর্থযাত্রী মাঝপথে মারা যেত তাতেও তাদের লাভ হতো।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাই করে অন্যের সম্পদ দ্বারা তারা ব্যবসা করে আমানত ভাঙ্গিয়ে। তারপর দেখা যায় চার্চের অনুমতিক্রমে অনেকে সম্পদ না তুলে চিরকুট/চিঠি চেক সদৃশ্য কাগজের মাধ্যমে জমি, পণ্য কেনাবেচা করত। প্রথমে সালাউদ্দিন আইয়ুবী ও পরে খ্রিস্টানরা ওদের অত্যাচার, ফেতনা ও জুলুমের জন্য উচ্ছেদ করে। ধারনা করা হয় তাদের বংশধররাই আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্হা তৈরি করেছে।
নাইট টেম্পলাররা চিরকাল ইউরোপের ব্যাংক ছিল না। ১২৪৪ সালে ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলার পরে ১৩১২ সালে টেম্পলাররা শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় এবং পরে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।
তখন সম্পদের বিনিময়ে চেক সদৃশ কাগজ দেওয়া হতো। যাতে যেকোন সময় চেক ভাঙ্গিয়ে সম্পদ নেওয়া যেত, তাই বর্তমান মুদ্রার মত তা উঠানামা করত না। কেউ চাইলে অবরোধ দিয়ে মুদ্রা বা কাগুজে চেককে সাধারণ কাগজে পরিণত করতে পারতো না।
দেশে দেশে মুদ্রার ভিন্নতা হ্রাসবৃদ্ধি করে জালেমরা ইয়েমেন, আফ্রিকার মত দেশগুলোকে দরিদ্র্য করে রাখছে
অথচ স্বর্নমুদ্রা ও রৌপ্য মুদ্রা থাকলে তারাই ধনী থাকতো।
তার উপর ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর জন্য আমরা অনেকটা তাদের উপর নির্ভরশীল। SWIFT এর পূর্ণরূপ Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunications. ২০০ এর অধিক দেশ এই সিস্টেম ব্যবহার করে লেনদেন করে। প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ লেনদেনের এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে এই সিস্টেমের মাধ্যমেই গিয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্যাংকের ১১ ডিজিটের একটি SWIFT কোড থাকে। যার প্রথম চার ডিজিট ব্যাংকের নাম, পরের দুটি দেশের কোড, পরের দুটি লোকেশান কোড এবং পরের তিনটি শাখা কোড নির্দেশ করে। যখন এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানো হয় SWIFT কোড ব্যাবহার করে পাঠানো হয়।
তাই যখন SWIFT সিস্টেম থেকে কোন দেশকে বের করে দেওয়া হয়, তাদের ব্যাংকিং ও লেনদেনে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন - SWIFT হতে বের করে দেওয়ায়
ইউরোপের কোন ব্যক্তি রাশিয়ায় আর রাশিয়ার কোন লোক ইউরোপে টাকা পাঠাতে পারবে না। তাই যেখানে অর্থনীতি আগ্রাসন বিদ্যমান সেখানে শুধু হুন্ডি হারাম ঘোষণা দিয়ে বাকী জুলুমের সত্যি লুকিয়ে রাখা বোকামি।